ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫
২ শ্রাবণ ১৪৩২, ২১ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫
২ শ্রাবণ ১৪৩২, ২১ মহররম ১৪৪৭

সবুর খানের ‘জাদুর চেরাগ’

  • দুবাই, কুয়ালালামপুরে অর্থপাচারের অভিযোগ
  • গত ১৫ বছর শিক্ষা ও আইসিটি খাতে একচ্ছত্র কর্তৃত্ব
  • আওয়ামী এক ডজন মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সবুর খান এখন এপিইউবির চেয়ারম্যান
  • ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিতে পরিবারতন্ত্র, ইচ্ছামতো লুটপাট
  • সরকারি জায়গা দখল করে ইউনিভার্সিটির বড় অংশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সবুর খানের ‘জাদুর চেরাগ’
সবুর খান

সবুর খান। বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান। নামেই যিনি আলোর ফেরিওয়ালা। বাস্তবে উদ্যোক্তার আড়ালে শিক্ষা ব্যবসায়ী হিসেবেই যাঁর অধিক পরিচিতি।

সবাইকে ম্যানেজ করার দুর্লভ দক্ষতা যাঁর বিপুল বিত্ত-বৈভব আর টাকা কামানোর নেপথ্যের রহস্য। অনেকে বলেন, সবুর খানের এই জাদুর চেরাগ তাঁকে শিখিয়েছে অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের টাকা করায়ত্ত করে কিভাবে একের পর এক প্রতিষ্ঠান ও কম্পানি খুলে নিজের ও পরিবারের আখের গোছাতে হয়। সরকার, নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সবার চোখে ধুলা দিয়ে তিনি রীতিমতো দুর্নীতি আর অনিয়মকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, ইউজিসিসহ বিভিন্ন সূত্রের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে ও নিজস্ব অনুসন্ধান থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

তথ্য-উপাত্ত বলছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ ট্রাস্টিরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুদান দেবেন, কিন্তু বিনিময়ে কখনোই এক টাকাও নিতে পারবেন না। অথচ ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাব কাজে লাগিয়ে এসব নিয়মের ধার ধারেননি সবুর খান। বরং নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকা ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) অর্থ সরানোসহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

তিনি ওই ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান। গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার যখন ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তখন বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির (এপিইউবি) চেয়ারম্যান ছিলেন শেখ হাসিনার নিকটাত্মীয় শেখ কবির হোসেন। আর সেই কমিটিরই সদস্য ছিলেন সবুর খান। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর শেখ কবির পালিয়ে গেলে ভোল পাল্টে ঠিকই তিনি বগলদাবা করেছেন এপিইউবির চেয়ারম্যান পদ। ফলে এখনো তিনি শিক্ষা ও আইসিটি খাতে সমানতালে রাজত্ব করে যাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত সরকারের এক ডজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ছিল সবুর খানের দহরম-মহরম। অনেকেই বলতেন, তিনি সজীব ওয়াজেদ জয়ের আশীর্বাদপুষ্ট। শেখ হাসিনার সঙ্গেও উপস্থিত ছিলেন একাধিক অনুষ্ঠানে। তিনি ছিলেন ওবায়দুল কাদের, আ হ ম মোস্তফা কামাল, আনিসুল হক, শেখ ফজলে নূর তাপসের ঘনিষ্ঠজন। তবে সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ ছিলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের। তাঁদের বদৌলতে তিনি শিক্ষা ব্যবসা, টেস্টেড সফটওয়্যার, মেডিক্যাল  সফটওয়্যার, ফার্মেসি ম্যানেজমেন্ট এবং ইআরপি সফটওয়্যারের একচেটিয়া ব্যবসা করেন। তাঁর কম্পানির বিরুদ্ধে পাইরেটেড সফটওয়্যার সরবরাহেরও অভিযোগ রয়েছে। আইসিটি ও শিক্ষা খাতে আইটিসামগ্রী সরবরাহের দরপত্রে অনেকটাই অপ্রতিদ্বন্দ্বী থাকত তাঁর প্রতিষ্ঠান।  অভিযোগ রয়েছে, মালয়েশিয়ায় একাধিক বাড়ি কিনে সেকেন্ড হোম সিটিজেনশিপ নিয়েছেন সবুর খান। তিনি আমেরিকায়ও বাড়ি কিনেছেন এবং সেখানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে। ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে রয়েছে ২০০ কোটি টাকার কর ফাঁকির অভিযোগ।

