শরতে নাকি শালবনের রূপ খোলে। সবুজ শালবনের মাঝে সবুজ ধানক্ষেত। দেখতে অন্য রকম লাগে। এমন দৃশ্যের গল্প শুনেই পা রাখি দিনাজপুরের বিরল উপজেলায়।
পথে-প্রান্তরে
শালবনে আজব গাছের খোঁজ
- প্রাকৃতিক নিয়মে শালবীজ পড়ে বন তৈরি হওয়ার কারণেই দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে বনটিকে প্রাকৃতিক শালবন বলা হয়ে থাকে। বনটি প্রায় দুই হাজার ৮৬৭ একর এলাকাজুড়ে। বনের মধ্যে শাল ছাড়াও রয়েছে আমলকী, সর্পগন্ধা, বহেড়া, হরীতকী, চিরতাসহ নানা ধরনের ঔষধি গাছ
সালেক খোকন

আমরা পৌঁছি দুপুরের পরপরই। কালিয়াগঞ্জ বাজার থেকে বাঁ দিকে একটি রাস্তা ধরে এগোই। খানিকটা যেতেই দেখা মেলে বিশাল শালবনের।
প্রাকৃতিক নিয়মে শালবীজ পড়ে বন তৈরি হওয়ার কারণেই বনটিকে প্রাকৃতিক শালবন বলা হয়ে থাকে। বন বিভাগের বিট অফিসার তেমনটিই জানান। এই বনটি প্রায় দুই হাজার ৮৬৭ একর এলাকাজুড়ে।
মুণ্ডা, ওঁরাও ও সাঁওতালদের বসবাস রয়েছে এই বনে। সন্ধ্যা হতেই শুরু হয় ডাকঢোলের বাদ্য। শালবনের ভেতরে আদিবাসী পাড়াগুলোতেও চলে নানা আচার।
বনের ভেতরের গাছগুলোতে অনেক পাখির কলকাকলি।
শালবনের মধ্যে একটি গাছ দেখে থমকে দাঁড়াই। শিকড়ের খোঁজ নেই গাছটির। অজগর সাপ আকৃতির একটি গাছ জড়িয়ে রেখেছে বেশ কয়েকটি শালগাছকে। আজব এই গাছটির নাম কী? স্থানীয় এক আদিবাসী জানায়, এটি ‘বাদেনা’। কেন এমন নাম? এর উত্তর জানা নেই কারো। গহিন শালবনে এমন গাছ আছে আরো অনেক।
বনের ভেতর লাল মাটির উঁচু ঢিবির দিকে আমাদের চোখ পড়ে। স্থানীয়ভাবে এটিকে বলে উলুর ঢিবি। উলুপোকা মনের আনন্দে এমন অনেক ঢিবি তৈরি করে রেখেছে গোটা বনে। হঠাৎ চারপাশ থেকে অদ্ভুত ধরনের শব্দ হয়। মনে হচ্ছিল কিছু একটা ধেয়ে আসছে। আমরা ভড়কে যাই প্রথমে। আসলে এটি বাতাসে শালপাতা নড়ার শব্দ। মনে হচ্ছিল যেন পাতার মিছিল।
ছোট্ট একটি রেস্টহাউসও রয়েছে শালবনে। সেটিকে পেছনে ফেলে প্রবেশ করি পাশের শালবনে। এর নাম মিরাবন। বনের মধ্য দিয়ে খাল আকৃতির ছোট্ট নদী চলে গেছে ভারতের ভেতরে। স্থানীয়রা বলল, বনটিতে একসময় দেখা মিলত বাঘসহ হিংস্র সব জানোয়ারের। এখন শুধু মেলে শিয়াল, খরগোশ, বনমোরগ ইত্যাদির।
মিরাবনের জমিনে বিছিয়ে থাকা শালপাতা কুড়াচ্ছিল আদিবাসী নারীরা। ওঁরাও গোত্রের মলানী টিগ্গার কাছে জানতে পারি শালপাতার কথা। আদিবাসীরা এই পাতা দিয়ে তৈরি করে হাড়িয়া খাওয়ার চোঙ আর অতিপ্রিয় পাতার বিড়ি। এ ছাড়া বিভিন্ন উৎসবে খিচুড়ি খাওয়ার ঠোঙাও তৈরি হয় শালপাতা দিয়ে।
মিরাবন থেকে চলে আসি ভটিয়া বনে। কারমা উৎসবে এই বনের একটি গাছের ডাল কেটে নিয়ে পূজা করে আদিবাসীরা। গাছটির নাম খিল কদম। সবার কাছে এটি অতি পবিত্র। মনোযোগ দিয়ে দেখি গাছটিকে।
শালবনের আজব গাছ, শালপাতার শব্দ ও লাল মাটিতে উলুর ডিবি ভ্রমণপ্রেমীদের আন্দোলিত করবে। কিন্তু কালিয়াগঞ্জের ন্যাচারাল শালবনটিতে ভ্রমণপ্রেমীদের আনাগোনা খুবই কম। কেন? বন বিভাগের বিট অফিসার বললেন, এই শালবনটির প্রচার নেই তেমন। সীমান্তবর্তী এলাকায় নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকা এবং যোগাযোগব্যবস্থা তেমন উন্নত না হওয়ায় পর্যটকদের কাছে এটি এখনো তেমন পরিচিতি পায়নি। তবে শালবনের ভেতর কটেজ তৈরি ও খাওয়াদাওয়ার ভালো ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিলে ন্যাচারাল এই শালবনটি পর্যটনশিল্পের সম্ভাবনা তৈরিতে ভূমিকা রাখবে।
সম্পর্কিত খবর

