ঢাকা, রবিবার ১৩ জুলাই ২০২৫
২৮ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, রবিবার ১৩ জুলাই ২০২৫
২৮ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ মহররম ১৪৪৭

ঝরে পড়ার শঙ্কায় আড়াই লাখ শিশু

শরীফ শাওন
শরীফ শাওন
শেয়ার
ঝরে পড়ার শঙ্কায় আড়াই লাখ শিশু

প্রাথমিক স্তরের ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য পরিচালিত একটি কর্মসূচি থেকে প্রায় আড়াই লাখ শিশুকে মূলধারার শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে বিভিন্ন সমস্যার কারণে এসব শিক্ষার্থীর পুনরায় ঝরে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সারা দেশে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে পড়া বা ভর্তি হতে না পারা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণে দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন কর্মসূচি। সম্প্রতি এসব শিক্ষার্থীর একটি অংশকে মূলধারার শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

কর্মসূচি বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তারা বলছেন, দিনমজুর বা দরিদ্র পরিবারের শিশুরা এই কর্মসূচির আওতায় পড়াশোনা করছে। অনেক শিক্ষার্থীর বাবা কিংবা মা অথবা কেউ নেই। আবার অভিভাবক থাকলেও দেখা যায়, তাঁদের পক্ষে সন্তানের পড়াশোনার খরচ, স্কুলব্যাগ, পোশাক, খাতা-কলম-পেনসিলসহ শিক্ষা উপকরণ কিনে দেওয়ার সামর্থ্য নেই। অনেক সময় এসব শিশুকে উপার্জনে সহযোগিতা করতে হয়।

এসব কারণে তাদের মূলধারায় ফেরানোর এই কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। পাশাপাশি তাদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) আওতায় উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মাধ্যমে দেশব্যাপী আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে সরকার। ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের দ্বিতীয়বার শিক্ষার সুযোগ করে দিতে দেশের ৬৩টি জেলায় এই কার্যক্রম চলছে।

এর আওতায় দেশের ২৫ হাজার ৭৪০টি শিখনকেন্দ্রে আট লাখ দুই হাজার ৫৩৬টি শিশু শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।

তবে গত বছর ২৩ অক্টোবর ১০ বছর পর্যন্ত বয়সী শিক্ষার্থীদের মূলধারায় আনতে (সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্তকরণ) চিঠি দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর ধারাবাহিকতায় দুই লাখ ৪৬ হাজার ৪৯৬ জন শিক্ষার্থীর তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। একই সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তাদের উপবৃত্তি।

এই কর্মসূচির আওতায় দেশের চারটি জেলা সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও পঞ্চগড় এলাকায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করছে আরডিআরএস বাংলাদেশ।

তাদের এক হাজার ৫১১ কেন্দ্রে পড়াশোনা করছে ৪৪ হাজার ৪৯১ জন শিশু শিক্ষার্থী। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক স্কুলে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছে ১৬ হাজার ৭৪৮ জন শিশু শিক্ষার্থী। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ১৬ হাজার ৯০৭ জন শিশু শিক্ষার্থীর উপবৃত্তি।

আরডিআরএস বাংলাদেশের প্রকল্পপ্রধান মো. আব্দুল মান্নান কালের কণ্ঠকে বলেন, এসব শিক্ষার্থীকে মূলধারার শিক্ষায় ফেরাতে বড় তিটি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম নির্ধারিত সময়ে পরিচালনা; দুর্গম এলাকাগুলোতে নিকটবর্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকা এবং অভিভাবকদের বাড়তি শিক্ষা ব্যয় বহনের সুযোগ না থাকা।

তিনি বলেন, ভৌগোলিক দিক থেকে সিলেট জেলায় পাহাড় ও হাওর বেষ্টিত দুর্গম এলাকা রয়েছে, যেখান থেকে জেলা বা উপজেলা শহরের যোগাযোগব্যবস্থা খুব নাজুক। নেই পর্যাপ্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কোনো কোনো গ্রাম থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দূরত্ব চার-পাঁচ কিলেমিটার। এ ছাড়া শহর এলাকার বস্তিবাসী ও ভাসমান মানুষ প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে সচেতন নয় বা সুযোগ নেই। এই জেলার ৬৭১টি উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণ করছে সুবিধাবঞ্চিত ২০ হাজার ৫৬৮টি শিশু শিক্ষার্থী।

এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ কালের কণ্ঠকে বলেন, শিক্ষার্থীদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে সব প্রতিবন্ধকতা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। সরেজমিনে তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থীকে মূলধারায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব, তাদের তালিকা প্রস্তুত করেছে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো। তারা তালিকা পাঠানোর পর আমরা তাতে অনুমোদন দিয়েছি। শিক্ষার্থীদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা হয়েছে। ধীরে ধীরে তা বাস্তবায়ন করা হবে।

সিলেট সদর উপজেলার মাঝপাড়া চা-বাগান উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে সূর্যসিং ছত্রী। তার বাবা অজয় সিং ছত্রী বলেন, আমি ও আমার স্ত্রী দুজনই চা-বাগানের শ্রমিক। সামান্য যে মজুরি পাই, এতে সংসার চালানোই দায়। সন্তানকে লেখাপড়া করাব, এটা কখনো ভাবা হয়নি। এখন যেখানে পড়ছে, সেখানে উপবৃত্তির পাশাপাশি স্কুল ড্রেস, বই-খাতা, কলম, ব্যাগসহ অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ বিনা মূল্যে পাচ্ছে।

একই উপজেলার লালিছড়া গ্রামের চা শ্রমিক দম্পতি মনো ভক্তা ও রণিকা ভক্তা। তাঁদের সন্তান মুক্তা ভক্তা আউট অব স্কুল চিলড্রেন শিক্ষা কর্মসূচির আওতায় চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে। মনো ভক্তা বলেন, বাসা থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুই কিলোমিটার দূরে। দুজনেই কাজ করার কারণে নির্ধারিত সময়ে সন্তানকে স্কুলে পাঠানো সম্ভব হয় না। এ কারণে সেখানে সন্তানকে ভর্তিও করতে পারিনি।

অন্য এক শিক্ষার্থী অভি কর্মকারের বাবা দেবদাস কর্মকার বলেন, আশপাশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। যে বিদ্যালয় আছে, সেখানে পাহাড়ি রাস্তা দিয় যাওয়া খুব কঠিন।

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, দিনমজুর পরিবারের সন্তান ও ভাসমান শিশুদের পড়াশোনার লক্ষ্যে এই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা শুরু হয়েছিল। যাদের মা-বাবা নেই বা আর্থিক সক্ষমতা নেই, তারাই এখানে পড়ে। অনেক স্থানে এক কিলোমিটারের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও নেই। অথচ আগামী ৩১ ডিসেম্বর এই কর্মসূচি শেষ হতে চলেছে।

তাঁর ভাষ্য, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মতে, দেশে ঝরে পড়া শিশু নেই। এ জন্য এই কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হবে। অথচ রাস্তায় দাঁড়ালে দেখা যায় শিশুরা ভিক্ষা করছে, কলকারখানায় কাজ করছে। তাহলে ঝরে পড়া শিশু নেই বললে তো হবে না। যত দিন দেশে ঝরে পড়া শিক্ষার্থী থাকবে, তত দিন এই কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বৈঠক

জঙ্গি সন্দেহে বাংলাদেশি গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক
কূটনৈতিক প্রতিবেদক
শেয়ার
জঙ্গি সন্দেহে বাংলাদেশি গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ

জঙ্গি সন্দেহে মালয়েশিয়ায় সম্প্রতি কয়েকজন বাংলাদেশি গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। জঙ্গি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জোরালো অবস্থান তুলে ধরে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশিদের বিষয়ে তথ্য দিয়ে তদন্তে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

