ঢাকা, রবিবার ১৩ জুলাই ২০২৫
২৯ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, রবিবার ১৩ জুলাই ২০২৫
২৯ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ মহররম ১৪৪৭

সম্পদ বেচে দিচ্ছে ওসমান পরিবার

সুভাষ সাহা ও গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু, নারায়ণগঞ্জ থেকে
সুভাষ সাহা ও গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু, নারায়ণগঞ্জ থেকে
শেয়ার
সম্পদ বেচে দিচ্ছে ওসমান পরিবার

নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবার। মুদ্রার মতো এর এক পিঠে সমৃদ্ধ রাজনৈতিক ইতিহাস-ঐতিহ্য আর আভিজাত্যের নানা গল্পগাথা। অন্য পিঠে প্রভাব-প্রতিপত্তি, সন্ত্রাস, পেশিশক্তি, গডফাদার তকমাসহ নামে-বেনামে বিপুল সম্পদ গড়ার দুর্নামও। ভালো-মন্দের এই মেলবন্ধন ঘটানো আলোচিত এই পরিবারের প্রভাবে তাদের বিরুদ্ধে একসময় কেউ রা পর্যন্ত করার সাহস পেত না।

অথচ গত ৫ আগস্টের ক্ষমতার পালাবদলের পর ওই পরিবারটির দর্প প্রায় চূর্ণ। পরিবারের সদস্য সাবেক এমপি শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান ও প্রয়াত নাসিম ওসমানের নাম শুনলে একদা যে শহরে কাঁপন ধরত, সেখানে এখন রাজ্যের নীরবতা। দুই ভাই ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা সব লাপাত্তা। তাঁদের বাপ-দাদার রাজনৈতিক ঐতিহ্য ও স্মৃতিময় ঐতিহাসিক বাড়িগুলো এখন সুনসান, জীর্ণ।
তার চেয়েও বড় খবর একে একে ওসমান পরিবারের বাড়িঘর-সহায়সম্পদ সব বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে সেলিম ওসমানের প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার দুটি বহুতলবিশিষ্ট বাড়ি বিক্রি হয়ে গেছে। আরো বিক্রির গুঞ্জন এখন শহরজুড়ে। কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে।

সরেজমিনে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে পুরো নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবার ঘিরে ভিন্ন এক বার্তা পাওয়া যায়। সবার মধ্যেই ফিসফাস, কানাকানি। সবারই কথাওসমান পরিবারের দৌরাত্ম্য শেষ হয়েছে। তাঁদের কারো টিকিটিও এখন আর দেখা যাচ্ছে না। শুধু তা-ই নয়, তাঁরা এখন সহায়সম্পদ সব গোটাচ্ছেন।

পরে খোঁজখবর নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য কানে আসে। ওসমান পরিবার বাড়িঘর বিক্রি করে চলে যাচ্ছে!

নারায়ণগঞ্জের ধনকুবের হিসেবে পরিচিত ফকির অ্যাপারেলসের মালিক ফকির মনিরুজ্জামান এরই মধ্যে ওসমান পরিবারের সদস্য ও সাবেক এমপি সেলিম ওসমানের দুটি বাড়ি কিনে নিয়েছেন বলে জানা যায়। ফকির গ্রুপ বাড়িগুলোর দাম কত তা জানাতে অপারগতা জানালেও স্থানীয়রা জানায়, বাড়ি দুটির দাম অর্ধশত কোটি টাকার কম হবে না।

গত সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের উত্তর চাষাঢ়ায় রামবাবুর পুকুরপারে সরেজমিনে গিয়ে সেলিম ওসমানের মালিকানাধীন পাশাপাশি দুটি আলিশান বহুতল ভবনের প্রধান ফটকে মালিকানা পরিবর্তনের দুটি নামফলক দেখা যায়। সেখানে লেখা রয়েছে, ক্রয়সূত্রে এই বাড়ির মালিক ফকির অ্যাপারেলস লিমিটেড, বিসিক।

