শেষ হতে যাচ্ছে আরেকটি বছর ২০২৪। এই বছরজুড়েই নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে গেছে শিক্ষা খাত। তবে এই বছরের সবচেয়ে বড় পাওয়া শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনের অবসান। একটি নতুন বাংলাদেশের জন্ম।
শিক্ষার্থীদের হাত ধরেই নতুন বাংলাদেশ
শরীফুল আলম সুমন

জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের আগের ছয় মাসেও শিক্ষা খাতে নানা ঘটনা দেখা গেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আলোচিত মন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে সরিয়ে দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। তবে মহিবুর হাসান চৌধুরী নওফেল শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পেলেও আগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে।
৫ আগস্টের পরও শিক্ষাঙ্গনে ঘটেছে নতুন নতুন ঘটনা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরই ফিরে আসে আগের শিক্ষাক্রম। বই ছাপতে অবশ্য দেরি হচ্ছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকেই গণ-অভ্যুত্থান : ২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাসহ সব কোটা বাতিল করা হয়। কোটা বাতিলে সরকারের সেই প্রজ্ঞাপন ২০২৪ সালের ৫ জুন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। ৬ জুন তাত্ক্ষণিক এর প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর ৩০ জুন থেকে শুরু হয় বড় কর্মসূচি। তাতে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।
১ জুলাই শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলনের পর ৭ জুলাই ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ৯ জুলাই আন্দোলনকারীদের ওপর নৃশংস হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের বন্দুকের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে শহীদ হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। ১৭ জুলাই রাতে হঠাত্ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৮, ১৯, ২০ ও ২১ জুলাই কারফিউ ভেঙে সারা দেশে রাস্তায় নেমে আসেন শিক্ষার্থীরা। ২২ জুলাই সারা দেশে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি দেন শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিন নিহত ও আহতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। আন্দোলনে জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকলেও নেতৃত্বে ছিলেন ছাত্ররা।
৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে শেখ হাসিনার পতনের এক দফা ঘোষণা করা হয়। ৪ আগস্টও শিক্ষার্থীরা রাস্তায় থাকেন। ৫ আগস্ট শিক্ষার্থীদের ডাকে ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে লাখো জনতা রাজধানীতে আসে। ওই দিন দুপুরে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। শিক্ষার্থীদের হাত ধরেই নতুন বাংলাদেশের জন্ম হয়।
সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তি বাতিলের দাবিতে কর্মবিরতি : সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করায় আন্দোলনে নামেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তাঁরা প্রায় এক মাস কর্মবিরতি পালন করেন। সে সময় বন্ধ থাকে ক্লাস-পরীক্ষা। এর মধ্যেই কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা শুরু হয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সরকার তড়িঘড়ি শিক্ষকদের ক্লাসে ফেরাতে সব দাবি মেনে নেয়। শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরলেও কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে প্রায় চার মাস পর ক্লাসে ফেরেন শিক্ষার্থীরা।
ফিরেছে পুরনো শিক্ষাক্রম : নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন নিয়ে আগে থেকেই ছিল আলোচনা-সমালোচনা। আন্দোলনে নেমেছিলেন অভিভাবকরা। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন দায়িত্ব গ্রহণের পরই তিনি আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে ২০১২ সালে প্রণীত সৃজনশীল শিক্ষাক্রমে সাময়িকভাবে ফেরার কথা জানায়। ফলে শিক্ষার্থীদের মাত্র দুই মাসের প্রস্তুতি নিয়ে নতুন পদ্ধতিতে পরীক্ষায় বসতে হয়। এতে শিক্ষা ক্ষেত্রে বড় ধরনের ধাক্কা লাগে। আর পুরনো শিক্ষাক্রমের বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরি করতে করতে দেরি হয়ে যায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি)। ফলে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের বই পেতে অনেকটাই দেরি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল করে সমালোচনা : কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে একাধিকবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করতে হয়। আন্দোলনের সময় বিভিন্ন থানায় থাকা পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তরপত্র পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। দীর্ঘদিন পরীক্ষা স্থগিত থাকে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করলেও শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বাতিল করে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ফল প্রকাশের দাবিতে আন্দোলনে নামে। একপর্যায়ে তারা সচিবালয়ে ঢুকে পড়ে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের জিম্মি করে দাবি আদায় করে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মব জাস্টিস ও লাঞ্ছনার শিকার শিক্ষকরা : গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিটিয়ে তিনজনকে হত্যার নৃশংসতা উচ্চ শিক্ষাঙ্গনকে কলুষিত করে। সেগুলো হলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লা এবং সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক তোফাজ্জেলকে হত্যার ঘটনা ঘটে।
৫ আগস্টের পর দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অনেক উপাচার্য, অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষক লাঞ্ছনার শিকার হন। অনেকের কাছ থেকে জোর করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। প্রথমদিকে সরকার বিষয়টি নিয়ে চুপ থাকলেও পরে দফায় দফায় নির্দেশনা দিয়ে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঠেকানোর চেষ্টা করে। তবে আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবরজুড়ে শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগ করানোর ঘটনা ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্যের পদত্যাগের পর অনেকগুলোতেই ছাত্ররাজনীতিও নিষিদ্ধ করা হয়।
নানা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন : অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই রাজধানীর সাত সরকারি কলেজ আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে আন্দোলনে নামে। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি আন্দোলন করে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া রাজধানীর ঢাকা কলেজ, ধানমণ্ডি আইডিয়াল ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে অনেকে হতাহত হয়। সর্বশেষ সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজ এবং ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দিয়ে দফায় দফায় সংঘাতে জড়ায়।
সম্পর্কিত খবর

