<p>মানবশরীরের উৎকর্ষ কোন পর্যায়ে পৌঁছতে পারে তার একটা প্রদর্শনী যেন অলিম্পিক। ১০০ মিটার স্প্রিন্টে মানুষ কত গতিময় হতে পারে, তার খেলা চলে। বেইজিংয়ে ২০০৮ সালে উসাইন বোল্ট যে পর্যায়ে পৌঁছেছিলেন, সেই ৯.৫৮ টাইমিংই এখনো শীর্ষবিন্দু। ভবিষ্যতে কেউ তা ছাড়িয়ে যেতে পারবেন কি না, তা সময়ই বলবে।</p> <p>তবে বোল্ট-পরবর্তী সময়ের স্প্রিন্টারদের পারফরম্যান্স বলছে, তা এখন পর্যন্ত প্রায় অসম্ভব। তাই বলে অলিম্পিকের সবচেয়ে আকর্ষক ইভেন্টটির আকর্ষণ এতটুকু কমছে না। গোটা বিশ্ব রুদ্ধশ্বাসে দেখে দ্রুততম মানব-মানবীর ক্ষিপ্র গতির ঝলকানি। প্যারিসেও গতির ঝড় উঠবে।</p> <p>সর্বশেষ জ্যামাইকা অ্যাথলেটিকস ট্রায়ালে ৯.৭৭ সেকেন্ডে দৌড়েছেন কিশান থম্পসন। আসরটির আগে ২২ বছর বয়সী এই তরুণের নাম সেভাবে শোনা যায়নি। প্যারিসে এই থম্পসন এখন বড় বাজি হয়ে উঠেছেন ১০০ মিটারে। তাঁর সর্বশেষ টাইমিং যে এখন মৌসুমেরও সেরা।</p> <p>গত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০ ও ২০০ মিটার জেতা যুক্তরাষ্ট্রের নোয়াহ লাইলস অলিম্পিকের আগে লন্ডনে সর্বশেষ ডায়মন্ড লিগে নিজের সেরা টাইমিং করেছেন, সেটি ৯.৮১। থম্পসনের টাইমিং ১০০ মিটারে সর্বকালের সেরা তালিকায়ও আছে ৭ নম্বরে।<br /> গতির ঝড় তুলবেন তাঁরাথম্পসনের তারুণ্য, না লাইলসের অভিজ্ঞতা—প্যারিসে বাজিমাত করবেন কে, সেটিই দেখার। থম্পসনের বয়সটা ভুলে যাবেন না, ২২। ঠিক একই বয়সেই বেইজিংয়ে গতিঝড় তুলেছিলেন বোল্ট।</p> <p>মূলত ২০০ মিটারের স্প্রিন্টার ছিলেন লাইলস। বুডাপেস্টে গত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে বোল্টের পর প্রথম স্প্রিন্টার হিসেবে ১০০, ২০০ ও ১০০ মিটার রিলের ত্রিমুকুট জিতে আলোচনায় চলে আসেন। জুনে আমেরিকান অলিম্পিক ট্রায়ালেও প্রথম হন ৯.৮৩ সেকেন্ডে দৌড়ে। এরপর ডায়মন্ড লিগে সেটিও ছাড়িয়ে গিয়ে নিজেকে প্যারিসের ফেভারিট ঘোষণা করেছেন নিজেই, ‘প্যারিসে আমি জিততেই যাচ্ছি। প্রতি সপ্তাহে আমি গতি বাড়াচ্ছি।’<br /> অলিম্পিক ১০০ মিটারের মুকুট ধরে রাখার লড়াইয়ে আছেন ইতালিয়ান মার্সেল জ্যাকবসও। টোকিওতে ৯.৮০ সেকেন্ডে দ্রুততম মানবের খেতাব জিতে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন তিনি। কারণ প্রথম ইতালিয়ান হিসেবে সেই কীর্তি গড়েছিলেন তিনি। এরপর তাঁর ফর্মে উত্থান-পতন গেছে, ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জিতলেও বিশ্ব চ্যাম্পিয়শিপের সেমিফাইনালে চোটের কারণে সরে দাঁড়াতে হয়। গতবার ফাইনালেই উঠতে পারেননি। তবে গত মাসে ফিনল্যান্ডে মৌসুমে প্রথমবারের মতো ১০ সেকেন্ডের নিচে দৌড়ে (৯.৯২) জানিয়েছেন, প্যারিসের জন্য তিনিও তৈরি। সর্বশেষ কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জেতা কেনিয়ার ফার্ডিনান্ড ওমানিয়ালার টাইমিং মৌসুমের দ্বিতীয় সেরা, ৯.৭৯; সম্ভাবনায় রাখতে হবে তাঁকেও। ১০ সেকেন্ডের নিচে নিয়মিত দৌড়ানো জ্যামাইকান ওবলিক সেভিল বা গত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেই রুপা জেতা বতসোয়ানার তরুণ লেটসাইল টেবোগোও থাকবেন সেরা হওয়ার লড়াইয়ে।</p> <p>মেয়েদের স্প্রিন্টে সময়টা এখন শা’ক্যারি রিচার্ডসনের। টোকিও অলিম্পিক ট্রায়ালে ডোপ পজিটিভ হওয়ায় অংশ নিতে পারেননি সেই আসরে। তবে গত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে দুই জ্যামাইকান শেরিকা জ্যাকসন ও শ্যালি-অ্যান ফ্রেজারকে হারিয়ে এবারের অলিম্পিক মুকুটের দাবি জানিয়ে রেখেছেন এই আমেরিকান। মেয়েদের ১০০ মিটারে ১৯৮৮ সালে ১০.৪৯ সেকেন্ডে দৌড়েছিলেন আমেরিকারই ফ্লোরেন্স গ্রিফিথ জয়নার। এরপর অবশ্য কোনো স্প্রিন্টারই এখনো ১০.৫০-এর সীমানা পেরোতে পারেননি। বুডাপেস্টে রিচার্ডসন সোনা জিতেছেন ১০.৬৫ সেকেন্ডে। হেরা গত অলিম্পিক জেতেন ১০.৬১ সেকেন্ডে। এবার কি গ্রিফিথ জয়নারকে ছাড়িয়ে যেতে পারবেন কেউ?</p>