উপস্থিত স্থানীয় লোকজন জানায়, দুটি বাড়িতে এখন ভাড়াটিয়ারা বসবাস করছেন। গেটে প্রহরারত একজন নিরাপত্তাকর্মী জানান, গত ৫ আগস্টের পর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা এই দুটি বাড়ি ভাঙচুর করতে এলেও বাড়ির মূল গেটে মালিকানা পরিবর্তনের নামফলক দেখে হামলা ও  ভাঙচুর না করে ফিরে যায়। তবে বাড়ি দুটি ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পরে কিনেছেন বলে প্রচার থাকলেও ফকির গ্রুপ তার আগেই কেনা হয়েছে বলে স্বীকার করেছে।

এ বিষয়ে ফকির অ্যাপারেলসের কর্ণধার ফকির মনিরুজ্জামানের সঙ্গে আজ কথা বলতে গেলে, তাঁর পিএস মোক্তার হোসেন এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে এর কয়েক মিনিট পরই ফকির অ্যাপারেলস থেকে নিজেকে এজিএম (এডমিন) পরিচয় দিয়ে নাম গোপন রেখে একজন এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন।

এ সময় তিনি কালের কণ্ঠ বলেন, বাড়ি দুটি এক বছর আগেই কেনা হয়। তবে বাজার মূল্য কত, সেটি বলা যাবে না।

পরে এলাকাবাসীর সঙ্গে এ নিয়ে কথা বললে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানায়, গত ৫ আগস্টের পর ওসমান বংশের তিন প্রভাবশালী ভাইয়ের পরিবার একযোগে নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তাই সঠিক তথ্য দেওয়া সম্ভব না। তবে আমরা যেটুকু শুনতেছি, তাতে ওসমান পরিবারের সবাই পালানোর আগেই তাঁদের সহায়সম্পদ বিক্রি করে গেছেন। বলতে পারেন, ওসমান পরিবারের সম্পদ বিক্রির হিড়িক পড়ে গেছে। যা নিয়ে শহরের বিভিন্ন মহলে এখন ব্যাপক গুঞ্জন চলছে।

চাষাঢ়া এলাকায় যার সঙ্গেই কথা হয়েছে, তাদের প্রায় প্রত্যেকেই ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের আগেই ওসমান পরিবার পরিণতি আঁচ করতে পেরে আগেভাগেই সহায়সম্পদ বিক্রি শুরু করেছে বলে জানিয়েছে। সাবেক সাংসদ সেলিম ওসমানও চাষাঢ়ার দুটি বিলাসবহুল বাড়ি বিক্রি করে গেছেন বলে স্থানীয় লোকজন কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করে।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, ওসমান পরিবারের সম্পদ বিক্রির যে হিড়িক পড়েছে, সেটি এখন আমরাও নানা সূত্রে খবর পাচ্ছি। তবে শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত উত্তর চাষাঢ়ায় সেলিম ওসমানের দুটি বিলাসবহুল বহুতলবিশিষ্ট অট্টালিকা ৫ আগস্টের আগেই বিক্রি হয় বলে জেনেছি। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকা হবে।

সাবেক এমপি শামীম ওসমানেরও সম্পদ বিক্রির তথ্য জানা যায়। তবে কী পরিমাণ সম্পদ বা বাড়ি তিনি বিক্রি করেছেন তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেনি।

নারায়ণগঞ্জ শহরে কি তাহলে শামীম ওসমানের কয়েক শ কোটি টাকার সম্পদ আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রবীণ আইনজীবী হুমায়ুন কবির বলেন, এটা আপনি কী বললেন, সাংবাদিক ভাই? কয়েক শ কোটি টাকার সম্পদ তো শামীম ওসমানের একাধিক সৈন্য-সামন্তদেরই রয়েছে! যা দুদক অনুসন্ধান করলেই জানতে পারবে।

