যেকোনো জাতির জীবনে স্বাধীনতাসংগ্রাম সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও গৌরবময় ঘটনা। উনবিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে আমরা বহু জাতিরাষ্ট্রের উত্থান দেখতে পাই। জাতীয়তাবাদ এক প্রচণ্ড শক্তি হিসেবে এর পেছনে কাজ করে। বস্তুত প্রতিটি জাতির রয়েছে তার স্বাধীনতাসংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাস।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়
- ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী

ফরাসি দার্শনিক রুশো তার ‘The Social Contract’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে ‘Man is born free and he is everywhere in chains’ অর্থাৎ মানুষ স্বাধীন হয়ে জন্মগ্রহণ করে, কিন্তু সর্বত্রই সে শৃঙ্খলিত। মহান ফরাসি বিপ্লবের উদগাতা ও প্রেরণা জোগানকারী এই দার্শনিক অষ্টাদশ শতাব্দীতে পরাধীন মানুষের, বিশেষ করে ফরাসি দেশের শোষিত, নির্যাতিত এবং শৃঙ্খলিত মানুষের স্বাধীনতার জয়গান গেয়েছিলেন। যেহেতু স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার, তাই রুশো তার গ্রন্থে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতা অর্জনের দিকে পথনির্দেশ করেন।
ফ্যাসিবাদ, রাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র এবং অভিজাততন্ত্রের যুগ পেরিয়ে আমরা প্রবেশ করেছি গণতন্ত্রের যুগে। সারা বিশ্বের মানুষ আজ স্বাধীনতা এবং সাম্যের জয়গানে মুখরিত। তাই স্বাধীনতা কথাটি সবার কাছে অতি প্রিয়। তাই বলেছিলাম, যেকোনো জাতির জীবনে বা জাতির ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং গৌরবময় অধ্যায় হলো সে জাতির স্বাধীনতাসংগ্রাম। বাংলাদেশের বাঙালি জাতির সবচেয়ে মহান অর্জন তার স্বাধীনতা। এই জাতির সবচেয়ে গর্বের বিষয় মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা। বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। স্বাধীনতাযুদ্ধ তাই আমাদের পরম গর্বের বিষয়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে সংঘটিত হলেও এর ছিল এক সুদীর্ঘ প্রস্তুতিকাল। আমার মতে, পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই বাংলাদেশ সংগ্রামের ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের জাতির পিতা ও গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা সফরে আসেন। তখন তিনি এক সভায় ঘোষণা করেন যে উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। কিন্তু ঢাকার নির্ভীক তরুণ ছাত্রসমাজ এর প্রতিবাদ করে। উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে এ অঞ্চলের মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ছিল সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। তা ছাড়া তৎকালীন পাকিস্তানে বাংলাভাষী মানুষ ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। অতএব সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি জনগোষ্ঠীর ওপর ভিন্ন একটি ভাষা চাপিয়ে দেওয়া এ দেশে অগ্রসরমাণ তরুণ ছাত্রসমাজ মেনে নিতে পারেনি। বস্তুত বাংলাকেই রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতিদান তারা সমীচীন বলে মনে করে। তাই তারা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তোলে। অতএব ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয় পাকিস্তান সৃষ্টির এক বছরের মধ্যেই। ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত। ক্রমান্বয়ে এই দাবি ব্যাপকতা লাভ করে। ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এই সংগ্রামকে তীব্রতর করে এবং সে বছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে সরকারের জারি করা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ভাষার দাবিতে মিছিল বের করে। মিছিলে গুলিবর্ষণ করা হয়। বরকত, সালাম, জব্বারসহ অনেকেই শহীদ হন। এই ভাষা আন্দোলনের মধ্যেই আমি মনে করি, বাঙালি জাতীয়তাবাদের তথা বাংলা ভাষাভিত্তিক একটি জাতীয় রাষ্ট্রের বীজ বপন করা হয়।
পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের মূল লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিকভাবে পূর্ব পাকিস্তানকে পঙ্গু করে দেওয়া। তাদের শাসনামলে অর্থনৈতিক শোষণের ফলে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বিরাট অর্থনৈতিক বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। পূর্ব পাকিস্তানের সবচেয়ে অর্থকরী ফসল ছিল পাট। পাট রপ্তানি করে হাজার কোটি টাকা আয় হতো। এ ছাড়া চা, চামড়া এবং অন্যান্য দ্রব্য রপ্তানি করে যে আয় হতো তার প্রায় সবটাই পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য খরচ করা হতো। পশ্চিম পাকিস্তানের মরু অঞ্চলে সেচের অভাবে কোনো ফসল হতো না। তাই আইয়ুব সরকার সেখানে বিশাল বিশাল (যেমন—মংলা, তারবেলা) বাঁধ নির্মাণ করে সেচের ব্যবস্থা করে এবং ওই সব অঞ্চলকে করে তোলে সুজলা-সুফলা। অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তানের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ তৈরি করার তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ কখনো গ্রহণ করা হয়নি। শুষ্ক মৌসুমে সেচের কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। ফলে এককালের সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা পূর্ব বাংলার গোলা ভরা ধান আর গলা ভরা গান অনেকটা রূপকথায় পরিণত হয়। ফরাসি পর্যটক বার্নিয়ার বাংলাদেশের প্রাচুর্য এবং মাঠের সোনালি ফসল দেখে একদা অত্যন্ত মুগ্ধ হয়ে বলেছেন, ‘বাংলাদেশে প্রবেশ করার বহু রাস্তা খোলা আছে, কিন্তু এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কোনো পথ নেই।’ এর অর্থ হলো, বাংলাদেশের প্রাচুর্য এবং সৌন্দর্যে যে কেউ এমনই আকৃষ্ট হবে যে এ দেশ থেকে সে আর যেতে চাইবে না। বাস্তবিক পক্ষে, এই ছিল একদা বাংলাদেশের ছবি। কিন্তু শতাব্দীর পর শতাব্দী শাসকগোষ্ঠীর শোষণ এবং অবহেলার কারণে বাংলার প্রাচুর্য ও সৌন্দর্য হারিয়ে যায়। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসনের বৈষম্যমূলক নীতির কারণে বাংলাদেশের মানুষ দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হতে থাকে।
এ ছাড়া রাজনৈতিক নির্যাতন ও নিষ্পেষণ ছিল সীমাহীন। পাকিস্তানি শাসকরা তাদের বাঙালি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর অত্যাচারের স্টিমরোলার চালাতে থাকে। এর ফলে পূর্ব বাংলার মানুষ পাকিস্তানি শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয় এবং ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম পরিচালনা করে। দুর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার ভিত্তি শক্ত ও দৃঢ় হতে থাকে এবং একটি নতুন জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টির সম্ভাবনার দ্বার প্রসারিত হতে থাকে। এ ছাড়া বাঙালি সংস্কৃতিকে উপেক্ষা করে ভিন্ন সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা এ দেশের জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে। যেকোনো রাজনৈতিক আন্দোলনের সাফল্যের পেছনে থাকে একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক আন্দোলনের সাফল্যের চাবিকাঠি ছিল এক দুর্বার সাংস্কৃতিক আন্দোলন।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে অবিভক্ত ভারতে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ ঘটেছিল, তারা ছিল মূলত হিন্দু সমাজকেন্দ্রিক। তারা ভারতের স্বাধীনতাসংগ্রামে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। অনুরূপভাবে ভারত বিভক্তির পর নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রে মূলত একটি মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান ঘটে। পাকিস্তান রাষ্ট্রে অনগ্রসর মুসলিম জনগোষ্ঠীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিচর্চার সুযোগ সৃষ্টি হয়। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই বিকাশমান নব্য মধ্যবিত্ত শ্রেণি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব প্রদান করে। অতএব দেখা যায়, পাকিস্তান রাষ্ট্রকাঠামোর মধ্যে এবং এই রাষ্ট্রের অনুসৃত পদ্ধতির মধ্যে এর ধ্বংসের বীজ নিহিত ছিল। অর্থাৎ যে মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশের সীমিত সুযোগ রাষ্ট্র করে দিয়েছিল, তারপর তার আশা-আকাঙ্ক্ষার সব পথ বন্ধ করে দেওয়ায় এই শ্রেণির নিজের আত্মবিকাশের স্বার্থে নতুন রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখে। এর ফলে পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভাঙন এবং অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নতে সাধারণ নির্বাচন, ছাপ্পান্নতে স্বায়ত্তশাসনের দাবি, আটান্নতে আইয়ুবের সামরিক শাসন, বাষট্টিতে শিক্ষানীতি বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের সাধারণ নির্বাচন ও স্বাধিকার আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ—এসবই বাঙালির সমন্বিত মুক্তিসংগ্রামের একেকটি উজ্জ্বল অধ্যায়, যার নেতৃত্বে ছিলেন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা। তারা ছিলেন উল্লেখিত মধ্যবিত্ত শ্রেণিরই অংশ। তারা ছিলেন বাঙালি জাতির বিবেক। তাই তাদের দিতে হয়েছে চরম মূল্য।
বিরাট এই পথপরিক্রমায় আমরা হারিয়েছি অসংখ্য নিবেদিতপ্রাণ বীর বাঙালিকে। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বিজয়ের ঠিক প্রাক্কালে আমরা যা হারিয়েছি, যে ক্ষতচিহ্ন জাতির বুকে অঙ্কিত হয়েছে, সেটি মোছার নয়। দেশের সর্বোত্কৃষ্ট এই সন্তানদের হারিয়ে জাতি হয়ে পড়েছিল অভিভাবকশূন্য, মেধাহীন। দেশকে নেতৃত্বহীন করার মানসে দেশের সন্তান এই বুদ্ধিজীবীদের একেক করে ঘর থেকে বের করে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। লাশের পর লাশে ভরে গিয়েছিল ঢাকার রায়েরবাজার ও মিরপুরের বধ্যভূমিগুলো।
