ঢাকা, সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫
২৯ আষাঢ় ১৪৩২, ১৮ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫
২৯ আষাঢ় ১৪৩২, ১৮ মহররম ১৪৪৭

রিজার্ভের পতন রোধে বিদেশি ঋণ ও রেমিট্যান্সই ভরসা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
রিজার্ভের পতন রোধে বিদেশি  ঋণ ও রেমিট্যান্সই ভরসা

দুই বছর আগে শুরু হওয়া ডলারের সংকটে এখনো ভুগছে বাংলাদেশ। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বাড়াতে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়, সেগুলো রিজার্ভ বাড়াতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন বিদেশি ঋণ ও প্রবাসীদের পাঠানো আয়েই (রেমিট্যান্স) ভরসা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই দুই সূচকের ওপর নির্ভর করে ক্রমে রিজার্ভ পতনের গতি কিছুটা কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

ঈদুল আজহা এবং ডলারের দাম সাত টাকা বৃদ্ধির কারণে বেড়েছে প্রবাস আয়ের প্রবাহ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসের প্রথম ২১ দিনে দেশে এসেছে ১৯১ কোটি ডলার। এর আগে গত মে মাসে এসেছে চলতি অর্থবছরের সর্বোচ্চ ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার, যা গত ৪৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

এপ্রিল, মার্চ, ফেব্রুয়ারি ও জানুয়ারিতে দেশে যথাক্রমে রেমিট্যান্স আসে ২০৪ কোটি ৩০ লাখ ৬০ হাজার, ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ ৫০ হাজার, ২১৬ কোটি ৬০ লাখ এবং ২১০ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার।

ডলার সংকটের মধ্যে আর্থিক হিসাব ও চলতি হিসাবে ঘাটতি হওয়ায় ২০২২ সালের জুলাইয়ে আইএমএফের কাছে ঋণ চায় বাংলাদেশ। ছয় মাস পর সংস্থাটি গত বছরের ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে। এর তিন দিনের মাথায় ২ ফেব্রুয়ারি ঋণের প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ও গত ডিসেম্বর মাসে দ্বিতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।

গত ২৪ জুন ঋণের তৃতীয় কিস্তি বাবদ ১১১ কোটি ডলার অনুমোদিত হয়েছে। সব মিলিয়ে তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে ২২৬.৭৩ কোটি ডলারের ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। সাত কিস্তিতে পুরো ঋণ পাওয়া যাবে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, রিজার্ভের পতন ঠেকাতে গত বছর থেকে আমদানি সীমিত করেছে সরকার। এর পরও প্রতি মাসে আমদানি দায় মেটানোর জন্য গড়ে প্রায় ৫০০ কোটি ডলার প্রয়োজন হচ্ছে।

এর সঙ্গে পরিশোধ করতে হচ্ছে বিদেশ থেকে নেওয়া ঋণ ও তার সুদ। ফলে রপ্তানি আয় দিয়ে পুরো দায় মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। আইএমএফের হিসাবে, ব্যবহারযোগ্য প্রকৃত রিজার্ভের অর্থ দিয়ে তিন মাসেরও আমদানি খরচ মেটানো যাবে না বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, গত ১৯ জুন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১৯.৫১ বিলিয়ন ডলার। তবে দু-এক দিনের মধ্যে আইএমএফের ১.১১ বিলিয়ন ডলারের ঋণের অর্থ বাংলাদেশের রিজার্ভে যুক্ত হবে। এতে কিছুটা বাড়বে রিজার্ভ। তবে রপ্তানি আয়, বিদেশি বিনিয়োগ ও রেমিট্যান্স বাড়াতে না পারলে রিজার্ভ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বলে মত বিশ্লেষকদের।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, দেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতার জন্য ভালো অঙ্কের রিজার্ভ থাকা জরুরি। এখন রিজার্ভ যে পর্যায়ে নেমে এসেছে, তা নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কার কারণ আছে। কারণ এই রিজার্ভ দিয়ে দেশের তিন মাসেরও আমদানি দায় মেটানো যাবে না। ভারতের ১২-১৩ মাস ও ভিয়েতনামের সাত-আট মাসের আমদানি দায় মেটানোর মতো রিজার্ভ আছে।