নারায়ণগঞ্জের উত্তর চাষাঢ়ার প্রাচীন অভিজাত আবাসিক এলাকায় কালের কণ্ঠের দুই প্রতিবেদকের সঙ্গে ওসমান পরিবারের ঘরবাড়ি বিক্রির বিষয়ে একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়। সেখানে রাম বাবুর পুকুরপার ঘেঁষে পূর্বমুখী শামীম ওসমানদের বাবা প্রবীণ রাজনীতিবিদ, সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম এ কে এম শামসুজ্জোহার আদি বাসভবন খ্যাত হিরা মহলটি চোখে পড়ে। সেটিকে এখন জনমানবশূন্য এক ভূতুড়ে বাড়ি হিসেবে পড়ে থাকতে দেখা যায়। যদিও বাড়িটি অনেক আগেই তার জৌলুস হারিয়েছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার হামলা-ভাঙচুরের শিকার ঐতিহ্যবাহী এ বাড়িটিতে  এখনো ক্ষতচিহ্ন রয়েছে।

প্রায় একই দৃশ্য দেখা যায় আনুমানিক ১০০ মিটার দক্ষিণে অবস্থিত ৯ শতাংশ জায়গার ওপর নির্মিত কালো কাচে ঘেরা সাবেক প্রভাবশালী সাংসদ সেলিম ওসমানের মালিকানাধীন তিনতলাবিশিষ্ট বাড়িটিতে। সেখানেও ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয় এবং পরে আগুন দেওয়া হয়।

সরেজমিনে গিয়ে শহরের জামতলার ধোপাপট্টিতে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে সমালোচিত সাবেক প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমানের মালিকানাধীন নান্দনিক একটি বহুতল ভবনেরও একই চিত্র দেখা যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক প্রতিবেশী জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেটিতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় ও আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।  বিধ্বস্ত এই বাড়িটি নাকি এখন নেশাখোরদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে।

এদিকে স্থানীয় নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, রপ্তানিমুখী বিশাল নিট গার্মেন্টস উইসডম অ্যাটেয়ার্স লিমিটেডসহ মোট পাঁচটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও কথিত ভাড়ার চুক্তিতে কৌশলে একটি রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতার নামে হস্তান্তর করেছেন সেলিম ওসমান।

জানা যায়, এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার ওসমান পরিবারের পলাতক সদস্যদের ব্যাংক হিসাবও জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এ নিয়েও স্থানীয় গণমাধ্যমে বিস্তর লেখালেখি হচ্ছে।

সেলিম ওসমান ২০১৪ সালে তাঁর বড় ভাই নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে সংসদ সদস্য বাগিয়ে নেন। এরপর ২০১৮ সালের একাদশ ও ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি এমপির চেয়ারটি দখলে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।

সূত্র আরো জানায়, বিকেএমইএরও টানা ১৪ বছর তিনি  সভাপতি পদটি দখলে রেখে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে থেকেই একটি চিঠি পাঠিয়ে সভাপতির পদ থেকে তিনি পদত্যাগও করেন।

এদিকে সংসদ নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় সেলিম ওসমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে আরো অনেক সম্পদ থাকার তথ্য সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, সেলিম ওসমানের মালিকানাধীন পাঁচটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে তিনটি চলমান বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়।

এ ছাড়া তাঁর বার্ষিক আয় এক কোটি ৬৭ লাখ টাকা এবং তাঁর ওপর নির্ভরশীল স্ত্রী ও কন্যার আয় এক কোটি ৫৩ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়।

সেলিম ওসমানের নগদ ও ব্যাংকে জমা রাখা টাকাসহ অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ সাত কোটি ৮৭ লাখ ২৯ হাজার ৮০২ টাকা উল্লেখ করা হয়। স্ত্রী ও কন্যার নামে একই খাতে সম্পদের পরিমাণ চার কোটি ৩২ লাখ ২৭ হাজার ৮০৭ টাকার কথা উল্লেখ রয়েছে।

তাঁর স্থাবর সম্পদের পরিমাণ রয়েছে ১০৮ শতাংশ জমি এবং ৯ শতাংশ জমির ওপর এক কোটি ২৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা মূল্যের তিনতলা বাড়ি।