সূত্র জানায়, কয়েক বছর ধরে প্রতি সেমিস্টারে গড়ে এক শ কোটি টাকার ওপর অর্থ আদায় হয়ে থাকে বলে ধারণা করেন এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এই অর্থের একটি বড় অংশ সবুর খান বিদেশে পাচার করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর এই টাকা পাচারকে সহজ করতেই দুবাইয়ে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা খোলার উদ্যোগ নিয়েছেন সবুর খান। সম্প্রতি আরব আমিরাতের রাস আল খাইমায় ড্যাফোডিলের ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করে ছাত্র ভর্তির বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। সেখানে অন্য ব্যবসায়ও বিনিয়োগ আছে তাঁর।

জানা যায়, সবুর খানের ব্যবসার সূত্রপাত হয়েছিল ঢাকার ১০১/এ, গ্রিন রোডে। সেখানেই ড্যাফোডিল কম্পিউটার্সের শুরু। ১৯৯৮-৯৯ সালে তিনি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কম্পিউটার আমদানি শুরু করেন। এরপর হার্ডওয়্যার থেকে সফটওয়্যার ব্যবসায়ও সবুর খানের কারসাজি সম্প্রসারণ হয়।

জানা যায়, ২০০২ সালে বিএনপি সরকারের আমলে তিনি তৎকালীন বিএনপির প্রভাবশালী নেতা শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিনের বদৌলতে যৌথভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপত্র সংগ্রহ করেন। কিন্তু ১/১১-এর পটপরিবর্তনের পর বিএনপির সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেন। সে সময় শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন বিদেশে চলে যান। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ট্রাস্টি বোর্ড থেকে অবৈধভাবে তুহিনকে বাদ দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বোর্ড পুনর্গঠন করেন। এরপর তা ইউজিসি থেকে অনুমোদন করান। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে তাঁর একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, এ জন্য প্রতারণার ইকোসিস্টেম গড়তে সবুর খান প্রতিষ্ঠা করেন ড্যাফোডিল পরিবার নামে প্রতিষ্ঠান। গ্রুপ অব কম্পানির আদলে এই ড্যাফোডিল পরিবারে রয়েছে অঙ্গ অনেক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রয়েছেডিসিএল, ওভাল ফার্নিচার, ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনাল, সবুজ প্রিন্টার্স, ডিওএল, বাংলাদেশ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল লি., স্কিল জবস, গ্রিন গার্ডেন, ড্যাফোডিল এডুকেশন নেটওয়ার্ক ইত্যাদি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ক্ষেত্রেই উন্মুক্ত দরপত্র আহবান করা হয় না। মূলত কাগজে-কলমে টেন্ডার দাখিলের মাধ্যমে কাজ পায় ড্যাফোডিল পরিবারেরই কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠান। যার মাধ্যমে বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দামে পণ্য কিংবা সেবা দেখিয়ে মূলত সরানো হয় বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ডে জমা পড়া শিক্ষার্থীদের টাকা।

সূত্র জানায়, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে দেওয়া হয় একটি করে ল্যাপটপ। ল্যাপটপ দেওয়ার এই কাজটি মূলত করে সবুর খানেরই আরেক নামসর্বস্ব কম্পানি ডিসিএল তথা ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স লিমিটেড। সস্তা চাইনিজ পার্টসকে অ্যাসেম্বল করে বানানো ১০-১৫ হাজার টাকার ল্যাপটপকে ৭০-৮০ হাজার টাকা ধরে অসহায় শিক্ষার্থীদের তা গছিয়ে দিচ্ছেন সবুর খান। 

