চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে কাশিয়ানিতে এক হাজার ৭৫৯ কোটি টাকার গবেষণাকেন্দ্র তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)। পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, কিছু অপ্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণেই চলে যাবে প্রকল্পের বড় অর্থ। এ ছাড়া কিছু খাতে অস্বাভাবিক ব্যয় ধরা হয়েছে। এ নিয়ে প্রকল্পের মূল্যায়ন কমিটির সভায় প্রশ্ন তুলেছে কমিশন।
সংকটেও বিলাসী গবেষণাকেন্দ্রের প্রস্তাব
এম আর মাসফি

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পটির প্রস্তাবে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বেশি ধরা হয়েছে। প্রকল্পের সমীক্ষায় প্রস্তাবিত ব্যয়ের দ্বিগুণ ধরা হয়েছিল। দুই ধাপে ব্যয় অর্ধেক কমানোর পরও যেসব কাজ ধরা হয়েছে, এত কিছুর দরকার নেই। তাঁরা বলছেন, একটি গবেষণাকেন্দ্রের জন্য ৫০ একর ফসলি জমি নষ্ট করাও উচিত নয়।
বিসিএসআইআরের অন্যান্য গবেষণাকেন্দ্র যেখানে মাত্র ১০০ কোটি টাকার মধ্যেই বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, সেখানে কাশিয়ানির প্রকল্পটিতে এক হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। অনেক খাতের অস্বাভাবিক ব্যয় কমাতে বলা হয়েছে। কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, সংকটের মুহূর্তে এই বিলাসী প্রকল্পের প্রয়োজন নেই।
প্রকল্পটির বিলাসী প্রস্তাবের বিষয়ে বিসিএসআইআরের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আফতাব আলী শেখ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তা হয়তো এখন দেবেই না।
প্রস্তাব অনুযায়ী গবেষণাকেন্দ্র পুরোপুরি চালু হলে এক হাজার ১৪৭ জন জনবল লাগবে। এ বিষয়ে বিসিএসআইআরের চেয়ারম্যান বলেন, ‘এত জনবল চাইলেই তো পাব না।
প্রকল্প প্রস্তাবে দেখা যায়, ৫০ একর জমি অধিগ্রহণে ১৫০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। অথচ জেলা প্রশাসন মৌজা রেট অনুযায়ী সেই জমি অধিগ্রহণে ৩২ কোটি টাকা লাগবে বলে জানিয়েছে। এখন প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, হিসাবে ভুল হয়েছে। জেলা প্রশাসন যে ব্যয় নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেটাই হবে।
এদিকে যে জায়গায় গবেষণাকেন্দ্রটি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেটি ফসলি জমি। এত জায়গা নিয়ে গবেষণাকেন্দ্র নির্মাণে প্রভাব পড়বে ফসল উৎপাদনে। কিন্তু সেখানে গবেষণাকেন্দ্র করতে ছাড়পত্র দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, অন্যান্য গবেষণাকেন্দ্রের চেয়ে এখানে বেশি জায়গা চাওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, সমীক্ষায় প্রকল্পটির মোট খরচ ধরা হয়েছিল তিন হাজার ২৭৯ কোটি টাকা। পরে দুই ধাপে প্রকল্পের ব্যয় কমিয়ে এক হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয় পরিকল্পনা কমিশনে।
প্রকল্পের প্রস্তাবে বিদেশে প্রশিক্ষণ ও ভ্রমণে প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন বিদেশভ্রমণে কারা যাবে বা আদৌ তার প্রয়োজন আছে কি না, তা জানতে চেয়েছে। পাশাপাশি ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে আনতে বলেছে।
