ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫
২৬ আষাঢ় ১৪৩২, ১৪ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫
২৬ আষাঢ় ১৪৩২, ১৪ মহররম ১৪৪৭
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি

নিজ বাড়িকে ক্যাম্পাস দেখিয়ে ২৫ কোটি লুট

বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
নিজ বাড়িকে ক্যাম্পাস দেখিয়ে ২৫ কোটি লুট
আবুল হাসান মোহাম্মদ সাদেক

রাজধানীর মতিঝিলের ২৮/১ টয়েনবি সার্কুলার রোড এবং উত্তরার বাসা নম্বর ১৪, রোড নম্বর ২৮, সেক্টর ৭এই বাড়ি দুটির মালিক এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সাবেক উপাচার্য ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল হাসান মোহাম্মদ সাদেক। বাড়ি দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহৃত না হলেও কাগজে-কলমে ক্যাম্পাস দেখিয়ে ১০ বছরে তিনি বাড়িভাড়া বাবদ ২৫ কোটি টাকারও বেশি আত্মসাৎ করেছেন। মূলত ড. সাদেক অবৈধভাবে ভিসির দায়িত্ব পালনের সময় ২০১২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ক্যাম্পাসের বাড়িভাড়া বাবদ এই অর্থ পরিশোধ করা হয়। 

নিজ বাড়িকে ক্যাম্পাস দেখিয়ে ২৫ কোটি লুটঅন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির বিষয়টিও প্রমাণিত হয়েছে।

পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী কার্যক্রম, জঙ্গিবাদে মদদ ও অর্থায়নের অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি বিপুল অর্থ আয় করলেও প্রভাষকদের বেতন দেওয়া হতো মাত্র ১৩ হাজার টাকা। অভিযোগ ওঠার পরও সরকারি কোনো ধরনের নির্দেশনা ছাড়াই অবৈধভাবে ১০ বছর ভিসির দায়িত্ব পালন করেছেন ড. মোহাম্মদ সাদেক।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্তে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

তদন্ত কমিটি আপাতত বিশ্ববিদ্যালয়টির তহবিল হস্তান্তর না করা, ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠনসহ ১৪ দফা সুপারিশ করেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ বিষয়ে ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদন জমা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে শিগগিরই শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি বৈঠক ডাকা হবে। ওই বৈঠকে তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মতিঝিলের টয়েনবি সার্কুলার রোডের বাড়িটিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস দেখিয়ে ১০ বছরে ন্যূনতম ২০ কোটি ৪৬ লাখ ৫২ হাজার ৪৬২ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ওই বাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো না। এ ছাড়া উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের বাড়িটিকেও ভাড়া ক্যাম্পাস দেখিয়ে চার কোটি ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার ৩৪৮ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। বাড়ি দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী সরকার ও কমিশন কর্তৃক ক্যাম্পাসের জন্য অনুমোদিত নয়।

গতকাল বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মতিঝিলের বাড়িটি ১০ তলা।

নিচতলায় দোকান। পরের দুই তলায় বিভিন্ন অফিস এবং ওপরে আবাসিক হোটেল। বাড়িটি কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে কি না, সে সম্পর্কে কেউ কিছু জানাতে পারেনি। আর উত্তরার বাড়িটিতে গিয়ে দেখা গেছে, সেটি ছয়তলার একটি আধুনিক আবাসিক ভবন।

ইউজিসি বলছে, আশুলিয়ার টঙ্গাবাড়ীতে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাসের বাইরে কমিশন কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়টির একমাত্র অনুমোদিত ক্যাম্পাস বাড়ি নম্বর ২৫, সড়ক নম্বর ৫, সেক্টর ৭, উত্তরা মডেল টাউন। এই বাড়ির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে গত ১০ বছরে ভাড়া বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে তিন কোটি ৬৬ লাখ ১২ হাজার ৮০০ টাকা। যদিও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ পাসের পর আইন অনুযায়ী সব আউটার ক্যাম্পাস অবৈধ ও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর পরও ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে আউটার ক্যাম্পাস পরিচালনা করে কয়েক কোটি টাকা বাড়িভাড়া পরিশোধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাসে সব কার্যক্রম স্থানান্তরিত হওয়ার পরও ২০২০-২১ অর্থবছরে এক কোটি চার লাখ ৪৫ হাজার ৬৮৮ টাকা ক্যাম্পাসের বাড়িভাড়া বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক ভিসি ড. আবুল হাসান মোহাম্মদ সাদেক ২০১২ সালের পর থেকে চ্যান্সেলর কর্তৃক নিযুক্ত না হয়েও ভিসির পরিচয় প্রদান, শিক্ষার্থীদের মূল সনদসহ বিভিন্ন দাপ্তরিক ও একাডেমিক দলিলে স্বাক্ষর করেছেন। তিনি প্রায় এক দশক ধরে অবৈধভাবে ভিসি থাকাকালীন আইনবহির্ভূত ও এখতিয়ারবহির্ভূত কার্যক্রম পরিচালনা এবং পদসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন।