জাহিদ হোসেন বলেন, আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে দেশের কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব নয়। উৎপাদন বাড়িয়ে ভালো জিডিপি অর্জন করতে যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি বাড়াতে হবে। এ জন্য আমদানি পাঁচ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে সাত বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে হবে।

১৫ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) মার্চ ও এপ্রিল মাসের দায় মেটানোর পর বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে মোট রিজার্ভ কমে ২৩.৭৭ বিলিয়ন বা দুই হাজার ৩৭৭ কোটি ডলারে নেমে আসে। আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী তা ছিল ১৮.৩২ বিলিয়ন বা এক হাজার ৮৩২ কোটি ডলার। তবে প্রকৃত বা দায়হীন রিজার্ভ এখন ১৩ বিলিয়ন বা এক হাজার ৩০০ কোটি ডলারের কিছুটা কম। ওই মাসে ডলারের দাম এক লাফে সাত টাকা বৃদ্ধি এবং ঈদ ঘিরে রেমিট্যান্স বাড়াতে শুরু করে। ফলে রিজার্ভের পরিমাণ কিছুটা বাড়ে। এখন দেশের রিজার্ভ ১৯.৫১ বিলিয়ন ডলার।

আইএমএফের ঋণ যুক্ত হলে আরো এক বিলিয়ন ডলার বাড়বে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। জুলাইয়ে আকুর বিল (মে ও জুন) পরিশোধ করলে আবার রিজার্ভে টান পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

স্বস্তির জয়ে সিরিজে ফিরল বাংলাদেশ

সাইদুজ্জামান, ডাম্বুলা থেকে
সাইদুজ্জামান, ডাম্বুলা থেকে
শেয়ার
স্বস্তির জয়ে সিরিজে ফিরল বাংলাদেশ
পঞ্চম উইকেটে ৭৭ রানের দারুণ এক জুটিতে বাংলাদেশকে বড় সংগ্রহের মঞ্চ সাজিয়ে দেন লিটন দাস ও শামিম হোসেন। পরে বোলারদের দাপটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বড় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।ছবি : মীর ফরিদ, ডাম্বুলা থেকে

ক্রিকেট ম্যাচ, তার ওপর রবিবার। গতকাল তাই উদ্দাম পার্টির প্রস্তুতি ছিল রনগিরি ডাম্বুলা স্টেডিয়ামের উপড়ে পড়া গ্যালারির। ম্যাচ শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে থেকে ডিজের মিউজিক, দর্শকদের ড্রাম পেটানো আর ট্রাম্পেটের চড়া সুরে কান পাতা দায়। সেই পার্টিই মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে যায় দারুণ ক্ষিপ্রতায় কুশল মেন্ডিসকে শামীম হোসেন রান আউট করতেই।

এর পরও ফুর্তিবাজ লঙ্কানরা দুলেছে। তবে ১৭৭ রানের পূঁজি গড়া বাংলাদেশ দল ওই রান আউটে রক্তের স্বাদ পেয়ে গেছে। স্বাগতিকদের ৯৪ রানে গুঁড়িয়ে দিয়ে ৮৩ রানের দাপুটে জয়ে সিরিজে ফেরা তাই একরকম নির্ধারিতই ছিল!

বিশ ওভারের ক্রিকেটে ছন্দ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুতলয়ের ক্রিকেটে ছন্দের সেই গাড়ির স্টিয়ারিং হাতে পেয়ে আর পেছনে তাকায়নি বাংলাদেশ দল।

