লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লায়ন এম এ আউয়াল তাঁর নির্বাচনী এলাকায়ও বিতর্কিত ও সমালোচিত। জাল-জালিয়াতি, ভূমি দখল ও প্রতারণার মাধ্যমেই তাঁর বেপরোয়া উত্থান হয়েছে বলে এলাকার লোকজন মনে করে। এবার রাজধানীর পল্লবীতে ছেলের সামনে প্রকাশ্যে বাবা সাহিনুদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যার মামলায় আউয়ালকে গতকাল বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জমি দখলের জন্য তাঁর নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ।
নির্বাচনী এলাকায়ও বিতর্কিত আউয়াল
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

বর্তমানে ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান আউয়ালের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে ঢাকার মিরপুরসহ কয়েকটি এলাকায় জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে জমি দখল করে আবাসিক প্রকল্প গড়ে বাণিজ্যের অভিযোগ আগে থেকেই রয়েছে। জমির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব ও মামলার কারণে প্লট কিনলেও মালিকানা ও দখল বুঝে পাচ্ছেন না অনেকেই। প্রতিবাদ করলেই হামলা-মামলার আসামিসহ হয়রানির শিকার হতে হয়।
অন্যদিকে সংসদ সদস্য থাকাকালে আউয়ালের বিরুদ্ধে এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনে প্রভাব বিস্তার, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হয়রানি, সরকারি বরাদ্দ লুটপাট ও কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ ছিল মানুষের মুখে মুখে।
সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৪ সালে আবাসন কম্পানি হিসেবে নিবন্ধন নেয় হাভেলি প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড। ২০১০ সালে রাজধানীর মিরপুরের উত্তর কালশীর বাউনিয়া মৌজায় প্রায় ৪০ একর জমি নিয়ে হাভেলি গ্রুপ আলীনগর আবাসিক প্রকল্প শুরু করে। এর কর্ণধার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আউয়াল।
এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনে এম এ আউয়াল সংসদ সদস্য হন। তখন তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব হিসেবে তিনি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ২০১৫ সালের ১৪ মে ঢাকার মিরপুরে একটি জমি দখল নিয়ে আউয়ালের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের হাতে কলেজছাত্র আবদুর রহমান চঞ্চল খুন হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
আউয়াল ২০১৮ সালে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিবের পদ হারান, দল থেকেও বহিষ্কৃত হন। এরপর জাকের পার্টির হয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হন। কিন্তু ঋণখেলাপির অভিযোগে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল হয়। এর আগে তিনি ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টি গঠন করেন। রামগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ নারায়ণপুর গ্রামে জন্ম আউয়ালের। কিন্তু তাঁর সব কিছুই ঢাকাকেন্দ্রিক। এলাকার হাতে গোনা লোক তাঁকে চিনত। দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মনোনয়ন পেয়ে ২০১৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর হেলিকপ্টারে এলাকায় যান তিনি। আচরণবিধি লঙ্ঘনের মাধ্যমে এলাকায় আউয়ালের নির্বাচনী মহড়া শুরু হয়েছিল। নির্বাচিত হওয়ার পর বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ২০টি সংবর্ধনা দেওয়া হয় তাঁকে। ইছাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শ্রীরামপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক সংর্বধনা অনুষ্ঠানে তাঁকে সোনার নৌকা উপহার দেওয়া হয়। প্রায় সাত ভরি সোনা ব্যবহারে করে নৌকাটি বানানো হয়েছিল। তখন কালের কণ্ঠসহ গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হওয়ায় তিনি সমালোচিত হয়েছিলেন।
ইছাপুর ইউনিয়নের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক কালের কণ্ঠকে বলেন, আউয়াল তাঁর কাছাকাছি বয়সী। তিনি আগে ঢাকায় জমির দালালি করতেন। লোকজনের কাছে তাঁর অনেক প্রতারণার কথাও শুনেছেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রামগঞ্জ উপজেলার তিনজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানান, ঢাকায় জমি দখল করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন আউয়াল। প্রতারণা দিয়ে তাঁর উত্থান হয়েছে। সংসদ সদস্য হলেও এলাকায় আশানুরূপ উন্নয়ন করেননি তিনি। প্রতিনিধির মাধ্যমে সব কাজে নিয়মিত কমিশন হাতিয়ে নিতেন। তিনি মূলত সংসদ সদস্য পদ ব্যবহার করে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে মনোযোগী ছিলেন।
রামগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান সুমন ভূঁইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আউয়াল এমপি থাকাকালে রামগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অনেক হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন। নিজের স্বার্থে তিনি আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করে টাকার পাহাড় গড়েছেন।’
সম্পর্কিত খবর

রাস্তা থেকে মাটি সরানোর কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা


কুড়িগ্রামে জমি নিয়ে সংঘর্ষে ৩ জন নিহত
- চার জেলায় ৪ লাশ উদ্ধার
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। এ ছাড়া বাগেরহাটে যুবদল নেতাকে হত্যার অভিযোগসহ পাঁচ জেলায় পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার এসব ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ভূন্দুর চর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত তিনজন হলেন আনোয়ার হোসেনের ছেলে নুরুল আমিন (৪০), গোলাম শহিদের ছেলে বলু মিয়া (৫৫) ও ফুলবাবু (৫০)। তাঁরা সবাই জমি নিয়ে বিরোধে থাকা শাহাজাহান মিয়ার পক্ষের লোক বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বহুদিন ধরে ওই এলাকার শাহাজাহান মিয়া ও রাজু মিয়ার মধ্যে ৫০ শতক জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল।
রৌমারী থানার ওসি লুৎফর রহমান বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের অন্য কয়েকটি জেলায়ও পৃথক ঘটনায় আরো পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
বাগেরহাটে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মারধরে সোহাগ সরদার (২৭) নামের যুবদলের এক নেতার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার রাতে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ময়মনসিংহের ভালুকায় বিয়ের মাত্র ছয় দিনের মাথায় এক নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত রূপা (১৮) তাঁর স্বামীর সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন। স্বামী দাবি করেছেন, রূপা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা নিয়েছে।
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় যমুনা নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মানকিদাহ এলাকায় নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার হয়েছে টাঙ্গন নদী থেকে। মৃত ব্যক্তি হলেন দিনাজপুর জেলার বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম।

বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি ২৮৭ যাত্রী নিয়ে নিরাপদে চট্টগ্রামে
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

দুবাই থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় উড্ডয়নের পরপরই চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইট বিজি ১৪৮ চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৮৭ জন যাত্রী নিয়ে অবতরণ করেছিল। এটি ৮টা ৩৭ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত কারণে ফ্লাইটটি পুনরায় ফিরে এসে ৮টা ৫৮ মিনিটে শাহ আমানত বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল জানান, বিমানটি বিমানবন্দরের বে নম্বর-৮-এ অবস্থান করছে। ফ্লাইটের সব যাত্রীর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অন্য একটি ফ্লাইট বিজি ১২২-এ অনবোর্ড সম্পন্ন হয়। সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
বিমান কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুবাই থেকে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইটটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল বলেন, বিমানের ত্রুটি সারানোর কাজ চলছে। যাত্রীরা নিরাপদে আছেন।

রাশিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত, ৫০ আরোহীর সবাই নিহত
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

রাশিয়ায় ৫০ আরোহী নিয়ে একটি অ্যান-২৪ যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রাথমিক খবরে জানানো হয়েছে, কেউই বেঁচে নেই। সিভিল ডিফেন্স, জরুরি ও দুর্যোগবিষয়ক মন্ত্রণালয় গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছে, অ্যান-২৪ বিমানটি পরিচালনা করছিল সাইবেরিয়াভিত্তিক বিমান সংস্থা আঙ্গারা। প্রথমে বিমানটি রাডার থেকে হারিয়ে যায়।
ইন্টারফ্যাক্স নিউজ এজেন্সি বলেছে, চীনের কাছাকাছি আমুর অঞ্চলে বিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।
বার্তা সংস্থা তাসের খবর অনুযায়ী, আশপাশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের মতো দৃষ্টিসীমা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসে। এ কারণে বিমানটি অবতরণের চেষ্টা করে থাকতে পারেন ক্রু।
স্থানীয় জরুরিবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিমানটি গন্তব্যের কাছাকাছি থাকাকালে হঠাৎ করে রাডারের বাইরে চলে যায়। গভর্নর অরলোভ টেলিগ্রামে লিখেছেন, প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে বিমানে ৪৩ জন যাত্রী ছিলেন।
উড়োজাহাজটিতে পাঁচ শিশুসহ ৪৩ যাত্রী ও ছয় ক্রু ছিলেন বলে আমুর অঞ্চলের গভর্নর ভাসিলি অরলভ আগেই জানিয়েছিলেন। যেখানে উড়োজাহাজটি ‘রাডার থেকে হারিয়ে যায়’, সেটি রাশিয়ার তাইগা বনভূমি অঞ্চলে পড়েছে।
১৯৫০-এর দশকে নির্মিত আন্তোনভ আন-২৪ উড়োজাহাজ সাধারণত যাত্রী ও মালপত্র পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। এখন পর্যন্ত এই মডেলের হাজারের বেশি উড়োজাহাজ তৈরি হয়েছে। রাশিয়ায় এখন সীমিত পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে এ ধরনের উড়োজাহাজ ব্যবহৃত হয় বলে জানিয়েছে আরটি।
সরকারি বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অবতরণের সময় পাইলটের ভুল এবং খারাপ দৃশ্যমানতা এই দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। সূত্র : রয়টার্স