সনদ বাণিজ্যের বিষয়ে ইউজিসি বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সনদ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতিতে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি গুণগত শিক্ষার ওপর গুরুত্ব না দিয়ে সার্টিফিকেটসর্বস্ব শিক্ষাব্যবস্থায় মনোযোগী হয়। সেই লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের আনাচকানাচে সার্টিফিকেটসর্বস্ব ক্যাম্পাস খুলে বসে। এমনকি সৌদি আরবেও অনুমোদন ছাড়া আউটার ক্যাম্পাস খোলে। এসব ক্যাম্পাসের মাধ্যমে তারা অসংখ্য সার্টিফিকেট ইস্যু করেছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়টি ড. আবুল হাসান মোহাম্মদ সাদেকের পরিবার কুক্ষিগত করে রেখেছে। বর্তমানে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন তাঁর ছেলে ড. মোহাম্মদ জাফর সাদেক। ড. সাদেক বর্তমানে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য না হলেও বিওটি পুনর্গঠন, নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তি, ব্যাংক হিসাব পরিচালনাসহ নানা ক্ষেত্রে একচ্ছত্র ক্ষমতা ব্যবহার করছেন। এ ছাড়া বিওটি সভায় কোনো মতদ্বৈধ দেখা দিলে ড. সাদেকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়, যার পুরোটাই আইনবিরুদ্ধ।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনা করে ইউজিসি দেখেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির সাধারণ তহবিল আইন অনুযায়ী পরিচালনা করা হয়নি। কারণ আইন অনুযায়ী ট্রাস্টি বোর্ড মনোনীত একজন কর্মকর্তা ও ট্রেজারারের স্বাক্ষরে হিসাব পরিচালনা হওয়ার কথা। কিন্তু ১৯৯৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আচার্য কর্তৃক নিযুক্ত ট্রেজারার ছিলেন না। সাধারণ তহবিলে শিক্ষার্থীদের বেতন, ফি জমা করে সেখান থেকে খরচের বিধান থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এসবের কিছুই মানা হয়নি।

ইউজিসি বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী কার্যক্রম এবং জঙ্গিবাদে মদদ ও অর্থায়নের অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. সাদেক, তাঁর স্ত্রী সালেহা সাদেক এবং তাঁদের ছেলে বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান জাফর সাদেক পরস্পর যোগসাজশে সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন। আয়কর ফাঁকিসহ বিপুল অর্থের এফডিআর ও পাচার, জঙ্গিবাদে অর্থায়ন এবং ঢাকায় ১০০ বিঘা জমি ও অসংখ্য ফ্ল্যাট ক্রয়ের অভিযোগ রয়েছে। এসংক্রান্ত অভিযোগগুলো রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন ও বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের মাধ্যমে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির বেতন বিবরণী পর্যালোচনা করে ইউজিসি খুঁজে পায়, শিক্ষকদের যে বেতন দেওয়া হতো তা রীতিমতো অপ্রতুল ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রভাষক পর্যায়ে একজন শিক্ষকের বেতন ১৩ হাজার টাকা এবং অধ্যাপক পর্যায়ে একজন শিক্ষকের বেতন ১৯ হাজার থেকে ২৩ হাজার টাকা। যদিও ড. সাদেক শিক্ষক হিসেবে বেতন নেন এক লাখ ২০ হাজার টাকা এবং ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান জাফর সাদেক নেন ৭৫ হাজার ৯৬০ টাকা।