এসব বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান মো. আব্দুর রউফ কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রকল্পের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাতে বলা হয়েছে। যেসব খাতে বেশি ব্যয় ধরা হয়েছিল সেগুলো যৌক্তিক পর্যায়ে আনতে বলা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ভবন বাদ দিতে বলা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণে জেলা প্রশাসনের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে ডিপিপি সংশোধন করতে বলা হয়েছে। প্রকল্প সংশোধন করে পাঠালে খরচ অনেক কমে যাবে।
প্রকল্প প্রস্তাবে দেখা যায়, প্রকল্পটিতে চারটি ১০ তলা গবেষণাগার নির্মাণ করা হবে। আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক কনফারেন্স, সিম্পোজিয়াম, সেমিনার আয়োজনের জন্য ৫০০ আসনের একটি অডিটরিয়াম, বঙ্গবন্ধু গবেষণা কেন্দ্র, ইনোভেশন গ্যালারি, ই-লাইব্রেরি, সভাকক্ষ, সম্মেলনকক্ষ এবং দেশি-বিদেশি অতিথিদের অবস্থানের জন্য ১২টি সাধারণ স্যুইট, চারটি ভিআইপি স্যুইট ও একটি ভিভিআইপি স্যুইট সংবলিত ১০ তলার একটি বহুমুখী ভবন এবং ভবনের ছাদে হেলিপ্যাড নির্মাণ করা হবে।
এ ছাড়া ১০ তলার প্রশাসনিক ভবনে পরিচালকের দপ্তর, সভাকক্ষ ও কনফারেন্স রুম, লাইব্রেরি ও আইটি সাপোর্ট, প্রশিক্ষণকেন্দ্র, প্রশাসন শাখা, অর্থ ও হিসাব শাখা এবং প্রকৌশল বিভাগ থাকবে। গোপালগঞ্জ গবেষণাগারের পরিচালকের থাকার জন্য একটি দোতলা বাংলো নির্মাণ করা হবে। তা ছাড়া বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাদের জন্য তিনটি ১০ তলা আবাসিক ভবন এবং ছয়তলা ডরমিটরি ও গেস্ট হাউস ভবন নির্মাণ করা হবে। একটি ছয়তলা ইলেকট্রিক সাবস্টেশন, একটি তিনতলা স্কুল, একটি আনসার ও গার্ড শেড, ওয়াকওয়ে ঘেরা খেলার মাঠ, পুকুরসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করা হবে।
প্রতিটি গবেষণাগারের সঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজের জন্য মাঠ ও পুকুর থাকবে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পুকুর থেকে অগ্নিনির্বাপণের পানি সরবরাহ করা যাবে এবং এলাকা তুলনামূলকভাবে শীতল থাকবে।
প্রস্তাবে আরো বলা হয়, প্রকল্পটির মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে যৌথ গবেষণা পরিচালনা, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এবং উচ্চতর বৈজ্ঞানিক গবেষণায় শিক্ষার্থীদের সহায়তা প্রদানসহ অন্যান্য কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে বিজ্ঞান গবেষণায় আগ্রহী করা সম্ভব হবে। মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে পণ্যের মান বিশ্লেষণের জন্য আইএসও স্বীকৃত পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে। এটি মানসম্মত পণ্য আমদানি এবং রপ্তানি সহজীকরণের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে।
সম্পর্কিত খবর

স্বস্তির জয়ে সিরিজে ফিরল বাংলাদেশ
সাইদুজ্জামান, ডাম্বুলা থেকে