এ ছাড়া ঢাকার ইনার সার্কুলার রোডে ১৭ লাখ ৮৩ হাজার টাকা মূল্যের একটি ফ্ল্যাট এবং ফাইভ স্টার ফার্ম হাউসে পাঁচ কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা উল্লেখ আছে। তাঁর স্ত্রী ও কন্যার নামে জমি রয়েছে দুই হাজার ৬১৩ শতাংশ। এর মধ্যে খুলনার ফুলতলা উপজেলাতেই রয়েছে দুই হাজার ৪৩৪ শতাংশ কৃষি জমি।

তাঁদের স্থাবর সম্পদের মধ্যে আরো রয়েছে স্ত্রীর নামে ধানমণ্ডিতে ৩৯ লাখ টাকা মূল্যের ৪২৮৬ বর্গফুটের ফ্ল্যাট এবং থ্রি স্টার ফার্ম হাউসে এবং উইজডম অ্যাটেয়ার্সে প্রায় ১১ কোটি টাকার বিনিয়োগ। ধানমণ্ডিতে তিন মেয়ের নামে রয়েছে তিন কোটি ১১ লাখ টাকার তিনটি ফ্ল্যাট। সেলিম ওসমানের নিজের ও স্ত্রী-কন্যার নামে দেনা ও ঋণ ছিল প্রায় ১১ কোটি টাকা।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে বিগত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেলিম ওসমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

ওসমান পরিবারের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সাংসদ শামীম ওসমান এবং তাঁর বড় ভাই জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ সেলিম ওসমান ও সাবেক সাংসদ মরহুম নাসিম ওসমানের পুত্র আজমীর ওসমানসহ ওই পরিবারের একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) প্রত্যুষ কুমার মজুমদার গত মঙ্গলবার দুপুরে কালের কণ্ঠকে বলেন, ওসমান পরিবারের একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৩০টিরও বেশি হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। সব মামলাই তদন্তাধীন আছে। তদন্ত শেষে যথাসময়ে চার্জশিট দেওয়া হবে।

সম্পদ বেচে দিচ্ছে ওসমান পরিবার

নারায়ণগঞ্জের উত্তর চাষাঢ়া রামবাবুর পুকুরপারে দুটি বহুতল ভবন বিক্রি করে দিয়েছেন সেলিম ওসমান। ইনসেটে ক্রেতার টানানো ব্যানার। ছবি : কালের কণ্ঠ

সম্পদ বেচে দিচ্ছে ওসমান পরিবার

গত বছরের ৫ আগস্ট জামতলা ধোপাপট্টি এলাকায় ভাঙচুর করা হয় শামীম ওসমানের       বাসভবন। ছবি : কালের কণ্ঠ

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বিবিসি বাংলার দাবি

শেখ হাসিনা প্রশ্নে ভারতের অবস্থান বদলাচ্ছে না

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
শেখ হাসিনা প্রশ্নে ভারতের অবস্থান বদলাচ্ছে না

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনার অডিও ফাঁস কিংবা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ গঠনযত যাই হোক, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ভারতের অবস্থানে এখনো কোনো পরিবর্তনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের অনুরোধ মেনে তাঁকে বিচারের জন্য প্রত্যর্পণ করার যে কোনো সম্ভাবনা নেই, দিল্লিতে ওয়াকিবহাল মহল সেটাও এখনো জোর দিয়েই বলছে। শেখ হাসিনা নিজেও এই দুটি বিষয়ের কোনোটি নিয়েই এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।

গত এগারো মাসেরও বেশি সময় ধরে ভারতের আশ্রয়ে থাকাকালে তিনি নিয়মিতই দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাষণ দিচ্ছেন বা নানাভাবে ইন্টার‌্যাক্ট করছেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে ও ইউটিউব চ্যানেলে তিনি শেষ লাইভ ইন্টারঅ্যাকশন করেছেন গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সন্ধ্যায়। কিন্তু সেখানে এই প্রসঙ্গগুলোর কোনোটিই আসেনি।

তবে বিবিসির যে তথ্যচিত্রে শেখ হাসিনার প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশের অডিও ফাঁস করা হয়েছে, তাঁর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এক ফেসবুক পোস্টে সেটিকে অপসাংবাদিকতার নির্লজ্জ নজির বলে দাবি করেছেন।

এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের যে শত শত নেতাকর্মী ভারতে অবস্থান করছেন, তাঁদেরও অনেকেই তাঁদের নেত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো খণ্ডন করার চেষ্টায় সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এরই মধ্যে এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট দিয়ে দাবি করেছেন, রাষ্ট্রীয় অনুমোদনপ্রাপ্ত হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনা যে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন, সেটা বিবিসির তদন্তে প্রমাণিত। এই পরিস্থিতিতে ভারতের যে আর টালবাহানা না করে এবং শেখ হাসিনাকে আড়াল না করে তাঁকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়া উচিতশফিকুল আলম সেই দাবিও জানিয়েছেন।

তবে ভারত সরকারের নীতিনির্ধারক ও শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তারা একান্ত আলোচনায় পরিষ্কার বলছেন, এই দাবি মেনে নেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। কারণ শেখ হাসিনাকে যে পরিস্থিতিতে ও ভারতের যে নীতির ভিত্তিতে এ দেশে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, তাতে কোনো মৌলিক পরিবর্তন ঘটেনি।

তাঁরা যুক্তি দিচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তাঁর যদি কোনো অডিও কেউ গোপনে রেকর্ড করে সেটা ফাঁসও করে দেয়; ভারতের সেটা দেখার বিষয় নয়, আর তাঁকে এ দেশে আতিথেয়তা বা রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্তের সঙ্গে সেই অডিওর কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না।  

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ অন্য অভিযুক্তদের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, সেটা আদৌ কতটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হচ্ছে, তা নিয়েও ভারত সন্দিহান। এই পরিস্থিতিতে সেই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চার্জ গঠিত হলেও ভারত যে সেটাকে গুরুত্ব দেবে না, সে ইঙ্গিতও পরিষ্কার।

অবশ্য ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি দেয়নি, বা মন্তব্যও করেনি।

প্রত্যর্পণের অনুরোধে যে কারণে সাড়া নেই : বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যাতে বিচারের জন্য তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়, সেই অনুরোধ জানিয়ে সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকার নয়াদিল্লিকে কূটনৈতিক চ্যানেলে একটি নোট ভার্বাল পাঠিয়েছিল গত ডিসেম্বর মাসেই।

ভারত সেই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই, কিন্তু তার পর প্রায় সাত মাস হতে চললেও সে ব্যাপারে আর কোনো সাড়াশব্দ করেনি। বাংলাদেশের ওই প্রত্যর্পণের অনুরোধকে ভারত যে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না, সেটাও আকারে ইঙ্গিতে একাধিকবার বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ভারত সরকারের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বিবিসিকে বলেছিলেন, আমাদের দুই দেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে ঠিকই, কিন্তু কোনো দেশ যদি মনে করে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হলে তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হবেন, তাহলে প্রত্যর্পণের অনুরোধ নাকচ করার অধিকারও তাদের আছে।

তাঁর যুক্তি ছিল, বাংলাদেশে যেভাবে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে হত্যা মামলা আনা হচ্ছে, অভিযুক্তদের আইনজীবীরা পর্যন্ত আদালতে হাজির হতে পারছেন না কিংবা সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক বা দীপু মনির মতো সাবেক নেতা-মন্ত্রীদের আদালত প্রাঙ্গণেই শারীরিকভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে, তাতে এই বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে হাজারটা প্রশ্ন উঠতে বাধ্য।

এখন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সেই ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধে আনুষ্ঠানিক চার্জ গঠন সম্পন্ন হলেও তাতে বিচারপ্রক্রিয়ার গুণগত মানে কোনো পরিবর্তন হয়েছেএমনটা ভারত মনে করছে না। আর সে কারণেই চার্জ গঠন হলেও শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য ভারত বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবেএই সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

