<article> <p style="text-align: justify;">শীতে গর্ভবতী মায়েদের থাকতে হয় একটু আলাদা যত্নে ও সাবধানে, দরকার হয় বাড়তি সুরক্ষার। না হলে অল্পতেই সর্দিকাশি, নিউমোনিয়া ও ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মা এবং গর্ভের সন্তানটিও অসুস্থ হয়ে পড়ে। জন্ম থেকেই ঠাণ্ডাজনিত নানা সমস্যায় ভুগতে থাকে শিশু। আবহাওয়া অনুযায়ী পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম, পোশাকের সতর্কতা, নিয়মিত চেকআপ এ সময় খুব জরুরি।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;"><strong>নিয়মিত সুষম খাবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ</strong><br /> গর্ভকালীন মায়েদের পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার একটু বেশিই খেতে হয়। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে গর্ভের সন্তানের ওপরও। এ সময় মা যদি নিজের শরীর-স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হন, তবে নিজে যেমন সুস্থ থাকবেন, তেমনি সুস্থ-সবল সন্তান জন্ম দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে শতকরা প্রায় ৯৫ ভাগ।<br /> শীতকালে বাজারে লাউ, শিম, গাজর, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, পালংশাক ইত্যাদি কমবেশি কিনতে পাওয়া যায়।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">গর্ভবতী মায়েদের প্রতিদিনই এসব শাক-সবজি  খাওয়া উচিত। এগুলো ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা পূরণ করে। মা ও গর্ভের বাচ্চা সুস্থ থাকে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। পালংশাক, লালশাক, লাউশাক ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে আঁঁশ থাকে, যা খেলে কমে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">আঁঁশজাতীয় ফল ও শাক-সবজিকে বলা হয়ে থাকে অন্ত্র পরিষ্কারক। তবে যাদের রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেশি তাদের পালংশাক ও লালশাক কম খাওয়া উচিত। ফুলকপি খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। এটি যেমন সুস্বাদু তেমনি মজাদার। কিডনির সমস্যা কমায় ফুলকপি। বাঁধাকপিতে রয়েছে প্রচুর ফসফরাস, যা শীতের সময়ে ঠাণ্ডার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। শীতের শাক-সবজি ও ফলমূল গর্ভবতী মায়ের ত্বক, চুল ইত্যাদির জন্যও উপকারী।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">এ ছাড়া প্রচুর প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার যেমন–মাছ, মাংস, ডিম, বিভিন্ন ধরনের ডাল ও তেলবীজজাতীয় খাবার এ সময় বেশি খেতে হবে।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>শীতের শুষ্কতা থেকে রক্ষার উপায়</strong><br /> শীতকালে যেহেতু আমাদের ঘাম কম হয় এবং পিপাসা কম লাগে তাই স্বভাবতই এ সময় পানি কম খাই। কিন্তু গর্ভাবস্থায় এমন করা উচিত নয়। গর্ভাবস্থায় এমনিতেই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পানি পান করা উচিত। শীতকালেও এটির ব্যতিক্রম করা যাবে না। যদি পানি খাওয়ার কথা ভুলে যান তবে আজকাল মোবাইল ফোনে অনেক অ্যাপ আছে, যা আপনাকে সময়মতো পানি পান করতে মনে করিয়ে দেবে। এ ছাড়া হাতের কাছে সব সময় পানিভর্তি বোতল রাখতে পারেন, যাতে যখনই বোতলটি দেখবেন তখনই আপনার পানি খাওয়ার কথা মনে পড়ে যায়। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করলে ত্বকের শুষ্ক হয়ে যাওয়া, এমনকি ফ্লুইড কমে যাওয়া, মাথা ব্যথা ও প্রি-টার্ম লেবারের মতো জটিলতার ঝুঁকি কমায়।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>শীতে ত্বকের যত্নে ভুল করবেন না</strong><br /> হাত-পা, মুখ এবং পুরো শরীরে ময়েশ্চারাইজার মাখুন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় ময়েশ্চারাইজার মেখে ঘুমাতে যেতে পারেন। মনে রাখতে হবে, ত্বক একেবারে শুকিয়ে নিয়ে তারপর ময়েশ্চারাইজার মাখলে কাজ হবে না। ত্বকে ভেজাভাব থাকতেই ময়েশ্চারাইজার মাখতে হবে। শীতে গোসলের সময় সাবান কম ব্যবহার করাই ভালো। কারণ সাবান ত্বকে শুষ্কতা সৃষ্টি করে। এ সময় সাধারণত গ্লিসারিনসমৃদ্ধ সাবান ব্যবহার করাই ভালো। শীতে ত্বকের শুষ্কভাব দূর করতে গ্লিসারিন কিংবা অলিভ অয়েল নিয়মিত মাখতে পারেন। গ্লিসারিন হলো সবচেয়ে ভালো ময়েশ্চারাইজার। এর ফলে পেটের স্ট্রেস মার্ক বা ফাটা দাগও কম হবে।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>সুস্থ থাকতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন</strong><br /> শীতকালে আলসেমি ভর করে বলে অনেকে ব্যায়াম করতে চায় না, এমনকি অনেকেই শুয়ে-বসে দিন কাটিয়ে দেয়। এটা একেবারেই উচিত নয়। সকালে বা বিকেলে নিয়মিত ৩০ মিনিট  হাঁটাহাঁটি করুন। ব্রিদিং টেকনিক ফলো করুন। চার সেকেন্ড ধরে শ্বাস নিন, চার সেকেন্ড ধরে রাখুন, চার সেকেন্ড ধরে শ্বাস ছাড়ুন, এরপর চার সেকেন্ড বিরতি নিয়ে পুরো ব্যাপারটা পাঁচ মিনিট ধরে করুন। এটি প্রসবের সময় কাজে দেবে। এ ছাড়া মনকে শান্ত রাখার জন্য মেডিটেশন করতে পারেন।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>আরামদায়ক পোশাক পরুন</strong><br /> শীতে সোয়েটার কিংবা গরম কাপড় বাছাইয়ের দিকে মন দিন। এমন কিছু কেনা বা পরা যাবে না, যাতে পেটের ওপর চাপ পড়ে এবং চলাফেরা করতে সমস্যা হয়। লম্বা এবং সামনের দিকে বোতাম আছে এমন সোয়েটারগুলো এই সময় গর্ভবতী মায়েদের আরাম দিতে পারে। শীতের কাপড় পরিধানের পাশাপাশি জুতার দিকে নজর দিতে ভুলবেন না যেন। পা থেকে ঠাণ্ডা লেগে আপনার এবং আপনার সন্তানের সমস্যা হতে পারে। তাই যাতে পা ভালোভাবে ঢাকা থাকে এমন জুতা পরবেন এবং ঘরে মোজা পরে থাকতে পারেন। জুতার ক্ষেত্রে কেডস বা হিলবিহীন সমান তলার জুতা কোমরে ব্যথা ও হাঁটু ব্যথা নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>ঠাণ্ডা বা সর্দিকাশি হলে সতর্ক থাকুন</strong><br /> শীতে ঠাণ্ডা, সর্দিকাশি, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগের প্রকোপ বাড়ে। কানে ইনফেকশন, দাঁতে ব্যথা, মাথা ব্যথা ইত্যাদি বেশি হয়। এগুলো মায়ের পাশাপাশি বাচ্চারও ক্ষতি করে। অক্সিজেন ঘাটতিতে পড়ে বাচ্চা। তার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। আর তাই এগুলো নিয়ে খুব সতর্ক থাকতে হবে। অনেক গর্ভবতী মা গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হবে ভেবে সর্দিকাশিতে ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকেন। তবে গর্ভবতী মায়ের যদি সর্দিকাশি দু-তিন দিনের বেশি থাকে তবে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে এবং চিকিৎসা করাতে হবে। এসব সর্দিকাশি ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জারও লক্ষণ হতে পারে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। যদি মায়ের ঠাণ্ডার সমস্যা আগে থেকেই থাকে তবে ঠাণ্ডা পানি ব্যবহারে এবং ঠাণ্ডা কিছু খেতে সাবধানতা অবলম্বন করাই শ্রেয়। কারণ মায়ের কিছু হলে তা থেকে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনোভাবেই কোনো ওষুধ সেবন করা ঠিক হবে না।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>নিয়মিত চেকআপ</strong><br /> শীত বা গরম–গর্ভবতী মায়ের এবং তাঁর গর্ভের সন্তানের সুস্থতার জন্য নিয়মিত চেকআপ অবশ্যই করাতে ভুলবেন না। গবেষণায় দেখা গেছে, শীতে গর্ভবতী মায়ের উচ্চ রক্তচাপ, প্রি-এক্লাম্পশিয়া, এক্লাম্পশিয়া বা খিঁচুনি রোগের প্রবণতা বাড়ে। এসব রোগে রক্তচাপ বাড়ে, শরীর ফুলে যায়, প্রস্রাবের সঙ্গে প্রোটিন শরীর থেকে বের হয়ে যায়। অনেক সময় খিঁচুনি দেখা দেয়। এই রোগ মাতৃমৃত্যুর অন্যতম কারণ। তাই নিয়মিত চেকআপ এ সময় খুব জরুরি। এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শীত খুব উপভোগ্য ও বৈচিত্র্যময় ঋতু। শুধু সুস্থ থাকতে প্রয়োজন একটু বাড়তি যত্ন আর সাবধানতা। গর্ভবতী মায়ের জন্য যা আরো বেশি প্রযোজ্য।</p> <p>লেখক : <strong>প্রসূতি, স্ত্রী রোগ, প্রজনন হরমোনজনিত রোগ ও বন্ধ্যাত্ব রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন<br />            কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা</strong></p> </article>