ইউজিসি তাদের সুপারিশে বলেছে, ড. সাদেক ২০১২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত অবৈধভাবে ভিসি পদে থেকে যেসব কার্যক্রম চালিয়েছেন তা শুরু থেকে বাতিল ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত হিসেবে বিবেচিত হবে। একই সঙ্গে তিনি যেসব সুবিধা নিয়েছেন তা ফেরত দিতে হবে। ক্যাম্পাস দেখিয়ে ভাড়া হিসেবে আত্মসাৎ করা সব অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিলে ফেরতের সুপারিশ করা হলো। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকদের বেতন যাতে জাতীয় বেতন স্কেলের নিচে না হয় সে ব্যাপারেও নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে। ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আয়-ব্যয় সরকার অনুমোদিত একটি সিএ ফার্ম দিয়ে পুনরায় নিরীক্ষার সুপারিশ করা হলো। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিনিয়োগ বা তহবিল অন্য কোনো খাতে স্থানান্তর না করার সুপারিশ করা হয়।

সার্বিক বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়টির অচলাবস্থা নিরসনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এর ৩৫(৭) ধারা অনুযায়ী চ্যান্সেলরের ক্ষমতা প্রয়োগ করে জরুরি ভিত্তিতে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ পুনর্গঠনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও সুপারিশ করা হয়।

এশিয়ান ইউনিভার্সিটির বর্তমান বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ জাফর সাদেক কালের কণ্ঠকে বলেন, আমাদের উত্তরার বাড়িটিতে কিছুদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস চলেছিল। আর মতিঝিলের বাড়িটিতে আগে আউটার ক্যাম্পাস ছিল। আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার পর ওই বাড়িটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টোর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

তবে কত দিন অফিস আর স্টোর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে সে সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য জানাতে পারেননি তিনি।

ড. জাফর সাদেক আরো বলেন, আমাদের ট্রাস্টি বোর্ড নিজেই চলবে। এর জন্য ট্রাস্ট ডিড সংশোধন করতে আমরা আইনজীবীর কাছে দিয়েছি। এখনো তা চূড়ান্ত হয়নি। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বর্তমান বেতন জাতীয় বেতন স্কেলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঠিক করা হয়েছে।

তবে গতকাল অধ্যাপক ড. আবুল হাসান মোহাম্মদ সাদেকের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

আর বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহজাহান খানকে ফোন করা হলে তাঁর অফিস থেকে বলা হয় তিনি মিটিংয়ে আছেন। পরে আবার ফোন করলে বলা হয় তিনি বেরিয়ে গেছেন।

নিজ বাড়িকে ক্যাম্পাস দেখিয়ে ২৫ কোটি লুট

রাজধানীর মতিঝিলের ২৮/১ টয়েনবি সার্কুলার রোডে অধ্যাপক ড. আবুল হাসান মোহাম্মদ সাদেকের বাসভবন (বাঁয়ে) এবং তাঁর উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরে ২৮ নম্বর রোডে ১৪ নম্বর বাড়িটি।     ছবি : কালের কণ্ঠ

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ আজ

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে আজ বৃহস্পতিবার। দুপুর ২টা থেকে যেকোনো মোবাইলে এসএমএস, শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট এবং নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফল জানতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এই ফল প্রকাশের মাধ্যমে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৯ লাখ শিক্ষার্থীর অপেক্ষার অবসান হবে।

এ বছর আগের মতো ফলাফল প্রকাশের কোনো আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না।

তবে আন্ত শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে দুপুর ২টায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সম্মেলনকক্ষে সাংবাদিকদের কাছে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।

শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার গতকাল বলেছেন, এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তরে আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না। দুই মাসের কম সময়ের মধ্যেই সব বোর্ডের ফলাফল প্রকাশিত হচ্ছে। সব বোর্ড নিজেদের মতো করে ফল প্রকাশ করবে।

 

যেভাবে জানা যাবে ফল : যেকোনো মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল জানতে মোবাইলের এসএমএস অপশনে গিয়ে ঝঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে পরীক্ষার বছর লিখে তা ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে ফল জানিয়ে দেওয়া হবে।

দাখিলের ফল পেতে উধশযরষ লিখে স্পেস দিয়ে গধফ লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২৫ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। কারিগরি বোর্ডের ক্ষেত্রে ঝঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে ঞবপ লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২৫ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে।