তবে এগুলো সবই মূলত ঘোষিত যুক্তি। ভারতের একাধিক সাবেক কূটনীতিবিদ বিবিসিকে বলেছেন, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের অনুরোধ নাকচ করার আসল কারণটা হলো রাজনৈতিক। তাঁদের বক্তব্য হলো, দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশে সবচেয়ে বেশি দিন ধরে যিনি ভারতের আস্থাভাজন ও পরীক্ষিত বন্ধুর ভূমিকায় ছিলেন, তিনি শেখ হাসিনা। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের এক সাবেক হাইকমিশনার বিবিসিকে বলেছেন, আজ সংকটের মুহূর্তে ভারত যদি তাঁর পাশে না দাঁড়ায়, ভবিষ্যতে প্রতিবেশী দেশের কোনো নেতা-নেত্রীই ভারতকে আর কখনো বিশ্বাস করতে পারবেন না। আর এটাই সেই প্রকৃত কারণচার্জশিট পেশ হোক বা না হোক, অডিও লিক হোক বা না হোকভারত যে জন্য কখনোই শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবে না।

শেখ হাসিনা নিজেই যা বলার বলবেন : গত বাহাত্তর ঘণ্টায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নতুন করে মানবতাবিরোধী অপরাধে সম্পৃক্ত থাকার যেসব অভিযোগ উঠেছে বা আদালতে যে চার্জশিট পেশ হয়েছে, তা নিয়ে ভারত অবশ্য প্রকাশ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র এ প্রসঙ্গে বিবিসিকে বলেন, আমরা শেখ হাসিনার মুখপাত্র নই। তিনি যেসব বক্তব্য দেন তার সঙ্গে ভারত সরকারের যে কোনো সম্পর্ক নেই, সেটা অনেক আগেই আমরা স্পষ্ট করে দিয়েছি।

ওই কর্মকর্তার বক্তব্য ছিল, শেখ হাসিনা ভারতের একজন অতিথি, কোনো রাজনৈতিক বন্দি নন। কাজেই ভারত তাঁর মুখে লাগাম পরানোর কোনো প্রয়োজন বোধ করেনি কখনোই! সূত্র : বিবিসি বাংলা

মন্তব্য

শুদ্ধি অভিযানে বিএনপি

    এক বছরে পাঁচ সহস্রাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শুদ্ধি অভিযানে বিএনপি

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে মাথা থেঁতলে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দিচ্ছে না দলটি। এমনকি এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে জন্য দলে শুদ্ধি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতা।

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলার আসামি পাঁচজনকে এরই মধ্যে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল।

বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠন বলেছে, গত এক বছরে অপকর্মের অভিযোগে এক হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিএনপি সূত্র জানায়, ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর গত শুক্রবার দলের পক্ষ থেকে শুদ্ধি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত সব ইউনিটকে জানিয়ে দেওয়া হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, দলের জেলা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে একটি শুদ্ধি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কী প্রক্রিয়ায় এই অভিযান চালানো হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো দাগি অপরাধী কোনোভাবে দলের সঙ্গে যুক্ত কি না, দলে নতুন করে কেউ অনুপ্রবেশ করেছে কি না, বিএনপির নতুন সদস্য যাঁরা হয়েছেন তাঁদের আগের ইতিহাস কী তা পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে দল থেকে ইউনিট কমিটিগুলোকে একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী সম্প্রতি বলেছেন, দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বিএনপি, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় পাঁচ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বহিষ্কারসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

রিজভী গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেন, মিটফোর্ডের ঘটনায় বিএনপি বা বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নামে যাদের নাম পাওয়া গেছে, তাদের রাতেই আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপি একটি বৃহৎ পরিবার।

কোনো ছিদ্রপথে দু-একজন দুষ্কৃতকারী ঢুকে পড়লে সেটা সব সময় হয়তো খোঁজ রাখা যায় না। এত বড় একটি পরিবার। কিন্তু কোনোভাবে যদি দুষ্কৃতকারীকে চিহ্নিত করা যায়, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দল কখনো কার্পণ্য করেনি।

মূল আসামিদের এজাহার থেকে বাদ দেওয়া রহস্যজনক : পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে মাথা থেঁতলে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মূল আসামিদের এখনো গ্রেপ্তার না করা এবং মামলার এজাহার থেকে তাদের বাদ দেওয়া রহস্যজনক বলে দাবি করেছে বিএনপির তিন সংগঠন। গতকাল সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে।

তিন সংগঠনের পক্ষে যুবদলের সভাপতি এম মোনায়েম মুন্না বক্তব্য দেন।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় যারা সরাসরি সংশ্লিষ্ট, ভিডিও ফুটেজ ও সিসি ক্যামেরায় যাদের দেখা গেছে, আশ্চর্যজনকভাবে তাদের মামলার প্রধান আসামি করা হয়নি। যারা প্রাণঘাতী আঘাতগুলো করেছে, তারা অদ্যাবধি গ্রেপ্তারও হয়নি। এর কারণ আমাদের বোধগম্য নয়। বাদীর মেয়ে বলেছেন, মামলার এজাহারে খুনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত তিনজন খুনিকে পুলিশ কৌশলে বাদ দিয়ে নিরপরাধ তিনজনকে আসামি করেছে। ঘটনার ৬০ ঘণ্টার বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও খুনের প্রমাণাদি হাতে থাকা সত্ত্বেও অদ্যাবধি মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করা গেল না! এটি একটি বিরাট প্রশ্ন ও রহস্য।

মোনায়েম মুন্না বলেন, কারা কেন এই তিন আসামিকে বাদ দিয়ে নতুন করে অন্যজনকে আসামি করল, এটি আমরা জানতে চাই। আর ঘটনাটি বুধবারের। শুক্রবার এই ঘটনা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। দুই দিন আগের ঘটনা কেন দুই দিন পর প্রচার করা হলো? এর পেছনে কারা জড়িত, সেটিও খুঁজে দেখা উচিত। আপনাদের মাধ্যমে দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে এই প্রশ্নটি রেখে এর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা এক তীব্র মানসিক যাতনা নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করছি। দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। এই নৃশংস বর্বরতা প্রত্যক্ষ করে পুরো জাতি স্তম্ভিত। আমি এই নৃশংসতার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি। সভ্যতার এই সময়ে এমন আদিম বর্বরতা আমরা কোনোভাবে মেনে নিতে পারি না। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ইন্ধনদাতা হিসেবে যাদের নাম এসেছে, মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে, তার মধ্যে আমাদের তিন সংগঠনের পাঁচজনকে গতকাল আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর প্রতি আহবান জানিয়েছি অতি দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জন্য। সাংগঠনিক দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহির জায়গা থেকে যা কিছু প্রয়োজন, আমরা সেই ব্যবস্থাগুলো নিয়েছি। অভিযোগ পেলে কাউকে ছাড় দিচ্ছি না।

তিনি বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে কঠোর হতেই হবে। আপনারা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিকল্পে কার্যকর পদক্ষেপ নিন। এখানে আমাদের যদি কোনো ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, আমরা তা করতে সর্বদা প্রস্তুত আছি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, সিনিয়র সহসভাপতি রেজাউল করীম পল, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির প্রমুখ।

মন্তব্য

খুলনায় সাবেক যুবদল নেতা হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা শনাক্ত

    ১১ মাসে ২৭ হত্যা
খুলনা অফিস
খুলনা অফিস
শেয়ার
খুলনায় সাবেক যুবদল নেতা হত্যাকাণ্ডে  জড়িতরা শনাক্ত

খুলনা মহানগরে ১১ মাসে ২৭টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সেই সঙ্গে প্রতিনিয়ত ঘটছে চুরি, ছিনতাই, হামলার মতো ঘটনা। এ অবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খুলনার বিভিন্ন মহলের প্রতিনিধিরা। সর্বশেষ গত শুক্রবার দুপুরে সন্ত্রাসীরা গুলি করে এবং পরে রগ কেটে নিজ বাড়ির সামনে হত্যা করে যুবদলের সাবেক নেতা মাহবুবুর রহমান মোল্লাকে।

তাঁর হত্যাকারীদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করেছে। তবে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

খুলনার পুলিশ দাবি করছে, ১১ মাসে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের মধ্যে বেশির ভাগের কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে জড়িতদের গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

পুলিশ চেষ্টা করছে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে। খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ১১ জুলাই পর্যন্ত খুলনা মহানগরীতে ২৭টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এই সময়ে মামলা করা হয় ২০টি।

