ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
২ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
২ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭
বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

অনিয়ম-লুটপাটের কারণে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে ট্রাস্টি বোর্ড

  • ► ট্রাস্টি বোর্ড সদস্যদের ১১ কোটি টাকার অনিয়ম
  • ► তিনজন ট্রাস্টি সম্মানি নিয়েছেন ৬ কোটি টাকা
  • ► এফডিআরের ৫ কোটি টাকার হিসাব নেই
  • ► বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তনের সুপারিশ
বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
অনিয়ম-লুটপাটের কারণে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে ট্রাস্টি বোর্ড

অনিয়ম আর লুটপাটের কারণে ডুবতে বসেছে বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। রাজধানীর মুগদার গ্রিন মডেল টাউনে বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান। বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে ১১ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে তিনজন ট্রাস্টি সম্মানি বাবদ নিয়েছেন ছয় কোটি ১৩ লাখ টাকা।

আর বিশ্ববিদ্যালয়টির পাঁচ কোটি টাকা এফডিআরের অর্থও তুলে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাসের নামে ১০ কোটি টাকার ঋণ নেওয়া হলেও জমি কেনা হয়েছে মাত্র তিন কোটি টাকার। ভবন নির্মাণেও করা হয়েছে নানা অনিয়ম।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম, দুর্নীতি, আর্থিক, প্রশাসনিক ও একাডেমিক বিষয় নিয়ে তদন্তে নামে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি।

ওই কমিটির প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়টির এসব অনিয়ম উঠে এসেছে। তদন্ত কমিটির কাছে নানা অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় তারা ট্রাস্টি বোর্ড ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ করেছে। আর কাছাকাছি নামে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থাকায় বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তনেরও সুপারিশ করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে গতকাল মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সভাপতিত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সেখানে ট্রাস্টি বোর্ড ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির প্রতিনিধিরা একমত হন। যেহেতু সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি, তাই ট্রাস্টি বোর্ড ভাঙার এখতিয়ারও তাঁরই। ফলে ইউজিসির প্রতিবেদনসহ ট্রাস্টি বোর্ড ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ ও সভার কার্যপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সভায় উপস্থিত ইউজিসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি, তাই সভার রেজল্যুশন শিগগিরই রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। এরপর তাঁর সিদ্ধান্ত প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

ইউজিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামালউদ্দীন আব্দুল্লাহ জাফরী, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আনম রফিকুর রহমান এবং সদস্যসচিব সৈয়দ শহীদুল বারী মিলে মাসিক ভিত্তিতে গত ১১ বছরে ছয় কোটি ১৩ লাখ ৩২ হাজার টাকা সম্মানি নিয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান মাসিক সম্মানি ও গাড়ি সুবিধা বাবদ নিয়েছেন তিন কোটি ৬৬ লাখ ছয় হাজার ২১৩ টাকা, ভাইস চেয়ারম্যান নিয়েছেন এক কোটি ৩৩ লাখ ১৬ হাজার ৪৭৮ টাকা এবং সদস্যসচিব নিয়েছেন এক কোটি ১৪ লাখ ৯ হাজার ৯৪০ টাকা।

ইউজিসি বলছে, ট্রাস্টি বোর্ডের ট্রাস্ট ডিডে উল্লেখ রয়েছে, এই ট্রাস্ট জনহিতকর, অলাভজনক ও অবাণিজ্যিক ইসলামী আদর্শে পরিচালিত হবে। ট্রাস্ট প্রপার্টি জনস্বার্থে অর্থাৎ শিক্ষার বিষয়ে পরিচালিত হওয়ার কথা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়টির কিছু ট্রাস্টি এটাকে ব্যবসা হিসেবে নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টি যখন চরম আর্থিক দৈনদশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল তখনো এই তিনজন ট্রাস্টি তাঁদের সম্মানি নিয়েছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ধারা ৪৪(৭) মোতাবেক সাধারণ তহবিলের অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় ব্যয় ছাড়া অন্য কোনো কাজে খরচ করা যাবে না। তাই আইনবিরুদ্ধ হওয়ায় এ পর্যন্ত গ্রহণ করা সব সম্মানি সাধারণ তহবিলে ফেরত দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে। ফেরত দেওয়া না হলে আইনগত প্রক্রিয়ায় অর্থ পুনরুদ্ধারে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা করা যেতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আইন অনুযায়ী ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য অন্যূন পাঁচ কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে সংরক্ষিত তহবিল হিসেবে কোনো তফসিলি ব্যাংকে জমা রাখা বাধ্যতামূলক। বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া তথ্য ও ব্যাংক হিসাব বিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে আইন অনুযায়ী এফডিআর খোলা হলেও ওই এফডিআরের প্রাপ্ত সুদ ও আসল উত্তোলন করা হয়েছে। আইনের ৪৯ ধারা মোতাবেক এটি অপরাধ। এ জন্য কারাদণ্ড বা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির নামে ১০ কোটি টাকা ঋণের প্রমাণ পেয়েছে ইউজিসি। ঋণের কারণ হিসেবে স্থায়ী ক্যাম্পাসের নামে জমি কেনা ও অস্থায়ী ভবন নির্মাণের উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়টির জমির দলিল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মোট তিন কোটি টাকার জমি কেনা হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টির সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের অডিট হালনাগাদ রয়েছে।