নিজ নিজ ক্ষেত্রে উজ্জ্বল বিভায় অধিষ্ঠিত এই নিবেদিতপ্রাণ মনীষীর একটিই ছিল অপরাধ, সেটি হলো দেশের প্রতি তাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা আর মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অবিচল আস্থা। তাদের কারো কারো ভূমিকা আপাতদৃষ্টিতে স্ববিরোধী মনে হলেও দেশমাতৃকার প্রতি অপরিসীম অনুরাগ তাদের সব কিছুর ঊর্ধ্বে তুলে মহিমান্বিত এক আসনে অধিষ্ঠিত করেছে।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পুরো ৯ মাসই হানাদার বাহিনী বাঙালি নিধন চালিয়েছে। মাঠে-ময়দানের যুদ্ধে হানাদারের বুলেট উপেক্ষা করে তাদের পরাজিত করার চেষ্টায় বাঙালি মুক্তিযোদ্ধারা অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধের ময়দানে মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছেন। কিন্তু মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মুমূর্ষু এই অকুতোভয় বাঙালি সূর্যসন্তানরা হানাদারদেরও মোকাবেলা করেছেন। হানাদার বাহিনী যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে বাংলার গ্রাম-গঞ্জ, শহর-বন্দর, লোকালয় সর্বত্র জনবসতিতে হামলা করে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, চালিয়েছে নির্বিচার হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ। তাই বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির জন্ম যখন কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র, তখনই পশ্চিম পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতিকে পঙ্গু করে ফেলার জন্য চালায় ইতিহাসের ঘৃণ্যতম বুদ্ধিজীবী নিধন। চূড়ান্ত পরাজয়ের পূর্বাহ্নে রক্তলোলুপ হায়েনার দল বাঙালির মেধাবী শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশার শ্রেষ্ঠ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছে।
বিজয় এবং মৃত্যু—দুটি এমনভাবেই পরস্পর সংলগ্ন ছিল বলে ডিসেম্বর আজ আমাদের কাছে হাসি-কান্নার মিলিত প্রবাহ। ডিসেম্বর মাসে যেসব বুদ্ধিজীবী শহীদ হয়েছিলেন, ডিসেম্বর এলেই তাদের কথা মনে হবে, এমন নয়। তারা মিশে আছেন আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাপনে, আমাদের মননে, আমাদের নিত্য প্রেরণায়। তারা আমাদের জীবনে শুধু একেকজন ব্যক্তিমাত্র নন, তারা আমাদের ঐতিহ্যের, আমাদের অগ্রগতির পথনির্দেশক আলোকবর্তিকা। উজ্জ্বলতম অংশীদার।
৯ মাস যুদ্ধের পর লাখ লাখ প্রাণের বিনিময়ে অবেশেষে ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের আনন্দে একদিকে যেমন আত্মহারা হই, অন্যদিকে ১৪ ডিসেম্বর প্রিয় শহীদ বুদ্ধিজীবী ও বন্ধুদের মৃত্যুতে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ি। তাদের এই আত্মদান বৃথা যায়নি, বৃথা যেতে পারে না। তারা তাদের জীবনের বিনিময়ে আমাদের উপহার দিয়েছেন স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র।
১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করার পর অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই আশা করা হয়েছিল যে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে বিশ্বে সাম্য ও গণতন্ত্রের এক উজ্জ্বল উদাহরণ। ইতিহাসের এক পরম দুর্ভাগ্য এই যে আমাদের সেই বহুলালিত স্বপ্ন থেকে যায় সুদূর পরাহত, কোনো এক অজ্ঞাত অন্ধকারে নিমজ্জিত। এই অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির অন্যতম প্রধান কারণ গণতন্ত্রহীনতা। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে গণতন্ত্র হচ্ছে উন্নয়ন ও অধিকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাহন, যার অনুপস্থিতি বা বিকৃতি একটি রাষ্ট্র বা সমাজের প্রকৃত বন্ধনমুক্তির সব পথ রুদ্ধ করে দেয়।
বাংলাদেশে গত দেড় দশকে প্রতি মুহূর্তে প্রত্যক্ষ করেছি ফ্যাসিবাদের বিলুপ্ত প্রেতাত্মার পুনরুত্থান। এক নিষ্ঠুর ও নিকৃষ্ট ফ্যাসিবাদের কবলে পড়ে আমাদের স্বদেশ; এর স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জনগণের মৌলিক চাহিদা তথা সামগ্রিকভাবে গণতন্ত্রের স্বাভাবিক সুস্থতা। গত দেড় দশকে এই ধারা গণতন্ত্রের কবর রচনা করে জনগণের সর্বপ্রকার অধিকার হরণ করেছে। অপহরণপ্রক্রিয়ার অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে নির্বাচন চুরি।
বিশ্বের মুক্তিপাগল মানুষের মতোই বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম, ছাত্রসমাজ ও জনগণ স্বৈরাচারের শাসন থেকে মুক্তির লক্ষ্যে গণ-আন্দোলন গড়ে তোলে। সব দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি, বুদ্ধিজীবী ও শ্রমিক সংগঠন, ছাত্র ও যুব সম্প্রদায়ের সঙ্গে দেশের সুধীসমাজ একযোগে এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহজুড়ে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব ও অভূতশ্রুত আন্দোলনে হাসিনার স্বৈরতন্ত্রের ঐতিহাসিক পতন ঘটে। এ জন্য ছাত্র-জনতাকে জানাই প্রাণঢালা অভিনন্দন। গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে বৈষম্যহীন এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার এই পথযাত্রা সফল হোক—এই কামনা করি।
লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক
উপাচার্য এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত
সম্পর্কিত খবর

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান : চাওয়া-পাওয়ার দাগ-খতিয়ান
- তুহিন খান

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রায় এক বছর উপলক্ষে জুলাই ও আগস্ট মাসজুড়ে বেশ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানসূচি ঘোষিত হয়েছে ইন্টেরিম সরকারের তরফে। কিন্তু এক বছরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব কতটা মেলানো গেল? জুলাইয়ের সুফল কার ঘরে কতটা উঠল?