মালয়েশিয়া সফররত পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গতকাল শুক্রবার কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাতো মোহাম্মদ বিন হাজি হাসানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। ৩২তম আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামে (এআরএফ) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের ফাঁকে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন জানিয়েছে, মালয়েশিয়ার পুলিশ সম্প্রতি জঙ্গিবাদের অভিযোগে যে বাংলাদেশিদের গ্রেপ্তার করেছে তাঁদের ব্যাপারে তদন্তে বাংলাদেশ সরকার মালয়েশিয়ার সঙ্গে কাজ করবে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন গতকাল মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এই আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকারের দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন এবং তথ্য ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে অভিযোগের তদন্তে মালয়েশিয়ার সহযোগিতা চান। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ ও সহযোগিতা সহজতর করার আশ্বাস দেন।

এর আগে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে দুই নেতা বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। উভয় পক্ষ বাংলাদেশে চলমান সংস্কার, রোহিঙ্গা সংকট, এলডিসি-পরবর্তী সহায়তা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের উপমন্ত্রী ও প্রতিনিধিদলের প্রধানের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।

সেখানে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ২০০৬ সালে এআরএফের সদস্য পদ লাভ করে। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৭টি সদস্যের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই ফোরাম প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ এআরএফের দুটি অগ্রাধিকার খাত সন্ত্রাসবাদ দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ এবং দুর্যোগ ত্রাণ-এর সহসভাপতিত্ব করছে। এআরএফ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পরবর্তী অধিবেশন আগামী বছর ফিলিপিন্সের ম্যানিলায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গতকাল বিকেলে আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য দেন। তিনি জাতীয় ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রভাব বিবেচনা করে রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি আরো বেশি মনোযোগ দেওয়ার আহবান জানান। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আসিয়ান সদস্যদের বাংলাদেশের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হওয়ার প্রচেষ্টাকে ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করার আহবান জানান।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মো. ফরহাদুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ সরকারের অন্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।

মন্তব্য
জাতিসংঘের তথ্য

১৮ মাসে আরো দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
১৮ মাসে আরো দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে

মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা ও নির্যাতনের কারণে গত ১৮ মাসে বাংলাদেশে নতুন করে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

এতে বলা হয়, ২০১৭ সালে মায়ানমার থেকে প্রায় সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর এটি সর্বোচ্চসংখ্যক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা। নতুন আশ্রয়প্রার্থীদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

ইউএনএইচসিআর জানায়, গত জুন পর্যন্ত বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নতুন এক লাখ ২১ হাজার রোহিঙ্গাকে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে অনেককে এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি, যদিও তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাস করছে।

কক্সবাজারের মাত্র ২৪ বর্গকিলোমিটার জায়গায় প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের কারণে এটি এরই মধ্যে বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ ক্যাম্পে পরিণত হয়েছে।

জাতিসংঘ বলছে, নতুন করে আরো রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ায় বিদ্যমান সহায়তাব্যবস্থার ওপর চরম চাপ পড়ছে।

খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা ও আশ্রয়ের জন্য নতুন করে আগতরা অনেকাংশেই আগের রোহিঙ্গাদের ওপর নির্ভরশীল। এরই মধ্যে দাতাগোষ্ঠী তহবিল সংকটে পড়ায় গুরুত্বপূর্ণ সেবা ব্যাহত হচ্ছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি আছে। ডিসেম্বরের মধ্যে খাদ্য সহায়তা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এ ছাড়া দুই লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশুর শিক্ষা বন্ধ হয়ে যাবে।

মন্তব্য
ভারতে বাঙালিবিরোধী ষড়যন্ত্র

দিল্লির কাছে কারণ জানতে চেয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
দিল্লির কাছে কারণ জানতে চেয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতা হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে দিল্লিতে বাঙালি উচ্ছেদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। ভারতজুড়ে বাঙালিবিরোধী এক অপচেষ্টা চলছে বলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ তোলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই উদ্যোগ নিলেন।

দক্ষিণ দিল্লির বসন্ত কুঞ্জে সম্প্রতি চলা উচ্ছেদ অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টে এই আবেদন করা হয়। এই উচ্ছেদ অভিযান এমন জায়গায় হচ্ছে, যেখানে মূলত পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি অভিবাসী শ্রমিকরা থাকেন।