শিক্ষা বোর্ডগুলোর সমন্বিত ওয়েবসাইট  http://www.educationboardresults.gov.bd -এর মাধ্যমে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল জানা যাবে। আন্ত শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি জানিয়েছে, ওয়েবসাইটে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, পরীক্ষার নাম, বছর ইনপুট দিয়ে ও শিক্ষা বোর্ড সিলেক্ট করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করে ফল জানা যাবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় নিয়মিত-অনিয়মিত মিলিয়ে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন শিক্ষার্থী। দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয় দুই লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন।

ফল প্রকাশের পর তা পুনর্নিরীক্ষণের সময়ও জানিয়েছে আন্ত শিক্ষা বোর্ড। ১১ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। আবেদন পদ্ধতি শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট এবং টেলিটক বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে আজ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।

 

মন্তব্য
ভারতীয় জেনারেলের দাবি

চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশের জোট ভারতের নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলতে পারে

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশের জোট ভারতের নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলতে পারে

ভারতের প্রতিরক্ষা সর্বাধিনায়ক (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান বলেছেন, চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ নিজেদের স্বার্থে একে অন্যের প্রতি ঝুঁকছে। এই ঘনিষ্ঠতা ভারতের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। গত মঙ্গলবার ভারতের চিন্তক প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অনিল চৌহান এ কথাগুলো বলেন।

জেনারেল চৌহান বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনৈতিক সংকট বহিরাগত শক্তিদের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ করে দিচ্ছে।

ঋণ-কূটনীতির সাহায্যে প্রভাব বিস্তারের মধ্য দিয়ে তারা ভারতের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। পাশাপাশি ঘন ঘন সরকার পরিবর্তন এবং সেই সঙ্গে তাদের আদর্শচ্যুতি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।

জেনারেল চৌহান বলেন, এই প্রবণতা ভারতের জন্য বড় এক সমস্যা। সম্প্রতি চীনের কর্মকর্তারা সে দেশে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সম্মেলনে মিলিত হয়েছিলেন।

তিনটি দেশই নিজেদের স্বার্থে একে অন্যের কাছাকাছি আসছে। এই নৈকট্য ভারতের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে তাঁর ধারণা।

চীন ও পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা বহু পুরনো। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদল, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগ এবং তাঁর ভারতে আশ্রয়লাভ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

এই পরিস্থিতিতে চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশের কাছাকাছি আসা জেনারেল চৌহানকে সন্দিহান করে তুলেছে। তিনি মনে করছেন, এই তিন দেশের ঘনিষ্ঠতা ভারতের চিন্তা বাড়াতে পারে। স্থিতিশীলতার পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে।

অনুষ্ঠানে সিডিএস জেনারেল চৌহানকে পাকিস্তান-ভারত সাম্প্রতিক সংঘাতের সময় চীনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে তিনি বলেন, ওই সংঘাতে পাকিস্তানকে চীন কতটা ও কিভাবে সমর্থন দিয়েছে, সহায়তা করেছে, তা বলা খুবই কঠিন।

ওই সংঘাতের সময় উত্তর সীমান্তে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা যায়নি।

জেনারেল চৌহান বলেন, তবে ঘটনা হলো পাকিস্তান তাদের প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের বেশির ভাগটাই চীন থেকে নেয়। সে কারণে পাকিস্তানে চীনের উপস্থিতি থাকার কথা। বিশেষ করে সংঘাত ও সংঘর্ষের সময়। সেটা কতটা ছিল এবং সমর্থন বা সহায়তার চরিত্র কেমন ছিল, তা বলা সহজ নয়।

অপারেশন সিন্দূর নাম দিয়ে পাকিস্তানে হামলার প্রসঙ্গে ভারতের উপসেনাপ্রধান লে. জেনারেল রাহুল আর সিং অবশ্য গত শুক্রবার বলেছিলেন, সংঘাতের সময় পাকিস্তানকে চীন শুধু সাহায্যই করেনি, সংক্ষিপ্ত ওই যুদ্ধকে তারা তাদের অস্ত্রের পরীক্ষাগার করে তুলেছিল।