এ ছাড়া স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য বিশাল অঙ্কের ঋণ নেওয়া, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ভবন নির্মাণ এবং সেখানেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

ইউজিসি বলছে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ নামে কুষ্টিয়ায় ১৯৮০ সালে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে কাছাকাছি নামে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রায়ই বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়। বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ আইনের ৩(৫) ধারার পরিপন্থী হওয়ায় সরকার নামটি পরিবর্তনের উদ্যোগ নিতে পারে।

ইউজিসি তাদের প্রতিবেদনে ১০ দফা সুপারিশ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাময়িক সনদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী সনদের জন্য আবেদন না করায় বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রমের আইনগত ভিত্তি নেই। তবে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়টি চালু রাখা যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়টির নামে অপরিকল্পিত ঋণ গ্রহণ, সংরক্ষিত তহবিলের টাকা আইন লঙ্ঘন করে উত্তোলন, বেআইনি ও অনৈতিকভাবে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের ভাতা ও সম্মানি গ্রহণ, আইন অমান্য করে খেয়ালখুশিমতো বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়টির চলমান অচলাবস্থা নিরসনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ৩৫(৭) ধারা অনুযায়ী চ্যান্সেলরের এখতিয়ার প্রয়োগ করে জরুরি ভিত্তিতে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ পুর্নগঠন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আমিনুল হক ভূঁইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। সেখানে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যেহেতু সভাটি মন্ত্রী মহোদয়ের সভাপতিত্বে হয়েছে, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে পরবর্তী করণীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ই নির্ধারণ করবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে পাট চাষ

শেয়ার
তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে  পাট চাষ

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে করা হয়েছে পাট চাষ। সেই পাট কেটে মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিতে জাগ দেওয়ার জন্য। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের চর বাঘমারা থেকে তোলা। ছবি : মো. আসাদুজ্জামান

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

শেয়ার
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকার আড়াই বছর বয়সী নূরজাহান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম

মন্তব্য

২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দলটি আগামী জাতীয় সংসদে নিম্নকক্ষে আংশিক আনুপাতিক ও উচ্চকক্ষে পূর্ণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক দ্বিকক্ষীয় সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতারা বলেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ।

আনুপাতিক পদ্ধতির মাধ্যমেই সব শ্রেণি ও মতধারার সঠিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব।

মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া আত্মঘাতী। এতে ফ্যাসিবাদের দোসররা আরো উৎসাহী হচ্ছে। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে ফ্যাসিবাদ ফের মাথা চাড়া দেবে।

গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী শৈথিল্য দেখালেও পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত প্রতিহত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেনদলের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ। এ ছাড়া ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও মাওলানা মুহসিন বেলালী।

মন্তব্য

রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা

রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী
শেয়ার
রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা

পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার ওয়াহেদুজ্জামান (৭১) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন ওয়ার্ড)। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে নেন।

সেখানে বারান্দায় একটি শয্যায় রেখে চলতে থাকে রোগীর চিকিৎসা। পরের দিন ১৪ জুলাই সকালে ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বরত স্থায়ী অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা গিয়ে রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন।

পরের দিন ১৫ জুলাই সকালের দিকে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।

তখন কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রোগীকে প্রথমে অক্সিজেন এবং পরবর্তীতে স্যালাইন দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত রোগীর অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত একটা অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় নগরীর বাকির মোড়ে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে।
সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরে দ্রুত তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। ধরা পড়ে তাঁর শরীরে ডেঙ্গুসহ নানা জটিলতা। তবে তাৎক্ষণিক সঠিক চিকিৎসা পাওয়ায় রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকেন।

এটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। চিকিৎসকসংকটে দিনের প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভরতার মাধ্যমে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।

খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নেওয়া হয় অভিজ্ঞ ডাক্তারদের। এর বাইরে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বা এফসিপিএস করছেন এমন মধ্যম মানের চিকিৎসকরা থাকেন ভর্তির দিন ধার্য থাকা ওয়ার্ডগুলোতে। এ ছাড়া দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার থেকে ছয়জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হয় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ইন্টার্নদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। 

পাবনার ঈশ্বদীর রোগী ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে হামিম আবেদীন বলেন, রামেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একবার করে আসার কারণে আমার বাবার সমস্যাগুলো জটিল হয়ে গিয়েছিল, যা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি।

ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীর সেবা দেওয়ার। কিন্তু যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়, সে পরিমাণ ইন্টার্ন চিকিৎসকও নেই।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, হাসপাতালে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যও নেই। অন্যদিকে যেসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে, সেসংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধপথ্যও আমরা দিতে পারছি না। কারণ সব কিছু বরাদ্দ হচ্ছে ৫০০ শয্যার বিপরীতে। কিন্তু এখানে শয্যাই আছে এক হাজার ২০০টি। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।    

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