<p>ইসলামে ভ্রাতৃত্বের বিশেষ মর্যাদা আছে। পরিবার ছাড়াও সাধারণ মুমিনদের পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বের গুরুত্ব রয়েছে। ঈমানের ভিত্তিতে ভ্রাতৃত্বের এই সম্পর্ক কেবল পার্থিব জীবনে সীমিত নয়; বরং পরকালেও এর সুফল রয়েছে। তাই পবিত্র কোরআনের মুমিনদের সবাইকে ভাই ভাই বলে সম্বোধন করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই, তোমরা ভাইদের মধ্যে শান্তি স্থাপন করো এবং আল্লাহকে ভয় করো, যেন তোমরা অনুগ্রহ লাভ করো।’ (সুরা : হুজরাত, আয়াত : ১০)</p> <p><strong>ভ্রাতৃত্ববোধ আল্লাহর অনুগ্রহ</strong></p> <p>মহান আল্লাহ মুমিনদের পরস্পরকে ভাই বলে সম্বোধন করেছেন। একে অন্যের ভাই হওয়া আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, তোমরা পরস্পর শত্রুভাবাপন্ন ছিলে, তিনি তোমাদের অন্তরে ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেন, ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১০৩)</p> <p><strong>ভাইয়ের মর্যাদা</strong></p> <p>মা, বাবা, ভাই-বোনসহ সবার প্রতি সহমর্মী হওয়া ইসলামের শিক্ষা। ভাই সে সহোদর, বৈমাত্রেয় বা বৈপিত্রেয় বা দুর-সম্পর্কীয় হোক, সবার প্রতি সহমর্মী হওয়া জরুরি। তারিক বিন আবদুল্লাহ আল-মুহারিবি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) মিম্বারে ওঠে মানুষের উদ্দেশে খুতবা দেন। তিনি বলেছেন, দাতার হাত উঁচু মর্যাদার অধিকারী।তুমি মা, বাবা, বোন, ভাইসহ ক্রমানুসারে ওই সব ব্যক্তির জন্য খরচ করবে, যাদের জন্য খরচ করা তোমার কর্তব্য। (নাসায়ি, হাদসি : ২৫৩১)</p> <p>অর্থাৎ মা-বাবা ও ভাইয়ের জন্য ব্যয় করা, তাদের খোঁজখবর নেওয়া, তার পরিচিতজনদের খোঁজ নেওয়া কর্তব্য। কারণ শৈশব থেকে জীবনের বিশাল অংশ সবাই একসঙ্গে কাটিয়েছে। হাসি-আনন্দ ও দুঃখ-বেদনায় একে অন্যের সহযোগিতা করেছে। ভালোবাসার এই সম্পর্ক সব সময় টিকিয়ে রাখা জরুরি।</p> <p><strong>ভাইয়ের দোয়ায় নবুয়ত লাভ</strong></p> <p>মহান আল্লাহ মুসা (আ.)-কে নবী হিসেবে ফেরাউনকে দাওয়াত দিতে বলেন। তখন মুসা (আ.) নিজের জন্য বেশ কিছু দোয়া করেন। পাশাপাশি তাঁর ভাই হারুন (আ.)-কে নবী করার প্রার্থনা করেন। পবিত্র কোরআনে ভাইয়ের জন্য মুসা (আ.)-এর দোয়ার বিবরণ এসেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি ফেরাউনের কাছে যান, সে সীমা লঙ্ঘন করেছে। (মুসা) বলেন, হে আমার রব, আমার বক্ষ প্রশস্ত করুন।...আপনি আমার জন্য আমার পরিবার থেকে একজনকে সহযোগী করুন। আমার ভাই হারুনকে করুন। আপনি তার মাধ্যমে আমাকে সাহায্য করুন। তাকে আমার কাজে অংশীদার করুন। যেন আমরা আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করতে পারি।’ (সুরা : তোহা, আয়াত : ২৪-৩৪)</p> <p>অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাকে আমার অনুগ্রহে তার ভাই হারুনকে নবী হিসেবে দিয়েছি।’ (সুরা : মারয়াম, আয়াত : ৫৩)</p> <p><strong>ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের দায়িত্ব</strong></p> <p>ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এ বিষয়ে নির্দেশনা এসেছে। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো- </p> <p><strong>১. কল্যাণ কামনা : </strong>অন্যের জন্য কল্যাণ কামনা ভ্রাতৃত্বের মূল ভিত্তি। অর্থাৎ নিজের জন্য যা পছন্দ করবে তা অন্য ভাইয়ের জন্য পছন্দ করবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, হে আবু হুরায়রা, তুমি তাকওয়াবান হও। মানুষের মধ্যে বেশি ইবাদতকারী বলে গণ্য হবে। আল্লাহর বণ্টনে সন্তুষ্ট হও; সবচেয়ে ধনী বলে গণ্য হবে। মুসলিম ও মুমিনদের জন্য তা পছন্দ করবে, যা নিজের জন্য ও পরিবারের জন্য পছন্দ করো। এবং তাদের জন্য তা অপছন্দ করবে, যা নিজের জন্য ও পরিবারের জন্য অপছন্দ করবে। প্রতিবেশীদের সঙ্গে ন্যায়সংগত আচরণ করো, তুমি মুসলিম বলে গণ্য হবে। বেশি হাসা থেকে বিরত থাকো। কারণ বেশি হাসি অন্তর বিনষ্টের কারণ। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩০৫)</p> <p><strong>২. ভুলত্রুটি ক্ষমা করা :</strong> ভাইদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি হতে পারে। তবে তা ক্ষমা করা নবী-রাসুলদের সুন্নত। মুসা (আ.) বনি ইসরাইলের অপকর্মের জন্য তাঁর ভাই হারুন (আ.)-কে দোষারোপ করেন। পরবর্তী সময়ে নিজের পাশাপাশি তাঁর ভাইয়ের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি বলেন, হে আমার রব, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাদের আপনার রহমতে প্রবেশ করান। আপনি শ্রেষ্ঠ দয়ালু।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৫১)</p> <p>বৈরী মনোভাব থেকে ইউসুফ (আ.)-কে তাঁর ভাইয়েরা তাঁকে কূপে নিক্ষেপ করেন। সেখান থেকে তিনি শাসন ক্ষমতা লাভ করেন। দীর্ঘদিন পর তাঁর সঙ্গে ভাইদের সাক্ষাৎ হলে তিনি সবাইকে ক্ষমা করে দেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন, তিনি শ্রেষ্ঠ দয়ালু।’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৯২)</p> <p><strong>৩. সম্মান করা : </strong>প্রাত্যহিক জীবনে ছোটদের ওপর বড়দের অনুগ্রহ থাকে। তাই বড় ভাইকে যথাযথ সম্মান করা জরুরি। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের প্রতি অনুগ্রহ করে না এবং বড়দের অধিকার সম্পর্কে জানে না, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৪৩)</p> <p><strong>৪. গোপনে দোয়া করা : </strong>ভাইদের প্রতি ভালোবাসা দেখানোর সর্বোত্তম মাধ্যম হলো তার জন্য দোয়া করা। আর গোপনে কারো জন্য দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। সাফওয়ান বিন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, গোপনে ভাইয়ের জন্য কোনো মুসলিম ব্যক্তি দোয়া করলে তা কবুল হয়। তার মাথার পাশে একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতা থাকে। যখন সে ভাইয়ের জন্য কল্যাণের দোয়া করে, তখন সেই ফেরেশতা বলেন আমিন এবং তেমনি তোমার জন্য হোক। (মুসলিম, হাদিস : ২৭৩৩)</p> <p> </p>