দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রভাবে মেগাপ্রকল্পসহ অধিকাংশ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে বেসরকারি ছোট-বড় আবাসনশিল্পেও দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। এতে নির্মাণকাজের প্রধান উপকরণ সিমেন্ট বিক্রিতে নেমেছে ধস। দোকানগুলোয় গত পাঁচ মাস আগের তুলনায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সিমেন্ট বিক্রি কমেছে।
আশঙ্কাজনক হারে বিক্রি কমায় উদ্বিগ্ন সিমেন্টশিল্পের উদ্যোক্তারা
সজীব আহমেদ

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর মেগাপ্রকল্পসহ রাষ্ট্রীয়ভাবে সব ধরনের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত ঠিকাদারদের অনেকে গাঢাকা দিয়েছেন। আবার স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বাদ দেওয়ায় সিটি করপোরেশন থেকে শুরু করে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের উন্নয়নকাজেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগঘনিষ্ঠ অনেকে আধিপত্য হারিয়ে নির্মাণাধীন কিংবা নির্মাণ পরিকল্পনায় থাকা ব্যক্তিগত-বাণিজ্যিক অবকাঠামোর কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন। অন্যদিকে দেশের চলমান পরিস্থিতি ও ড্যাপের কারণে আবাসন খাতে বেচা-বিক্রি এবং নতুন প্রকল্প কমে গেছে। ফলে রডের পাশাপাশি সিমেন্টের বিক্রিও ব্যাপকভাবে কমেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ দুই খাতের অধিকাংশ উদ্যোক্তা অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।
এই খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশে সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৪০টি (একই গ্রুপের একাধিক প্রতিষ্ঠানসহ)। এর মধ্যে বর্তমানে উৎপাদনে রয়েছে ৩০টি কম্পানি। প্রতিবছর প্রায় চার কোটি টন সিমেন্ট চাহিদার বিপরীতে প্রায় সাত কোটি ৮০ লাখ টন উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে এই কম্পানিগুলোর। রাজনৈতিক সংকটের দ্রুত সমাধান না হলে এবং সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলো পুনরায় চালু না হলে সিমেন্ট খাত দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
রাজধানীর তেজগাঁও, মহাখালী, কুড়িলসহ বিভিন্ন এলাকার সিমেন্টের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, শাহ স্পেশাল বস্তা ৫০০ থেকে ৫১০ টাকা, শাহ পপুলার সিমেন্ট ৪৯০ থেকে ৫০০ টাকা, বসুন্ধরা সিমেন্ট ৫০০ থেকে ৫১০ টাকা, মেঘনা সিম ডিলাক্স সিমেন্ট ৫০০ টাকা, ডালাই স্পেশাল ৫১০ থেকে ৫২০ টাকা, ক্রাউন সিমেন্ট ৫১৫ টাকা, ইনসি সিমেন্ট ৫১০ থেকে ৫১৫ টাকা ও হোলসিম সিমেন্ট ৫৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পূর্ব তেজতুরী বাজারে রড-সিমেন্টের পুরনো ব্যবসায়ী মেসার্স আল-তাবুক এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ইউসুফ সোহাগ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সরকারি প্রকল্পের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগত অবকাঠামোগত কাজ বন্ধ থাকায় সিমেন্ট বিক্রি ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। বিক্রি কমলেও আমাদের দোকান ভাড়া ও কর্মচারীদের বেতন ঠিকই দিতে হচ্ছে। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’
রাজধানীর কুড়িল প্রগতি সরণি এলাকায় হেলমি এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাসিন রহমান হেলমি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে প্রতি মাসে সিমেন্ট বিক্রি করা যেত এক লাখ বস্তার বেশি। এখন ৫০ হাজার বস্তাও বিক্রি করা যাচ্ছে না। গত পাঁচ-ছয় মাসে আগের তুলনায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সিমেন্ট বিক্রি কমেছে। অস্বাভাবিক হারে রডের সঙ্গে সিমেন্ট বিক্রি কমে যাওয়ায় আমরা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। ফলে দোকান ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন, অগ্রিম ট্যাক্স ও ব্যাংক লোন নিয়ে বিপাকে আছি। এভাবে চলতে থাকলে এই ব্যবসায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।’
জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) নির্বাহী পরিচালক শংকর কুমার রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এবার সিমেন্ট খাতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু উল্টো আরো হ্রাস পেয়েছে। কম্পানিগুলো তাদের সক্ষমতার অর্ধেক সিমেন্ট উৎপাদন করছে। এই শিল্পের কাঁচামাল শতভাগ আমদানিনির্ভর হওয়ায় ডলারের সঙ্গে টাকার বড় অবমূল্যায়নের কারণে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। বর্তমানে সব মিলিয়ে এই খাতের উদ্যোক্তারা ক্ষতির মুখে।’
সম্প্রতি বাংলাদেশের সিমেন্টশিল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত অতিরিক্ত শুল্ক ও কর হ্রাসকরণ, আমদানি ও ঋণপত্রজনিত সমস্যা সহজীকরণ এবং সুরক্ষা ও শিল্প খাতকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে ব্যাংকিং-সংক্রান্ত কতিপয় নীতি প্রণয়নের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে চিঠি দিয়েছে বিসিএমএ। অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, সিমেন্টশিল্পের ওপর বিভিন্ন উপায়ে দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত শুল্ক ও কর ধার্য করা হচ্ছে, যা সমস্যায় নিমজ্জিত উদীয়মান এই শিল্প খাতটির সংকটকে গভীর থেকে গভীরতর করছে।
চিঠিতে আরো বলা হয়, সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানি ও বিক্রয় পর্যায়ে বর্তমানে অগ্রিম আয়কর ২ থেকে ৫ শতাংশ হারে ধার্য করা হচ্ছে। এই অগ্রিম আয়করকে চূড়ান্ত দায় হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছি, আমদানি ও বিক্রয় পর্যায়ে অগ্রিম আয়কর প্রাথমিকভাবে সর্বোচ্চ দশমিক ৫০ শতাংশ ধার্য করা যেতে পারে। কিন্তু অগ্রিম আয়করকে কোনোক্রমেই চূড়ান্ত দায় হিসেবে বিবেচনা করা সমীচীন হবে না।
সিমেন্ট উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকার, স্ল্যাগ, জিপসাম ও ফ্লাই অ্যাশ প্রায় শতভাগ আমদানি করতে হয়। কিন্তু এই কাঁচামালগুলো অনেক দিন ধরে আমদানি মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য ধরে শুল্কায়ন করা হচ্ছে। ক্লিংকার আমদানিতে শুল্কায়ন মূল্য কমিয়ে প্রতি টন ৫০ ডলার, স্ল্যাগ ২৪ ডলার, জিপসাম ৩০ ডলার এবং ফ্লাই অ্যাশের শুল্কায়ন মূল্য ২৫ ডলার নির্ধারণের প্রস্তাব রেখেছে বিসিএমএ। এ ছাড়া ক্লিংকারের ওপর কাস্টম ডিউটি প্রতি টনে ৭০০ টাকার স্থলে ২০০ টাকা ধার্য করার জন্যও প্রস্তাব দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠানো চিঠিতে সিমেন্টশিল্পের সংকট নিরসনে তিনটি প্রস্তাব দেয় বিসিএমএ। প্রস্তাবগুলো হলো—১) মূলধন এবং বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়জনিত ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সুবিধা প্রদান। সিমেন্টশিল্পের জন্য মূলধন এবং মুদ্রা বিনিময়জনিত ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে স্বল্পতম সুদে দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১৬ বছরের দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ব্যবস্থা করা। উক্ত ঋণ একটি আলাদা ব্লক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পরিচালনাসহ ইএমআই ভিত্তিতে পরিশোধ করার সুযোগ প্রদান করা। ২) এরই মধ্যে পুনঃ তফসিলকৃত ঋণ বিলম্বিত ঋণ পরিশোধের পুনঃ তফসিলকরণ (রিশিডিউলিং অফ অলরেজড রিশিডিউল লোন অ্যান্ড অভারডিউ লোন রিলিফ) : এরই মধ্যে পুনঃ তফসিলকৃত ঋণ এবং বিলম্বিত ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১৬ বছরের মধ্যে পরিশোধের সুযোগ প্রদান করা।
এ ক্ষেত্রে ঋণের পরিমাণ নির্বিশেষে ডাউন পেমেন্টের শর্ত বাদ দেওয়া এবং এ ধরনের ঋণকে কোনো প্রকার শ্রেণিবদ্ধ না করা আবশ্যক। ৩) স্বল্পতম সুদে চলতি মূলধনের সুযোগ প্রদান করা (অ্যাকসেস টু লো-কস্ট ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল) : বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে বাংলাদেশের মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে সৃষ্ট অতিরিক্ত চলতি মূলধনের প্রয়োজনীয়তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এসংক্রান্ত পুনরর্থায়ন ব্যবস্থার আওতায় নতুন তহবিল সৃষ্টি করা। চলতি মূলধনে ঋণপত্রের বিষয়টি সহজীকরণ করার লক্ষ্যে মুদ্রা বিনিময়জনিত হার এবং আমদানি দ্রব্যের পরিমাণ বিবেচনা করা।
সম্পর্কিত খবর

জামায়াতের সমাবেশ আজ
১০ লাখের বেশি লোক সমাগমের লক্ষ্য
বিশেষ প্রতিনিধি

দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় পর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আজ শনিবার আয়োজন করতে যাচ্ছে তাদের জাতীয় সমাবেশ। এবারই প্রথমবারের মতো ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সর্ববৃহৎ জনসমাগমের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে দলটি। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে নানামুখী প্রস্তুতি।
সমাবেশ শুরু হবে দুপুর ২টায়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সমাবেশ উপলক্ষে প্রায় ১০ হাজার বাস, বিশেষ ট্রেন ও লঞ্চে আসবেন নেতাকর্মীরা। ১০ লাখেরও বেশি মানুষের সমাগম আশা করছে দলটি।
দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের জানিয়েছেন, বিএনপিসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে সমাবেশে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনের শহীদ পরিবার ও আহতরাও থাকবেন সম্মানিত অতিথি হিসেবে।
সমাবেশের মূল লক্ষ্য ৭ দফা দাবি জনসমক্ষে উপস্থাপন ও আদায়ের অঙ্গীকার।
জাতীয় সমাবেশ সফল করতে কাজ করছে একটি মূল বাস্তবায়ন কমিটি এবং অধীন আটটি উপকমিটি। দেশের সর্বত্র পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুন, ভ্রাম্যমাণ মাইক এবং সাংস্কৃতিক দল নিয়ে প্রচারণা চালানো হয়েছে। গান, নাটিকা আর স্লোগানে সমাবেশের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে নগর থেকে গ্রামান্তরে।
সমাবেশস্থলে থাকবে কড়া নিরাপত্তা।
অতিথিদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে থাকবে ১৫টি মেডিক্যাল বুথ, প্রতিটিতে দুজন এমবিবিএস চিকিৎসক, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র ও অ্যাম্বুল্যান্স সুবিধা।
বৃহৎ জনসমাগমের দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচারের জন্য ব্যবহার করা হবে ড্রোন ও ক্যামেরা, যা প্রদর্শিত হবে এলইডি স্ক্রিনে এবং একযোগে প্রচারিত হবে ফেসবুক ও ইউটিউবেও।
এর আগে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার জানিয়েছেন, সড়ক, রেল ও নৌপথে সারা দেশ থেকে ঢাকামুখী হবেন লাখো মানুষ। তিনি নগরবাসীর কাছে সম্ভাব্য যানজট ও ভোগান্তির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা
পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের প্রয়োজনীয়তা দেখছে না বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোটের অনুপাত (পিআর) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন চায় না বিএনপি। দলটি সংসদের নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন চেয়ে আসছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আগামীর সংলাপে আবার যথারীতি তাদের আগের এ অবস্থানই তারা তুলে ধরবে। এ অবস্থায় ঐকমত্য কমিশন নিজেরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে উচ্চকক্ষ বাতিলের প্রস্তাব করলে, সেটার বিরোধিতা করবে না দলটি।
গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বৈঠক সূত্র জানায়, বিএনপি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় এলে ৩১ দফার আলোকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেই অঙ্গীকার রক্ষা করবে।
সর্বশেষ ঐকমত্য কমিশনার বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমরা যে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, আমরা সেই জায়গাতেই আছি। আমাদের ৩১ দফার ভিত্তিতে আমরা যে আইডিয়া নিয়ে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে বলেছিলাম, সেটি হলো—যাঁরা দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজন, যাঁদের জাতি গঠনে অবদান আছে এবং যাঁরা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, তাঁদের মেধা, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার অবদান যেন জাতি গঠনের কার্যক্রমে প্রতিফলিত হয়। জাতি যাতে সমৃদ্ধ হয়, সেই আইডিয়া থেকেই আমরা এই প্রস্তাবটি রেখেছিলাম।
এর আগে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য হয়। কিন্তু নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে একমত হতে পারেনি দলগুলো। পরে গত সপ্তাহের সোমবার ঐকমত্য কমিশন ৬৪ জেলা এবং ১২ সিটি করপোরেশন থেকে একজন করে নির্বাচিত সদস্য নিয়ে উচ্চকক্ষ গঠনের বিকল্প প্রস্তাব করলেও তা সরাসরি নাকচ করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিসহ বেশির ভাগ দল।