বাংলাদেশ-ভারতের উদ্বেগ
ব্রহ্মপুত্রে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণ শুরু করল চীন
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

যেখানে ইয়ারলুং সভ্যতা প্রথম তিব্বতীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল, হিমালয়ের পাদদেশের সেই স্থানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ পানিবিদ্যুৎ বাঁধ তৈরির কাজ শুরু করেছে এশিয়ার অন্যতম পরাশক্তি চীন। গতকাল শনিবার তিব্বতের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ইয়ারলুং জাংবো নদীতে ৬০ গিগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পানিবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়েছে।
ভারত ও বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র নদ নামে পরিচিত ইয়ারলুং জাংবো নদীটি; দুই দেশের কোটি কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা এই নদের ওপর নির্ভরশীল।
তিব্বত ও ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ইয়ারলুং জাংবো নদীতে মেগাবাঁধের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেছে চীন।
২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে তিব্বতে এই পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণকাজের গতি দ্বিগুণ করেছে বেইজিং।
তিব্বতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় নিংচি এলাকায় এই বাঁধের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিব্বতের স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি উৎপাদিত বিদ্যুৎ অন্যান্য অঞ্চলেও সরবরাহ করা হবে।
ইয়ারলুং জাংবো নদীতে এই বাঁধের নির্মাণকাজ শেষ হলে তা চীনের মধ্যাঞ্চলের ইয়াংসি নদীতে নির্মিত রেকর্ড গড়া ‘থ্রি গর্জেস বাঁধকেও’ ছাড়িয়ে যেতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের ভাটি অঞ্চলের প্রবাহে কোটি কোটি মানুষের ওপর ভয়াবহ প্রভাব পড়তে পারে।
সিনহুয়া বলেছে, এই প্রকল্পে পাঁচটি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার মোট ব্যয় প্রায় ১.২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (১৬৭.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) হতে পারে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারত বলেছিল, তিব্বতের এই প্রকল্প নিয়ে চীনের কাছে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে নয়াদিল্লি। ভারত বলেছে, তারা তিব্বতে চীনা বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবে এবং নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। ওই সময় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, উজানে কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্রের নিম্নপ্রবাহের দেশগুলোর স্বার্থ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা চীনকে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। পরে ডিসেম্বরে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই প্রকল্পের কারণে নিম্নপ্রবাহে কোনো ‘নেতিবাচক প্রভাব’ পড়বে না এবং চীন নদীর নিম্নপ্রবাহের দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখবে।
থ্রি গর্জেস প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় চীন ১৪ লাখের বেশি মানুষকে জোরপূর্বক স্থানান্তর করেছিল। ইয়াংজি নদীর তীরবর্তী এলাকার চেয়ে ইয়ারলুং জাংবো নদী এলাকা কম ঘনবসতিপূর্ণ। এর আগে চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইয়ারলুং জাংবো বাঁধ তিব্বতের মিডগ কাউন্টিতে নির্মাণ করা হবে, যে শহরের জনসংখ্যা ১৪ হাজার। এই বাঁধ নির্মাণে কতসংখ্যক মানুষ স্থানান্তরিত হতে পারে, সে বিষয়ে কোনো জবাব দেয়নি বাঁধটির নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না।
২৫ লাখ বর্গকিলোমিটার আয়তনের তিব্বত মালভূমি প্রাকৃতিক সম্পদের এক আধার এবং বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে। হিমবাহ গলে এবং পাহাড়ের ঝরনা বয়ে নেমে আসা মিঠাপানির প্রবাহের মাধ্যমে ভারত, চীন ও ভুটানের প্রায় ১৮০ কোটি মানুষকে খাবার পানির জোগান দেয় ইয়ারলুং জাংবো বা ব্রহ্মপুত্র নদ। সূত্র : এএফপি

