ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫
৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৯ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫
৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৯ মহররম ১৪৪৭

রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করবেন না

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করবেন না

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব) বিলোপ, রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ না করাসহ ৪১টি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের তদন্ত দল। গতকাল বুধবার দুুপুরে জেনেভায় জাতিসংঘে মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর বাংলাদেশে গত জুলাই-আগস্টে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

প্রতিবেদনে পাঁচটি খাত নিয়ে ৪১টি সুপারিশ রয়েছে।
জাতিসংঘের তদন্ত দল বলেছে, তাদের কাছে সাক্ষাৎকার দেওয়া অনেকে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে গুরুতর আহত।

তারা জোর দিয়ে বলেছেন, দেশের প্রকৃত পরিবর্তনের জন্য এবং বাংলাদেশের সব নাগরিকের স্বাধীনতা, সমতা এবং ন্যায্য সুযোগের জন্য তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহতা এবং সমস্যার গভীর কারণ নির্মূলের জন্য প্রতিবাদমুখর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যার জন্য প্রয়োজন ব্যাপক সংস্কার, যাতে এ ধরনের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি না ঘটে। এই প্রক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা সম্প্রদায় যারা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং অপব্যবহারের শিকার, যা শুধু ২০২৪-এর সহিংসতার কারণে ঘটেনি;  বরং দীর্ঘ দিন ধরে চলা রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে ঘটেছে। এসব ক্ষোভ প্রশমনে দুঃখ-কষ্টগুলো শোনা দরকার।
দেশের ভবিষ্যৎ গঠনে এসব সমস্যা সমাধানে ন্যায়সংগত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

ন্যায়বিচার এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করার পাশপাশি নিরাপত্তা ও বিচার ব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কারের ওপর জোর দিয়েছে জাতিসংঘের তদন্ত দল। প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে বলা হয়েছে, নিপীড়নমূলক আইনগুলো বাতিল এবং প্রতিষ্ঠানগুলো এমনভাবে সাজান, যাতে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির নিরসন ও ভিন্নমতগুলো প্রকাশ করা যায়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শাসনব্যবস্থায়  ব্যাপক পরিবর্তন ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা শক্তিশালী করুন।

রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে অবাধ ও প্রকৃত নির্বাচনের জন্য একটি নিরাপদ এবং সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করুন। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব দল ও প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ বিশেষত নির্বাচনের আগের যথোপযুক্ত ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করুন।

সুপারিশে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ এ চর্চা প্রকৃত বহুদলীয় গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং ভোটারদের একটি বড় অংশকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করবে।

অর্থনৈতিক সুশাসন প্রসঙ্গে সুপারিশে বলা হয়েছে, বিদ্যমান আইন প্রয়োগ করে ঋণ আত্মসাৎ এবং অন্যান্য বৃহৎ পরিসরের দুর্নীতি স্কিম থেকে অর্জিত সম্পদ জব্দ ও বাজেয়াপ্ত করতে জরুরি ব্যবস্থা নিন।

অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ যা বিদেশে স্থানান্তরিত হয়েছে, সেগুলো ফিরিয়ে আনা এবং দুর্নীতিবিরোধী আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ।

জবাবদিহি এবং বিচার বিভাগ খাত প্রসঙ্গে সুপারিশগুলোতে বলা হয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন এবং অন্যান্য অপব্যবহার, জোরপূর্বক গুম এবং যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার তদন্ত ও বিচারের জন্য কার্যকর, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও সমন্বিত প্রক্রিয়া নিশ্চিত করুন, যার মধ্যে ২০২৪ সালের কোটা বিক্ষোভের পূর্ববর্তী মামলা এবং প্রতিশোধমূলক সহিংসতা  সম্পর্কিত মামলাগুলো রয়েছে। যেসব অপরাধী নির্দেশদাতা ও নেতৃত্বদানকারীদের হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, তাদের বিদ্যমান আইন ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের আলোকে জবাবদিহি নিশ্চিত করুন। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রতিকার এবং ক্ষতিপূরণের  ব্যবস্থা করুন।