ক্রিকেট ম্যাচ, তার ওপর রবিবার। গতকাল তাই উদ্দাম পার্টির প্রস্তুতি ছিল রনগিরি ডাম্বুলা স্টেডিয়ামের উপড়ে পড়া গ্যালারির। ম্যাচ শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে থেকে ডিজের মিউজিক, দর্শকদের ড্রাম পেটানো আর ট্রাম্পেটের চড়া সুরে কান পাতা দায়। সেই পার্টিই মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে যায় দারুণ ক্ষিপ্রতায় কুশল মেন্ডিসকে শামীম হোসেন রান আউট করতেই।
বিশ ওভারের ক্রিকেটে ছন্দ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুতলয়ের ক্রিকেটে ছন্দের সেই গাড়ির স্টিয়ারিং হাতে পেয়ে আর পেছনে তাকায়নি বাংলাদেশ দল।
অবশ্য ম্যাচজুড়েই শামীমের প্রতিপত্তি দেখা গেছে।
কিন্তু সে ধারণা ভুল প্রমাণ করেছেন লিটন ও শামীম। অধিনায়কের সঙ্গে ৬৯ রানের জুটি গড়ে তাওহিদ ফেরেন, একই ওভারে তাঁর সঙ্গে ড্রেসিংরুমে যোগ দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এই ধাক্কায় অবশ্য কাবু হওয়ার অবস্থায় নেই শামীম। আগের ম্যাচে ৫ বলে ১৪ রানে অপরাজিত থাকা এই বাঁহাতি শুরু থেকে চড়াও হন লঙ্কান বোলারদের ওপর। ওদিকে অধিনায়কও থিতু হয়ে গেছেন উইকেটে। তাঁরা জুটি বেঁধে ছোটান রানের গতি। পঞ্চম উইকেট জুটিতে লিটন ও শামীম মিলে তোলেন ৭৭ রান, তা-ও মাত্র ২১ বলে! ১৩ ম্যাচ পর ফিফটির দেখা পান লিটন, যা তাঁর ক্যারিয়ারের দ্বাদশ পঞ্চাশ পেরোনো ইনিংস। এক বাউন্ডারি আর পাঁচ ছক্কায় ৫০ বলে ৭৬ রান করে যখন আউট হন অধিনায়ক, ততক্ষণে লড়াইয়ের জন্য আশাব্যঞ্জক পূঁজি এক রকম হয়ে গেছে বাংলাদেশের। শেষ ওভারে স্ট্রাইক পেতে মরণপণ দৌড়েও ক্রিজে পৌঁছাতে পারেননি শামীম। তাতে ২৭ বলে তাঁর ৪৮ রানের ইনিংস পঞ্চাশ ছুঁতে না পারার আক্ষেপে শেষ হয়েছে। অবশ্য তাঁর মনে কোনো আক্ষেপ নেই, ‘দল জিতেছে। তাতে অবদান রাখতে পেরেছি। এতেই আমি খুশি।’ শামীম আরো খুশি ১৬ জুলাই কলম্বোয় সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা নয়, জয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
ম্যাচ শুরুর আগের রনগিরি ডাম্বুলা স্টেডিয়ামের চালচিত্র না বললেই নয়। হাজার তিরিশেক দর্শকের ঠাঁই হয় এ মাঠে। তবে দুই দিন ধরে টিকিটের জন্য আহাজারি শোনা যাচ্ছিল, তাতে বোঝাই যাচ্ছিল যে পর্যাপ্ত আসন নেই। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় খেলা শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে গ্যালারি ভরে গেছে। বরাবরের মতো গ্যালারি লাগোয়া গাছেও চড়ে বসেন বিনা টিকিটের দর্শক। তাই বলে সিঁধ কেটে বিনা টিকিটের দর্শক ঢোকে ডাম্বুলায়, সেটি অজানা ছিল। গতকাল সেটিও দেখা হলো, বাংলাদেশ ইনিংসের ব্যাটিং পাওয়ার প্লে চলাকালে ভিআইপি স্ট্যান্ডের দিককার কাঁটাতারের বেড়ার নিচের মাটি সরিয়ে অন্তত শ খানেক টিকিটহীন দর্শক ঢুকে পড়লেন স্টেডিয়াম চত্বরে। বিনা বাধায় যোগ দিলেন গ্যালারির উৎসবে। নিজ দলের ব্যাটিং ভরাডুবিতে ক্ষণে ক্ষণে লাউড স্পিকার থেমেছিল বটে। তবে পুরোপুরি থামেনি। পুরস্কার বিতরণীর পরও কিছু দর্শককে দেখা গেছে হাসিমুখে সেলফি তোলায় ব্যস্ত। কয়েকজন তো বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বলেও গেলেন, ‘ওয়েল প্লেইড বাংলাদেশ!’

