<p>২০২৪ সালের প্রথম দিনেই ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে জাপান। ৭ দশমিক ছয় মাত্রার এ ভূমিকম্পে এখনো পর্যন্ত ৭৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে বহু মানুষ। স্বাভাবিকভাবেই মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা। <br /> জাপানে ভূমিকম্প নতুন ঘটনা নয়। পৃথিবীর সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ দেশের তালিকাতে একদম ওপরের সারিতে রয়েছে জাপান। এর কারণ তাঁদের ভৌগলিক অবস্থান। </p> <p>কিন্তু ভৌগলিক অবস্থানের কারণেই কেন জাপানে এত ঘন ঘন ভূমিকম্প হয়?</p> <p>এ প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে, আগে জানতে ভূমিকম্পের কারণ কী?</p> <p>ভূকাঠামো মোটামুটি তিন রকম। একদম ওপরে ভূত্বক — এটা লবণ, মাটি, শিলাপাথর দিয়ে তৈরি প্রায় ৩০ কিলোমিটার পুরু কঠিন ভূত্বক। এর ঠিক নিচে ২৯০০ কিলোমিটার পুরু এক ধরনের ঘন ও আঠালো অংশ স্তর। সবার শেষে তিন হাজার কিলোমিটার ব্যাসের কেন্দ্রীয় অঞ্চল। দ্বিতীয় স্তরের ঘন ও আঠালো স্তরের ওপর ভাসছে ভূত্বক। ভূত্বক বেশ কয়েকটি ছোটবড় খন্ড খন্ড প্লেটে বিভক্ত। এগুলোকে বলে টেকটনিক প্লেট। </p> <p>এই প্লেটগুলোর মধ্যে রয়েছে সাতটি বড় মহাদেশীয় প্লেট, যেমন — প্রশান্ত মহাসাগরীয়, ইউরেশীয়, আফ্রিকান, আটলান্টিক, উত্তর আমেরিকান, দক্ষিণ আমেরিকান এবং ইন্দো-অষ্ট্রেলীয় প্লেট। এছাড়াও ভারতীয় প্লেটের মতো বেশ কয়েকটি ছোট ছোট প্লেটও আছে। </p> <p>এসব প্লেট কিন্তু একেবারে স্থির নয়। কারণ দ্বিতীয় স্তরের ঘন আঠালো স্তরের ওপর ভাসছে প্লেটগুলো। তাই আঠলো তরলের চলাচলের কারণে খুব ধীরে হলেও প্লেটগুলোও চলতে থাকে। চলতে চলতে কখনো একে অন্যের সঙ্গে ধাক্কাও লাগে। যেমন ভারতীয় উপমহাদেশীয় প্লেট একসময় আফ্রিকার কাছাকাছি ছিল। ধীরে ধীরে এটা এশিয়ার দিকে সরে আসে, একসময় এশীয় প্লেটের সঙ্গে ধাক্কা লেগে এর সঙ্গে যুক্ত হয়। </p> <p>ছোটখাটো ধাক্কার কারণে ভূমিকম্প হয়। এছাড়া পৃথিবীকে আঘাত করে ভূপৃষ্ঠের নিচে জমা হওয়া শক্তিও। এই শক্তিগুলো আসলে কী? ধরা যাক, বহুদিন একটা জায়গায় গ্যাস জমা হয়েছে, এই গ্যাসের চাপ একসময় এত বেশি হয় যে পৃথিবীর ওপরের স্তরের শিলাগুলোকে ধাক্কা দেয়। সেই ধাক্কায় কেঁপে ওঠে পৃথিবী। <br /> এই ধাক্কা দেওয়ার যে ব্যাপারটা ঘটছে, এটা শুধু গ্যাসীয় বস্তুর ক্ষেত্রে হচ্ছে, তা নয়। হতে পারে ভূপৃষ্ঠের নিচে কোথাও গলিত লাভা জমা হয়েছে, সেখানকার তাপমাত্রা গেছে অনেক বেড়ে, তখন সেখানকার পদার্থগুলোর ঘনত্ব কমতে থাকবে, অণুগুলো পরস্পর থেকে দূরে সরে যেতে চাইবে। দূরে সরে যাওয়ার জন্য বাড়তি জায়গা তো দরকার। পদার্থগুলো যে জায়গায় আটকে ছিল, সে জায়গা তো বড় হচ্ছে না। তাই অণুগুলোর একটা বাড়তি চাপ তৈরি করবে। যে জায়গায় ওইসব গলিত লাভা আটকে ছিল সেখাকার প্লেটগুলো অনুভব করবে বাড়তি চাপ। যখন চাপ খুব বেশি হবে, তখন ভূপৃষ্ঠ কেঁপে উঠবে। </p> <p>সব সময় লাভাগুলো বেরিয়ে আসতে পারে না। কিন্তু কখনো চাপ এত বেশি হয়, প্রচণ্ড শক্তিতে ভূপৃষ্ঠকে ধাক্কা দেয়। আগেই বলেছি এই ধাক্কার কারণে ভূপৃষ্ঠে কম্পন ওঠে। কিন্তু যদি ভূপৃষ্ঠের কোথাও ফাটল থাকে বা দুর্বল কোনো জায়গা থাকে, সেখান থেকে প্রচণ্ড গতিতে বেরিয়ে আসে লাভা। যেটাকে আমরা অগ্ন্যুৎপাত বলি। যে ফাটল থেকে লাভা বেরিয়ে আসে, সেটাকে বলা হয় অগ্নেয়গিরি। লাভা বেরিয়ে আসার সময় ভূপৃষ্ঠকে প্রবলভাবে ধাক্কা মারে। ফলে কেঁপে কেঁপে ওঠে পৃথিবী।</p> <p>এছাড়া প্লেটগুলো কাছাকাছি এসে একে-অন্যের কিছুটা ওপরেও চলে আসতে পারে। তাই বলে সারা জীবন একটা প্লেট আরেকটা প্লেটের ওপরে চড়ে বসে থাকবে, তা তো হবে না! প্রাকৃতিক কারণেই তাকে সরে আসতে হবে। আর এই সরে আসার চেষ্টা যখন চলে, তখনই ভূমিকম্প হয়।</p> <p>জাপানের ভূমিকম্পের পেছনে টেকটনিক প্লেটের নড়াচড়া যেমন আছে, আছে অগ্নুৎপাতের লাভা উদগীরণও। জাপান ভৌগলিকভাবে ‘প্যাসিফিক রি অব ফায়ার’ অঞ্চলে অবস্থিত। এই রিং অব ফায়ার হলো প্রশান্ত মহাসাগরের ধারে ‘ঘোড়ার নালের’ মতো দেখতে একটি টেকটনিক ফাটল রেখা। এই রেখায় প্রশান্ত মহাসাগীয়র প্লেটের সঙ্গে ইউরেশীয়, ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান, উত্তর আমেরিকান ও দক্ষিণ আমেরিকান প্লেটগুলো স্পর্শ করে আছে। প্লেটগুলোর যেকোনো একটি নড়ে উঠলেই এই রেখার ভূমিকম্প হতে পারে। এছাড়া এই রেখা বরাবর প্রচুর সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে। প্লেটগুলোর নড়াচড়ার ফলে এসব আগ্নোগিরি লাভা উদগীরণ করতে শুরু করে, ফলে ভূমিকমম্পের মাত্রা ও স্থায়ীত্ব ততো বাড়ে। জাপান এই রেখায় অবস্থিত বলে এখানে ভূমিকম্পের প্রবণতা এত বেশি। </p> <p>সূত্র: লাইভসায়েন্স ও ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক</p>