গণ-অভ্যুত্থান নিজেই একটি বড় প্রাপ্তি। যে অভ্যুত্থানের ফলে আওয়ামী লীগের মতো একটি নিকৃষ্ট ফ্যাসিস্ট শাসকগোষ্ঠীর পতন হলো, তার চেয়ে বড় প্রাপ্তি এ দেশের জনগণের জীবনে খুব কমই আছে। এই অভ্যুত্থানের আগে-পরে দেশে যে বিপুল জনসচেতনতা ও সৃষ্টিশীল গণক্ষমতার উদ্বোধন আমরা দেখেছি, তরুণদের মধ্যে যে স্বচ্ছ রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা ও দেশ গঠনের দৃঢ় প্রত্যয় জন্ম নিতে দেখেছি, তা এককথায় মহাকাব্যিক।
গত বছর ৮ আগস্ট ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার ভারত পলায়নের পরিপ্রেক্ষিতে যে সরকারটি গঠিত হয়, তার ধরনটি ঠিক কী হবে, কী হলে আরো ভালো হতো, এ নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা আছে। অন্তর্বর্তী এই সরকারটি গঠিত হয়েছে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করেই; আবার গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের কেউ কেউ এ সরকারের অংশ হয়েছেন।
জুলাইয়ের বিপ্লবী আকাঙ্ক্ষা, অন্তর্বর্তী সরকারের এই ধরন ও রাজনৈতিক শক্তিগুলোর অবস্থান—এই তিনের টানাপড়েন শেষমেশ যে জাতীয় আকাঙ্ক্ষায় থিতু হয়েছে, তার আলংকারিক নাম : সংস্কার। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আগ থেকেই বেশ কিছু রাজনৈতিক দল ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্ল্যাটফর্মের কারণে ‘রাষ্ট্র সংস্কার’ ধারণাটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ফলে সেটির প্রায়োগিক ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে এবং কিভাবে ও কতটুকু হবে এই সংস্কার—সেটিই প্রধান আলোচ্য বিষয়। বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন হয়েছে দেশে এবং সেসব কমিশন বড় বড় রিপোর্টও তৈরি করেছে।
রাজনৈতিক ফ্যাসিবাদের স্বাভাবিক ফলাফল হিসেবেই যে সামাজিক ফ্যাসিবাদ ও ধর্মীয় চরমপন্থা সুপ্তাবস্থায় প্রায় এক যুগ ধরে আস্তে আস্তে গাঢ় হয়ে উঠছিল, তা অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে নিঃশেষিত হয়নি, বরং নানা ধরনের সামাজিক ও ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী প্রবণতা নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন শক্তিতে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি ও তার দেশি-বিদেশি এজেন্টরা এই প্রবণতাগুলোকে অনেক রংচং মেখে বাস্তবের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি বিকট করে উপস্থাপন করার চেষ্টায় রত। জুলাইয়ের শক্তিগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন ও মেরুকরণও এই পরিস্থিতিটিকে বেশ ঘোলাটে করে তুলছে। সে ব্যাপারে সতর্ক থেকেও বলা যায় যে এই ঘটনাগুলো ঘটছে।
‘মব’ শুনলেই অনেকে খেপে যান আজকাল, তার সংগত কারণও আছে নিশ্চয়ই। কিন্তু সত্য কথা এটিই যে ৫ আগস্টের পর দেশে নানা রকম মব তৈরি হয়েছে। সামাজিক-নৈতিক পুলিশগিরি বাড়ছে। এসবের সঙ্গে জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বা বিপ্লবী তৎপরতার যোগ সামান্য। ধর্মীয় চরমপন্থাও এই পরিস্থিতিকে একটি সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করছে।
বিপ্লবী ছাত্র-জনতা ও সরকারের কাজ ছিল সমাজে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা এই নতুন প্রতিবিপ্লবী, হঠকারী ও ফ্যাসিস্ট তৎপরতাগুলোরও বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, যেখানে মোটাদাগে স্পষ্টতই তারা ব্যর্থ হয়েছে। এতে সমাজে সরকার ও অভ্যুত্থানের নেতৃত্বের ব্যাপারে যে মাত্রারই হোক, একটি নেতিবাচকতা তৈরি হয়েছে।
৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ের একটি প্রধান জনদাবি ও গুরুতর কাজ ছিল বিচার ও আনুষ্ঠানিক রিকনসিলিয়েশন প্রসেস শুরু করা। কিন্তু এই দাবিটি বিদ্যমান কোনো রাজনৈতিক শক্তিই সততার সঙ্গে সামনে আনতে পেরেছে বলে মনে হয় না। নির্বাচনী রাজনীতির হিসাব-নিকাশ, সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর টানাপড়েন, মামলা বাণিজ্যের পলিটিক্যাল ইকোনমি, ঘোলা পানিতে মাছ শিকারিদের নানা রকম অপতৎপরতা, বিচারহীন পুনর্বাসনের বিবিধ উদ্যোগ আর সরকারের অস্পষ্ট ও গতিহীন নানা কর্মকাণ্ডের মধ্যে বিচারের দাবিটির বহুলাংশ অপচয় হয়েছে। একটি ফ্যাসিস্ট সরকারকে উত্খাত করার পর অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি জাতীয় অখণ্ডতা রক্ষা ও সামাজিক-রাজনৈতিক রিকনসিলিয়েশন নিশ্চিতে যে ধরনের ব্যাপক, বহুমুখী ও কুশলী প্রাতিষ্ঠানিক তৎপরতা প্রয়োজন ছিল, সরকার সেটি করতে বেশ খানিকটা ব্যর্থই হয়েছে বলা যায়।
অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলটিকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে এক ধরনের কৌতূহল, আকাঙ্ক্ষা ও দরদ তৈরি হয়েছে। তবে এই আকাঙ্ক্ষা নিরঙ্কুশ নয়। নির্বাচনী রাজনীতিতে ঢুকে পড়ায় বিদ্যমান রাজনৈতিক কাঠামোর অনেক বিষয়ই আত্তীকৃত করতে হয়েছে দলটির, যা তাদের নানাভাবে বিতর্কিত করেছে। আবার এই দলটির গতি-প্রকৃতি কী হবে, তার কল্পনার বাংলাদেশটি ঠিক কেমন হবে—এসব বিষয়েও নানা ধরনের অনুমান তৈরি হয়েছে। এসব সত্ত্বেও পরিবর্তনকামী বা সংস্কারবাদীরা এখনো এই দলটির ওপর ভরসা রাখতে চাইছেন বলেই মনে হয়।
প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির এই হিসাব চলবে। কিন্তু জুলাইয়ে ঘটে যাওয়া মহাকাব্যিক অভ্যুত্থানটি আমাদের জাতীয় জীবনে যে বিপুল পরিবর্তনের সম্ভাবনা হাজির করেছে, তা অসামান্য। আমরা এর কতটা কাজে লাগাতে পারব, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে বাংলাদেশ যত দিন থাকবে, তত দিন মুক্তির এই অসামান্য সম্ভাবনা এ দেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করে যাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
লেখক : কবি, অনুবাদক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করা প্রয়োজন
- ড. নিয়াজ আহম্মেদ

করোনার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে যে ছেদ তৈরি হয়েছিল, তা এখনো আমরা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এ ছাড়া গত বছরের গণ-আন্দোলনে তিন-চার মাস আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। বিশ্ব্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত আমাদের এইচএসসি নামক পাবলিক পরীক্ষা। কোনো কারণে এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে গেলে আমাদের ভর্তি কার্যক্রমও পিছিয়ে যায়।
আমরা যদি জানুয়ারি মাসে এসএসসি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে এইচএসসি পরীক্ষা নিতে পারি, তাহলে জুলাই মাসে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা যাবে।
উচ্চশিক্ষা যেহেতু বহু রকমের, সেহেতু এখানেও অনেক বিষয় রয়েছে। মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার বিষয়টি সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ দ্বারা পরিচালিত হয়। তাই তারা বেশ দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারে। সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যদি একটি পরীক্ষায় ভর্তি নিতে পারত, তাহলেও সময় বাঁচত। কিন্তু তা সম্ভব হয়ে উঠছে না। আমাদের মানে শিক্ষকদের এখানে করণীয় রয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ভাবতে হবে। আমরা প্রতিবছর একই পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা এবং এর কার্যক্রম সম্পন্ন করি। ফলে দ্রুত কার্যক্রম শুরু করতে সমস্যা নেই। ফলাফল প্রকাশের এক সপ্তাহের মধ্যে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, এক মাসের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষা এবং সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে পুরো ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব।
আমাদের কাছে মনে হয়, সরকারের আন্তরিকতা এবং শিক্ষকদের সহযোগিতা এখানে মুখ্য বিষয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, কতটা সহজে এবং দ্রুত আমরা আমাদের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারি। আমাদের টার্গেট যদি থাকে জানুয়ারি মাসের প্রথম দিন ক্লাস শুরু করা, তাহলে টার্গেট অনুযায়ী কাজটি করতে হবে। একদিকে শিক্ষার্থীরা পাবলিক পরীক্ষা দেবে, অন্যদিকে আমরা ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করব। সরকার যদি পাবলিক পরীক্ষা আগে এবং দ্রুত সম্পন্ন করতে পারে, তাহলে আমরাও দ্রুত ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারব। ধরুন, এখন এইচএসসি পরীক্ষা চলছে। আশা করা যায়, সেপ্টেম্বরে ফলাফল প্রকাশিত হবে। আমরা অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষা শেষ করতে পারি। তিন মাসে কি ভর্তি পরীক্ষার যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা যথেষ্ট নয়? আমাদের দরকার সরকারের ইচ্ছা এবং সবচেয়ে বড় দরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়, শিক্ষকদের মধ্যে সহযোগিতা ও আন্তরিকতা। আমরা আশা করব, আগামী শিক্ষাবর্ষে যেন জানুয়ারি মাসেই শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়।
লেখক : অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
nahmed1973@gmail.com

কজন জানে জুলাই সনদ কী