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ফার্নিচারসহ ইন্টেরিয়রের কাজ করে ওভাল ফার্নিচার। প্রিন্টিং ও প্রেসের সব কাজ করে সবুজ প্রিন্টার্স। ইন্টারনেট সেবার কাজ করে ডিসিএল। বিভিন্ন ইভেন্টে ক্যাটারিংয়ের কাজ করে গ্রিন গার্ডেন। এসবই সবুর খানের নামসর্বস্ব কম্পানি।

সব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই মূলত অপ্রদর্শিত অর্থকে সাদা করা হয় এবং বাড়তি খরচ দেখিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা আকারে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের টাকা তছরুপ করা হয়। স্কিল জবসের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন নিয়োগ আয়োজনের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা ড্যাফোডিল পরিবারের অন্য কম্পানিতে স্থানান্তর করা হয়। অন্যদিকে হলগুলো পরিচালনা করে ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনাল। এই ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনালের নামে শিক্ষার্থীদের হলের অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তথ্য-প্রযুক্তি খাতের কম্পানি ড্যাফোডিল কম্পিউটার্সের শেয়ার নিয়ে ব্যাপক কারসাজির অভিযোগ রয়েছে। শেয়ার কারসাজির কারণে তিনজনকে ছয় লাখ টাকা জরিমানাও করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বর্তমানে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি পরিচালনার জন্য ১১ সদস্যের ট্রাস্টি বোর্ড রয়েছে। এতে তিনি নিজে চেয়ারম্যান, তাঁর স্ত্রী সাহানা খান ভাইস চেয়ারম্যান, মেয়ে সামিহা খান, বোন রওশন আরা বেগম এবং শ্যালক মো. ইমরান হোসেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে রয়েছেন। রীতিমতো পারিবারিক এ প্রতিষ্ঠানে সবুর খান যা করছেন তা নিয়ে কথা বলার কেউ নেই। 

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ইউজিসির নীতিমালা অনুসারে ল্যাবসংশ্লিষ্ট কোর্সের প্রতি সেকশনে মাত্র ৫০ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানোর অনুমোদন থাকে। তবে ড্যাফোডিলে প্রতি সেমিস্টারে শুধু সিএসই কোর্সেই ভর্তি করানো হয় হাজারের ওপর শিক্ষার্থী। এই পুরো প্রতারণা ব্যবস্থায় চতুরভাবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় কম দেখানো ও ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতি সেমিস্টারে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে শুধু তিন ভাগের এক ভাগের হিসাবটাই ইউজিসি বা মন্ত্রণালয়ে পাঠায় তারা।

সূত্র জানায়, আশুলিয়ায় যে জমিগুলোর ওপর বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত তা ছিল একসময় ভাওয়াল রাজার সম্পত্তি। পরে এগুলো বাংলাদেশ সরকারের বন বিভাগের অধীনে চলে আসে। আশুলিয়ার দত্তপাড়ার এলাকার ওই সব সরকারি জমি পরিত্যক্ত ছিল। ২০১৩ সালের পরে সেসব জমি দখল করে একটু একটু করে গড়ে উঠতে থাকে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিশাল ক্যাম্পাস। একাডেমিক ভবন, বিভিন্ন নান্দনিক স্থাপনাসহ কয়েক শ একর জমির ওপর স্থাপিত বিশাল ক্যাম্পাসটির বেশির ভাগ অংশ সরকারি বন বিভাগের জমিতেই গড়ে উঠেছে।

সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করে নিজের এবং স্ত্রী-কন্যার ব্যক্তিগত নামে একটি ওষুধ কম্পানির বিপুল পরিমাণ শেয়ার কিনেছেন সবুর খান। এই তিনজনের নামে ওই কম্পানির ৫৭.৬ শতাংশ শেয়ার হস্তান্তর করা হয়েছে। যার মোট মূল্য ১৯ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর এই অর্থের পুরোটাই দেওয়া হয়েছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংক হিসাব থেকে।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে সবুর খানের ব্যক্তিগত মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি তা ধরেননি। তবে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির জনসংযোগ শাখার ঊর্ধ্বতন সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ার হাবিব কাজলকে ফোন দিলে তিনি ঢাকার বাইরে আছেন বলে জানান। অভিযোগের ব্যাপারে আপাতত কোনো স্টেটমেন্ট দিতে পারবেন না বলে জানান।

