দুই দেশের চুক্তির আওতায় গত ৩১ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়েছে মালয়েশিয়া। ওই সময় বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ছাড়পত্র পাওয়া ১৬ হাজারের বেশি কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারেননি। এই কর্মীরা কী কারণে মালয়েশিয়া যেতে পারেননি, তা নিয়ে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। ওই তদন্ত কমিটি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর গত সোমবার তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন
শতাধিক রিক্রুটিং এজেন্সি দায়ী
- ► কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়াও ভুল ছিল ►মালয়েশিয়াসহ সব শ্রমবাজার সিন্ডিকেটমুক্ত করার সুপারিশ ►কর্মী নিয়োগে অনলাইনব্যবস্থা এফডাব্লিউসিএমএসের মাধ্যমে অনিয়ম
নিজস্ব প্রতিবেদক

তদন্ত প্রতিবেদনে ১৬ হাজারের বেশি কর্মী মালয়েশিয়া যেতে না পারার প্রধান কারণ হিসেবে ১০০টির বেশি রিক্রুটিং এজেন্সিকে দায়ী করা হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে গতকাল বুধবার এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় যেতে ওই উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য ১০০টির বেশি বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সির পাশাপাশি কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়াকেও দায়ী করেছে তদন্ত কমিটি। তবে তদন্ত প্রতিবেদনে কোন কোন রিক্রুটিং এজেন্সির নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে আরো জানা যায়, তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে মালয়েশিয়াসহ সব শ্রমবাজারকে সিন্ডিকেটমুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া কর্মী নিয়োগের অনলাইনব্যবস্থা ‘এফডাব্লিউসিএমএস’-এর মাধ্যমে অনিয়ম করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, সরকার কর্মীপ্রতি খরচ ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা নির্ধারণ করলেও মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক কর্মীরা রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে চার লাখ টাকা থেকে ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন।
গত ২ জুন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নূর মো. মাহবুবুল হককে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তিনি বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় যেতে কর্মীদের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে তদন্ত কমিটি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করছেন।
২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের ৩১ মে পর্যন্ত চালু ছিল মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। এই ২২ মাসে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের জন্য পাঁচ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৩ জন কর্মীর চাহিদাপত্র দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৩১ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ছাড়পত্র পান চার লাখ ৯৩ হাজার ৬৪২ জন। আর ৩৩ হাজার ৩১ জন কর্মী বিএমইটির ছাড়পত্রই পাননি। অন্যদিকে ছাড়পত্র পাওয়া ১৬ হাজার ৯৭০ জন কর্মী শেষ পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি। এই যেতে না পারা ১৬ হাজার কর্মীর বিষয়টি তদন্ত করা হয়েছে।
সম্পর্কিত খবর

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে পাট চাষ

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে করা হয়েছে পাট চাষ। সেই পাট কেটে মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিতে জাগ দেওয়ার জন্য। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের চর বাঘমারা থেকে তোলা। ছবি : মো. আসাদুজ্জামান
।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকার আড়াই বছর বয়সী নূরজাহান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম
।
২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের
নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দলটি আগামী জাতীয় সংসদে নিম্নকক্ষে আংশিক আনুপাতিক ও উচ্চকক্ষে পূর্ণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক দ্বিকক্ষীয় সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতারা বলেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া আত্মঘাতী। এতে ফ্যাসিবাদের দোসররা আরো উৎসাহী হচ্ছে। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে ফ্যাসিবাদ ফের মাথা চাড়া দেবে।
গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী শৈথিল্য দেখালেও পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত প্রতিহত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ। এ ছাড়া ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও মাওলানা মুহসিন বেলালী।

রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী

পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার ওয়াহেদুজ্জামান (৭১) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন ওয়ার্ড)। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে নেন।
পরের দিন ১৫ জুলাই সকালের দিকে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। চিকিৎসকসংকটে দিনের প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভরতার মাধ্যমে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।
খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নেওয়া হয় অভিজ্ঞ ডাক্তারদের। এর বাইরে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বা এফসিপিএস করছেন এমন মধ্যম মানের চিকিৎসকরা থাকেন ভর্তির দিন ধার্য থাকা ওয়ার্ডগুলোতে। এ ছাড়া দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার থেকে ছয়জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হয় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ইন্টার্নদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
পাবনার ঈশ্বদীর রোগী ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে হামিম আবেদীন বলেন, ‘রামেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একবার করে আসার কারণে আমার বাবার সমস্যাগুলো জটিল হয়ে গিয়েছিল, যা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি।’
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীর সেবা দেওয়ার। কিন্তু যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়, সে পরিমাণ ইন্টার্ন চিকিৎসকও নেই।’
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, ‘হাসপাতালে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যও নেই। অন্যদিকে যেসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে, সেসংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধপথ্যও আমরা দিতে পারছি না। কারণ সব কিছু বরাদ্দ হচ্ছে ৫০০ শয্যার বিপরীতে। কিন্তু এখানে শয্যাই আছে এক হাজার ২০০টি। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’