- গাজীউল হাসান খান

সমাজ ও বৃহত্তরভাবে রাষ্ট্র মেরামত কিংবা পরিবর্তনের জন্য যেসব কাঙ্ক্ষিত বা আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়, মূলত সেগুলোকেই সংস্কার বা ‘রিফর্ম’ বলা হয়। দেশের সংবিধান থেকে শুরু করে জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নাগরিকরা কিংবা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সেসব সংস্কারের উদ্যোগ নিতে পারেন। তবে শেষ পর্যন্ত জাতীয় কিংবা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সেসব সংস্কার প্রস্তাবকে কার্যকর করতে হলে একটি আইনানুগ ভিত্তি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। বাংলাদেশে চব্বিশ সালের গণ-অভ্যুত্থান-উত্তর সময়ে অতীত স্বৈরাচারী কিংবা ফ্যাসিবাদী শাসন এবং আর্থ-সামাজিক শোষণ-বঞ্চনার অবসানের জন্য দল-মত-নির্বিশেষে সবাই রাষ্ট্র মেরামতের একটি জোরালো দাবি উত্থাপন করেছে।
এ কথা ঠিক যে বিগত জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থান কোনো সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ছিল না। তবু সেটি আমাদের বিগত ৫৩ বছরের স্বাধীনতা-উত্তর আন্দোলনের ইতিহাসে একটি বিরাট মাইলফলক। স্বৈরাচারী কিংবা ফ্যাসিবাদী শাসন-শোষণের কবল থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে একটি বিশাল পদক্ষেপ। সুতরাং কোনো বিবেচনায়ই সে অভ্যুত্থানকে খাটো করে দেখা যাবে না।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান অধ্যাপক ড. ইউনূসসহ আমাদের রাজনৈতিক মহলের অনেকেই এরই মধ্যে গণ-অভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন। এতে তাঁদের অনেকের মধ্যেই বিগত ১১ মাসে ঘটে যাওয়া অনেক ব্যর্থতার চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে অনেকে দায়ী করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের নেতা ও অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে চিন্তা-চেতনা ও দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাবকে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সাবেক নেতারা এরই মধ্যে বহুবার অভিযোগ করেছেন যে অভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সময়োচিতভাবে একটি ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণার অভাবে রাজনৈতিক মহলে এখনো অনেক বিভ্রান্তি এবং ভবিষ্যৎ দিকদর্শনের অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। ফলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই তাদের নিজ নিজ দলের পতাকাতলে অবস্থান নিয়েছে। ভুলে গেছে সেই মহান গণ-অভ্যুত্থানের জাতীয় প্রেক্ষাপটটি। রাজনৈতিক ঐক্য কিংবা রাজনৈতিক কর্মসূচিগত সমন্বয়ের বিষয়টি। ফলে চারদিকে মাথা তোলার অবকাশ বা সুযোগ পেয়েছে পতিত আওয়ামী সরকারের দোসর কিংবা বশংবদরা। সে পরিস্থিতিতে ড. ইউনূস হতাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘আমাদের একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বিফলে যেতে বসেছে। আমরা মুখে বলছি, সাবেক ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রতিনিধিরা এখনো সর্বত্র বসে রয়েছে। আমরা তাদের সরাতে পারিনি। আমরা তাদের স্বভাব-চরিত্র বদলাতে পারিনি।’ এ অবস্থায় অনতিবিলম্বে সর্বক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে না পারলে এবং সব জায়গায় কাঙ্ক্ষিত সংস্কার কিংবা পরিবর্তন সাধন করতে ব্যর্থ হলে ভবিষ্যতে ক্ষমতার রাজনীতিতে কোনো নির্বাচিত সরকারই স্থিতিশীল হতে পারবে না। এতে অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে জাতীয় জীবনের সব ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন, উন্নয়ন কিংবা সমৃদ্ধি আশা করা হয়েছিল, তা বিফলে যেতে বাধ্য হবে। এখানেই অতীতে সংঘটিত সব গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে ২০২৪-এর জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের মৌলিক এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিগত কিছু পার্থক্য ছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারটি ছিল গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী একটি ভিন্নধর্মী রাজনৈতিক উদ্যোগের ফসল, কিন্তু তাতে অন্য অনেক কিছু থাকলেও ছিল না রাজনৈতিক দূরদর্শিতা।
ফরাসি বিপ্লব রাশিয়ায় সংঘটিত সমাজতান্ত্রিক (বলশেভিক) বিপ্লবের মতো ছিল না। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রায় শেষ দশকে (১৭৮৯-১৭৯৯) ফ্রান্সে সংঘটিত সে বিপ্লব ছিল একটি ‘দশক স্থায়ী সামাজিক-রাজনৈতিক অভ্যুত্থান’। ফ্রান্সের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের উল্লেখযোগ্য সময়। সে অভ্যুত্থানের শুরুতেই অর্থাৎ ১৭৮৯ সালে তার নেতারা ফ্রান্সের নাগরিক কিংবা মানুষের অধিকার নিয়ে ফ্রেঞ্চ চার্টার নামে একটি সনদ ঘোষণা করেন। সে সনদই ফরাসি বিপ্লবের মৌলিক চরিত্র বা বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরে। তাদের মুক্তি, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের নীতি প্রকাশ করে। এর পাশাপাশি মানুষের মৌলিক অধিকার ও দায়দায়িত্বের পথনির্দেশ প্রদান করে। সেদিক থেকে পর্যালোচনা করলে বাংলাদেশে সংঘটিত জুলাই-আগস্টের বিপ্লবও ছিল মূলত একটি গণ-অভ্যুত্থান। কিন্তু সে সফল অভ্যুত্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের নেতাদের কী প্রত্যাশা ছিল, সেগুলো তাঁরা একটি সনদ আকারে নিজেরা প্রকাশ করেননি। তাঁরা অপেক্ষা করেছেন এই দায়িত্বটি সম্পন্ন করার ব্যাপারে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য, যাদের সঙ্গে সে গণ-অভ্যুত্থান কিংবা রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। সে কারণেই জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান সম্পর্কিত ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা কিংবা নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়টি অনিশ্চিতভাবে ঝুলে রয়েছে। জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের কোনো কিছু উদযাপনের ক্ষেত্রেই কোনো গুরুত্ব দেখা যাচ্ছে না। এ রকম একটি রাজনীতিগত দোদুল্যমান অবস্থায় কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থান আমাদের জীবনে কী পরিবর্তন এনেছে? যদি কোনো পরিবর্তন না-ই হয়ে থাকে, তাহলে দেশে ফ্যাসিবাদের পতন বা তাদের উত্খাত করা হলো কিভাবে? কেন এত বিশাল গণ-আন্দোলন ও সাধারণ মানুষের এত আত্মত্যাগ? অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান বলেছেন, ‘অতীতের অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী কিংবা ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন বদলাতে আমরা রাষ্ট্র মেরামতসহ সর্বত্র সংস্কার সাধনের যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছি, সেগুলো আমাদের প্রস্তাবিত জুলাই সনদে স্থান পেতে হবে।’ দল-মত-নির্বিশেষে জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে প্রস্তাবিত ঘোষণাগুলো বাস্তবায়িত করতে হবে। কিন্তু কী সে প্রস্তাবিত ঘোষণা, তা এখনো জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেক দলই জানে না। বিএনপিসহ বিভিন্ন দেশপ্রেমিক দলের নেতাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কোনো আলোচনায়ই এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বসা হয়নি। কারা কারা হবেন এই প্রস্তাবিত সনদে স্বাক্ষরকারী? এ পর্যন্ত তারও কোনো হদিস নেই। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং দেশি-বিদেশি আধিপত্যকে প্রতিরোধ করে আমরা কিভাবে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করব—প্রস্তাবিত সনদে আমরা সে ব্যাপারে সবার সম্মিলিত প্রতিশ্রুতি চাই।
লেখক : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক
gaziulhkhan@gmail.com

বাবনপুরে জেগে আছেন শহীদ আবু সাঈদ
- ড. মো. ফখরুল ইসলাম

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে জুলাই ২০২৪ মাসটি এক অনন্য মর্যাদার দাবিদার। এই মাসে বারবার রক্ত ঝরেছে, শিক্ষার্থী-শ্রমিক-জনতার আহ্বানে কেঁপে উঠেছে শাসকের প্রাসাদ। সেই উত্তাল জুলাইয়ের সূচনা ঘটেছিল রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) মাটি রঞ্জিত করে আবু সাঈদ নামের এক শিক্ষার্থীর রক্তে। পীরগঞ্জের বাবনপুর নামক গ্রামে একটি বাঁশের বেড়া দেওয়া কবরে তিনি শুয়ে আছেন নীরবে, নিঃশব্দে।
রংপুরে শিক্ষার বাতিঘর হয়ে উঠেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্রের অব্যবস্থাপনা, নিয়োগ বাণিজ্য, রাজনৈতিক দখল ও অবমূল্যায়নের কারণে নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বারবার পরিণত হয়েছে ক্ষোভের আগ্নেয়গিরিতে।
জুলাই বিপ্লব তাই কেবল রংপুরের বা বেরোবির নয়।
এই শহীদ যেন আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, বাংলাদেশে ছাত্ররাই বারবার যুগ পরিবর্তনের সূচনা করেন। হোক তা ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার সংগ্রাম কিংবা স্বৈরাচারবিরোধী লড়াই। আমরা চাই, এই শহীদের রক্ত বৃথা না যাক।
জুলাই বিপ্লবের এই প্রথম শহীদের স্মরণে রাষ্ট্র কি আরো একটু নত হবে, নাকি আবারও চলবে এড়িয়ে যাওয়ার নীলনকশা? যদি তা-ই হয়, তবে আগামী দিনগুলো আরো অস্থির, আরো উত্তাল হবে।