তবে কিছুদিন আগে আরেকটি গণমাধ্যমে দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের লিখিত বক্তব্য থেকে জানা যায়, প্রতিহিংসাপরায়ণ একটি স্বার্থান্বেষী মহল দীর্ঘদিন ধরে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে সরকারি বা ব্যক্তিগত জমিজমা দখলসংক্রান্ত নানা রকম অপপ্রচার চালাচ্ছে।

তবে সবুর খানের অর্থপাচার, বিদেশে বাড়ি-ব্যবসা, বিশ্ববিদ্যালয়কে পারিবারিক করে তোলাসহ অন্যান্য অভিযোগের ব্যাপারে কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি। আনোয়ার হাবিব কাজলের পাঠানো লিখিত বক্তব্যের শেষে বলা হয়, এ বিষয়ে যদি কারো কোনো বক্তব্য থাকে তাহলে সব দলিল ও প্রমাণাদি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কছে সংরক্ষিত আছে, আগ্রহীদের সরাসরি এসে দেখার অনুরোধ করেন তিনি।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেন নাহিদ

    আজ দেশব্যাপী বিক্ষোভ এনসিপির
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেন নাহিদ
খুলনায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ছবি : কালের কণ্ঠ

গোপালগঞ্জে মুজিববাদীরা হত্যার উদ্দেশ্যে জঙ্গি কায়দায় এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট ও মুজিববাদীরা অস্ত্র নিয়ে এই হামলা চালিয়েছে, তারা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে তিনি সরকারকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন। 

গতকাল বুধবার রাতে তিনি খুলনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।

তিনি দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তিনি।

অন্যদিকে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তারে গোপালগঞ্জসহ সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান চালানোর দাবি জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল রাজধানীর শাহবাগে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন সংগঠনটির সভাপতি রশিদুল ইসলাম রিফাত।

খুলনায় সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ বলেন, গোপালগঞ্জের হামলা আওয়ামী ও মুজিববাদীদের পুরনো চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেন, সারা দেশে মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে এনসিপির এটি ছিল পূর্বঘোষিত কর্মসূচি। সেই লক্ষ্যে প্রশাসনকে জানিয়ে এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার কথা জেনেই গোপালগঞ্জ সফরে গিয়েছিলাম। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও মুজিববাদীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই হামলা করেছে ।

এর পরও গোপালগঞ্জে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে আওয়ামী লীগের বাইরেও যে অন্য কোনো দল কর্মসূচি করতে পারে সেটি এনসিপি প্রমাণ করে দিয়েছে।

সমাবেশের আগে ও পরে দফায় দফায় হামলার কথা তুলে ধরে নাহিদ বলেন, এ হামলা যে পূর্বপরিকল্পিত সেটি প্রমাণিত। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী আরো সতর্ক থাকতে পারত উল্লেখ করে সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী যেভাবে সহায়তা দিয়েছে সে জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

নাহিদ জানান, আজ বৃহস্পতিবার ফরিদপুরসহ সারা দেশের পূর্বঘোষিত পদযাত্রা অব্যাহত থাকবে। শুধু মাদারীপুর ও শরীয়তপুরে বুধবারের যে কর্মসূচি ছিল সেটি স্থগিত করা হয়েছে, পরে ওই দুই জেলার কর্মসূচির তারিখ ঘোষণা করা হবে।

গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশে হামলার পর উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে গতকাল সন্ধ্যায় এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা খুলনা এসে পৌঁছেন। সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে রশিদুল ইসলাম রিফাত বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা এবং দিল্লির চক্রান্তে গোপালগঞ্জের ভেতরে একটি প্রক্সি স্টেট তৈরি করা হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই প্রক্সি স্টেট খেলা আমরা হতে দেব না। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা সম্মিলিতভাবে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ থেকে হটিয়ে দিয়েছে। তাই স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ, ফ্যাসিবাদী ছাত্রলীগ, হামলাকারী ও গণহত্যাকারী কারো অবস্থান এই বাংলাদেশের মাটিতে হবে না।

এর আগে দুপুরের দিকে গোপালগঞ্জে এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী নেতাকর্মীদের ন্যক্কারজনক হামলা ও অবরুদ্ধ করার ঘটনার প্রতিবাদে সারা দেশে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে রশিদুল ইসলাম রিফাত এই ঘোষণা দেন।

শুধু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নয়, একই সঙ্গে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুব উইং জাতীয় যুবশক্তি।

বাংলা ব্লকেড : রাজধানীর উত্তরায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র ও সাধারণ মানুষ। গতকাল বিকেলে উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরের আজমপুর ও হাউস বিল্ডিং মোড় ঘিরে বিক্ষোভে নেমে পড়ে শতাধিক প্রতিবাদকারী। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

বিকেল ৩টা থেকে সোয়া ৫টা পর্যন্ত মিরপুর ১০ নম্বরে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মিরপুর জোন।

রাজধানীর শাহবাগে সন্ধ্যায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে জুলাই মঞ্চ। কর্মসূচি চলাকালে মঞ্চের বক্তারা বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত গোপালগঞ্জের ঘটনার সঠিক বিচার না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।

গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রায় হামলার ঘটনায় পুলিশ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয় ইনকিলাব মঞ্চ। এ সময় লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেয় তারা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয় তারা। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করেন ইনকিলাব মঞ্চের নেতারা। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের আইনের আওতায় না আনলে লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।

নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। বিকেলে মহাসড়কের সাইনবোর্ড মোড় অবরোধ করেন এনসিপি নেতাকর্মীরা।

তবে জনভোগান্তির কথা চিন্তা করে ব্লকেড কর্মসূচি থেকে সরে আসতে বলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বিক্ষোভকারীদের রাস্তার এক পাশে অবস্থান নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।

এনসিপির মশাল মিছিল : গোপালগঞ্জের ঘটনায় এনসিপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের যৌথ আয়োজনে গতকাল মশাল মিছিল হয়। রাত ৯টার দিকে বাংলামোটরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে কারওয়ান বাজার মোড় পর্যন্ত মিছিল করেন নেতাকর্মীরা। মিছিল শেষে সমাবেশ থেকে আজ রাজধানীর সব থানার সামনে মানববন্ধন, বিক্ষোভ কর্মসূচি ও থানায় স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি।

গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে দেশের অন্যান্য স্থানেও বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কুমিল্লা, ফরিদপুর, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, খুলনা, মাদারীপুর, নোয়াখালী, রাজবাড়ী, ধামরাই (ঢাকা), শেরপুর (বগুড়া) এবং গাজীপুরের টঙ্গীতে এসব কর্মসূচি পালিত হয়।

[তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিরা]

 

মন্তব্য
ফিরে দেখা ১৭ জুলাই

শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি

গত বছর কোটা সংস্কার আন্দোলনের ১৭তম দিন ১৭ জুলাই ছিল পবিত্র আশুরা উপলক্ষে সরকারি ছুটি। তবে ছুটির দিনও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আন্দোলন ও বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এদিন ঢাকাসহ দেশের অন্তত ১০টি জেলায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া অন্তত ১০ স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক এবং দুই স্থানে রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা।

আগের দিন সংঘর্ষে আবু সাঈদসহ ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কফিল মিছিল ও গায়েবানা জানাজা আদায় করা হয়। এসব কর্মসূচিতে বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরদিন (১৮ জুলাই) সারা দেশে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

১৭ জুলাই দিনভর রাজধানীর শনির আখড়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা।