মৃত্যু বাড়ছে ইজি বাইকে
- নিবন্ধন নেই, হচ্ছে নীতিমালা
১০ বছরে ১০ হাজার চালককে হত্যা : হানিফ
নিজস্ব প্রতিবেদক

সড়কে প্রতিদিন প্রাণহানি বাড়ছেই। এর বড় কারণ ব্যাটারিচালিত ইজি বাইকসহ তিন চাকার বাহন। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে তিন চাকার এই বাহন বাড়ছেই। এ ধরনের বাহনের নিবন্ধন নেই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)।
ইজি বাইক ছিনতাই করার জন্য চালকদের পরিকল্পনা করে হত্যা করছে বিভিন্ন জেলার চক্র।
এ ব্যাপারে ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত ১০ বছরে সারা দেশে দুষ্কৃতকারী ও ছিনতাইকারীরা কমপক্ষে ১০ হাজার চালককে হত্যা করেছে। কমপক্ষে ৩০ হাজার চালক আহত হয়েছেন।
জানা গেছে, এরই মধ্যে সড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে নছিমন, করিমন, আলমসাধু ও ভটভটির মতো দেশীয়ভাবে তৈরি যানবাহন, ব্যাটারিচালিত ইজি বাইক ও রিকশাকে। এ ধরনের বাহনকে নিবন্ধন দেওয়ার জন্য ২০২১ সালের নভেম্বরে খসড়া নীতিমালা করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এতে বলা হয়েছিল, কারিগরি মানোন্নয়নের শর্তে এলাকা ও সড়কভেদে এই ধরনের নির্দিষ্টসংখ্যক যানবাহন চলতে পারবে। তবে এগুলোর নিবন্ধন এখনো দেওয়া শুরু করেনি সরকার।
হাইকোর্ট শ্যালো মেশিনের ইঞ্জিনে নির্মিত নছিমন, করিমন, আলমসাধু বন্ধে ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি আদেশ দিয়েছেন। ২০১৫ সালের ১ আগস্ট থেকে ২২টি জাতীয় মহাসড়কে অটোরিকশাসহ তিন চাকার সব বাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। তবে এগুলো বন্ধ করা যায়নি।
বুয়েটের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবাধে এ ধরনের বাহন বেড়ে যাওয়ায় প্রাণহানিও বাড়ছে। নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না রাখায় ইজি বাইকের অবাধ আমদানি ও উৎপাদন হচ্ছে। অতীতে বারবার দাবি জানানো হলেও সরকার তা সড়ক ও মহাসড়ক থেকে উচ্ছেদ করতে পারেনি। কারণ এরই মধ্যে এ ধরনের বাহন ও তার ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী বেড়েছে।
বুয়েটের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইজি বাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা কারিগরিভাবে সড়কে চলাচলের উপযোগী নয়। এগুলোর ব্রেক, স্টিয়ারিং ও সাসপেনশন মানসম্মত নয়। এর ফলে দ্রুতগতির যানবাহনের সঙ্গে এগুলোর চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। সড়কে-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় হতাহতের বড় অংশই এসব ছোট যানবাহনের যাত্রী। কিন্তু সাশ্রয়ী হওয়ায় স্থানীয়ভাবে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য এসব বাহনে নির্ভরতা বাড়ছে। সরকার এগুলো বন্ধের ঘোষণা দিলেও সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলো নিয়মের বাইরে গিয়ে চলাচলের অনুমোদন দিয়েছে। ২০১৫ সালে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে এসব গাড়ি আমদানি বন্ধের প্রস্তাব করা হয়। তবে কর্মসংস্থান রক্ষার যুক্তিতে জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীদের বিরোধিতায় তা অনুমোদন করা হয়নি। ২০১১ সালে ইজি বাইক আমদানি বন্ধে সরকার সিদ্ধান্ত নিলেও উৎপাদন ও আমদানি অব্যাহত থাকে। ২০১৯ সালের জুনে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে আহবায়ক করে ‘দুর্ঘটনা হ্রাসকল্পে ছোট গাড়ি নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ প্রণয়ন কমিটি’ করে বিআরটিএ। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ১২ সদস্যের ওই কমিটি প্রতিবেদনে জানায়, সারা দেশে অটোরিকশাসহ কমপক্ষে ১৫ লাখ ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যানবাহন চলছে। এতে অন্তত ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান ও জীবিকা হয়েছে। তাই সড়ক নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হলেও আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা বিবেচনায় এসব যানবাহনকে অনুমতি দিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে ২০২৩ সালে ২৮ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে ইজি বাইকের মতো বাহনের কারণে। প্রতিবছর এই বাহনে প্রাণহানি বাড়ছে। বেশির ভাগ দুর্ঘটনার তথ্য আবার সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না।