ওই কর্মকর্তার দাবি, ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ওই যুদ্ধে যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে, সেগুলোর ৮১ শতাংশই চীনের তৈরি। সেসব অস্ত্র প্রকৃত যুদ্ধের সময় কতটা কার্যকর, সে পরীক্ষাও চীন করে ফেলেছে। ওই সংঘাতকে চীন তার অস্ত্রসম্ভারের পরীক্ষাগার হিসেবে ব্যবহার করেছে। সূত্র : ডেকান হেরাল্ড

 

 

মন্তব্য
গণ-অভ্যুত্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘন

বিচার আইসিসিতে পাঠানোর অনুরোধ অ্যামনেস্টিরf

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
বিচার আইসিসিতে পাঠানোর অনুরোধ অ্যামনেস্টিরf

২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনা আইসিসিতে পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এ আহ্বান জানিয়েছে ব্রিটেনভিত্তিক এই মানবাধিকার সংগঠন।

গতকাল বুধবার সংগঠনটির সাউথ এশিয়া বিষয়ক ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এসংক্রান্ত একটি পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনার বিচার রোম সনদের ১৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

গতকাল বুধবার ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে আন্দোলনকারীদের ওপর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি গুলির নির্দেশের একটি ফোনকল নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত সব অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

এর আগে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের একটি তথ্য-উপাত্তভিত্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে আন্দোলন চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে প্রায় এক হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই সহিংসতায় নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কর্তৃক ব্যবহৃত ধাতব পেলেটযুক্ত অস্ত্রের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন।

এ ছাড়া হাজার হাজার মানুষ গুরুতর ও স্থায়ীভাবে আহত হয়েছেন।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের ব্যবস্থা করা এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে একটি ন্যায্য বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে সব অপরাধীকে জবাবদিহির আওতায় আনা।

 

 

মন্তব্য

সরকারের উদ্যোগেই জুলাই ঘোষণাপত্র, ইতিবাচক বিএনপি

    দায়িত্বে আছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা দু-এক দিনের মধ্যে মতামত জানাবে বিএনপি
হাসান শিপলু
হাসান শিপলু
শেয়ার
সরকারের উদ্যোগেই জুলাই ঘোষণাপত্র, ইতিবাচক বিএনপি

ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে আবার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই অংশ হিসেবে প্রধান কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) চাপের মুখে সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে।

এর আগে কয়েক দফা ঘোষণাপত্র দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি।

তবে এবারের উদ্যোগকে বিএনপি বেশ ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও মনে করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত একটি ঐকমত্য হওয়া প্রয়োজন।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া সম্প্রতি তাদের দলের একজন শীর্ষ নেতার কাছে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গত দুই দিন দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করা হয়।

ঘোষণাপত্রটি কার্যকরের সময়কালসহ কয়েকটি বিষয়ে বিএনপির দ্বিমত আছে।

ঘোষণাপত্রে ১৯৭২ সালের সংবিধান উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় সংশোধন, পুনর্লিখন বা প্রয়োজনে বাতিল করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করার কথা বলা আছে। এ বিষয়ে বিএনপির আপত্তি রয়েছে। দলটি পরবর্তী সংসদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংবিধান সংশোধনের পক্ষে থাকলেও সংবিধান বাতিল করে তা পুনর্লিখনের বিপক্ষে।

সরকারসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে ঘোষণাপত্রের খসড়া প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিএনপির একজন শীর্ষ নেতার কথা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, এ নিয়ে অগ্রগতি হচ্ছে। খসড়া ঘোষণাপত্র তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এ যৌথ প্রচেষ্টার জন্য আরো মতামত দরকার, যাতে এটি ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য হয় এবং জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারে।

সরকারের পক্ষ থেকে একটি খসড়া ঘোষণাপত্র পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, সরকারের খসড়া ঘোষণাপত্রের ওপর ভিত্তি করে গত ফেব্রুয়ারিতে আমরা মতামত দিয়েছিলাম। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আর যোগাযোগ করা হয়নি। এখন আবার একটি খসড়া দেওয়া হয়েছে। আমরা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে মতামত জানাব।