পরদিন মঙ্গলবার কমিশনের সংলাপে বিএনপিসহ পাঁচটি দল প্রস্তাব করে, সংসদের নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন হবে।
দীর্ঘ আলোচনায়ও সদস্যরা কিভাবে নির্বাচিত হবেন—এ প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য না হওয়ায় সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাবই বাদ যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়।
এমন পরিস্থিতিতে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামী সপ্তাহে সংলাপে উচ্চকক্ষের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। কমিশন মনে করে, সমাজে বিরাজমান বৈচিত্র্যকে প্রতিনিধিত্ব করতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের প্রয়োজন রয়েছে।
অন্যদিকে বিদ্যমান সংরক্ষিত নারী আসন ৫০ থেকে ১০০-তে উন্নীত করার বিষয়েও রাজনৈতিক দলগুলো একমত। তবে সংসদের উচ্চকক্ষের মতো নারী সংসদ সদস্যদের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও একমত হতে পারেনি দলগুলো।
কমিশনের প্রথম প্রস্তাব ছিল, সংসদের আসনসংখ্যা বাড়িয়ে ৪০০ করা হবে। ১০০ আসনে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে শুধু নারীরা প্রার্থী হবেন। এতে ঐকমত্য না হওয়ায় গত সোমবার কমিশন প্রস্তাব করে ২৫টির বেশি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে—এমন দলগুলো অন্তত এক-তৃতীয়াংশ আসনে নারী প্রার্থী দেবে। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বেশির ভাগ দল এ প্রস্তাব নাকচ করে। বিএনপি আগের মতোই জানায়, নারী আসন ১০০ করতে একমত হলেও নির্বাচন হতে হবে বিদ্যমান পদ্ধতিতে অর্থাৎ কোনো দলের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের আসন সংখ্যার অনুপাতে।
জামায়াত জানায়, পিআর (ভোটের অনুপাতে) পদ্ধতিতে আসন বণ্টন হলে তারা আসন বৃদ্ধিতে রাজি। এনসিপি নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের নতুন ফর্মুলা দেয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সংসদে নারী সদস্যদের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। নেতারা অভিমত দেন, তাঁরা নারীর ক্ষমতা ও প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর পক্ষে। এর ধারাবাহিকতায় বর্তমানে সংরক্ষিত ৫০টি নারী আসনসংখ্যা ১০০-তে উন্নীত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপি নতুন করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা ১০০টির মধ্যে ৫০টি নারী আসন সংরক্ষিত চাইবে। আর বাস্তবতার নিরিখে ধাপে ধাপে নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন চাইবে। এর অংশ হিসেবে আগামী নির্বাচনে ৩০০ সংসদ সদস্যের মধ্যে ৫ শতাংশ, অর্থাৎ ১৫টি আসনে সরাসরি নির্বাচন এবং পরবর্তী নির্বাচন অর্থাৎ চতুর্দশ সংসদ নির্বাচনে ১০% মানে ৩০টি আসনে সরাসরি নির্বাচন হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। দলটি তাদের মধ্যে ক্ষমতার কিছু ভারসাম্য আনতে রাজি আছে। তবে এমন ভারসাম্য চায় না, যেখানে সরকার প্রধান তথা প্রধানমন্ত্রীর হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকবে না।
স্থায়ী কমিটি মনে করে, সার্বিক বিবেচনায় রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। বিএনপি নেতারা অভিমত দেন, যদি রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ব্যাপক বৃদ্ধি করা হয়, তাহলে সংসদীয় গণতন্ত্র তেমন অর্থবহ থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা না থাকলে, সেটা অকার্যকর হয়ে পড়বে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির একজন সদস্য বলেন, আগামীতে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার কিংবা সংসদীয় সরকার—যে পদ্ধতিই করা হোক, সরকারপ্রধানকে পর্যাপ্ত ক্ষমতা দিতে হবে। তবে আলোচনায় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা নিয়ে আগামীতে আরো আলোচনা হবে।

সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা
গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল
নিজস্ব প্রতিবেদক

