<p style="text-align:justify">রংপুর অঞ্চলে তিন দফার বন্যায় তিন জেলার ১৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এসব বিদ্যালয়ের মধ্যে ৯টি অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয়েছে, বাকি ৬টি স্থানান্তরিত করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। </p> <p style="text-align:justify">এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অন্যের বাড়ির উঠান ও গাছ তলায় পড়ালেখা করছে। পর্যাপ্ত অর্থ এবং নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করতে পারছেন না বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। রংপুর বিভাগীয় উপ-পরিচালকের কার্যালয় বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।</p> <p style="text-align:justify">সূত্রটি জানিয়েছে, চলতি বন্যা মৌসুমে রংপুর অঞ্চলে তিন দফায় বন্যার কবলে পড়ে। এতে শতাধিক বিদ্যালয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আংশিক ক্ষতির মুখে পড়া এসব বিদ্যালয় ক্ষুদ্র মেরামতের বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে সংস্কার করে শ্রেণি কার্যক্রম চলমান রয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">জানা যায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গত ২৮ আগস্ট বন্যায় বিদ্যালয়ের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য চেয়ে পত্র দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। ওই পত্রের আলোকে গত বুধবার (২ অক্টোবর) রংপুর বিভাগীয় উপ-পরিচালকের কার্যালয় থেকে তথ্য দেয়া হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">তাতে দেখা যায়, রংপুর অঞ্চলে বন্যায় নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে-এমন বিদ্যালয় দেখানো হয়েছে ৬টি। এরমধ্যে রয়েছে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুরের ১ নম্বর খামার দামারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাইবান্ধা সদরের নুনগোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খারজানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চিতুনিয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও লালমনিরহাটের চর বুদারু কাশিয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।</p> <p style="text-align:justify">বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালানোর মতো অবস্থা না থাকায় লালমনিরহাটের চর বুদারু কাশিয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের অন্য বিদ্যালয় সংযুক্ত করা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">এছাড়াও ভাঙ্গনের কারণে কুড়িগ্রাম সদরের চিতুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাইবান্ধার সাঘাটা পাতিলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একই উপজেলার দিঘলকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর বিএসএম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুড়িগ্রামের উলিপুর পূর্ব দই খাওয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একই উপজেলার দক্ষিণ চর গুজিমারী সরকারি প্রাথমিক বদ্যিালয়, কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চিলমারী চরশাখা হাতি ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চররাজিবপুর শংকর মাধবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলায় সব থেকে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অন্যেও বাড়ির উঠান ও গাছতলায় পড়ালেখা করছে। বৃষ্টি আসলে বা আকাশে মেঘ দেখা দিলেই বিদ্যালয় ছুটি দেয়া হচ্ছে। এতে করে মানসম্মত পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীরা।</p> <p style="text-align:justify">বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব বিদ্যালয় মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্টদের একাধিকবার পত্র দেয়া হয়েছে। তবে কোনো সাড়া মেলেনি।</p> <p style="text-align:justify">গাইবান্ধা সদরের খারজানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়লে প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম জানান, ‘স্কুল নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর অন্য মানুষের জায়গায় স্কুল করা হয়। জায়গা বা বিল্ডিং কোনোটাই নাই। ডিপিওতে জানানো হয়েছে। </p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, বিদ্যালয়ে ১০০ জনের মতো শিক্ষার্থী রয়েছে। এখন যে জায়গায় স্কুল আছে, সেটাও ভাঙার উপক্রম হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">গাইবান্ধার নুনগোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান ওরশন মিয়া জানান, বিদ্যালয় ভেঙে গেছে। যা কিছু ছিল স্থানীয় এক ব্যক্তির বাড়িতে রেখে দেওয়া হয়েছে। এখন আমি অন্যের বাড়ির উঠানে স্কুল চালাই। বিদ্যালয়ের জমি এবং বরাদ্দ কিছুই পাইনি।</p> <p style="text-align:justify">স্থানীয় অভিভাবক নূর ইসলাম জানান, ‘নদী স্কুল নিয়ে গেইছে কিন্তু ছৈলের পড়া লেখা হচ্ছে না। স্কুলের ঘর নাই ছাপরাত (টিনের ছাউনি) কোনোমতে ক্লাস করে। বৃষ্টি আসলে অমনি ছুটি দেয়। এমন করি কী পড়া লেখা হইবে ছৈলদের? স্কুল ভাঙছে কিন্তু আর ঠিক করার নাম নাই’।</p> <p style="text-align:justify">কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম জানান, কিছু বিদ্যালয়ে সংস্কারের জন্য অর্থ পাওয়া গেছে। তবে, বিদ্যালয় পুনঃনির্মাণ এবং অবকাঠামো তৈরি করতে কোনো অর্থ পাওয়া যায়নি।</p> <p style="text-align:justify">গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নবেজ উদ্দীন জানান, ‘এসব বিদ্যালয়ের তথ্য ডিজিতে পাঠানো হয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে বিষয়টি তার জানা নেই’।</p> <p style="text-align:justify">প্রাথমিক শিক্ষার রংপুর বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. আজিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, ঢাকা থেকে তথ্য চেয়েছে, আমরা তথ্য দিয়েছি। তবে, এসব বিদ্যালয় পুনঃসংস্কার এবং পুনঃনির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ পেয়েছে কি-না তা জানা নেই।</p>