সুপারিশে অবিলম্বে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি আদেশ ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ নথি এবং ফরেনসিক প্রমাণসহ প্রাসঙ্গিক প্রমাণগুলো সংকলন ও সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে। প্রমাণগুলো ধ্বংস বা লুকানোর চেষ্টা করেছেনএমন কর্মকর্তা ও অন্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক এবং ফৌজদারি বিচারব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া সাক্ষী সুরক্ষার বিষয়ে দীর্ঘ দিন ঝুলে থাকা আইন প্রণয়ন এবং জরুরি ভিত্তিতে ভিকটিম এবং সাক্ষী সুরক্ষা প্রগ্রাম চালু করতে সুপারিশ করা হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তর নিরাপত্তা বাহিনীর স্বাধীনতা সুরক্ষা এবং সাক্ষীদের ভয় দেখানো প্রতিরোধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও ফৌজদারি তদন্তের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৩২ ধারা এবং অন্যান্য অনুরূপ আইনে যে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তা রহিতকরণ সাপেক্ষে সরকারি কর্মকর্তাদের তদন্ত এবং বিচারের জন্য অনুমতি দিতেও সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তর।

বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সংঘটিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনবিষয়ক অপরাধগুলো যাতে নিয়মিত আদালতে বিচারে যায়, তা নিশ্চিত করতে আইনি কাঠামো সংস্কার করতে বলেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর। সামরিক সদস্যদের বা সামরিক এখতিয়ারের অধীন অন্য কোনো কর্মীদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের করার সুযোগ নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তর বাংলাদেশকে বলেছে, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগে অভিযুক্ত নির্দেশদাতা এবং নেতৃত্ব পর্যায়ে কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্ত করুন। যে অপরাধগুলোর তদন্ত ঝুলে আছে, সেগুলোর সম্পূর্ণ, স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ তদন্ত সম্পন্ন করুন এবং বিচারের আওতায় আনুন।

ক্রান্তিকালীন বিচার মডেল গড়ে তুলতে দেশব্যাপী অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপের উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে জাতিসংঘ। অপরাধের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ, পর্যাপ্ত বরাদ্দ, চিকিৎসা ও অন্যান্য সহায়তা দেওয়ারও পরামর্শ রয়েছে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে।

জাতিসংঘ বাংলাদেশকে সততা, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং যোগ্যতাসহ পেশাদার পূর্ণকালীন কর্মীদের দিয়ে একটি স্বাধীন পাবলিক প্রসিকিউশন সার্ভিস প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দিয়েছে। ওই সার্ভিসের কর্মীদের জন্য রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা বা কোনো ধরনের পক্ষপাত ছাড়াই লোকবল নিয়োগ ও সুরক্ষা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

আইনে এবং প্রয়োগিক ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি পর্যায়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে। বিচারকদের জন্য পর্যাপ্ত পারিশ্রমিক এবং চাকরির মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অবসর গ্রহণের মতো পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, তা নিশ্চিত করতেও বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার, অনুসন্ধান, জব্দ ও নজরদারির কাজগুলো পরিচালনার মতো আইন প্রয়োগকারী কার্যক্রমের জন্য বিচার বিভাগকে উপযুক্ত বাজেট এবং প্রয়োজনীয় জনবল দেওয়ার সুপারিশ রয়েছে প্রতিবেদনে।

জাতিসংঘ বাংলাদেশকে বলেছে, বিচার বিভাগে সরকার বা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হস্তক্ষেপ বন্ধ এবং প্রতিষ্ঠানিক উপায়ে এর সুরক্ষা নিশ্চিত করুন।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডসহ সব ধরনের মৃত্যুদণ্ডের বিধান স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বলপূর্বক নিখোঁজ বা গুমসংক্রান্ত  মানবাধিকার লংঘনের ঘটনাগুলো প্রকাশ এবং এ সংক্রান্ত সুপারিশ ও ফলাফলগুলো দক্ষতার সঙ্গে পরিবীক্ষণ ও বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা জন্য জাতীয় কমিশনকে সহায়তা এবং পর্যাপ্ত রিসোর্স সরবরাহ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

জাতিসংঘ বাংলাদেশকে বলেছে, গোয়েন্দা, আধাসামরিক, পুলিশ বা সামরিক বাহিনী পরিচালিত আটকের সব গোপন স্থান সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ এবং সেই স্থানগুলো বন্ধ করুন। এই ধরনের জায়গায় সংঘটিত বলপূর্বক গুম, নির্যাতন এবং অন্যান্য অপরাধের চিহ্নিত অপরাধীদের তদন্ত ও বিচারের আওতায় আনুন।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে সম্পর্কিত বিচারিক প্রক্রিয়া, স্বচ্ছ বিচারের উদ্বেগ এবং মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে বিদ্যমান যে বিধান, তা রহিত করার সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ।

বাংলাদেশের পুলিশ ও নিরাপত্তা বিভাগ সম্পর্কে জাতিসংঘ বলেছে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের নিয়মাবলি এবং মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বাংলাদেশের পুলিশ প্রবিধানগুলোকে সংশোধন করা প্রয়োজন। এ সংশোধনীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলপ্রয়োগসহ জনসমাগম ছত্রভঙ্গ করার জন্য ধাতব গুলি বা অন্যান্য প্রাণঘাতী গোলাবারুদ ব্যবহার সম্পর্কিত নির্দেশনা, যা আসন্ন মৃত্যু বা গুরুতর হুমকির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা দেবে।

জাতিসংঘ অবিলম্বে জনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনার কৌশল হিসেবে পুলিশ ও অন্য নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর শটগানের জন্য ধাতব গোলাবারুদ না দেওয়ার সুপারিশ করেছে। গণগ্রেপ্তারের অনুশীলন বন্ধ করার জন্য পুলিশকে বাধ্যতামূলক আদেশ জারি ও বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়ার সুপারিশ রয়েছে প্রতিবেদনে। নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু আইনের পূর্ণ বাস্তবায়নেরও সুপারিশ রয়েছে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর পুলিশের জন্য আইন বা অধ্যাদেশগুলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের নিয়ম এবং মানগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার ওপর জোর দিয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, এটি পুলিশে দুর্নীতির মূলোৎপাটন, গুরুতর অসদাচরণের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এবং ধীরে ধীরে পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে।

ন্যায্য স্বচ্ছ এবং যোগ্যতাভিত্তিক পুলিশ নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি এবং অপসারণ প্রক্রিয়া চালু করতে নাগরিকসমাজসহ সরকার, বিরোধী দল এবং স্বাধীন সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত একটি জাতীয় পুলিশ কমিশন গঠন করার সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ।

জাতিসংঘ বাংলাদেশকে বলেছে, র‌্যাব বিলোপ করুন এবং গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত নয়এমন কর্মীদের নিজ নিজ ইউনিটে ফিরিয়ে দিন।

ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন্স মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) বিলোপ করার সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ।

প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে, বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশের (বিজিবি) কাজগুলোকে সীমানা নিয়ন্ত্রণের সমস্যা এবং ডিজিএফআইকে সামরিক গোয়েন্দা তৎপরতার মধ্যে সীমাবদ্ধ করুন এবং সেই অনুযায়ী তাদের সংস্থান এবং আইনি ক্ষমতা নিশ্চিত করুন। আনসার-ভিডিপির ওপর সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ রোধ করুন এবং তাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে সহায়ক হিসেবে কাজে লাগান।

জাতিসংঘ বলেছে, কেবলমাত্র বিশেষ পরিস্থিতিতে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের শুধু সীমিত সময়ের জন্য অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কাজে নিযুক্ত করা যেতে পারে, এসংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাস করুন।

প্রতিবেদনের সুপারিশ অংশে নিরাপত্তা বাহিনী প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক ও নাগরিক সমাজের মতামতের ভিত্তিতে একটি ব্যাপকভিত্তিক স্বাধীন ও ন্যায্য যাচাই প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে পুলিশ, গোয়েন্দা, বিজিবি, আনসার-ভিডিপি এবং সশস্ত্র বাহিনীর যেসব কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন বা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের পদ থেকে অপসারণ করুন।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন বা অন্যান্য আন্তর্জাতিক মিশনে নিয়োজিত কোনো বাংলাদেশিকর্মী যাতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার, মানবিক বা শরণার্থী আইন লঙ্ঘন বা যৌন হয়রানি বা অপব্যবহারের অভিযোগে অভিযুক্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতে একটি কার্যকর এবং শক্তিশালী স্বাধীন মানবাধিকার যাচাইকরণ ব্যবস্থা গড়ার সুপারিশ রয়েছে প্রতিবেদনে। এ ধরনের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত র‌্যাব, ডিজিএফআই, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা অথবা বিজিবি ব্যাটালিয়নের সঙ্গে যুক্ত সামরিক বা পুলিশ সদস্য এবং ২০২৪ সালের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িতদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে মনোনীত না করতে সরকারকে সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তর।

নাগরিক পরিসরসংক্রান্ত সুপারিশে জাতিসংঘ অপরাধের তদন্ত বা বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টিকারী এবং গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ বা নাগরিক ও রাজনৈতিক মতবিরোধ দমনে ব্যবহার হতে পারেএমন আইনি বিধিবিধানগুলো স্থগিত করার কথা বলা হয়েছে।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন দ্বারা সুরক্ষিত আচরণের ক্ষেত্রে সাংবাদিক, আইনজীবী, ট্রেড ইউনিয়নকর্মী, সুধীসমাজকর্মী এবং অন্য মানবাধিকার রক্ষকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা বিচারাধীন ফৌজদারি মামলাগুলো প্রত্যাহার করার সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ।

