<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ভারতীয় নিষেধাজ্ঞা, দেশের অভ্যন্তরে পণ্য বয়কট, রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে ভারত থেকে আমদানি কমেছে। চলতি বছরের মার্চে বাংলাদেশে ১৩ কোটি ৫৯ লাখ ডলারের ভারতীয় পণ্য এসেছে। গত বছরের একই সময় এসেছিল ৮৯ কোটি ৯১ লাখ ডলারের পণ্য। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ভারত থেকে আমদানি কমেছে ৮৪.৮৮ শতাংশ।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে পটপরিবর্তনের পর থেকে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে চলছে টানাপড়েন। ভারতে বাংলাদেশিদের ভ্রমণ ভিসা বাতিল, সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা এবং সব শেষে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতের বন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে বাংলাদেশের পণ্য যাওয়ার ব্যবস্থা প্রত্যাহার করেছে ভারত। এদিকে ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে ৩৫ পণ্য আমদানি বন্ধ করেছে বাংলাদেশ সরকার। এর মাধ্যমে ভারতই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজারে তারা ব্যবসা হারাচ্ছে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বাণিজ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক বিভেদ বা দূরত্ব থেকে বাণিজ্যকে মুক্ত রাখতে হবে। অনভিপ্রেত ঘটনার প্রভাব যদি আমদানি-রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার মতো পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়, ক্ষতিটা ভারতেরই হবে। কেননা প্রতিবছর বাংলাদেশ ১০ থেকে সর্বোচ্চ ১৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা ভারত থেকে আমদানি করছে। রপ্তানি করছে দুই বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এর বিঘ্ন ঘটলে ভারত সেই বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হবে। অন্যদিকে রপ্তানি বন্ধ করলে সাময়িক সময়ের জন্য বাংলাদেশ কিছুটা চাপে পড়লেও আমদানির নতুন বিকল্প উৎস ঠিকই খুঁজে পেয়ে যাবে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত থেকে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ প্রতি তিন মাসে বা এক প্রান্তিকে প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ভারত থেকে পণ্য আমদানি কমে ১.১ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। তথ্য মতে, আগের বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসে বা চতুর্থ প্রান্তিকে ২.৩৬ বিলিয়ন এবং জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস বা তৃতীয় প্রান্তিকে ২.০৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয় ভারত থেকে। সুতরাং পটপরিবর্তনের ফলে ভারত থেকে পণ্য আমদানি অর্ধেকে নেমেছে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে ক্রমাগতভাবে সেই দেশ থেকে আমদানি কমছে। সর্বশেষ মার্চ মাসে ভারত থেকে ১৩ কোটি ৫৯ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের মার্চে এসেছিল ৮৯ কোটি ৯১ লাখ ডলারের পণ্য। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ভারত থেকে আমদানি কমেছে ৮৪.৮৮ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি মাসে ৪১ কোটি এবং জানুয়ারিতে ৬০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে ভারত থেকে। কিন্তু হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ভারত থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে ৮১ কোটি এবং জানুয়ারি মাসে ৮২ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়েছিল। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">শুধু আমদানি নয়, ভারতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডধারীদের লেনদেন নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে লেনদেন নেমে এসেছে মাত্র ২৯ কোটি টাকায়, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৩.১৫ শতাংশ কম। অথচ ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডে খরচ ছিল ১০৮ কোটি টাকা।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারিপ্রধান বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ভারতে যাতায়াত কমে যাওয়া ক্রেডিট কার্ডের খরচ কমে যাওয়ার প্রধান কারণ। তারা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কারণে চিকিৎসা নিতেও যেতে পারছে না বাংলাদেশিরা। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের আগে সবচেয়ে বেশি ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার ও খরচ হতো ভারতে। এখন যে একেবারে যাচ্ছে না, তা নয়। আগে ১০০ জন গেলে এখন যাচ্ছে ১০ জন। এ ছাড়া মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, মালদ্বীপে যাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা খুবই কম। তাদের খরচের পরিমাণও কম। আবার ক্রেডিট কার্ডের ওপর হুন্ডি কমে যাওয়ারও প্রভাব পড়েছে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গত ডিসেম্বরে ফেনীর বিলোনিয়া স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে কয়লা ও পাথর আমদানিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। বেনাপোল দিয়ে কমে যায় যাত্রী পারাপার। সরকার পরিবর্তনের পর থেকে এখন পর্যন্ত দুই দেশের সীমান্তে চলছে কড়াকড়ি। যে স্থলবন্দরগুলো দিয়ে এখন আমদানি-রপ্তানি চলছে, তা-ও কয়েক দিন আগের তুলনায় অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে বলে বন্দর সূত্রে জানা গেছে। ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের লোকজনের বাধা ও পণ্য পরিবহন জটিলতায় সিলেটের স্থল ও শুল্কস্টেশন দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া হয় ডিসেম্বরে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তফা কে মুজেরি কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">রাজনৈতিক কারণে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সখ্য কমেছে। তারই প্রতিফলন আমদানি হ্রাস। ভারত থেকে খাদ্যদ্রব্য, শিল্পের কাঁচামালসহ আরো নানা পণ্য আমদানি করা হতো। এখন আমাদের বিকল্প উৎস সন্ধান করতে হবে। এতে আমদানি খরচ বাড়তে পারে। যত দিন পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের উন্নতি না হয় তত দিন অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। এ রকম বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে উভয় দেশেরই ক্ষতি।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p> </p>