আ হ ম মুস্তফা কামাল বা লোটাস কামাল ক্রীড়াপ্রেমী। বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের সভাপতি ছিলেন। বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস নামের একটি ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানা কিনেছিল কামাল পরিবার। সাকিব আল হাসানের মতো ক্রিকেট অলরাউন্ডারদের পছন্দ করতেন তিনি।
সর্বগ্রাসী দুর্নীতির ‘অলরাউন্ডার’
- লোটাসকাণ্ড : দুর্নীতির পদ্ম—চতুর্থ পর্ব
বিশেষ প্রতিনিধি

চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট লোটাস কামাল পাঁচবার এমপি ছিলেন কুমিল্লা-১০ আসনের। সামলেছেন আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।
লোটাস কামাল দুর্নীতি করেননি এমন কোনো সেক্টর নেই। সংগঠন ও এলাকায়ও তিনি করেছেন দুর্নীতি, কমিশন বাণিজ্য। এস আলম গ্রুপের সঙ্গে গভীর সখ্য রেখে নিজের ও স্বজনের নামে কয়েক হাজার কোটি টাকা লোপাট এবং পাচার করেছেন। সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) কে এম সিংহ রতনকে কামাল ‘ছায়ামন্ত্রী’ বানিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতেন আর্থিক ও ব্যাংক খাত। পেতেন তদবির, নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলি বাণিজ্যের কমিশন। ভাইয়ের মাধ্যমে কবজায় রেখেছেন দলীয় পদ-পদবি। টেন্ডার, টিআর ও কাবিখা থেকে হাতিয়েছেন অর্থ।
১৯৯৪ সালে তৎকালীন কুমিল্লা-৯ আসনের এমপি অধ্যক্ষ আবুল কালাম মজুমদার মারা গেলে ভাগ্য খোলে তাঁর। রাজনীতিতে এসে ১৯৯৬ সালে নৌকার টিকিটে প্রথমবার এমপি হন কামাল। ২০০১ সালে পরাজিত হলেও ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তাঁর দল আওয়ামী লীগের মতোই বিনা ভোটে এমপি হয়েছেন তিনি। এর মধ্যে ২০১৪ সালে পরিকল্পনা এবং ২০১৯ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে বিসিবি সভাপতি এবং ২০১৪ সালে আইসিসির সভাপতি নির্বাচিত হন।
নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় কামাল নিজের চেয়ে স্ত্রী কাশমেরী কামালের সম্পদ বহুগুণ বেশি দেখিয়েছেন। গত ৭ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের আগে জমা দেওয়া হলফনামায় কামালের অস্থাবর সম্পদ ৪১ কোটি ৯০ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। কিন্তু স্ত্রীর দেখিয়েছেন ৬২ কোটি ২৭ লাখ ১৯ হাজার টাকা। নিজের স্থাবর সম্পদের আর্থিক মূল্য দুই কোটি ৩০ লাখ হলেও স্ত্রীর রয়েছে পাঁচ কোটি ৪২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। স্ত্রী, দুই মেয়ে ও পাঁচ নাতি-নাতনিকে দান করায় সম্পদ কমেছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। এর মধ্যে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কম্পানির উদ্যোক্তা শেয়ারের দুই কোটি চার লাখ পাঁচ হাজার টাকা মেয়ে নাফিসা কামালকে এবং স্ত্রী, মেয়ে ও পাঁচ নাতি-নাতনিকে দিয়েছেন ৩১ কোটি টাকার সম্পত্তি।
কিন্তু হলফনামায় উল্লেখ করা কামালের সম্পদের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। দেশেই লোটাস কামালের সম্পদের পরিমাণ হাজার কোটি টাকা। শুধু শেয়ার কেলেঙ্কারি আর অর্থপাচার নয়, দুর্নীতিতেও মুস্তফা কামাল ছিলেন চ্যাম্পিয়ন। নিজ এলাকায় প্রকল্প বাগিয়ে নেওয়া এবং তার মাধ্যমে লুটপাট ছিল লোটাস কামালের দুর্নীতির পছন্দের কৌশল।
পরিকল্পনামন্ত্রী থাকাকালে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন প্রকল্পে তিনি শর্ত জুড়ে দেন, কুমিল্লা জেলাকে অন্তর্ভুক্ত করলেই কেবল অনুমোদন দেবেন। এরই অংশ হিসেবে ২০১৮ সালে বাড়ির পাশে সাড়ে ১০ একর জমিতে হয় শেখ কামাল আইটি সেন্টার। কুমিল্লাসহ সাত জেলায় প্রায় ৫৩৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয় ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। স্থানীয় সূত্র জানায়, গ্রামীণ এলাকায় লোটাস কামালের ইচ্ছাধীন এ প্রকল্প কোনো কাজেই আসেনি। প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ থেকে ইট, বালু, রডসহ সব ধরনের সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে তাঁরই গড়া সিন্ডিকেট। অবৈধভাবে নিজের পছন্দের লোকজনকে কাজ দিয়েছেন। বিনিময়ে তিনি পেয়েছেন মোটা অঙ্কের কমিশন। একটি মেগাপ্রকল্প থাকার পরও কামাল ২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর তৎকালীন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে দিয়ে ৭.৮৮ একর জমিতে প্রায় ১৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে করিয়ে নেন নলেজ পার্ক। জমি অধিগ্রহণ শেষে সীমানাদেয়াল ছাড়া কিছুই হয়নি পার্কের।
জানা যায়, ২০১৩ সাল থেকে গত জুলাই পর্যন্ত কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, নাঙ্গলকোট ও আদর্শ সদর উপজেলায় মোট ৪২টি খাল খননের জন্য ১৯ কোটি ৬৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। কামালের নির্দেশে তাঁর সিন্ডিকেট কোনো কাজ না করেই পুরো টাকা লোপাট করেছে—এমন অভিযোগ এনে গত ১৪ অক্টোবর আদালতে মামলা করেছেন সদর দক্ষিণ জেলা কৃষক সমবায় ঐক্য পরিষদের পক্ষে সংগঠনের সভাপতি মুহম্মদ আখতার হোসাইন।
২০০৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন লোটাস কামাল। প্রথমে দীর্ঘ ১০ বছর আহ্বায়ক এবং পরে দুই দফায় সভাপতির পদ দখলে রেখেছেন তিনি। কাগজে-কলমে মুস্তফা কামাল এমপি হলেও নির্বাচনী এলাকার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেছেন ছোট ভাই ও সদর দক্ষিণ উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার। দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বাদ দিয়ে তাঁকে ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৯ সালে প্রভাব খাটিয়ে চেয়ারম্যান করেন তিনি।
উপজেলা চেয়ারম্যান সারোয়ার তাঁর গাড়িচালক আবদুর রাজ্জাক এবং বারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম আহমেদের সহায়তায় লালমাই পাহাড়ে মাটিকাটা সিন্ডিকেট থেকে চাঁদা তুলেছেন। ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে টিআর-কাবিখার টাকা লুটেছেন। জুনের প্রথম সপ্তাহে সারোয়ার কানাডা গিয়ে আর ফেরেননি। অভিযোগ রয়েছে, কামালের সিন্ডিকেটকে ম্যানেজ না করে কেউ ইউপি সদস্যও হতে পারেননি। জনপ্রতি একজন চেয়ারম্যানকে ৩০ থেকে ৪০ লাখ এবং ইউপি সদস্যদের পাঁচ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে নিয়েছেন পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা।
২০১৭ সালে নবগঠিত লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি করেন বড় ভাই আবদুল হামিদকে। আর সাধারণ সম্পাদক করেন এপিএস কে এম সিংহ রতনকে। গত বছর হামিদের ছেলে ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল হাসান ওরফে শাহীনকে কেন্দ্র দখলের মাধ্যমে লালমাই উপজেলা চেয়ারম্যান করেছেন। রতনকে নাঙ্গলকোট এলাকার দায়িত্ব দেন কামাল। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর অসুস্থতার অজুহাতে অর্থমন্ত্রী এলাকায় আসা বন্ধ করে দেন। তখন রতনই ছিলেন ছায়ামন্ত্রী। দলীয় পদ-পদবি ছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, সরকারি চাকরি ও বদলির নামে ঘুষ বাণিজ্য করেছেন রতন। তাঁরও দেশে-বিদেশে অঢেল সম্পদ রয়েছে। রতন ছাড়াও একান্ত সচিব (পিএস) মোহাম্মদ ফেরদৌস আলম ঢাকায় লোটাস কামালের নির্দেশে ব্যাংক ও আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে জানা গেছে।
২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর একনেক সভায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) ক্যাম্পাস সম্প্রসারণসহ অধিকতর উন্নয়নে এক হাজার ৬৫৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, কামাল পরিকল্পনামন্ত্রী থাকায় ওই প্রকল্প পাস হওয়ার আগেই তাঁর ভাই গোলাম সারোয়ার দলীয় নেতাকর্মীর মাধ্যমে পাহাড়-টিলা, জঙ্গলঘেরা জমি নামমাত্র দামে কিনে পরে অধিগ্রহণের সময় চড়া দামে বিক্রি করেন। প্রায় ৪৭১ কোটি ১১ লাখ ২২ হাজার টাকায় ১৯৯ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। জানা যায়, মন্ত্রীর ভাইয়ের সিন্ডিকেট এ প্রকল্প থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা লোপাট করেছে।
এভাবেই সর্বব্যাপী দুর্নীতিতে আকুণ্ঠ নিমজ্জিত ছিলেন লোটাস কামাল। তাঁর ব্যবসা, রাজনীতি, সবকিছুর লক্ষ্য একটাই—অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা। সেদিক থেকে নিশ্চয়ই তিনি সফল ‘অলরাউন্ডার’।
সম্পর্কিত খবর

ঘরে ঘরে জ্বর, আতঙ্ক ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া নিয়ে
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ টানা তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। ফার্মেসির ওষুধে জ্বর না কমায় তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। ফারুক জানান, প্রথমে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন, পরে তাঁর স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানও জ্বরে ভুগতে শুরু করে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের বহির্বিভাগে কথা হয় ফারুক আহমেদের সঙ্গে।
চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও বাতাসে আর্দ্রতার ওঠানামার কারণে ভাইরাসজনিত জ্বর বাড়ছে। শিশুসহ সব বয়সী মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসকের চেম্বারে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
সোমবার ও মঙ্গলবার রাজধানীর ডিএনসিসি হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি শিশু এখন জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছে।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘একসঙ্গে বিভিন্ন ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। সাধারণ ভাইরাল জ্বরের পাশাপাশি ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও রোটা ভাইরাসও বাড়ছে।
রাজধানীর শিশু হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি বলে জানান হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এ বি এম মাহফুজ হাসান আল মামুন। তিনি বলেন, ‘এখন ভাইরাল জ্বরের মৌসুম চলছে। পাশাপাশি চলছে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মৌসুমও। বেশির ভাগ রোগী তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, শরীরে র্যাশ—এসব উপসর্গ নিয়ে আসছে। অনেকের ডেঙ্গুর উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষায় ধরা পড়ছে না।’
জ্বর কেন হয়?
চিকিৎসকরা বলছেন, জ্বর নিজে কোনো রোগ নয়, এটি একটি উপসর্গ বা সতর্কবার্তা। সাধারণ ঠাণ্ডা বা সর্দিকাশির পাশাপাশি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে জ্বর হতে পারে। করোনাভাইরাস, ডেঙ্গু, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া—এসব রোগের প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর। টিকা নেওয়া, টিউমার, ফোড়া, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, প্রস্রাবের সংক্রমণ, পিরিয়ড বা মানসিক চাপ থেকেও জ্বর হতে পারে।
ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘বাইরের প্রচণ্ড গরম থেকে ফিরে অনেকেই এসির নিচে চলে যায় বা ঠাণ্ডা পানি পান করে। এই গরম-ঠাণ্ডার তারতম্য থেকেই জ্বর-সর্দি হতে পারে। প্রতিটি পরিবারেই এখন মৌসুমি জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় টাইফয়েড ও পানিবাহিত রোগও বেড়েছে।’
ডা. লেলিন আরো বলেন, ‘এসব জ্বর সাধারণত প্যারাসিটামল খেলেই সেরে যায়। অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার পড়ে না। তবে জ্বর যদি সপ্তাহখানেকের বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।’
সাধারণ জ্বর কিভাবে বুঝব?
বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগে কভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে কাশি, গন্ধ না পাওয়া, শ্বাসকষ্ট দেখা যেত। এখন অনেক কভিড রোগীও গায়ে ব্যথা ও মাথাব্যথার উপসর্গ নিয়ে আসছে। তাই পরীক্ষা ছাড়া রোগ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’
ডা. ফজলে রাব্বি আরো বলেন, ‘ডেঙ্গুতে সাধারণত মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, পেট ব্যথা ও পাতলা পায়খানা হয়। অন্যদিকে চিকুনগুনিয়ায় গায়ে বেশি ব্যথা, বিশেষ করে জয়েন্টে ব্যথা ও দ্রুত র্যাশ দেখা দেয়। সাধারণ ভাইরাল জ্বরে হালকা গায়ে ব্যথা ও সর্দিকাশি হয় এবং তা চার দিনের মধ্যে সেরে যায়। চার দিনের বেশি জ্বর থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’

জুলাই ফাউন্ডেশনের অফিসে ভাঙচুর
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর শাহবাগে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের কয়েকজন গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর বারডেম হাসপাতালের পাশের ওই কার্যালয়ের কক্ষে ভাঙচুর চালান।
সূত্র জানায়, হামলার শুরুতে তাঁরা প্রথমে ওই কার্যালয়ে তালা লাগান। পরে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে সেখানে ভাঙচুর করা হয়।
তবে রাতে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর জানান, টাকা না পেয়ে আহতরা ক্ষুব্ধ হয়ে অফিসে তালা লাগিয়ে দেন।
ফাউন্ডেশনের একজন কর্মচারী খারাপ আচরণ করলে সেখানে ভাঙচুর করা হয় বলে আহতদের কয়েকজন জানিয়েছেন।
ভাঙচুরের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অনেক চেয়ার এলোমেলো পড়ে আছে। পানির ফিল্টার ও তিনটি দরজার গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়েছে। মেঝেতে কাচের টুকরা ছড়িয়েছিটিয়ে আছে।
গত বছর আন্দোলনে গিয়ে আহত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন জানিয়ে মামুন হোসেন নামের একজন বলেন, ‘আমার মাথার ভেতরে গুলি, ১১ মাস যাবৎ চিকিৎসাধীন। আমাদের জীবনের নিশ্চয়তা কী? তো কিসের জুলাই ফাউন্ডেশন?’
সাভার সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আহত নাজমুল হোসেন বলেন, ‘দ্বিতীয় ধাপের টাকার জন্য সাত মাস ধরে ঘুরছি। টাকা দেওয়া হচ্ছে না। জুলাই ফাউন্ডেশনের সিইও বারবার ডেট দিয়ে আমাদের টাকা দিচ্ছেন না।’
জানতে চাইলে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর বলেন, ‘জুলাই আহতদের অনেকে এখনো মানসিক ট্রমার মধ্যে আছেন।
এই ফাউন্ডেশনে সাত কোটি টাকা আছে জানিয়ে কামাল আকবর বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে আহত ও শহীদ পরিবারগুলোকে অনুদান দেওয়ার চেষ্টা করছি।’ তা ছাড়া আহতদের তালিকা থেকে ৩৯ জন ভুয়া আহতকে বাদ দিতে এবং শহীদদের তালিকা থেকে চারজনের নাম বাদ দিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার
নির্বাচনের তারিখ আমি নিজেই জানি না
নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে তা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন এখনো জানেন না। গতকাল মঙ্গলবার সকালে কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন তিনি। পরে বিকেলে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ডেমোক্রেসি (আরএফডি) আয়োজিত ফল উৎসব ও সাংবাদিক অ্যাকসেস কার্ড প্রদান অনুষ্ঠানেও তিনি একই কথা বলেন।
এ ছাড়া সিইসি সাংবাদিকদের জানান, আগামী নির্বাচনে ভোটের প্রচারে এআইয়ের অপব্যবহার রোধ করতে চায় নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন ভবনে কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টার সাক্ষাৎ শেষে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিসইউজ অব এআই আমাদের জন্যও হুমকি। এ বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে কানাডা।
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমাদের বিভিন্ন সেক্টরে যে প্রস্তুতি নিয়েছি, আগামী নির্বাচনে আমরা ঠিকমতো ডেলিভার করতে পারব কি না সে বিষয়গুলো জানতে চেয়েছেন তাঁরা। আমাদের প্রস্তুতির বিষয়টা বিস্তারিত জানিয়েছি। বিশেষ করে দেশজুড়ে ভোটার সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করতে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছি। ভোটার সচেতনতা ক্যাম্পেইনের পাশাপাশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ, এজেন্টদের প্রশিক্ষণসহ সার্বিক কাজে কানাডা পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে।
সিইসি বলেন, ‘কানাডা আমাদের সহায়তার জন্য প্রস্তুত এবং আমাদের আলোচনা অব্যাহত থাকবে। তারা চায় যে ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল ইলেকশন যেন হয়। আমাদের ভোটার নিবন্ধনে নারীদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে, পার্বত্য এলাকায় ভোটার সচেতনতামূলক কাজের বিষয়ে জানতে চেয়েছে। আমাদের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছি।’
নির্বাচন কবে বা ভোটের সম্ভাব্য সময়সীমা বিষয়ে কানাডার হাইকমিশনার জানতে চেয়েছেন কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, “উনি জানতে চেয়েছেন ভোটের স্পেসিফিক ডেট হয়েছে কি না। আমি বলেছি ‘নো’। সময়সীমা নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি। সময়সীমা সম্পর্কে আপনারা যা জানেন, আমিও তাই জানি। যেদিন ভোট হবে, তার দুই মাস আগে আমি জানিয়ে দেব।”
নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আসার বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবজারভার হিসেবে কাজ করার জন্য জিজ্ঞেস করেছি। নীতিমালাও প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। ইইউকে বলা হয়েছে, আগেই যেন জানিয়ে রাখা হয়। তাদের ২৮টি দেশের অবজারভারকে সমন্বয় করে পাঠাতে হবে, এ জন্য আগেভাগে স্বাগত জানিয়েছি।’
পক্ষপাতদুষ্ট বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুমোদন দেওয়া হবে না বলেও জানান সিইসি। তিনি বলেন, ‘গত তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন তাঁদের (অনুমোদন) দেব কেন? যেসব পর্যবেক্ষক গত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন খুব সুন্দর হয়েছে বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে বলেছেন, তাঁদের কি আমাদের নেওয়া উচিত? আমরা দেখে-শুনেই নেব। যাঁরা অভিজ্ঞ, ডিপেন্ডেবল, রিলায়েবল এবং বিভিন্ন দেশে নির্বাচন অবজার্ভ করেছেন, তাঁদের নেব। তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন, তাঁদের কোনোমতেই নেওয়া হবে না।’