মেয়েদের আরেক জয়

গতকাল বসুন্ধরা কিংসের অনুশীলন মাঠে নিজের দ্বিতীয় গোলের পর উমেহলা মারমার সঙ্গে উদযাপন পূজা দাসের (ডানে)। তাঁর জোড়া গোলে মেয়েদের অনূর্ধ্ব-২০ সাফ ফুটবলে কাল শ্রীলঙ্কাকে ৫-০ ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ছবি : মীর ফরিদ
।
চার জেলায় গৃহবধূ ও দুই যুবক খুন দুই লাশ উদ্ধার
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে ঘরে ঢুকে ছুরিকাঘাতে এক গৃহবধূকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে খুন হয়েছেন দুই যুবক। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় সহকারী ট্রেন চালক ও হবিগঞ্জের হাওর থেকে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সদরে শাহীনূর আক্তার (২৬) নামের এক গৃহবধূকে ঘরে ঢুকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা সদরের থানা রোডে ‘মোল্লাবাড়ি’ খ্যাত একটি ভবনের নিচতলায় ভাড়া থাকতেন শাহীনূর। তাঁর স্বামী মাসুদ মিয়া সৌদিপ্রবাসী। তিনি ছয় বছরের একটি সন্তানের মা।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, গত শুক্রবার দিনভর ওই গৃহবধূর ফ্ল্যাট বাইরে থেকে তালাবদ্ধ ছিল। রাতে ঘর থেকে দুর্গন্ধ বের হলে ভবনের অন্য বাসিন্দারা বিষয়টি পুলিশকে জানান। পুলিশ রাতেই ওই ভবনে গিয়ে দরজার তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে। তাঁর পেটে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলেও ওই গৃহবধূকে বাজার থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে বাঞ্ছারামপুর থানার ওসি হাসান জামিল খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে আখাউড়া পৌর এলাকার মসজিদপাড়া থেকে সহকারী লোকো মাস্টারের (সহকারী ট্রেন চালক) লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তদন্ত করছে পুলিশ। এটি হত্যা না আত্মহত্যা, সেটি নিশ্চিত করতে কাজ চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে মসজিদপাড়া এলাকার একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট থেকে এনামুল হক (৪৭) নামের রেলওয়ের এক সহকারী লোকো মাস্টারের অর্ধগলিত ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে আখাউড়া থানা পুলিশ। এনামুল কুষ্টিয়া জেলার বারুইপাড়ার লুৎফর রহমানের ছেলে।
শুক্রবার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে তাঁর লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে স্বজনরা তাঁর লাশ বুঝে নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) : ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর ভাওয়ার ভিটি এলাকায় ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ে সড়কের পাশের একটি ঝোপের ভেতর থেকে শামীম (৩০) নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ।
গতকাল সকাল ১০টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত শামীম দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন মিরেরবাগ এলাকার জজ মিয়ার ছেলে।
জজ মিয়ার ভাষ্য, শুক্রবার রাতে তাঁর মেয়ের জামাই মো. শফিক (শামীমের দুলাভাই) বাসা থেকে শামীমকে ডেকে নিয়ে যান। এর পর থেকে শামীম নিখোঁজ ছিলেন। সকালে এলাকাবাসীর মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ছেলের মরদেহ শনাক্ত করা হয়। তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তিনি অভিযোগ করেন, বোনকে মারধরের প্রতিবাদ করায় দুলাভাই পূর্বপরিকল্পিতভাবে শামীমকে হত্যা করেছে।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি সৈয়দ মোহাম্মদ আখতার হোসেন বলেন, পূর্বশত্রুতার জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে গতকাল নিমাইকাশারী এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনের পাশ থেকে মাকসুদুল হাসান জনি নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জাহাঙ্গীর আলম, আলমগীর হোসেন ও আকাশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১১) ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে।
চুরির টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে ওই যুবককে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি শাহীনূর আলম জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জ শহরতলির উমেদনগর এলাকার পার্শ্ববর্তী হাওর থেকে নিখোঁজের ছয়দিন পর রঙ্গিলা মিয়া (৫৫) নামের এক ব্যক্তির ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
রঙ্গিলা মিয়া উমেদনগর মধ্যহাটির বাসিন্দা নুরুল হোসেনের ছেলে। তিনি শহরের পার্শ্ববর্তী কালারডুবা হাওরে একটি বিল পাহারা দিতেন। গত সোমবার কর্মস্থল থেকে তিনি নিখোঁজ হন।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা)