ক্ষমতার পালাবদলের পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সমর্থনপুষ্ট এক হাজার ৬০০ চেয়ারম্যান আত্মগোপনে চলে গেছেন। আর সদস্য আত্মগোপনে রয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত এসব ইউনিয়নে প্যানেল চেয়াম্যান ও প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। তবে আত্মগোপনে থেকেও অনেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ‘ম্যানেজ’ করে চেয়ারম্যানশিপ ধরে রেখেছেন বলে তৃণমূল থেকে অভিযোগ এসেছে।
খুঁড়িয়ে চলছে ইউনিয়ন পরিষদ
নিজামুল হক

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দলীয় পদে নির্বাচনের সুযোগ থাকায় নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া এবং আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানরা হামলা-মামলার ভয়ে গাঢাকা দিয়েছেন। এ ছাড়া এই সময় যেসব চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য মানুষের ওপর অত্যাচার ও প্রভাব খাটিয়েছেন, তারা ৫ আগস্টের দিন থেকেই পালিয়ে আছেন।
পরিষদের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী কার্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা আত্মগোপনে থাকায় নাগরিকরা ওয়ারিশ সনদ, জন্ম ও মৃত্যু সনদসহ সংশোধিত জন্ম নিবন্ধন পেতে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। তাদের অনুপস্থিতিতে সেবাদান ব্যাহত হওয়ায় সরকার প্রশাসক ও প্যানেল চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে চার হাজার ৫৮১টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে দুই হাজার ৯৮১ জন চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করছেন। আত্মগোপনে রয়েছেন এক হাজার ৬০০ জন। প্রতিদিনিই এই সংখ্যা বাড়ছে। আত্মগোপন বা অনুপস্থিত থাকা চেয়ারম্যান পদে ৮৭২ প্যানেল চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করছেন।
অন্যদিকে দেশের চার হাজার ৫৮১টি ইউনিয়নের প্রতিটিতে ১২ জন করে মোট ৫৪ হাজার ৯৭২ জন সদস্য থাকার থাকা। কিন্তু ৫ আগস্টের পর থেকে দুই হাজার ৬১৭ জন চেয়ারম্যান আত্মগোপনে রয়েছেন। এই সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
আত্মগোপনে থেকেও চেয়ারম্যান : তৃণমূলে অভিযোগ রয়েছে, সাধারণ মানুষের ওপর আওয়ামী লীগের দলীয় চেয়ারম্যানরা জুলুম-নির্যাতন করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদকে তাদের দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করেছিলেন। নিজেই ঠিকাদারি করেছেন কিংবা কাজ না করেই বিল তুলে নিয়েছেন। এই চেয়ারম্যানরা ৫ আগস্টের পর পালিয়ে থাকলেও চেয়ারম্যান পদে বহাল রয়েছেন। শুধু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেই পদ ধরে রেখেছেন তারা। এতে বিস্ময় প্রকাশ করেছে সাধারণ মানুষ।
পিরোজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়া উপজেলাধীন তেলিখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামসু উদ্দিন ৫ আগস্টের পর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন। স্থানীয়রা খুঁজেও পাচ্ছে না। তারা নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। তবু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আত্মগোপনে থাকা শামসু উদ্দিনকে চেয়ারম্যান পদে বহাল রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা বলছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই চেয়ারম্যানেকে অনৈতিকভাবে এই সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন।
একই উপজেলার ধাওয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান টুলু বর্তমানে পলাতক। তবু তাকে স্বপদে রাখা হয়েছে। এই উপজেলার আরো কয়েকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পলাতক থাকলেও তারা স্বপদে রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর ক্ষোভের অন্ত নেই। সাধারণ মানুষ নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসিন আরাফাত রানা বলেন, ‘চেয়ারম্যানরা নিরাপত্তার কারণে উপজেলার কোনো সভায় আসেন না। প্যানেল চেয়ারম্যানকে পাঠান।’ আত্মগোপনে থাকার পরও তাকে কেন ওই পদে রাখা হয়েছে? এ বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগ দলীয় একজন চেয়ারম্যান বলেন, ৫ আগস্টের পর পর্যায়ক্রমে জেলা প্রশাসককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা এখনো একই উপজেলায় কর্মরত। এই নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সখ্য তৈরি হয়েছে। চেয়ারম্যান বা সদস্যরা আত্মগোপনে বা পালিয়ে থাকলেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
এই চেয়ারম্যান আরো বলেন, চেয়ারম্যানরা নানাভাবে নানা কৌশলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করছেন। যদিও আইন অনুযায়ী চেয়ারম্যান না থাকলে প্যানেল চেয়ারম্যান বা প্রশাসক দেওয়ার কথা। সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হলে এর দায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব (ইউনিয়ন পরিষদ) পলি কর বলেন, চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকলেও প্যানেল চেয়ারম্যান বা প্রশাসক নিয়োগের জন্য জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, শূন্য চেয়ারম্যানের তালিকা প্রতিনিয়ত আসছে। সেই আলোকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। চেয়ারম্যান পরিষদে না এলে প্রশাসক বা প্যানেল চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার বিভাগের নতুন করে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় শতভাগই আওয়ামী লীগ ও তাদের সমর্থিত দল থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন তারাও আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা বা কর্মী। তাদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য বিএনপিসহ অন্যান্য দল শুরু থেকেই দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু জনগণের ভোগান্তির বিষয়টি মাথায় রেখে সব চেয়ারম্যান বা সদস্যকে অপসারণ করেনি সরকার।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এক আদেশ জারি করে। সেখানে বলা হয়, অনুপস্থিত চেয়ারম্যানদের কাজ পরিচালনা এবং জনসেবা অব্যাহত রাখার জন্য স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯-এর ধারা ৩৩, ১০১ ও ১০২ অনুযায়ী বিভাগীয় কমিশনার বা জেলা প্রশাসক স্ব স্ব অধিক্ষেত্রের সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যানদের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করতে পারবেন। প্যানেল চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে অথবা যেকোনো জটিলতা পরিলক্ষিত হলে বর্ণিত আইনের ধারা ১০১ ও ১০২ প্রয়োগ করে বিভাগীয় কমিশনার বা জেলা প্রশাসক স্ব স্ব অধিক্ষেত্রে তার অধীন কর্মকর্তা, যেমন—উপজেলা নির্বাহী অফিসার বা সহকারী কমিশনার (ভূমি)-কে আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে সচল রেখে জনসেবা অব্যাহত রাখবেন।
সম্পর্কিত খবর

বিজিবি মোতায়েন


পালিয়েছেন ঠিকাদাররা ইতিহাসের সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন
এম আর মাসফি

২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন নেমে এসেছে ইতিহাসের সবচেয়ে নিচে। সদ্য শেষ হওয়া এই অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের হার হয়েছে মাত্র ৬৭.৮৫ শতাংশ, যা গত দুই দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে উঠে এসেছে এই চিত্র।
অর্থবছরের শুরু থেকেই এডিপি বাস্তবায়নে গতি ছিল মন্থর।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই অযাচিত ব্যয় বন্ধে কঠোরতা আরোপ প্রকল্প যাচাই-বাছাই ও অপ্রয়োজনীয় খাতগুলোতে অর্থছাড় বন্ধ বা সীমিত করে দেওয়া হয়। এর ফলে একদিকে উন্নয়ন ব্যয় নিয়ন্ত্রণে এলেও অন্যদিকে প্রকল্প বাস্তবায়ন মারাত্মকভাবে শ্লথ হয়ে পড়ে।
আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে এক হাজার ৪৬৮টি প্রকল্প ছিল এডিপির আওতায়।
অর্থবছরের শেষ মাস জুনেও দেখা গেছে ব্যয় কমে যাওয়ার প্রবণতা। এ মাসে খরচ হয়েছে ৪২ হাজার ৪৪৫ কোটি ১০ লাখ টাকা, যা সংশোধিত বরাদ্দের মাত্র ১৮.৭৭ শতাংশ।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে সবচেয়ে বড় ধস দেখা গেছে বিদেশি সহায়তানির্ভর প্রকল্প বাস্তবায়নে। সংশোধিত এডিপিতে বিদেশি ঋণ ছিল ৮১ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৫৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ৬৫.৫৩ শতাংশ। এই হারও ইতিহাসে সর্বনিম্ন। এমনকি কভিড মহামারির মধ্যেও এই খাতে ব্যয় হয়েছিল ৯২ শতাংশের বেশি।
আইএমইডির ওয়েবসাইট বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০০৪-০৫ অর্থবছর থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত কোনো অর্থবছরেই এডিপি বাস্তবায়নের হার ৮০ শতাংশের নিচে নামেনি। করোনাকালে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাস্তবায়নের হার ছিল ৮০.৩৯ শতাংশ, যা এবারকার তুলনায় ১২.৫৪ শতাংশ বেশি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৯৪.৬৬ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছিল। এ ছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ৯৪.০২ শতাংশ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৯২.৭২ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯২.৭৪ শতাংশ এবং ২০১১-১২, ২০১৩-১৪ অর্থবছরেও ৯৩ শতাংশের ওপরে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল। এককথায়, কোনো অর্থবছরেই বর্তমান অর্থবছরের মতো এত খারাপ হয়নি।
এডিপি বাস্তবায়নে খাতভিত্তিক চিত্রেও ব্যাপক বৈষম্য লক্ষ করা গেছে। কিছু কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বরাদ্দের অর্ধেকও বাস্তবায়ন করতে পারেনি। সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে স্বাস্থ্য খাত। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের বাস্তবায়ন হার ছিল মাত্র ১৫.৩৬ শতাংশ। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ খরচ করেছে ২১.৭৪ শতাংশ। এ ছাড়া ভূমি মন্ত্রণালয় ৩৭.৪৬ শতাংশ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ৩২.০২ শতাংশ, জননিরাপত্তা বিভাগ ৩৯.৫৫ শতাংশ এবং সরকারি কর্ম কমিশন ৩৭.৪৬ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে।
অন্যদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৯৯.৫৪ শতাংশ, বিদ্যুৎ বিভাগ ৯৮.১০ শতাংশ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ৯৮ শতাংশ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ৯৪.৭৭ শতাংশ, কৃষি মন্ত্রণালয় ৯১.০৭ শতাংশ এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ৯১.৫৮ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে। সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ, তারা তাদের বরাদ্দকৃত ৩৬ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকার মধ্যে ব্যয় করেছে ৩০ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা, যা ৮৪.৫০ শতাংশ।
এ বিষয়ে আইএমইডির সাবেক সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অন্য অর্থবছরগুলোর তুলনায় এবারের এডিপি বাস্তবায়ন কম হয়েছে, এটা ঠিক। তবে সরাসরি তুলনা সঠিক হবে না, কারণ গত অর্থবছরের প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। মূলত রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রভাবে এমনটি হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘পরে অন্তর্বর্তী সরকার অযাচিত অর্থ খরচে কঠোর হয়। এ কারণে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। সেই সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে অর্থছাড় কমিয়ে দেওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।’
বিশ্লেষকদের মতে, শুধু বাজেট বরাদ্দ দিলেই প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। পরিকল্পনা, দক্ষতা ও প্রশাসনিক সক্ষমতা—এই তিনের সমন্বয় না হলে এডিপি বার্ষিক টার্গেটের নিচেই থেকে যাবে। প্রতিবছর এডিপি বাস্তবায়নে গতিশীলতা আনতে সরকারের তরফ থেকে চাপ দেওয়া হলেও বাস্তব ফলাফল দৃশ্যমান নয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের দক্ষতা বাড়ানো, দীর্ঘসূত্রতা কমানো এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে কার্যকর জবাবদিহির আওতায় আনাই হতে পারে ভবিষ্যতের বাস্তবায়ন সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।

নির্বাচন প্রসঙ্গে জামায়াত আমির
কোনো মাস্তানতন্ত্র, কালো টাকার খেলা মানব না
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

নির্বাচন বিলম্বিত হলে জটিলতা সৃষ্টি হবে জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘তবে আমরা কোনো প্রি-ম্যাচিউর ডেলিভারি চাচ্ছি না। যে বাচ্চা ছয় মাসের মাথায় জন্ম নেয় তাকে ইনকিউবেটরে রাখতে হয়। ওই বাচ্চা সারা জীবন দুর্বল থাকে। আমরা এ রকম কোনো দুর্বল ও ইমম্যাচিউর গণতন্ত্র ও নির্বাচন চাচ্ছি না।
গতকাল বুধবার বিকেলে সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌর শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে জামায়াতে ইসলামীর জনশক্তি ও সুধি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘অবশ্যই দেশকে সুশৃঙ্খল অবস্থানে আনতে আমাদের একটি কার্যকর নির্বাচন লাগবে। আমরা আশা করছি, আগামী বছরের প্রথম অংশে এ নির্বাচন হবে। কিন্তু নির্বাচন কেমন চাই? আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য—অতীতের বস্তাপচা ধারার কোনো নির্বাচন আমরা চাই না এবং মেনে নেব না।
স্থানীয় নির্বাচন আগে দেওয়ার বিষয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথা বলেছি দুর্ভোগ কমানোর জন্য। বহু জায়গায় জনপ্রতিনিধি নেই—জনগণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
প্রবাসীদের ভোটাধিকারের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই গণ-অভ্যুত্থান আমরা একা করিনি। আমাদের প্রবাসীরাও এতে সমান কৃতিত্বের দাবিদার। তাঁদের ভোটাধিকার কেন থাকবে না? প্রবাসীদের ভোটাধিকার নেই বলে সরকারও তাঁদের গুরুত্ব দেয় না। তাঁদের গুরুত্ব দেওয়া হয় কেবল এক জায়গায়—রেমিট্যান্স পাঠাতে বলে।’ আল্লাহর ইচ্ছায় আওয়ামী সরকারের পতন হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘জমিনের দায়িত্ব ও কৃতিত্ব বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের।
তরুণদের কাজে লাগানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক দেশে ৪২ শতাংশের বেশি জনশক্তি রয়েছে, যাদের বয়স ৭০ বছরের বেশি। আমাদের দেশে ৩৫ বছরের নিচে যাদের বয়স তাদের সংখ্যা বেশি। এরাই একটি সমাজকে গড়ে দিতে পারে। এটি বিশাল একটি শক্তি আমাদের দেশের। আমাদের মাটির নিচে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন। মাটির ওপরেও দিয়েছেন, সমুদ্রের তলেও দিয়েছেন। কিন্তু এত সম্পদ দেওয়ার পরও কেন আমরা দেশটা গড়তে পারলাম না? উত্তর একটিই—চারিত্রিক সম্পদের অভাব।’ দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘যাঁরাই যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বে গেছেন তাঁরা প্রথমে চিন্তা করেছেন—আমার সুবিধাটা কোথায়? এরপর চিন্তা করেছেন—আমার দলের সুবিধা কোথায়? এই দুই সুবিধা নিতে গিয়ে তারা হাঁপিয়ে উঠেছেন। এরপর জনগণের দিকে ভালোভাবে ফিরে তাকানোর সময় তারা পাননি।’ তিনি দুঃখ করে বলেন, ‘এরা দুদককে ভয় পায়, আল্লাহকে ভয় পায় না। যদি তারা আল্লাহকে ভয় পেত, তাহলে জনগণের সম্পদে হাত দিত না।’

মমতাময়ী শিক্ষিকা মেহরিনের প্রশংসা করে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর শোক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত ও হতাহতের ঘটনায় শোক জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। পাশাপাশি প্রশংসা করেছেন ২০ শিশুকে বাঁচানো শিক্ষিকা মেহরিন চৌধুরীর।
গতকাল বুধবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্টের মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেন আনোয়ার ইব্রাহিম।
ওই পোস্টে তিনি লেখেন, ‘ঢাকার স্কুলে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা শোনার পর বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমার খারাপ লাগছে।