প্রথম ম্যাচে ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে প্রতিপক্ষ বোলারদের তুলাধোনা করা লঙ্কান সিংহকে বাংলাদেশ খাঁচাবন্দি করে ফেলে ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ওই বলে তুলে নেন শ্রীলঙ্কার শেষ ভরসা অধিনায়ক চারিথ আসালঙ্কাকে। স্বাগতিকরা থমকে যায় ৩০ রানে ৪ উইকেট খুইয়ে। এমন অবস্থায় এক প্রান্ত আগলে রেখে পাথুম নিশাঙ্কা শেষ চেষ্টা করেছিলেন দাসুন শানাকাকে সঙ্গী করে।
কিন্তু বাংলাদেশকে এদিন কে রোখে! এই ম্যাচে একাদশে জায়গা করে নেওয়া শরিফুল ইসলামের সুইং, মোস্তাফিজুর রহমানের কাটার আর রিশাদ হোসেনের লেগস্পিন সামলানোর সক্ষমতা ততক্ষণে হারিয়ে ফেলেছে শ্রীলঙ্কা। এঁদের মধ্যে শেষোক্তজনের কথা ম্যাচ শেষে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক। তবে ঘুরেফিরে দুই অধিনায়কের মুখেও উচ্চারিত হয়েছে শামীম হোসেনের সেই রান আউটের ঘটনাটি। বাংলাদেশের বোলার আর ফিল্ডারদের দক্ষতায় দুজন ছাড়া শ্রীলঙ্কার আর কোনো ব্যাটারই দুই অঙ্ক স্পর্শ করতে পারেননি।

অবশ্য ম্যাচজুড়েই শামীমের প্রতিপত্তি দেখা গেছে।

ব্যাটিং পাওয়ার প্লে যাঁদের কাজে লাগানোর কথা, সেই দুই ওপেনারতানজিদ হাসান ও পারভেজ হোসেন একযোগে ব্যর্থ হয়েছেন গতকাল। এরপর রানখরায় ভোগা অধিনায়ক লিটন দাস ও তাওহিদ হৃদয়ের রক্ষণশীল ব্যাটিংয়ে মনে হচ্ছিল, বেশিদূর যাওয়া হবে না বাংলাদেশ দলের।

কিন্তু সে ধারণা ভুল প্রমাণ করেছেন লিটন ও শামীম। অধিনায়কের সঙ্গে ৬৯ রানের জুটি গড়ে তাওহিদ ফেরেন, একই ওভারে তাঁর সঙ্গে ড্রেসিংরুমে যোগ দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এই ধাক্কায় অবশ্য কাবু হওয়ার অবস্থায় নেই শামীম। আগের ম্যাচে ৫ বলে ১৪ রানে অপরাজিত থাকা এই বাঁহাতি শুরু থেকে চড়াও হন লঙ্কান বোলারদের ওপর। ওদিকে অধিনায়কও থিতু হয়ে গেছেন উইকেটে। তাঁরা জুটি বেঁধে ছোটান রানের গতি। পঞ্চম উইকেট জুটিতে লিটন ও শামীম মিলে তোলেন ৭৭ রান, তা-ও মাত্র ২১ বলে! ১৩ ম্যাচ পর ফিফটির দেখা পান লিটন, যা তাঁর ক্যারিয়ারের দ্বাদশ পঞ্চাশ পেরোনো ইনিংস। এক বাউন্ডারি আর পাঁচ ছক্কায় ৫০ বলে ৭৬ রান করে যখন আউট হন অধিনায়ক, ততক্ষণে লড়াইয়ের জন্য আশাব্যঞ্জক পূঁজি এক রকম হয়ে গেছে বাংলাদেশের। শেষ ওভারে স্ট্রাইক পেতে মরণপণ দৌড়েও ক্রিজে পৌঁছাতে পারেননি শামীম। তাতে ২৭ বলে তাঁর ৪৮ রানের ইনিংস পঞ্চাশ ছুঁতে না পারার আক্ষেপে শেষ হয়েছে। অবশ্য তাঁর মনে কোনো আক্ষেপ নেই, দল জিতেছে। তাতে অবদান রাখতে পেরেছি। এতেই আমি খুশি। শামীম আরো খুশি ১৬ জুলাই কলম্বোয় সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা নয়, জয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। 