অবৈধ ব্যাটারির রিকশা জব্দে অভিযান শুরু

রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবৈধ ব্যাটারির রিকশার দাপট বেড়েছে। সেগুলো জব্দে অভিযান শুরু করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। গতকাল মালিবাগে অবৈধ ব্যাটারির রিকশা জব্দ করে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি : ফোকাস বাংলা
।
মানবতাবিরোধী অপরাধ
বেরোবির সাবেক ভিসিসহ ২৪ আসামির আত্মসমর্পণে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরে আবু সাঈদ হত্যা মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদসহ পলাতক ২৪ আসামিকে আত্মসমর্পণের জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারকে বাংলা-ইংরেজি দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দিতে বলা হয়েছে। আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ।
বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গতকাল রবিবার এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের দুই বিচারক হলেন মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার পালোয়ানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেওয়া হয়।
শুনানিতে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘এর আগে ১০ জুলাই এই মামলার ২৬ আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
পরে ট্রাইব্যুনাল আগামী ২২ জুলাই পরবর্তী শুনানির তারিখ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেন। যে দুজন আসামি অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন তাঁরা হলেন রাফিউল হাসান রাসেল ও মো. আনোয়ার পারভেজ।
আবু সাঈদ হত্যা মামলায় মোট ৩০ জন আসামি। এর মধ্যে চারজনকে এদিন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ঢাকার আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোর মামলায় পরবর্তী শুনানির দিন ১৬ জুলাই ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল-২। এই মামলার শুনানি করেন প্রসিকিউটর মো. সাইমুম রেজা তালুকদার। শুনানিতে তিনি বলেন, পলাতক আট আসামির গ্রেপ্তার বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় প্রয়োজন। তখন ট্রাইব্যুনাল আগামী ১৬ জুলাই প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন। আদেশের সময় মামলার ১৬ আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার আটজনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

হত্যা মামলায় জামিন
আমি রাজনীতি বুঝি না : অপু বিশ্বাস
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই আন্দোলনের সময় রাজধানীর ভাটারা থানার এনামুল হক নামের এক ব্যক্তিকে হত্যাচেষ্টা মামলায় আত্মসমর্পণ করে অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস জামিন পেয়েছেন। গতকাল রবিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানের আদালত শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। শুনানি চলাকালে অপু বিশ্বাস বলেন, ‘আমি একজন অভিনয়শিল্পী। এটাই আমার পেশা।
এদিন অপু বিশ্বাস আদালতে উপস্থিত হন। এ সময় তিনি মুখে কালো মাস্ক, মাথায় সাদা ওড়না ও বোরকা পরেছিলেন। তাঁর আইনজীবী আব্দুল মান্নান খান জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
এরপর অপু বিশ্বাস বলেন, ‘আমি একজন অভিনেত্রী। অভিনয় করার জন্য অনেক কিছু করতে হয়েছে। আমি রাজনীতি বুঝি না। রাজনীতি করিও না। করতেও চাই না।’ এ সময় আইনজীবীরা আহা আহা সাধু বলতে থাকেন। অনেক আইনজীবী উত্তেজিত হয়ে বলেন, অপু বিশ্বাস এমপি হতে চেয়েছিলেন। শেখ হাসিনার দোসর তিনি। এ সময় অপু বিশ্বাস বলেন, ‘আমি অভিনেত্রী। আমাকে যে পোশাক দেওয়া হয়, সে পোশাক পরে অভিনয় করতে হয়। অভিনয় এমনই। ওই সময় আমি খারাপ অবস্থায় ছিলাম। পারিবারিক ঝামেলা চলছিল। আমার একটা বাচ্চা আছে।’ এ সময় অপু বিশ্বাসের চোখ ছলছল করতে দেখা যায়। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেন।
এর আগে অপু বিশ্বাস গত ২ জুন হাইকোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন পান। পরে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) মো. ওয়াহিদুজ্জামানের আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিননামা দাখিল করেন তিনি।
মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, জুলাই আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই ভাটারা থানার সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের ওপর গুলি চালানো হয়। এনামুল হকের পায়ে গুলি লাগে। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৮৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চার শ’ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলাটি করেন তিনি। মামলায় অপু বিশ্বাস, আশ্না হাবিব ভাবনা, নুসরাত ফারিয়া, অভিনেতা জায়েদ খানসহ ১৭ জন তারকাকেও আসামি করা হয়। মামলায় এসব অভিনেতা-অভিনেত্রীকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের অর্থের জোগানদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পরে এই মামলায় গত ১৮ মে গ্রেপ্তার হন আরেক চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। পরদিন তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। গত ২০ মে জামিন পান তিনি।