ঢাকা, বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫
১ শ্রাবণ ১৪৩২, ২০ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫
১ শ্রাবণ ১৪৩২, ২০ মহররম ১৪৪৭

শুধু তিন সংস্থার পাওনা ১৮ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শুধু তিন সংস্থার পাওনা ১৮ হাজার কোটি টাকা

দেনার জর্জরিত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। শুধু তিনটি প্রতিষ্ঠানের কাছে তাদের দেনা ১৮ হাজার ১৭১ কোটি টাকা। সুদ-আসলে এই দেনার পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। দুর্নীতি ও অপচয়ের পাশাপাশি লাভজনক গন্তব্য সম্প্রসারণ এবং উড়োজাহাজের পূর্ণ সক্ষমতা ব্যবহার করতে না পারাকে এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী করছেন এই খাতের বিশ্লেষকরা।

তাঁরা বলছেন, বিমানকে দায়দেনা থেকে বের করতে কমাতে হবে অপ্রয়োজনীয় ব্যয়, নিতে হবে দূরদর্শী ব্যাবসায়িক পরিকল্পনা। লাগাম টানতে হবে দুর্নীতিতে।

কার কাছে কত পাওনা

বেবিচক : বিমানবন্দর ব্যবহারের বিভিন্ন ফি বাবদ বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে মূল বিল, ভ্যাট, আয়কর, সারচার্জসহ বিমানের আট হাজার ৮০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বকেয়া আছে, যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। দীর্ঘদিন ধরে তাগাদা দেওয়ার পরও বিমান এই টাকা পরিশোধ করছে না বলে সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক এ সংস্থার এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

পদ্মা অয়েল : উড়োজাহাজের জ্বালানি জেট ফুয়েল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কম্পানি লিমিটেডের কাছে বিমানের দেনা এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা। বকেয়া আদায়ে পদ্মা অয়েলও চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

ঋণ : ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিমান ড্যাশ-৮ কিউ ৪০০সহ মোট ১৬টি উড়োজাহাজ কিনেছে। সম্প্রতি কেনা এসব উড়োজাহাজে অর্থায়ন করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক।

আর সোনালী ব্যাংককে এ অর্থ রিজার্ভ থেকে জোগান দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য ১৯ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ নিয়েছে বিমান। এ পর্যন্ত বিমান ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেছে ১১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। বর্তমানে বকেয়া আছে আট হাজার ২৯১ কোটি টাকা।

সব মিলিয়ে এখন তিন সংস্থার কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত এই বিমান সংস্থার দায়দেনার পরিমাণ ১৮ হাজার ১৭১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।

তিন মাসে এক হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা আয়ের হিসাব

বিমানের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা যাহিদ হোসেন সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে এক হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা আয়ের খবর দিয়েছেন। তিনি জানান, গত তিন মাসে আট লাখ ৮০ হাজার যাত্রী পরিবহন করে এই আয় হয়েছে।

যাহিদ হোসেন বলেন, গত তিন মাসে রাজস্ব আদায়, যাত্রী হ্যান্ডলিং ও যাত্রীসেবায় প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয়েছে। এ ধারা বজায় থাকলে এক বছরে ৩২ লাখ যাত্রী পরিবহন করবে বিমান। এতে রাজস্ব আরো বাড়বে। তবে তিনি সেখানে দায়দেনা কিংবা মুনাফার কোনো হিসাব দেননি।

আয়ের বিপরীতে দায় ও মুনাফা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও যাহিদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘টিকিট বিক্রিতে গত তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আমাদের যে আয় হয়েছে, সেটি পাঁচ বছরে সর্বোচ্চ। লাভ-লোকসানের হিসাব ২০২৩ সালের জুনে গিয়ে বলতে পারব। সিভিল এভিয়েশন অথরিটির কাছে আমাদের যে বকেয়া আছে, সেটা ডিসপিউটেড অ্যামাউন্ট। অর্থাৎ তা মূল পাওনা থেকে সুদে-আসলে অনেক বেশি, যা নিয়ে আমাদেরও আপত্তি আছে। সারচার্জের ওপর সারচার্জ আরোপের বিষয়ে আমরা আপত্তি জানিয়েছি। আমরা প্রকৃত পাওনা পরিশোধ করতে চাই। আমরা এই বিষয় মন্ত্রণালয়ের কাছেও জানিয়েছি।’

এদিকে করোনা মহামারিকে কারণ দেখিয়ে বেবিচকের কাছে সারচার্জ বাবদ দেনা তিন হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা মওকুফের আবেদন জানিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া পুঞ্জীভূত বকেয়ার ওপর প্রতি মাসে ৬ শতাংশ হারে সারচার্জ মওকুফের জন্য আবেদন জানিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বরাবর। এরপর গত ২০ অক্টোবর বেবিচক চেয়ারম্যানের কাছে একটি চিঠি পাঠান মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট উপসচিব। তবে মন্ত্রণালয়ের এই অনুরোধ বেবিচক কর্তৃপক্ষ আপাতত মেনে নিতে পারছে না বলে জানা গেছে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের আট মাসে প্রতিষ্ঠানটি লাভ দেখায় ৩২৮ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে  বিমান ১৫৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা নিট লাভ দেখায়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২১৮ কোটি টাকা লাভ হয় সংস্থাটির। ২০১৭-১৮ সালে বিমানের লোকসান হয় ২০১ কোটি টাকার বেশি।

অত্যাধুনিক ড্রিমলাইনারসহ ১৮টি উড়োজাহাজ আছে বিমানের বহরে। ১৭টি আন্তর্জাতিক রুট, শাহজালাল বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ও হজ ফ্লাইট—এ তিনটি খাত থেকেই আসে সংস্থাটির বেশির ভাগ আয়। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, ঋণের কিস্তি, উড়োজাহাজ ভাড়ার কিস্তি আর রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ প্রতি মাসে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার মতো খরচ হয় বিমানের।

বিমানের বহরে নতুন প্রজন্মের ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ যুক্ত করার প্রধান লক্ষ্য ছিল ইউরোপ-আমেরিকার মতো লম্বা দূরত্বে ফ্লাইট চালু করা। কিন্তু এসব উড়োজাহাজের কার্যকর ব্যবহার হচ্ছে না; বরং দীর্ঘ দূরত্বে পরিচালনার জন্য আনা এসব উড়োজাহাজ দিয়ে স্বল্প ও মাঝারি দূরত্বের ফ্লাইট পরিচালনায় বিমানের সাইকেল নষ্ট করা হচ্ছে, কমছে আয়ুষ্কাল।

অগ্রগতির পেছনে বাধা দুর্নীতি ও অপচয়

নব্বইয়ের দশকে ক্রমাগত লোকসানের মুখে বিমান বাংলাদেশকে বেসরকারীকরণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ২০০৭ সালে বিমানকে একটি পাবলিক লিমিটেড কম্পানিতে পরিণত করা হয়, কিন্তু তার পরও বিমানের আর্থিক অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি।

বিমানের টিকিট বিক্রি, কার্গোতে হিসাব কম দেখানো, বিদেশে জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসএ) প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে টিকিট বিক্রি, উড়োজাহাজ লিজ নেওয়া, যন্ত্রপাতি কেনা, ভুয়া বিল-ভাউচারসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে বিমানে দুর্নীতি হচ্ছে বলে দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে। মিসর থেকে দুটি বোয়িং উড়োজাহাজ ভাড়ায় এনে সাত বছরে এক হাজার ১৬১ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে বিমান। দুর্নীতি ও অনিয়মের পরও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দাখিল করা একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বিমানের ২৮ খাতে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানের স্টাফরা স্বর্ণসহ অন্যান্য পণ্য চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যা বলছেন

পদ্মা অয়েল কম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) নুমান আহমেদ তাপাদার কালের কণ্ঠকে বলেন, জ্বালানি তেল বাবদ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কাছে পদ্মা অয়েলের বকেয়া পড়ে আছে এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এই বকেয়া মহামারি করোনা শুরুর আগের। করোনা মহামারি শুরু হওয়ায় পর ক্ষতির মুখে পড়ায় বিমান বকেয়া টাকা সঠিক সময়ে পরিশোধ করতে পারেনি। বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে বাকিতে জ্বালানি তেল দেওয়া হচ্ছে না। নগদ টাকার বিনিময়ে জ্বালানি তেল দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে নতুন করে এখন আর বকেয়া রাখার কোনো সুযোগ নেই।

বিমানের সাবেক পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও বিশিষ্ট এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, করোনা মহামারির পর ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ভাড়া বাড়িয়েছে এয়ারলাইনসগুলো, এতে সবার মতো বিমানেরও আয় বেড়েছে। ডলারের বিনিময় হার প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় টাকার অঙ্কে আয়ও বেড়ে গেছে। বিমানের খুব কৃতিত্ব নেই, পরিস্থিতির কারণে তারা গত তিন মাসে আয় বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছে। তারা আয়ের কথা বলেছে, কিন্তু এর বিপরীতে কোন কোন খাতে কত ব্যয় হয়েছে, তা জানায়নি। পৃথিবীর সব দেশের এয়ারলাইনসগুলো তাদের আর্থিক প্রতিবেদন সর্বসমক্ষে প্রকাশ করে। কিন্তু বাংলাদেশে এটা করা হয় না। সে ক্ষেত্রে তাদের লাভ নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।

তিনি বলেন, ‘আয়-ব্যয়ের সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্য আছে, সেটা দেখার বিষয়। তারা বেবিচক, তেলের টাকা দিয়েছে কি না, সরকারি কোষাগারে যে টাকা জমা দেওয়ার কথা, সেগুলো দিয়েছে কি না—এসব বিষয়ে আমরা বিমানের কাছ থেকে কিছুই জানতে পারি না। বিশাল দেনার বিপরীতে আয়ের দেনার হিসাব সংগতিপূর্ণ নয়।’

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

তৃতীয় জয়

শেয়ার
তৃতীয় জয়

শান্তি মার্দির (জার্সি নং-২০) হ্যাটট্রিকে গতকাল অনূর্ধ্ব-২০ সাফে ভুটানকে ৪-১ গোলে হারিয়েছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। আসরে স্বাগতিকদের এটি টানা তৃতীয় জয়। ছবি : বাফুফে

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

বদলির আদেশ ছিঁড়ে ফেলায় এনবিআরের ১৪ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বদলির আদেশ ছিঁড়ে ফেলায় এনবিআরের ১৪ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত

বদলির আদেশ প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ১৪ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯ জন আয়কর ও পাঁচজন কাস্টমস বিভাগের কর্মকর্তা। এনবিআরের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান গতকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে পৃথক আদেশ জারি করেন।

আদেশে বলা হয়েছে, গত ২২ জুন জারি করা বদলির আদেশ প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন।

বিষয়টি তদন্ত করে দোষ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁদের এনবিআরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ সময়ে তাঁরা বিধি অনুযায়ী খোরপোশ ভাতা পাবেন।

সাময়িক বরখাস্ত হওয়া আয়কর কর্মকর্তারা হলেন মির্জা আশিক রানা, অতিরিক্ত কর কমিশনার, কর অঞ্চল-৮, ঢাকা; মাসুমা খাতুন, যুগ্ম কর কমিশনার, কর অঞ্চল-২; মুরাদ আহমেদ, যুগ্ম কর কমিশনার, কর অঞ্চল-১৫; মোরশেদ উদ্দীন খান, যুগ্ম কর কমিশনার, কুষ্টিয়া; মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা, যুগ্ম কর কমিশনার, নোয়াখালী; আশরাফুল আলম প্রধান, যুগ্ম কর কমিশনার, কক্সবাজার; শিহাবুল ইসলাম, উপকর কমিশনার, খুলনা; নুশরাত জাহান, উপকর কমিশনার, রংপুর এবং ইমাম তৌহিদ হাসান, উপকর কমিশনার, কুমিল্লা।

কাস্টমস বিভাগ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার, অতিরিক্ত কমিশনার, নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর; সিফাত-ই-মরিয়ম, অতিরিক্ত কমিশনার; মো. শাহাদাত জামিল, দ্বিতীয় সচিব, এনবিআর; শফিউল বশর, রাজস্ব কর্মকর্তা এবং সবুজ মিয়া, রাজস্ব কর্মকর্তা।

গত জুন মাসে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজস্ব খাতে যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। ২৮ ও ২৯ জুন তাঁরা সারা দেশে কর্মবিরতি পালন করেন। পরে ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যস্থতায় আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়। আন্দোলনের পর শুরু হয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।

এরই মধ্যে তিনজন এনবিআর সদস্য ও একজন কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তৎকালীন কমিশনারকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া এনবিআরের আরো দুই সদস্যসহ ১৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত শুরু করেছে।

দুদক সূত্র জানায়, আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকার কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে।

মন্তব্য
ছাত্রদলের আলোচনাসভায় বক্তারা

গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রদলের স্পষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান খাটো করার চেষ্টা হচ্ছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
শেয়ার
গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রদলের স্পষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান খাটো করার চেষ্টা হচ্ছে

ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটরিয়ামে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের উদ্যোগে গণ-অভ্যুত্থানের বাঁক বদলের দিন শীর্ষক এক আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বক্তারা অভিযোগ করেন, ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রদলের স্পষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ অবদানকে খাটো করার অপচেষ্টা চলছে।

ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় ছাত্রদল, ডান-বাম ছাত্রসংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্ল্যাটফর্মের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

আলোচনাসভার প্রধান অতিথি বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আন্দোলনের মূলে ছিল ছাত্রসমাজের চেতনা।

আজ সেই চেতনাকে বিকৃত করার চেষ্টা হচ্ছে, যা আত্মত্যাগের অবমূল্যায়ন। তিনি আরো বলেন, যে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের জন্য ১৯৭১ সালে লাখো শহীদ জীবন দিয়েছিলেন, তা ভুলে গিয়ে শেখ মুজিব চার বছরের মাথায় গণতন্ত্রকেই ভ্যানিশ করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেন। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানকে ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিয়ে বলেন, তাঁর কন্যা (শেখ হাসিনা) তো ডাবল ফ্যাসিস্ট হয়েছেন। তিনি মন্তব্য করেন, বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ কখনো প্রত্যাবর্তন করুক, তা বাংলাদেশের মানুষ চায় না।

সালাহউদ্দিন আহমদ আরো উল্লেখ করেন, বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে আন্দোলনকারীদের রক্তদানকে যারা কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছে, গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর মধ্যে ফাটল ধরাতে চাইছে এবং বিএনপিসহ অন্যান্য দলের নেতৃস্থানীয় নেতাদের নামে কুৎসা রটানোর চেষ্টা করছে, তারা ফ্যাসিবাদের আগমনকে স্বাগত জানায়। তিনি বলেন, বিগত ১৭ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে, কেননা মাত্র ৩৬ দিনের আন্দোলনে একটি ফ্যাসিবাদী সরকারকে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব ছিল না।

ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব তাঁর বক্তব্যে বলেন, মিটফোর্ডের ঘটনার জেরে একটি গুপ্ত সংগঠন রাজনৈতিক ইন্ধন দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা বুয়েট ও চুয়েটে আমাদের সর্বোচ্চ নেতাদের নিয়ে নোংরা স্লোগান দিয়েছে।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, জামায়াতের এক নায়েবে আমিরের ভাগ্নি জামাইয়ের নেতৃত্বে তারেক রহমানবিরোধী অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা সমালোচনা গ্রহণ করি, তবে মনে রাখা উচিতআমাদেরও সহ্যের সীমা আছে। একাত্তর ও চব্বিশের পরাজিত শক্তি ছাড়া বাকি সবার সঙ্গে আমাদের ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা রয়েছে।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, জুলাই গণহত্যার বিচার নিয়ে শহীদ পরিবারের মধ্যে উদ্বেগ বিরাজ করছে। অথচ আমরা বিচার নিশ্চিত না করে বিভাজনের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছি।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের নেত্রী মুক্তা বাড়ই বলেন, আজ রাজাকারদের পুনর্বাসন ও নরমালাইজেশন শুরু হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দিয়ে গোটা দেশে মবতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা চলছে।

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহবায়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ছাত্রদলের সহযোদ্ধারা প্রথম দিন থেকেই আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে ছিলেন। ১৫ জুলাই একাত্তর হলে প্রথম হামলায়ও ছাত্রদলের ভাইয়েরা আহত হয়েছিলেন। এখানে এককভাবে কোনো সংগঠনের কৃতিত্ব দাবি গ্রহণযোগ্য নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি বলেন, এই অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব শহীদদের, কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। আমাদের গণতান্ত্রিক সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।

আলোচনাসভায় ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আহসান, ইসলামী ছাত্র মজলিসের দপ্তর সম্পাদক নূর মোহাম্মদ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুভাশিষ চাকমা, ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি সাইদুল হক নিশান, ছাত্র ইউনিয়নের মেঘমল্লার বসু ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহবায়ক আবু বাকের মজুমদারসবাই ছাত্ররাজনীতির মধ্যে বিভাজন অপপ্রচারের রাজনীতি বন্ধ করার আহবান জানান।

মন্তব্য

বিমানবন্দর থেকেই ৯৬ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল মালয়েশিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বিমানবন্দর থেকেই ৯৬ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৯৬ জন বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের ১৩১ জনকে আটকে দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ। মূলত শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় কারণ দেখিয়ে তাঁদের ফেরত পাঠানো হয়।

দেশটির ইংরেজি সংবাদমাধ্যম দ্য স্টার জানিয়েছে, ওই ১৩১ জনকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯৬ জন বাংলাদেশের নাগরিক।

গত শুক্রবার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১ নম্বর টার্মিনালে মালয়েশিয়ার বর্ডার কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রটেকশন এজেন্সির অভিযানে তাঁদের আটকে দেওয়া হয়।

দ্য স্টারের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ৩০০ জনের বেশি যাত্রীর কাগজপত্র যাচাই করে ১৩১ জনকে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

বর্ডার কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রটেকশন এজেন্সির এক বিবৃতিতে বলা হয়, ৯৬ জন বাংলাদেশি পুরুষ, ৩০ জন পাকিস্তানি পুরুষ ও পাঁচজন ইন্দোনেশীয় নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে নির্ধারিত শর্ত পূরণে ঘাটতি পাওয়া গেছে।

শর্ত পূরণ না হওয়া বলতে সন্দেহজনক হোটেল বুকিং, ইমিগ্রেশন কাউন্টারে হাজির না হওয়া এবং পর্যাপ্ত অর্থ সঙ্গে না রাখার মতো কারণ দেখানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, পর্যাপ্ত অর্থ না থাকা সাধারণত ভ্রমণকারীর প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দেহ তৈরি করে। কেউ যদি বলে যে সে এক মাস থাকবে, কিন্তু সঙ্গে মাত্র ৫০০ রিঙ্গিত আনে, তাহলে তার বক্তব্যে সন্দেহ তৈরি হওয়াটা স্বাভাবিক।

মালয়েশিয়ায় প্রবেশের জন্য যেসব শর্ত রয়েছে, সেগুলো পূরণ করেই যেন আগ্রহীরা ভ্রমণের প্রস্তুতি নেয়, বিবৃতিতে সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

বর্ডার কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রটেকশন এজেন্সি বলছে, মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে ইচ্ছুক যেকোনো ব্যক্তিকে অবশ্যই বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা, আর্থিক সামর্থ্য এবং থাকা-খাওয়ার নির্ভরযোগ্য পরিকল্পনার প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে।

এদিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দায়িত্বরত ইমিগ্রেশন পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, যাঁদের ফেরত পাঠানো হয়েছে, নিশ্চয়ই তাঁদের ট্যুরিস্ট হিসেবে নির্দিষ্ট শর্ত পূরণে ব্যর্থ মনে করেছে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