ম্যাচ শুরুর আগের রনগিরি ডাম্বুলা স্টেডিয়ামের চালচিত্র না বললেই নয়। হাজার তিরিশেক দর্শকের ঠাঁই হয় এ মাঠে। তবে দুই দিন ধরে টিকিটের জন্য আহাজারি শোনা যাচ্ছিল, তাতে বোঝাই যাচ্ছিল যে পর্যাপ্ত আসন নেই। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় খেলা শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে গ্যালারি ভরে গেছে। বরাবরের মতো গ্যালারি লাগোয়া গাছেও চড়ে বসেন বিনা টিকিটের দর্শক। তাই বলে সিঁধ কেটে বিনা টিকিটের দর্শক ঢোকে ডাম্বুলায়, সেটি অজানা ছিল। গতকাল সেটিও দেখা হলো, বাংলাদেশ ইনিংসের ব্যাটিং পাওয়ার প্লে চলাকালে ভিআইপি স্ট্যান্ডের দিককার কাঁটাতারের বেড়ার নিচের মাটি সরিয়ে অন্তত শ খানেক টিকিটহীন দর্শক ঢুকে পড়লেন স্টেডিয়াম চত্বরে। বিনা বাধায় যোগ দিলেন গ্যালারির উৎসবে। নিজ দলের ব্যাটিং ভরাডুবিতে ক্ষণে ক্ষণে লাউড স্পিকার থেমেছিল বটে। তবে পুরোপুরি থামেনি। পুরস্কার বিতরণীর পরও কিছু দর্শককে দেখা গেছে হাসিমুখে সেলফি তোলায় ব্যস্ত। কয়েকজন তো বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বলেও গেলেন, ওয়েল প্লেইড বাংলাদেশ!

মন্তব্য

অবৈধ ব্যাটারির রিকশা জব্দে অভিযান শুরু

শেয়ার
অবৈধ ব্যাটারির রিকশা জব্দে অভিযান শুরু

রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবৈধ ব্যাটারির রিকশার দাপট বেড়েছে। সেগুলো জব্দে অভিযান শুরু করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। গতকাল মালিবাগে অবৈধ ব্যাটারির রিকশা জব্দ করে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি : ফোকাস বাংলা

মন্তব্য
মানবতাবিরোধী অপরাধ

বেরোবির সাবেক ভিসিসহ ২৪ আসামির আত্মসমর্পণে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বেরোবির সাবেক ভিসিসহ ২৪ আসামির আত্মসমর্পণে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ

রংপুরে আবু সাঈদ হত্যা মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদসহ পলাতক ২৪ আসামিকে আত্মসমর্পণের জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারকে বাংলা-ইংরেজি দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দিতে বলা হয়েছে। আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ।

বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গতকাল রবিবার এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের দুই বিচারক হলেন মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার পালোয়ানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেওয়া হয়।

শুনানিতে ট্রাইব্যুনাল বলেন, এর আগে ১০ জুলাই এই মামলার ২৬ আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

পরে জানা যায়, এই মামলার দুজন আসামি এরই মধ্যে অন্য দুটি মামলায় গ্রেপ্তার আছেন। সে কারণে ট্রাইব্যুনাল মৌখিকভাবে আদেশ দিলেও তাতে স্বাক্ষর করেননি। তবে আগের আদেশ উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। আগের আদেশটি পরিমার্জন করা হলো।
২৬ জন আসামির মধ্যে যে দুজন গ্রেপ্তার আছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই আদেশ প্রযোজ্য নয়।

পরে ট্রাইব্যুনাল আগামী ২২ জুলাই পরবর্তী শুনানির তারিখ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেন। যে দুজন আসামি অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন তাঁরা হলেন রাফিউল হাসান রাসেল ও মো. আনোয়ার পারভেজ।

আবু সাঈদ হত্যা মামলায় মোট ৩০ জন আসামি। এর মধ্যে চারজনকে এদিন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

তাঁরা হলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী ওরফে আকাশ।

এদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ঢাকার আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোর মামলায় পরবর্তী শুনানির দিন ১৬ জুলাই ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল-২। এই মামলার শুনানি করেন প্রসিকিউটর মো. সাইমুম রেজা তালুকদার। শুনানিতে তিনি বলেন, পলাতক আট আসামির গ্রেপ্তার বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় প্রয়োজন। তখন ট্রাইব্যুনাল আগামী ১৬ জুলাই প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন। আদেশের সময় মামলার ১৬ আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার আটজনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

মন্তব্য
হত্যা মামলায় জামিন

আমি রাজনীতি বুঝি না : অপু বিশ্বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
আমি রাজনীতি বুঝি না : অপু বিশ্বাস
অপু বিশ্বাস