খুলনা মহানগরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খুলনা বিএনপির নেতারা।

মহানগর বিএনপি সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা, জেলা বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান মন্টুসহ পদস্থ নেতারা গত শুক্রবার রাতে যুক্ত বিবৃতিতে বলেছেন, খুন, অস্ত্রের মহড়া, চুরি, ডাকাতি ও লুটপাটের মতো ঘটনা খুলনায় নিত্যদিন ঘটছে। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ঘটছে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, গোলাগুলি, খুনসহ সন্ত্রাসী ঘটনা। তাঁরা বলেন, মহানগরীর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির দায়ভার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। তাই দ্রুত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।

খুলনার নাগরিক সমাজের সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, সন্ধ্যা নামলেই খুলনাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে।

এখন আবার শুরু হয়েছে প্রকাশ্য দিবালোকে খুনের ঘটনা। খুলনার পুলিশ প্রশাসন আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে।

কেএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মোহাম্মদ রাশিদুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো বিভিন্নভাবে বিভক্ত হয়ে তাদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। যার ফলে অপরাধগুলো ঘটছে। খুলনা মহানগরের দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান মোল্লা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তিন ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে জানিয়ে মোহাম্মদ রাশিদুল ইসলাম খান জানান, গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

নিহত মাহবুবুরের বাবা মো. আ. করিম মোল্লা বাদী হয়ে গতকাল দুপুরে দৌলতপুর থানায় হত্যা মামলা করেছেন। মামলার আসামিদের সবাই অজ্ঞাতপরিচয়। মামলা তদন্ত করছেন দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী। তিনি জানিয়েছেন, আপাতত হত্যার কারণ বলা যাচ্ছে না। পুলিশের দুটি এবং ডিবির একটি মিলে মোট তিনটি দল রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করছে। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে খুলনা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ৫ আগস্ট-পরবর্তী দুটি মামলার জের, দলীয় কোন্দল, স্থানীয় প্রভাব-প্রতিপত্তি, মাদক ও চরমপন্থী সংযোগ, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) হামলাসহ সাতটি বিষয় সামনে রেখে পুলিশ তদন্ত করছে।

গত শুক্রবার দুপুর দেড়টায় দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়ার নিজ বাড়ির সামনে মোটরসাইকেলযোগে আসা তিন অস্ত্রধারী মাহবুবুরকে (৪০) প্রথমে গুলি করে এবং পরে দুই পায়ের রগ কেটে হত্যা করে। ওই দিন বিকেলে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত শেষে রাতেই পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

গতকাল সকালে নিহতের বাড়িতে গেলে মাহবুবুরের স্ত্রী এ্যারিন সুলতানা বলেন, আমার স্বামী সবাইকে বিশ্বাস করতেন। ঘটনার কিছুদিন আগে থেকেই তাঁকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। সম্প্রতি বাড়ি এসেও একটা গ্রুপ হুমকি দিয়ে গেছে। নিহত মাহবুবুরের দুটি মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়ে জান্নাতুল (১১) চতুর্থ শ্রেণির এবং ছোট মেয়ে মাওয়া (৯) দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী।

নিহত মাহবুবুরের এক আত্মীয় বলেন, মূলত দুটি মামলাকে কেন্দ্র করেই তার সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের বিরোধ হয়। একটি মামলার বাদী মাহবুব নিজে এবং অন্যটির বাদী মো. জাকির হোসেন। ওই দুটি মামলার আসামিরা মাহবুবকে কয়েকবার হুমকি দিয়েছিল।

মন্তব্য
আইন উপদেষ্টা

সোহাগ হত্যার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সোহাগ হত্যার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে

আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, রাজধানীর পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের অধীনে করা হবে।

গতকাল শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এসব কথা বলেন।

স্ট্যাটাসে ড. আসিফ নজরুল লেখেন, মিটফোর্ডের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। এরই মধ্যে এই ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

 

তিনি জানান, পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। এই পাশবিক হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার করে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন, ২০০২-এর ধারা ১০ অনুযায়ী এই মামলাটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হবে বলে জানান তিনি।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