তাঁদের মধ্য থেকে বাংলাদেশি চিহ্নিতকরণের নামে উচ্ছেদ অভিযান চলছে বলে অভিযোগ। গত বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই অভিযোগ করেছেন।

মমতার অভিযোগের পরেই আদালতে ওই ঘটনার বিরুদ্ধে আবেদন করা হয়েছে। তবে সেটি তিনি করেননি।

এ বিষয়ে ওড়িশা রাজ্য থেকে বাঙালি উচ্ছেদ নিয়ে আরেকটি মামলাও হাইকোর্টে চলছিল।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্য সচিবকেও এ বিষয়ে আদালতকে পৃথকভাবে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁকে দিল্লির মুখ্য সচিবের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথাবার্তা বলতে হবে।

সূত্র : টেলিগ্রাফ

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
হেফাজতের বিক্ষোভ

ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি
ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় খোলার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গতকাল বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে বিক্ষোভ করে হেফাজতে ইসলাম। ছবি : কালের কণ্ঠ

বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ ও জাতীয় সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে এটি স্পষ্ট হুমকি বলে মন্তব্য করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। গতকাল শুক্রবার সংগঠনটির নেতারা বলেছেন, জাতিসংঘ বা কোনো বিদেশি সংস্থার মাধ্যমে মানবাধিকার ইস্যুতে হস্তক্ষেপ দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী। এ ধরনের কার্যালয় স্থাপন সরকারের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্নতার প্রতিফলন। দেশীয় ইসলামী মূল্যবোধ, সামাজিক স্থিতিশীলতা ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এটি দীর্ঘমেয়াদে হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে এক বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে এ মন্তব্য করেন হেফাজতের সিনিয়র নেতারা। সমাবেশে বক্তারা জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের আঞ্চলিক কার্যালয় ঢাকায় স্থাপনের সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানান।

সমাবেশ থেকে তিন দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলোঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করতে হবে, দেশের অভ্যন্তরীণ মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেশের স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকেই কার্যকর ভূমিকা রাখতে দিতে হবে এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম-খুনের নিরপেক্ষ তদন্ত ও দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী, মাওলানা আহমাদ আলী কাসেমী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা জোবায়ের রশীদ, মাওলানা এহতেশামুল হক সাকী প্রমুখ। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে শুরু হয়ে বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্য হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি মাওলানা মামুনুল হক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমরা আপনাদের সহযোগিতা করেছি। শহীদদের রক্তের বিনিময়ে গঠিত এই সরকারকে জনগণের মতামত উপেক্ষা করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো অধিকার দেওয়া হয়নি।

জাতিসংঘের তথাকথিত মানবাধিকার বাস্তবে ইসলাম ও মানবতার পরিপন্থী পশ্চিমা আদর্শের হাতিয়ার। খাল কেটে কুমির আনার অধিকার সরকারকে কেউ দেয়নি।

হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, আজ আমরা শুধু প্রাথমিক প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু সরকার যদি এই সিদ্ধান্ত থেকে অবিলম্বে সরে না আসে, তাহলে হেফাজতে ইসলাম সারা দেশে তীব্র আন্দোলনের ডাক দিতে বাধ্য হবে। প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে হলেও আমরা এই মানবাধিকার কার্যালয় ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হতে দেব না।

মামুনুল হক বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের এজেন্ডা ও ইতিহাস আমরা জানি। তাই বাংলাদেশে তাদের ডেকে আনার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। জনগণ তা মেনে নেবে না।

হেফাজতের নায়েবে আমির মুফতি আব্দুর রব ইউসুফী বলেন, বর্তমান সরকার সুযোগের অপব্যবহার করছে। বিশ টাকার নোট থেকে মসজিদের ছবি সরিয়ে মন্দিরের ছবি দিয়েছে। দেশে মানবাধিকার কার্যালয় করার ম্যান্ডেট এ সরকারকে দেওয়া হয়নি।

তিনি জানান, প্রয়োজনে যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাও এবং ঢাকা ব্লকেড কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