জুলাই আন্দোলনের সময় রাজধানীর ভাটারা থানার এনামুল হক নামের এক ব্যক্তিকে হত্যাচেষ্টা মামলায় আত্মসমর্পণ করে অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস জামিন পেয়েছেন। গতকাল রবিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানের আদালত শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। শুনানি চলাকালে অপু বিশ্বাস বলেন, আমি একজন অভিনয়শিল্পী। এটাই আমার পেশা।

আমি রাজনীতি বুঝি না, আমি রাজনীতি করতে চাই না।

এদিন অপু বিশ্বাস আদালতে উপস্থিত হন। এ সময় তিনি মুখে কালো মাস্ক, মাথায় সাদা ওড়না ও বোরকা পরেছিলেন। তাঁর আইনজীবী আব্দুল মান্নান খান জামিন চেয়ে আবেদন করেন।

শুনানিতে তিনি বলেন, আসামি যে অর্থের জোগান দিয়েছেন, তা এজাহারে বলা নেই। নুসরাত ফারিয়াকে জামিন দেওয়া হয়েছে। বাদী হলফনামা দিয়ে বলেছেন, আমার ভুল হয়েছে। আসামির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।
আসামি একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তাঁর জামিন চাই। এ সময় বিচারক আসামি অপু বিশ্বাসের কাছে তাঁর বক্তব্য জানতে চান। কিন্তু তিনি দুইবার মাথা নেড়ে না উত্তর দেন। এ সময় তাঁর মুখে হাসিও দেখা যায়।
তখন পাশ থেকে আইনজীবীরা বলতে থাকেন, অপু বিশ্বাস ফ্যাসিস্ট হাসিনার সহযোগী। টাকার বিনিময়ে মঞ্চে স্টেজে নেচে-গেয়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে এগিয়ে দিতেন। তিনি আবার হাসেন। এ সময় অপু বিশ্বাসের চোখে-মুখে ভীতি দেখা যায়। তখন তিনি কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলেন, আমি কিছু বলতে চাই। তখন তাঁকে থামিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা সুমন জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, র‌্যাব-পুলিশ সেনাবাহিনী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। লাশের বন্যা বয়ে যায়। এ দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের যাঁরা ছিলেন সবাই শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করেছেন। এই অপু বিশ্বাসরা ফেরদৌসের নেতৃত্বে শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করেন। শেখ হাসিনা আবার আসবে বলে তাঁরা মনে করেন।

এরপর অপু বিশ্বাস বলেন, আমি একজন অভিনেত্রী। অভিনয় করার জন্য অনেক কিছু করতে হয়েছে। আমি রাজনীতি বুঝি না। রাজনীতি করিও না। করতেও চাই না। এ সময় আইনজীবীরা আহা আহা সাধু বলতে থাকেন। অনেক আইনজীবী উত্তেজিত হয়ে বলেন, অপু বিশ্বাস এমপি হতে চেয়েছিলেন। শেখ হাসিনার দোসর তিনি। এ সময় অপু বিশ্বাস বলেন, আমি অভিনেত্রী। আমাকে যে পোশাক দেওয়া হয়, সে পোশাক পরে অভিনয় করতে হয়। অভিনয় এমনই। ওই সময় আমি খারাপ অবস্থায় ছিলাম। পারিবারিক ঝামেলা চলছিল। আমার একটা বাচ্চা আছে। এ সময় অপু বিশ্বাসের চোখ ছলছল করতে দেখা যায়। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেন।

এর আগে অপু বিশ্বাস গত ২ জুন হাইকোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন পান। পরে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) মো. ওয়াহিদুজ্জামানের আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিননামা দাখিল করেন তিনি।

মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, জুলাই আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই ভাটারা থানার সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের ওপর গুলি চালানো হয়। এনামুল হকের পায়ে গুলি লাগে। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৮৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চার শ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলাটি করেন তিনি। মামলায় অপু বিশ্বাস, আশ্না হাবিব ভাবনা, নুসরাত ফারিয়া, অভিনেতা জায়েদ খানসহ ১৭ জন তারকাকেও আসামি করা হয়। মামলায় এসব অভিনেতা-অভিনেত্রীকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের অর্থের জোগানদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পরে এই মামলায় গত ১৮ মে গ্রেপ্তার হন আরেক চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। পরদিন তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। গত ২০ মে জামিন পান তিনি।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