রাস্তা থেকে মাটি সরানোর কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা


কুড়িগ্রামে জমি নিয়ে সংঘর্ষে ৩ জন নিহত
- চার জেলায় ৪ লাশ উদ্ধার
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। এ ছাড়া বাগেরহাটে যুবদল নেতাকে হত্যার অভিযোগসহ পাঁচ জেলায় পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার এসব ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ভূন্দুর চর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত তিনজন হলেন আনোয়ার হোসেনের ছেলে নুরুল আমিন (৪০), গোলাম শহিদের ছেলে বলু মিয়া (৫৫) ও ফুলবাবু (৫০)। তাঁরা সবাই জমি নিয়ে বিরোধে থাকা শাহাজাহান মিয়ার পক্ষের লোক বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বহুদিন ধরে ওই এলাকার শাহাজাহান মিয়া ও রাজু মিয়ার মধ্যে ৫০ শতক জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল।
রৌমারী থানার ওসি লুৎফর রহমান বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের অন্য কয়েকটি জেলায়ও পৃথক ঘটনায় আরো পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
বাগেরহাটে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মারধরে সোহাগ সরদার (২৭) নামের যুবদলের এক নেতার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার রাতে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ময়মনসিংহের ভালুকায় বিয়ের মাত্র ছয় দিনের মাথায় এক নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত রূপা (১৮) তাঁর স্বামীর সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন। স্বামী দাবি করেছেন, রূপা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা নিয়েছে।
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় যমুনা নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মানকিদাহ এলাকায় নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার হয়েছে টাঙ্গন নদী থেকে। মৃত ব্যক্তি হলেন দিনাজপুর জেলার বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম।

বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি ২৮৭ যাত্রী নিয়ে নিরাপদে চট্টগ্রামে
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

দুবাই থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় উড্ডয়নের পরপরই চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইট বিজি ১৪৮ চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৮৭ জন যাত্রী নিয়ে অবতরণ করেছিল। এটি ৮টা ৩৭ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত কারণে ফ্লাইটটি পুনরায় ফিরে এসে ৮টা ৫৮ মিনিটে শাহ আমানত বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল জানান, বিমানটি বিমানবন্দরের বে নম্বর-৮-এ অবস্থান করছে। ফ্লাইটের সব যাত্রীর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অন্য একটি ফ্লাইট বিজি ১২২-এ অনবোর্ড সম্পন্ন হয়। সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
বিমান কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুবাই থেকে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইটটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল বলেন, বিমানের ত্রুটি সারানোর কাজ চলছে। যাত্রীরা নিরাপদে আছেন।

রাশিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত, ৫০ আরোহীর সবাই নিহত
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

রাশিয়ায় ৫০ আরোহী নিয়ে একটি অ্যান-২৪ যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রাথমিক খবরে জানানো হয়েছে, কেউই বেঁচে নেই। সিভিল ডিফেন্স, জরুরি ও দুর্যোগবিষয়ক মন্ত্রণালয় গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছে, অ্যান-২৪ বিমানটি পরিচালনা করছিল সাইবেরিয়াভিত্তিক বিমান সংস্থা আঙ্গারা। প্রথমে বিমানটি রাডার থেকে হারিয়ে যায়।
ইন্টারফ্যাক্স নিউজ এজেন্সি বলেছে, চীনের কাছাকাছি আমুর অঞ্চলে বিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।
বার্তা সংস্থা তাসের খবর অনুযায়ী, আশপাশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের মতো দৃষ্টিসীমা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসে। এ কারণে বিমানটি অবতরণের চেষ্টা করে থাকতে পারেন ক্রু।
স্থানীয় জরুরিবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিমানটি গন্তব্যের কাছাকাছি থাকাকালে হঠাৎ করে রাডারের বাইরে চলে যায়। গভর্নর অরলোভ টেলিগ্রামে লিখেছেন, প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে বিমানে ৪৩ জন যাত্রী ছিলেন।
উড়োজাহাজটিতে পাঁচ শিশুসহ ৪৩ যাত্রী ও ছয় ক্রু ছিলেন বলে আমুর অঞ্চলের গভর্নর ভাসিলি অরলভ আগেই জানিয়েছিলেন। যেখানে উড়োজাহাজটি ‘রাডার থেকে হারিয়ে যায়’, সেটি রাশিয়ার তাইগা বনভূমি অঞ্চলে পড়েছে।
১৯৫০-এর দশকে নির্মিত আন্তোনভ আন-২৪ উড়োজাহাজ সাধারণত যাত্রী ও মালপত্র পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। এখন পর্যন্ত এই মডেলের হাজারের বেশি উড়োজাহাজ তৈরি হয়েছে। রাশিয়ায় এখন সীমিত পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে এ ধরনের উড়োজাহাজ ব্যবহৃত হয় বলে জানিয়েছে আরটি।
সরকারি বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অবতরণের সময় পাইলটের ভুল এবং খারাপ দৃশ্যমানতা এই দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। সূত্র : রয়টার্স