‘যেখানে বাধাগ্রস্ত হবে, সেখানেই জুলাইকে তুলে ধরতে হবে’—এই চেতনা দেরিতে এলো কেন? এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে রাষ্ট্রযন্ত্রের চেহারার ভেতরে, যা দিন দিন হয়ে উঠছে আরো দুর্বিনীত, অসহনশীল ও জনবিচ্ছিন্ন। যখন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা পাস করার পর চাকরির জন্য ঘুরে বেড়ান, তাঁদের দাবি উপেক্ষা করে, বিরোধিতা করে, এমনকি দমন করতে গিয়েই সরকার তার আসল চেহারা উন্মোচন করে। ঠিক এখানেই জুলাই এসে দাঁড়িয়েছিল প্রতিবাদের ভাষা হয়ে। এটি কেবল একটি মাস নয়, এটি একটি ধারণা, একটি রাজনৈতিক চেতনা, একটি ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতার নাম, যা শেখায় জুলুমের বিরুদ্ধে চুপ থাকা মানেই অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া। তাই যখনই কোথাও প্রতিবাদ বাধাগ্রস্ত হবে, যখনই মত প্রকাশের অধিকার পদদলিত হবে, তখনই জুলাইকে তুলে ধরতে হবে প্রতিরোধের এক ছায়াছবির মতো।
বাবনপুরে শায়িত জুলাই বিপ্লবের প্রথম শহীদ, তাঁর জীবন দিয়ে আমাদের আবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, প্রতিবাদের মুখ বন্ধ করে রাখা যায় না। তাই তাঁর মৃত্যু আর দশটি মৃত্যুর মতো নয়, বরং এটি এক বিস্মৃত সময়কে জাগিয়ে তোলার মুহূর্ত, যেখানে জুলাই আবার ফিরে এসেছে জনতার পাশে দাঁড়াতে।
এখন বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষাঙ্গনে, কর্মক্ষেত্রে, সংবাদমাধ্যমে, এমনকি সংসদের ভেতরেও যদি অন্যায় চাপিয়ে দেওয়া হয়, তবে সেখানেই জুলাইকে তুলে ধরতে হবে। কারণ এই মাস শেখায় শুধু স্মৃতিচারণা নয়, স্মৃতি দিয়ে বাস্তব পরিবর্তনের দাবিও তোলা যায়।
তাই আমাদের দায়িত্ব এই শহীদের মৃত্যু যেন অন্ধকারে হারিয়ে না যায়। রাষ্ট্র যদি কখনো ন্যায়ের পথ ছেড়ে নিপীড়নের দিকে হাঁটে, তাহলে প্রতিটি গ্রামে বাবনপুরের মতো একেকটি জুলাই জন্ম নিতে পারে।
এমন সময় হয়তো আবারও প্রশ্ন উঠবে, জুলাই-জুলাই বলে এত মাতামাতি কেন? আমরা তখন উত্তর দেব, এর কারণ আমাদের প্রতিবাদের জায়গাগুলো একে একে নিঃশব্দ হয়ে যাচ্ছে। আর যেখানে হাতে মুষ্টি তুলে পথে নেমে সমস্বরে চিৎকার করা নিষিদ্ধ, সেখানে জুলাই-ই হয়ে উঠতে পারে একমাত্র ভাষা।
শহীদ আবু সাঈদের মৃত্যু কেবল একটি গুলি বা একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল না। এটি একটি সাবধানবাণীও ছিল। বেরোবির পার্কের মোড়ের অদূরে যা ঘটেছিল, তা ছিল আসলে পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি। যেখানে কথা বলা মানেই অপরাধ, দাবি জানানো মানেই রাষ্ট্রদ্রোহ মনে করা হয়েছিল।
সেদিন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা যখন শান্তিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়েছিলেন, তখন রাষ্ট্র কী করেছিল? তারা কেন সেদিন তাঁদের দিকে বন্দুক তাক করল? সেদিন যে তরুণ শহীদ হলেন, তিনি যেন গোটা বাংলাদেশের হয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রাণ বিসর্জন দিতে বদ্ধপরিকর ছিলেন, তৎকালীন ক্ষমতাধরদের কাছে তা অনুধাবন করা কি খুব জটিল বিষয় ছিল?
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রতিবাদের ঐতিহ্য খুব গর্বের। ভাষা আন্দোলন, গণ-অভ্যুত্থান, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন—সবখানেই ছাত্রসমাজ পথ দেখিয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালে এসেও ছাত্রসমাজের কণ্ঠ রোধ করতে গুলি ব্যবহার করতে হয়, এটি কি রাষ্ট্রের দুর্বলতা নয়? আগামী দিনে আমরা এ ধরনের আর কোনো রাষ্ট্রীয় দুর্বলতা ও ভয় দেখতে চাই না।
জুলাই বিপ্লবের এই প্রথম শহীদ শব্দটি যেন আমাদের সবার কাঁধে নতুন দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়। এর মানে, আরো অনেক শহীদ আসতে পারেন, যদি রাষ্ট্র তার দমননীতি থেকে ফিরে না আসে। যদি কথা বলার জায়গা, ভিন্নমতের জায়গা একে একে নিঃশব্দ হয়ে যায়, তাহলে শেষ ভরসা হয় রক্ত। বেরোবির ইংরেজি পড়ুয়া অকুতোভয় ছাত্র আবু সাঈদ পুলিশের তাক করা বন্দুকের নলের সামনে বুক উঁচিয়ে গুলি খেতে দ্বিধাহীন না থাকলে আজ কী করতাম আমরা, তা কি কেউ ভেবে দেখেছেন?
জন্ম নিলেই সবাইকে একদিন না একদিন নির্বাক হতে হয়। কিন্তু সবার কথা কি সব মানুষের অনন্তকালব্যাপী মনে থাকে? শহীদ আবু সাঈদ বাবনপুরে শুয়ে আমাদের শিখিয়ে দিচ্ছেন, দেশের যেকোনো প্রয়োজনে যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে নির্বাক থাকার দিন শেষ।
লেখক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন
fakrul@ru.ac.bd