বিকেলে আরএফইডির অনুষ্ঠানে সিইসি বলেন, ‘আমরা বারবার প্রমাণ করেছি; ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সালে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পেরেছিলাম। এবারও পারব ইনশাআল্লাহ। আমাদের প্রশাসন, পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে বলব, মানুষের শ্রদ্ধা পুনরুদ্ধারের এটিই সময়। ভাবমূর্তি রক্ষা ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ এখন এসেছে।’
সিইসি বলেন, ‘ভোটের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে কমপক্ষে দুই মাস আগেই সব কিছু জানিয়ে দেওয়া হবে, কোন দিন ভোট, কোন দিন মনোনয়ন—এসবসহ।
গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করে সিইসি বলেন, ‘আমরা আজকে যা কিছু করছি, তা আপনাদের মাধ্যমেই দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে আজকে আলাপের সময় দেখি উনি (কানাডার হাইকমিশনার) সব জানেন—ভোটার রেজিস্ট্রেশন, ইউএনডিপির সহযোগিতা, ক্যামেরা, ল্যাপটপ সব কিছু। তার মানে আমাদের সংবাদগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে। এ জন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সংবাদ পরিবেশনের সময় একটু সচেতন থাকবেন। দেখেছি অনেক সময় ভেতরে পজিটিভ রিপোর্ট থাকলেও হেডলাইন বা স্ক্রলে নেগেটিভ বার্তা থাকে। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়, মন খারাপ হয়। দয়া করে শিরোনাম, ক্যাপশন এমন দিন, যাতে মানুষ পজিটিভ বার্তা বুঝতে পারে।’
তিনি বলেন, “সাংবাদিকদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশন সাংবাদিকদের সরাসরি অংশগ্রহণে বিভিন্ন ‘ওয়্যারনেস রেইজিং ক্যাম্পেইন’ চালু করবে। আমরা সাংবাদিকদের পার্টনার করে কাজ করতে চাই। সচেতনতামূলক প্রচারে আপনাদের যুক্ত করব। ২০১৮ সালের মতো অভিযোগ আর যেন না ওঠে। প্রশাসন, পুলিশ, প্রিজাইডিং অফিসার, সব কর্মকর্তাকে বলব, এটা ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের সময়।” আরএফইডির সভাপতি কাজী এমাদ উদ্দীনের (জেবেল) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

মিডিয়াকে হুমকি
ক্র্যাব, অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের উদ্বেগ
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই আন্দোলনের এক নেতা কর্তৃক মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) ও অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্স।
অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের সভাপতি হাসান শরীফ ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহেল গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোর এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। গণমাধ্যমের কোনো প্রতিবেদনে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকার পাওয়ার জন্য দেশে প্রেস কাউন্সিল ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। হুমকি বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিসর সংকুচিত করা যাবে না।
অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত মত প্রকাশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হুমকি কিংবা ভয় দেখানোর চেষ্টা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সংবিধান প্রদত্ত অধিকার লঙ্ঘনের শামিল, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
এর আগে গত সোমবার ক্র্যাব কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল এবং সাধারণ সম্পাদক এম এম বাদশাহ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনা জুলাইয়ের চেতনার সঙ্গে মানানসই নয়। যেসব কারণে জুলাইয়ের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, তার অন্যতম ছিল মত প্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ।
বিবৃতিতে ক্র্যাব নেতারা বলেন, ‘মিডিয়ার ভূমিকায় কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকারের জন্য প্রেস কাউন্সিল রয়েছে। প্রচলিত আইনের বিধি অনুযায়ী আদালতেও যাওয়া যায়। কিন্তু এই হুমকি দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশের প্রতিবন্ধক বলে আমরা মনে করি।