<p style="text-align: justify;">কালের কণ্ঠ : ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কী লক্ষ্য নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে?</p> <p style="text-align: justify;">আবুল কাশেম মিয়া : বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত পাঠদান নিশ্চিত করতে দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দিতে হয়। শিক্ষকদের মানসম্মত পাঠদান নিশ্চিত করা এবং গবেষণার সঙ্গে তাঁদের সম্পৃক্ততা। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জায়গা শূন্য থাকায় মানের দিক থেকেও তারা পিছিয়ে পড়ছে। ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষকদের পাঠদানের পদ্ধতি ভিন্ন। শিক্ষকরা ক্লাস শেষে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার পর্যাপ্ত সময় পেয়ে থাকেন। গবেষণার জন্য মনও প্রফুল্ল থাকে। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে শিক্ষা ও গবেষণায় অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েই যাত্রা শুরু করে ইউআইইউ।</p> <p style="text-align: justify;">কালের কণ্ঠ : আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন?</p> <p style="text-align: justify;">আবুল কাশেম মিয়া : আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে গুণগত পাঠদান ও গবেষণা—এই দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দিতে হয়। গবেষণার জন্য প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক কোটি এবং সংশ্লিষ্ট গ্রুপ মালিক দুই কোটি টাকা দিচ্ছেন। অর্থাৎ প্রতিবছর তিন কোটি টাকা ব্যায়ে গবেষণার কাজ চলছে। গবেষণায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়াতে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রণোদনা দেওয়া হয়। শিক্ষকদের গবেষণায় উৎসাহ দিতে দেওয়া হয় ২৫ হাজার টাকা।</p> <p style="text-align: justify;">মানসম্মত পাঠদান নিশ্চিত করতে এবং গবেষণায় পর্যাপ্ত সময় দেওয়ার লক্ষ্যে শিক্ষকদের ক্লাসের সংখ্যা অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় কম রাখা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে নির্ধারণ করা হয়েছে ক্লাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৭০ জনেরও বেশি পিএইচডিধারীসহ ২৩৪ জন ফ্যাকাল্টি মেম্বার আছেন। শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিতে প্রতিটি সেমিস্টারে ১০ শতাংশ মেধাবী শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হয়। বৃত্তির হার ২৫ শতাংশ থেকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে শতভাগ। শিক্ষার্থীদের বছরে সব মিলিয়ে ১২-১৩ কোটি টাকা বৃত্তি দেওয়া হয়।</p> <p style="text-align: justify;">কালের কণ্ঠ : দুই দশক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় এই প্রতিষ্ঠানের সফলতা কী?</p> <p style="text-align: justify;">আবুল কাশেম মিয়া : বিশ্ববিদ্যালয়টি মাত্র ৭৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ২০০৩ সালে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী প্রায় আট হাজার। দেশ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন সফলতা দেখিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় ও এসব শিক্ষার্থী। ইউআইইউ ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি এশিয়া র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মধ্যে অন্যতম শীর্ষস্থানে রয়েছে। কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাংকিংস ২০২৪ সালে ইউআইইউ বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মধ্যে তৃতীয় এবং সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে পঞ্চম স্থানে আছে। দি ইমপ্যাক্ট র‌্যাংকিংয়ে ২০২০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত এসডিজি-১ ক্যাটাগরিতে স্থান করে নিয়েছে এবং ২০২৩ সালে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে।</p> <p style="text-align: justify;">কালের কণ্ঠ : লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন?</p> <p style="text-align: justify;">আবুল কাশেম মিয়া : প্রায়ই সংবাদপত্রে লেখা হয়, আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নেই। হাত-পা বেঁধে সাঁতার কাটতে বলা হলে জয়লাভ করা সম্ভব নয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি বন্ধের সিদ্ধান্তে অটল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এতে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা নিতে বিদেশে চলে যাচ্ছেন। এর ফলে দেশের অর্থ বিদেশে যাওয়ার পাশাপাশি আমাদের মেধা পাচারও হচ্ছে। এসব কারণে আমাদের মাস্টার্সের শিক্ষার্থীও কম। এরই ধারাবাহিকতায় ইউআইইউ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের প্রণোদনা দেওয়ার মাধ্যমে গবেষণায় উৎসাহ বাড়াতে হবে।</p> <p style="text-align: justify;">কালের কণ্ঠ : ইউআইইউয়ের গবেষণা দেশ ও জাতির কী ধরনের উপকারে আসে বলে আপনার মনে হয়?</p> <p style="text-align: justify;">আবুল কাশেম মিয়া : বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষণা ও রিসার্চ সেন্টারগুলো থেকে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানসহ গবেষণালব্ধ ফল দেশ ও সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। ইউআইইউয়ের ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্স রিসার্চ (আইএআর) ২০১৯ সাল থেকে ৫০ মিলিয়ন টাকারও বেশি ফান্ড বিভিন্ন গবেষণায় প্রদান করেছে। এ পর্যন্ত আইএআর ১৮৪টি গবেষণাপত্র উচ্চ মানের প্রকাশনায় প্রকাশ বা স্বনামধন্য জার্নালে ইনডেক্সভুক্ত করেছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় সেন্টার ফর এনার্জি রিসার্চ (সিইআর) ৫০টি প্রকল্প পরিচালনা করেছে। এই প্রকল্পগুলোর মাধ্যমেই ২০১৭ সালে সূর্যের আলো থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ যুক্ত হলো জাতীয় গ্রিডে। ‘স্মার্ট সোলার ইরিগেশন সিস্টেম’ শীর্ষক তার আরো একটি গবেষণা প্রকল্প বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় আয়োজিত অদম্য বাংলাদেশ-২০১৬ পুরস্কার লাভ করে।</p> <p style="text-align: justify;">ইউআইইউয়ের ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ, ইনোভেশন, ইনকিউবেশন অ্যান্ড কমার্শিয়ালাইজেশনের (আইআরআইআইসি বা আইরিক) অধীনে পরিচালিত একটি গবেষণাগার হলো অ্যাডভান্সড ইন্টেলিজেন্ট মাল্টিডিসিপ্লিনারি ল্যাব। এই গবেষণাগারের সিএমইডি হেলথ নামের একটি প্রকল্প এরই মধ্যে বাণিজ্যিকীকরণ করা হয়েছে, যেটি প্রতি মাসে ২০ লাখ মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে। এর স্বীকৃতিস্বরূপ ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবায় জাতীয় পর্যায়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার ২০২২ দেওয়া হয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">কালের কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।</p> <p style="text-align: justify;">আবুল কাশেম মিয়া : কালের কণ্ঠকেও ধন্যবাদ।</p>