<p>ফরিদপুরের নগরকান্দায় বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে কবীর ভুইয়া (৬৫) নামের এক কৃষক দল নেতা নিহত হয়েছেন। বুধবার (২১ আগস্ট) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরকান্দা পৌর সদরে দফায় দফায় এ সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। এই সংঘর্ষে আহত হয়েছে উভয় গ্রুপের অর্ধশতাধিক সমর্থক। পরে পুলিশ গিয়ে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনে।</p> <p>প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, ফরিদপুর-২ (সালথা-নগরকান্দা) আসনে এমপি পদের মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু ও জাতীয় কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল। মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে তাদের দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। যে কারণে তারা আলাদাভাবে দলীয় কর্মসূচিসহ সভা-সমাবেশ করে আসছিলেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শামা ওবায়েদ গ্রুপ ও বাবুল গ্রুপ আলাদাভাবে বিজয় মিছিল করে।</p> <p>সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ। এ সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এক পর্যায় সকাল ১১টার দিকে বাবুল গ্রুপের সমর্থকদের ধাওয়া দিয়ে নগরকান্দা পৌর সদর বাজার নিয়ন্ত্রণে নেয় রিংকুর সমর্থকরা। সংঘর্ষে উভয় গ্রুপের অন্তত ৫০ জন আহত হয়। আহতদের ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও নগরকান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে কবীর ভুইয়া নামের এক কৃষক দল নেতা হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। তিনি শহিদুল ইসলাম বাবুলের সমর্থক। নিহত কবীর সদরের ছাগলদী গ্রামের মৃত আবুল বাসার ভুইয়ার ছেলে ও উপজেলা কৃষক দলের সদস্য।</p> <p>শহিদুল ইসলাম বাবুলের অনুসারী কোদালিয়া-শহিদনগর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুজ্জামান অনু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পতনের পর কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল তার নিজ এলাকা নগরকান্দায় আসার জন্য বুধবার সকালে ঢাকা থেকে রওনা হন। আমরা তাকে স্বাগত জানানোর জন্য নগরকান্দা পৌর সদরে অবস্থান নিয়েছিলাম।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, কিন্তু অবস্থানরত নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ রিংকুর সমর্থকরা। হামলার সময় রিংকুর সমর্থকদের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজনও ছিল। শুধু তা-ই নয়, তারা কৃষক দলের এক নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করে। তা ছাড়া বাবুলের কয়েকটি তোরণ ভাঙচুর করে। তিনি বলেন, এত বড় বিজয়ের পর একজন কেন্দ্রীয় নেতা এলাকায় আসতে পারবেন না, এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা।</p> <p>শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকুর অনুসারী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি হাবিবুর রহমান বাবুল কালের কণ্ঠকে বলেন, বুধবার সকাল ১০টায় স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নগরকান্দায় একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মিরান। একই সময়ে কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের পথসভা করার উদ্যোগ নেয় তার সমর্থকরা। বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতির সঙ্গে বাবুলের সমর্থকদের কথা-কাটাকাটি হয়।</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘কৃষক দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা আসবেন আমরা বিএনপির নেতারা কিছুই জানি না। তিনি আমাদের অবগতও করেননি। তিনি বহিরাগত ও অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে এলাকায় ঢোকেন। তার বহিরাগতরা সমর্থকরা মোটরসাইকেল শোডাউন দিয়ে আসার সময় ভবুকদিয়া এলাকায় ফায়ার করে। এসব ঘটনাটি নিয়ে উভয় গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। এক পর্যায় কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষ বেধে যায়।’</p> <p>ফরিদপুরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল-নগরকান্দা) মো. আসাদুজ্জামান শাকিল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। পরিবেশ শান্ত রাখতে পৌর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার খবর পেয়েছি।’</p> <p>এই ঘটনায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের দলের সব পদ স্থগিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।</p>