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর গণ-অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারী সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হঠাৎ করে এই ঘোষণাপত্রের বিষয়টি সামনে আনে। তখন এর প্রভাব কী হতে পারে, তা বুঝতে চাইছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ঘোষণাপত্রের পক্ষে-বিপক্ষে তর্কবিতর্কের পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিতে এক ধরনের উত্তাপ তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে সরকার থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সরকার সর্বদলীয় বৈঠক করে, কিন্তু তাতে ঐকমত্য হয়নি। ওই সময় বিএনপি এত দিন পর ঘোষণাপত্রের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এরপর গত ১৬ জানুয়ারি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই ইস্যুতে সরকারের কার্যক্রম ধীরগতিতে চলতে থাকে।

সম্প্রতি এনসিপি জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে আবার সরব হয়ে ওঠে। গত ৪ জুলাই দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঠাকুরগাঁওয়ে এক পথসভায় এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জুলাই-আগস্টের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি এও বলেন, এই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক ভিত্তি থাকবে। অন্যথায় তাঁদের পক্ষ থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেওয়া হবে বলে সরকারকে সতর্ক করেন নাহিদ। 

সরকারসংশ্লিষ্ট একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলেন, ঘোষণাপত্রের মূল অংশীজন হলো বিএনপি ও এনসিপি। তাদের মধ্যে ঐকমত্য হলে দ্রুত ঘোষণাপত্র দেওয়া যাবে।

ঘোষণাপত্রে উল্লেখযোগ্য যা আছে : খসড়া ঘোষণাপত্রে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থান, ওয়ান-ইলেভেনের প্রেক্ষাপট এবং ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিষয় তুলে ধরা হয়। কোন পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়, সে বিষয়টিও উঠে আসে। 

এতে ১৯৭২ সালের সংবিধানের কাঠামোগত দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগের কথাও বলা হয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থতা এবং গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকারিতা ক্ষুণ্ন করার কথাও তুলে ধরা হয়। 

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকার সাংবিধানিকভাবে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে মত প্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করার ফলে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার বিপ্লব সংগঠিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র, মত প্রকাশ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাা পুনঃপ্রবর্তনের পথ সুগম হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক কালের কণ্ঠকে বলেন, স্বাধীনতা-উত্তর সিপাহি-জনতার বিপ্লব বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আবার ওয়ান-ইলেভেনের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। মূলত তখন থেকে শেখ হাসিনার একচ্ছত্র ক্ষমতা, আধিপত্য ও কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদের পথ সুগম হয়। এই বিষয়গুলো যুক্ত করার ফলে ঘোষণাপত্র বেশ সমৃদ্ধ হয়েছে।

খসড়ায় স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে জনতার অবিরাম সংগ্রাম এবং এর মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থান এবং পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ সৃষ্টির বিষয়টিও উঠে আসে।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ধারাবাহিক তিনটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।

তবে বিএনপি নেতাদের কয়েকজন ২০০৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনকেও এর সঙ্গে যুক্ত করার পরামর্শ দেন দলীয় ফোরামে।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে বলা হয়, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বলে প্রদত্ত সুপ্রিম কোর্টের মতামত অনুসারে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকার অনুমোদিত হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা : গত মঙ্গলবার এবং গতকাল বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খসড়া ঘোষণাপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ করে কিছুটা সংযোজন-বিয়োজন করে বিএনপি তাদের মতামত দিয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বিএনপি এ বিষয়ে তাদের মতামত সরকারকে জানাবে।

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

 

আরো যেসব বিষয়ে আলোচনা : মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক আরোপ, নারী আসন, নির্বাচনে পিআর পদ্ধতিসহ সংস্কারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ মার্কিন শুল্ক আরোপের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি। একই সঙ্গে এই শুল্কনীতি পুনর্বিবেচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে দলটি।

জানা গেছে, বৈঠকে সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের প্রতিবেদন তুলে ধরেন সালাহউদ্দিন আহমদ। এরপর সংস্কারের বিভিন্ন ইস্যুতে মতামত দেন বিএনপি নেতারা। ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এর মধ্যে সংসদে নারীদের আসন ৫০ থেকে ১০০-তে উন্নীত করার ব্যাপারে রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়েছে। তবে তাঁরা কিভাবে নির্বাচিত হবেন, সে ব্যাপারে এখনো ঐকমত্য হয়নি। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, তাঁরা প্রচলিত পদ্ধতিতে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নির্বাচিত করার পক্ষে অবস্থান নেবেন। পাশাপাশি কোনোভাবেই পিআর পদ্ধতি মানবেন না তাঁরা।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