<p>দেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল বা গারো পাহাড়ের বুনো পথ দিয়ে হাঁটার পথে চোখে পড়তে পারে একে। কোনো গাছ বা অন্য কোনো অবলম্বনকে আঁকড়ে ধরে থাকে সবুজ লতানো গাছ আর তাতে ঝুলে থাকে বড়সড় শিমের মতো ফল। গড়নে তলোয়ারের মতো দেখতে। এই ফলটিই মৌ শিম। আমরা শিম বলতে যে সবজিটিকে চিনি তা আর মৌ শিম একই গোত্রের (Fabaceae) ফেবেসি সদস্য। এই উদ্ভিদের পাতাও শিমের মতো।</p> <p>পাহাড়ি অঞ্চলের বাইরেও বিক্ষিপ্তভাবে মৌ শিম দেখা যায়। এত দিন না হলেও অতিসম্প্রতি এর বাণিজ্যিক চাষ শুরু করা হয়েছে। সম্প্রতি ময়মনসিংহ-জামালপুর সড়কে অবস্থিত ময়মনসিংহের চেচুয়া বাজারের পাশে এক গ্রামে মৌ শিম গাছের দেখা পেয়েছি। সর্বশেষ গত ২১ নভেম্বর ময়মনসিংহের স্বদেশী বাজারে পুষ্টিকর এই সবজি বিক্রি হতে দেখেছি।</p> <p>মৌ শিম আরোহী, লতানো বর্ষজীবী থেকে বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Canavalia gladiata। তলোয়ারের মতো আকৃতির কারণে ইংরেজিতেও ‘সোর্ড বিন’ নামে পরিচিত। মৌ শিম একটি আবাদি জাতের উদ্ভিদ। আফ্রিকার মাদাগাস্কার ও তানজানিয়া এবং বাংলাদেশ ও ভারতে সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে গারো শিম, হাতি শিম, রাজ শিম, মাখন শিম ইত্যাদি নামে পরিচিত। এর ভর্তা খুব সুস্বাদু। বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রিয় সবজি এটি। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও গারো পাহাড় অঞ্চলের বাজারে পাওয়া যায় মৌ শিম।</p> <p>তলোয়ার শিমের নতুন একটি জাত উদ্ভাবন করেছে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। এর নাম রাখা হয়েছে বারি জ্যাক শিম। তবে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো তলোয়ার শিমের চেয়ে বারি জ্যাক শিম-১-এর বৈশিষ্ট্য বেশ আলাদা। জ্যাক শিমের গাছ তলোয়ার শিমের মতো দীর্ঘজীবী ও লতানো নয়। অনেকটা বেগুনগাছের মতো খাটো ও ঝোপালো। জ্যাক শিমের পড বা শুঁটি সবুজ, ঘোড়ার কেশরের মতো বাঁকা; যে কারণে একে ঘোড়া শিমও বলে। জ্যাক শিম ২০ থেকে ২৪  সেমি লম্বা এবং ১.৮ থেকে ২.২ সেমি প্রশস্ত হয়। বারো মাস ফলে। ফুল গোলাপি, বীজ সাদা। থোকায় থোকায় সবুজ শিম ধরে। ফুলে পরাগায়নের ১০ থেকে ১২ দিন পর শিম খাওয়ার উপযোগী হয়। প্রতিটি গাছে ফলের সংখ্যা হয় ৪৫ থেকে ৫৫টি। অর্থাৎ একেকটি গাছ থেকে এক-দেড় কেজি শিম মেলে। গাছের আকার ছোট হওয়ার কারণে এটি টবেও চাষ করা সম্ভব। বীজ লাল। এই উদ্ভিদের মূল মাটির অনেক গভীরে যায়। গাছটি ছায়া সহ্য করতে পারে।</p> <p>মৌ শিমের আদি নিবাস পূর্ব এশিয়া। বাহারি উদ্ভিদ হিসেবে ঘরের বেড়ায় বা বাড়ির সামনেও লাগানো হয়। এর বীজ থেকে পাওয়া উপাদান রক্তের ইউরিক এসিড শনাক্তকরণে ব্যবহৃত হয়। সবুজ সার তৈরিতেও মৌ শিম গাছ ব্যবহার করা সম্ভব। কোরীয় দ্বীপে বমি, হাঁপানি, আমাশয়, কফ, মাথা ব্যথা, মৃগীরোগ ও সিজোফ্রেনিয়ার চিকিৎসায় এই উদ্ভিদ ব্যবহৃত হয়। শ্রীলঙ্কা, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, চীন, কোরিয়া ও জাপানে এটি সাবান তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।</p>