পরে সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। রাতে হানিফ ফ্লাইওভারের (বর্তমানে গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার) টোল প্লাজায় আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা। সংঘর্ষের সময় পুলিশের শটগানের গুলিতে আহত দুই বছরের শিশুসহ ছয়জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

 

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাসগুলোতে বিক্ষোভ-সংঘর্ষের চিত্র

১৭ জুলাই সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।

শিক্ষার্থীরা পূর্বঘোষিত কফিন মিছিল শুরু করলে বাধা দেয় তারা। এ সময় আহত হন নারীসহ অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী ও ১০ জন সাংবাদিক।

এদিন আন্দোলনকারীদের ক্যাম্পাস ছাড়া করতে অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। দুপুরের পর তাদের টানা দুই ঘণ্টার অভিযানে ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। সেখানেও দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।

দুপুর ২টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল কর্মসূচি থাকলেও পুলিশের বাধায় সেখানে গায়েবানা জানাজা হয়নি। পরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর কফিন মিছিল শুরু হলে একের পর এক সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এরপর আবার সূর্য সেন হলের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চলে ঘণ্টাখানেক। পরে শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নিলে পুলিশ আবারও তাঁদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। জবাবে শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। রাত ১০টার দিকে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের আরেক দফা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, গায়েবানা জানাজা শেষে তাঁরা শান্তিপূর্ণ মিছিল শুরু করলে পুলিশ নির্বিচার হামলা চালায়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হল বন্ধের ঘোষণা ও পুলিশের তৎপরতার মুখে সন্ধ্যার দিকে আন্দোলনকারী অনেক শিক্ষার্থী হল ছেড়ে যান। তবে অনেক শিক্ষার্থী হল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে রাতেও হল ও ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা রাতে হলে অবস্থান করছিলেন। হামলাকারীদের বিচার না হলে হল ছেড়ে যাবেন না বলে জানান তাঁরা।

এদিন দুপুর ১টার দিকে শিক্ষকদের একটি দল মৌন মিছিল নিয়ে শাহবাগ থানায় পুলিশের হাতে আটক হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ছাড়িয়ে আনেন। পরে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশ করেন শিক্ষকরা।

এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভ ও গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

 

কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি

শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হামলা, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত ও কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে পরদিন ১৮ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কর্মসূচি চলাকালে হাসপাতাল, গণমাধ্যমসহ অন্যান্য জরুরি সেবা ছাড়া সব কিছু বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়।

 

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা ঢাবি ও চবি

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সব আবাসিক শিক্ষার্থীকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় বিদ্যমান কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সমাধানের জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানানো হয়। এদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ছাত্রীদের এবং রাত ১০টার মধ্যে ছাত্রদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।

 

রংপুরে আবু সাঈদের দাফন

কোটা সংস্কার আন্দোলনে আগের দিন নিহত রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের দাফন সম্পন্ন হয় রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামের নালিপাড়ায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত জানাজা ও দাফনের তাগিদ দেওয়া হলে উপস্থিত লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। দুই দফা জানাজা শেষে সকাল সোয়া ১০টার দিকে আবু সাঈদের লাশ দাফন করা হয়।

 

জাতির উদ্দেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশব্যাপী সৃষ্ট সংঘাতময় পরিস্থিতিকে সামনে রেখে এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি আন্দোলনকারীদের সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস, আমাদের ছাত্রসমাজ সর্বোচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাবে। তাদের হতাশ হতে হবে না।

 

মন্তব্য
বৈষম্যবিরোধী ও এনসিপির ব্লকেড

সাঁড়াশি অভিযানের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সাঁড়াশি অভিযানের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম

আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তারে গোপালগঞ্জসহ সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার দাবি জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল বুধবার রাজধানীর শাহবাগে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন সংগঠনটির সভাপতি রশিদুল ইসলাম রিফাত। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাঁড়াশি অভিযানে যৌথ বাহিনী ব্যর্থ হলে জুলাইয়ের ছাত্র-জনতা মাঠে নেমে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে। এ সময় ২৪ ঘণ্টার জন্য বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণাও দেওয়া হয়।

