<p><em>প্রেম আর দ্রোহের কবি হেলাল হাফিজ আর নেই। আজ শুক্রবার শাহবাগের সুপার হোম হোস্টেলে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তার জনপ্রিয় পাঁচটি কবিতা এখানে দেয়া হলো। </em></p> <p> </p> <p><strong>ইচ্ছে ছিলো</strong></p> <p><br /> ইচ্ছে ছিলো তোমাকে সম্রাজ্ঞী করে সাম্রাজ্য বাড়াবো<br /> ইচ্ছে ছিলো তোমাকেই সুখের পতাকা করে<br /> শান্তির কপোত করে হৃদয়ে উড়াবো।<br /> ইচ্ছে ছিলো সুনিপূণ মেকআপ-ম্যানের মতো<br /> সূর্যালোকে কেবল সাজাবো তিমিরের সারাবেলা<br /> পৌরুষের প্রেম দিয়ে তোমাকে বাজাবো, আহা তুমুল বাজাবো।<br /> ইচ্ছে ছিলো নদীর বক্ষ থেকে জলে জলে শব্দ তুলে<br /> রাখবো তোমার লাজুক চঞ্চুতে,<br /> জন্মাবধি আমার শীতল চোখ<br /> তাপ নেবে তোমার দু’চোখে।<br /> ইচ্ছে ছিল রাজা হবো<br /> তোমাকে সাম্রাজ্ঞী করে সাম্রাজ্য বাড়াবো,<br /> আজ দেখি রাজ্য আছে<br /> রাজা আছে<br /> ইচ্ছে আছে,<br /> শুধু তুমি অন্য ঘরে।<br /> <br /> <br /> <strong>ফেরীঅলা</strong><br /> <br /> কষ্ট নেবে কষ্ট<br /> হরেক রকম কষ্ট আছে<br /> কষ্ট নেবে কষ্ট !<br /> লাল কষ্ট নীল কষ্ট কাঁচা হলুদ রঙের কষ্ট<br /> পাথর চাপা সবুজ ঘাসের সাদা কষ্ট,<br /> আলোর মাঝে কালোর কষ্ট<br /> ‘মালটি-কালার’ কষ্ট আছে<br /> কষ্ট নেবে কষ্ট ।<br /> ঘরের কষ্ট পরেরর কষ্ট পাখি এবং পাতার কষ্ট<br /> দাড়ির কষ্ট<br /> চোখের বুকের নখের কষ্ট,<br /> একটি মানুষ খুব নীরবে নষ্ট হবার কষ্ট আছে<br /> কষ্ট নেবে কষ্ট ।<br /> প্রেমের কষ্ট ঘৃণার কষ্ট নদী এবং নারীর কষ্ট<br /> অনাদর ও অবহেলার তুমুল কষ্ট,<br /> ভুল রমণী ভালোবাসার<br /> ভুল নেতাদের জনসভার<br /> হাইড্রোজনে দুইটি জোকার নষ্ট হবার কষ্ট আছে<br /> কষ্ট নেবে কষ্ট ।<br /> দিনের কষ্ট রাতের কষ্ট<br /> পথের এবং পায়ের কষ্ট<br /> অসাধারণ করুণ চারু কষ্ট ফেরীঅলার কষ্ট<br /> কষ্ট নেবে কষ্ট ।<br /> আর কে দেবে আমি ছাড়া<br /> আসল শোভন কষ্ট,<br /> কার পুড়েছে জন্ম থেকে কপাল এমন<br /> আমার মত ক’জনের আর<br /> সব হয়েছে নষ্ট,<br /> আর কে দেবে আমার মতো হৃষ্টপুষ্ট কষ্ট । </p> <p> </p> <p><strong>উৎসর্গ </strong></p> <p>আমার কবিতা আমি দিয়ে যাবো<br /> আপনাকে, তোমাকে ও তোকে।<br /> কবিতা কি কেবল শব্দের মেলা, সংগীতের লীলা?<br /> কবিতা কি ছেলেখেলা, অবহেলা রঙিন বেলুন?<br /> কবিতা কি নোটবই, টু-ইন-ওয়ান, অভিজাত মহিলা -সেলুন?<br /> কবিতা তো অবিকল মানুষের মতো<br /> চোখ-মুখ-মন আছে, সেও বিবেক শাসিত,<br /> তারও আছে বিরহে পুষ্পিত কিছু লাল নীল ক্ষত।<br /> কবিতা তো রূপান্তরিত শিলা, গবেষণাগারে নিয়ে<br /> খুলে দেখো তার সব অণু-পরমাণু জুড়ে<br /> কেবলি জড়িয়ে আছে মানুষের মৌলিক কাহিনী।<br /> মানুষের মতো সেও সভ্যতার চাষাবাদ করে,<br /> সেও চায় শিল্প আর স্লোগানের শৈল্পিক মিলন,<br /> তার তা ভূমিকা চায় যতোটুকু যার উৎপাদন।<br /> কবিতা তো কেঁদে ওঠে মানুষের যে কোনো অ-সুখে,<br /> নষ্ট সময় এলে উঠানে দাঁড়িয়ে বলে,<br /> –পথিক এ পথে নয়<br /> ‘ভালোবাসা এই পথে গেছে’।<br /> আমার কবিতা আমি দিয়ে যাবো<br /> আপনাকে, তোমাকে ও তোকে।</p> <p> </p> <p><strong>একটি পতাকা পেলে</strong></p> <p><br /> কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে<br /> আমি আর লিখবো না বেদনার অঙ্কুরিত কষ্টের কবিতা<br /> কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে<br /> ভজন গায়িকা সেই সন্ন্যাসিনী সবিতা মিস্ট্রেস<br /> ব্যর্থ চল্লিশে বসে বলবেন,–’পেয়েছি, পেয়েছি’।<br /> কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে<br /> পাতা কুড়োনির মেয়ে শীতের সকালে<br /> ওম নেবে জাতীয় সংগীত শুনে পাতার মর্মরে।<br /> কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে<br /> ভূমিহীন মনুমিয়া গাইবে তৃপ্তির গান জ্যৈষ্ঠে-বোশেখে,<br /> বাঁচবে যুদ্ধের শিশু সসন্মানে সাদা দুতে-ভাতে।<br /> কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে<br /> আমাদের সব দুঃখ জমা দেবো যৌথ-খামারে,<br /> সম্মিলিত বৈজ্ঞানিক চাষাবাদে সমান সুখের ভাগ<br /> সকলেই নিয়ে যাবো নিজের সংসারে।</p> <p> </p> <p><strong>অশ্লীল সভ্যতা</strong></p> <p><br /> নিউট্রন বোমা বোঝ<br /> মানুষ বোঝ না !</p> <p> </p> <p style="text-align:start"> </p>