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. আশরাফুল হুদা বলেছেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতা ছিল। তিনি আরো দাবি করেন, জুলাই চেতনা নস্যাৎ করে ‘পতিত প্রধানমন্ত্রীকে’ পুনর্বাসন ও জাতীয় নির্বাচন পেছানোর একটি চক্রান্ত চলছে, গোপালগঞ্জের ঘটনা তারই অংশ।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর এফডিসিতে ‘ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’ আয়োজিত এক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সাবেক আইজিপি বলেন, ‘গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তৎপর থাকলে গোপালগঞ্জের মতো এত বড় ঘটনা ঘটত না।
সোহাগ হত্যা প্রসঙ্গে আশরাফুল হুদা বলেন, শহরের কেন্দ্রস্থলে হত্যাকাণ্ড ঘটে যাওয়ার পর পুলিশের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। দুই দিন পর বিষয়টি ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশের তৎপরতা শুরু হয়, এটা দুঃখজনক।
‘মব ভায়োলেন্স’ প্রসঙ্গে সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘সব সময় ভুক্তভোগীরাই মব ভায়োলেন্স করে না, অনেক সময় রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্যও এটি সংঘটিত হয়। কেউ কেউ পরিকল্পিতভাবে এমন ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপির ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে।’
বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা মব সন্ত্রাস বৃদ্ধির প্রধান কারণ—এ বিষয়ের ওপর অনুষ্ঠিত ছায়া সংসদে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের হারিয়ে বিজয়ী হয় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের বিতার্কিক দল।
সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, মব সন্ত্রাস জাতীয় জীবনে এক নতুন আপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। দেশটা যেন ‘মবের মুল্লুকে’ পরিণত হচ্ছে। এটি গণতন্ত্রের অভিযাত্রাকে কলঙ্কিত করছে। সমাজের ক্যান্সার হিসেবে এই সংস্কৃতি বন্ধ করা না গেলে জনজীবনে আতঙ্ক আরো বাড়বে।

মার্কিন কূটনীতিকদের প্রতি ট্রাম্প
অন্য দেশের নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

অন্য দেশের পার্লামেন্ট নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য না করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মার্কিন দূতাবাসগুলোতে তারবার্তা পাঠিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তারবার্তায় বলা হয়েছে, কোনো দেশের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে কি হয়নি, এই নিয়ে কোনো দেশের মার্কিন দূতাবাস বা রাষ্ট্রদূত যেন মন্তব্য না করেন। গত ১৭ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হয়েছে এই তারবার্তা।
এতে বলা হয়েছে, ‘এখন থেকে কোনো দেশের নির্বাচন নিয়ে সেই দেশের মার্কিন দূতাবাস কিংবা ওয়াশিংটন থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হবে না।
তারবার্তায় আরো বলা হয়েছে, ‘কোনো দেশের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে কি হয়নি, বৈধ হয়েছে কি হয়নি, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলোকে সমুন্নত রাখতে পেরেছে কি পারেনি—এসব নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং দূতাবাসে কর্মরত কূটনীতিকরা আগ বাড়িয়ে মন্তব্য তো করবেনই না, এমনকি কোনো পক্ষ প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তা এড়িয়ে যেতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।’
তারবার্তায় বলা হয়, ‘অবশ্য কোনো দেশের নির্বাচন বা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে যদি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত স্পষ্ট ও বাধ্যতামূলক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট থাকে, তাহলে এই নির্দেশনার ব্যতিক্রম ঘটবে; তবু সে ক্ষেত্রে ওই দেশের মার্কিন দূতাবাস, রাষ্ট্রদূত বা কর্মরত মার্কিন কূটনীতিকরা কোনো মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া জানাবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত মুখপাত্ররা প্রতিক্রিয়া জানাবেন।
তারবার্তায় আরো বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র তার নিজের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলো দৃঢ়ভাবে ধরে রেখেছে এবং তা উদযাপনও করছে। অন্যান্য দেশও একই পথ বেছে নিয়েছে। আমাদের প্রেসিডেন্ট স্পষ্টভাবে বলেছেন, যেকোনো দেশ, যার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট, সেই দেশের সঙ্গে তিনি মার্কিন অংশীদারি বিস্তারের পক্ষে।’ সূত্র : রয়টার্স