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে রিফাত বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা এবং দিল্লির চক্রান্তে গোপালগঞ্জের ভেতরে একটি প্রক্সি স্টেট তৈরি করা হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই প্রক্সি স্টেট খেলা আমরা হতে দেব না। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা সম্মিলিতভাবে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ থেকে হটিয়ে দিয়েছে।

তাই স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ, ফ্যাসিবাদী ছাত্রলীগ, হামলাকারী ও গণহত্যাকারী কারো অবস্থান এই বাংলাদেশের মাটিতে হবে না।

তিনি বলেন, ইসি একটি নাটকবাজি করেছে। ইসি বলেছে, নৌকা প্রতীক নাকি এখনো থাকবে। আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে বলতে চাই, এত বড় একটি গণহত্যার পরেও বাংলাদেশে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা, তাদের আওয়ামী লীগ এবং তাদের মার্কা থাকতে পারবে না।

রিফাত বলেন, অবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে। স্বৈরাচারী হাসিনার গোপালি পুলিশ এখনো ছাত্র-জনতার দিকে বন্দুক তাক করে।

এর আগে দুপুরের দিকে গোপালগঞ্জে এনসিপির নেতাকর্মীর ওপর আওয়ামী নেতাকর্মীদের ন্যক্কারজনক হামলা ও অবরুদ্ধ করার ঘটনার প্রতিবাদে সারা দেশে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে রশিদুল ইসলাম রিফাত এ ঘোষণা করেন।

এ সময় তিনি বলেন, গোপালগঞ্জে জুলাইয়ের নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সারা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

সারা দেশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব ইউনিটকে স্থানীয় ছাত্রসংগঠন, রাজনৈতিক দলসহ সর্বস্তরের ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে ব্লকেড কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো যাচ্ছে।

শুধু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নয়, একই সঙ্গে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুব উইং জাতীয় যুবশক্তি।

 

সারা দেশে বাংলা ব্লকেড : রাজধানীর উত্তরায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র ও সাধারণ মানুষ। গতকাল বিকেলে উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরের আজমপুর ও হাউস বিল্ডিং মোড় ঘিরে বিক্ষোভে নেমে পড়ে শতাধিক প্রতিবাদকারী। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

বিক্ষোভকারীরা বলে, গোপালগঞ্জে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে। তাদের পদযাত্রা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ঠেকাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পুলিশি সহায়তায় হামলা করেছে। এর প্রতিবাদে উত্তরা অঞ্চলে তারা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করছে।

বিকেল ৩টা থেকে সোয়া ৫টা পর্যন্ত মিরপুর ১০ নম্বরে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মিরপুর জোন।

রাজধানীর শাহবাগে সন্ধ্যায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে জুলাই মঞ্চ। কর্মসূচি চলাকালে মঞ্চের বক্তারা বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত গোপালগঞ্জের ঘটনার সঠিক বিচার না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।

গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রায় হামলার ঘটনায় পুলিশ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয় ইনকিলাব মঞ্চ। এ সময় লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেয় তারা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয় তারা। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করেন ইনকিলাব মঞ্চের নেতারা।

আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের আইনের আওতায় না আনলে লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।

নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। বিকেলে মহাসড়কের সাইনবোর্ড মোড় অবরোধ করেন এনসিপি নেতাকর্মীরা।

এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য আহমেদুর রহমান তনু জানান, সাইনবোর্ডে ছাত্র-জনতা জড়ো হতে শুরু করেছে। হামলায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।

তবে জনভোগান্তির কথা চিন্তা করে ব্লকেড কর্মসূচি থেকে সরে আসতে বলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বিক্ষোভকারীদের রাস্তার এক পাশে অবস্থান নিতে আহ্বান জানিয়েছেন। 

গণমাধ্যমকর্মীদের দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, সারা দেশে রাজপথের ব্লকেড সরিয়ে নিন। রাস্তার এক পাশে অবস্থান করুন। লড়াই চলবে।

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রায় আওয়ামী লীগের হামলার প্রতিবাদে দেশের অন্যান্য স্থানেও বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কুমিল্লা, ফরিদপুর, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, খুলনা, মাদারীপুর, নোয়াখালী, রাজবাড়ী, ধামরাই (ঢাকা), শেরপুর (বগুড়া), গাজীপুরের টঙ্গীতে এসব কর্মসূচি পালিত হয়।

[তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিরা]

 

 

মন্তব্য
জামায়াত আমির

সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে

    প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পূর্বঘোষিত মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার পৃথক বিবৃতিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।

ডা. শফিকুর রহমান গতকাল বুধবার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রশ্ন তোলেন, গোপালগঞ্জে কী হচ্ছে? তিনি লেখেন, গোপালগঞ্জ তো বাংলাদেশেরই অংশ। যত দূর জানতে পেরেছি, এনসিপির নেতারা প্রশাসনের সঙ্গে পূর্ব আলোচনা করেই শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করেছেন, যা তাঁদের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার।

কিন্তু মাঠে কার্যকর কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি।

জামায়াতের আমির সরকারের উদ্দেশে লেখেন, সরকারকে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, অন্যথায় ইতিহাসের দায় তাদের ওপরই বর্তাবে।

ডা. শফিকুর রহমান সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে সংঘাত ও উচ্ছৃঙ্খলতা এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়ে লেখেন, আমরা সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে সব ধরনের উচ্ছৃঙ্খলতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই এবং শান্তিপ্রিয়, ফ্যাসিবাদবিরোধী জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আন্তরিক আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, মহান আল্লাহ সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে তাঁর সাহায্য প্রেরণ করুন।

আমিন।

অন্যদিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে বলেন, ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে আওয়ামী শাসনব্যবস্থার সহযোগী সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। তাঁর ভাষ্য, কর্মসূচির আগে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা হলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কার্যকর উপস্থিতি দেখা যায়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

তিনি বলেন, গোপালগঞ্জ কোনো বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড নয়, এটি বাংলাদেশের অংশ।

সেখানে সংবিধানসম্মত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নির্বিঘ্নভাবে চলার নিশ্চয়তা দিতে সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্ব অপরিহার্য।

পরওয়ার দাবি করেন, ৫ আগস্ট ছাত্র ও জনগণের গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন ঘটেছে, তবে দেশ এখনো পুরোপুরি ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়নি। ক্ষমতাচ্যুত শাসকগোষ্ঠী দেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।

সেক্রেটারি জেনারেল জানান, এনসিপির কর্মসূচিতে ককটেল বিস্ফোরণ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশের গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। তিনি তাঁদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন এবং হামলার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

এদিকে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের হামলা, অগ্নিসংযোগ ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

বিবৃতিতে গোলাম পরওয়ার বলেন, গতকাল বুধবার এনসিপির পূর্বঘোষিত মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচিতে সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বেড়ে ওঠা ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে। তাঁর অভিযোগ, কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নেতাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়, এমনকি পুলিশের এসপি অফিসেও হামলা করা হয়। তিনি দাবি করেন, এতে এনসিপির অনেক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আহত হয়েছে। অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনাও ঘটে।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আরো বলেন, এই হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দেশের সব জেলা ও মহানগরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে। তিনি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

বিবৃতিতে অধ্যাপক পরওয়ার ফ্যাসিবাদবিরোধী গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে দলীয় নেতাকর্মীসহ সচেতন নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সর্বাত্মকভাবে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।

গোপালগঞ্জে এই হামলার প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে খুলনা নগরীর ডাকবাংলা মোড়ে মহানগরী জামায়াতের উদ্যোগে বিক্ষোভ করা হয়েছে। মিছিলপূর্ব সমাবেশে জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