সাংবাদিক, আওয়ামী লীগ সমর্থক, সংখ্যালঘু নেতা, মানবাধিকারকর্মী এবং নাগরিক বা রাজনৈতিক ভিন্নমত প্রকাশকারী অন্যরা নির্বিচারে যেন গ্রেপ্তার, অপ্রমাণিত ফৌজদারি মামলা বা অন্যান্য ধরনের ভয়ভীতির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ। সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রতিশোধমূলক সহিংসতার বিরুদ্ধে তাদের কার্যকর সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিন। এই ধরনের হামলাকারীদের ব্যাপারে তদন্ত ও বিচার করুন।

নজরদারি বন্ধে অস্পষ্ট বিধিবিধানগুলো সংশোধন এবং ইন্টারনেট বন্ধের ব্যবস্থা স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। নাগরিক সমাজ সংগঠণগুলো বড় ধরনের বাধা-নিষেধ ছাড়া তহবিল সংগ্রহ ও পরিচালনা করতে পারে সে জন্য বিদেশি অনুদান (স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম) নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৬ সংশোধন করার সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হত্যার প্রতিবাদ

সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকর্মী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকর্মী

রাজধানীতে সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মীদের অংশগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। গত রবিবার দুপুরে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় শুরু হওয়া বিক্ষোভ মিছিল শাহবাগ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মিটফোর্ড হাসপাতালে গিয়ে শেষ হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুর ১টার দিকে ধানমণ্ডির আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাবে উপস্থিত হয়ে ১০ মিনিট অবস্থান করেন। এরপর তাঁরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ হয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে যান।

বিক্ষোভে তাঁদের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা যায়। স্লোগানে বলা হয়, চাঁদা লাগলে চাঁদা নে, আমার ভাইকে ফিরিয়ে দে, চাঁদাবাজদের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না ইত্যাদি।

এ সময় হাসপাতাল ও আশপাশে থাকা বিএনপির ব্যানার ছিঁড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় কয়েকজনকে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবিসংবলিত ব্যানার পদদলিত করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

এসব ঘটনার ভিডিও ধারণ করে আন্দোলনকারীরা। এ সময় ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিয়ে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোকে বয়কটের ঘোষণাও দেয় তারা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার পর অনেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীর ছদ্মবেশে রাজপথে সক্রিয় হচ্ছে। কেউ কেউ আবার বিএনপির প্ল্যাটফর্মে ঢুকে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে।

সরকারকে বিব্রত করতে এবং বিএনপিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই এসব অপকৌশল।

রাজনৈতিক পরিচয় : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিক্ষোভের বেশ কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া আইডিয়াল কলেজ শিক্ষার্থী ইয়ামিনকে তাঁর সহপাঠীরা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে চিহ্নিত করেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। আগেও তাঁকে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে।

একইভাবে মিছিলে অংশ নেওয়া মিজু নামে আরেক শিক্ষার্থী সাভারের বাসিন্দা এবং তিনিও ছাত্রলীগের কর্মী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

নেপথ্যে রাজনৈতিক হিসাব : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. দিলারা চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, এটি রাজনৈতিক দলগুলোর ভিত নষ্ট করার একটি অপচেষ্টা। এর ফলে আবারও ১/১১-এর মতো সংকট সৃষ্টি হতে পারে। রাজনৈতিক দলে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ বাড়ছে। সোহাগ, যিনি আগে হাজি সেলিমের সঙ্গে ছিলেন, এখন বিএনপির কর্মী। বিএনপি যদি নিজেকে রক্ষা করতে চায়, তাহলে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদারের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

জানতে চাইলে ডিএমপি উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ওই মিছিলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের উপস্থিতির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে নিষিদ্ধ যেকোনো দলের কার্যক্রম রুখে দিতে পুলিশ সব সময় প্রস্তুত রয়েছে। এর আগেও রাজধানীতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে যারা ঝটিকা মিছিল করেছে, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এই বিষয়টিও আমরা খতিয়ে দেখব।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খলীল কালের কণ্ঠকে বলেন, যারা গুপ্ত রাজনীতি করে এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে চায় তারা জল ঘোলা করতে এমন কর্মকাণ্ড করছে। তারা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারমান তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তিমূলক ভিডিও করেছে। তাদের ব্যানার পদদলিত করে আগুন জ্বালিয়েছে। যারা স্বৈরাচারের আমলে তাদের লুঙ্গির নিচে ছিল, তারাই এখন ঘোলা জলে মাছ শিকার করা চেষ্টা করছে। জনগণের কাছে তাদের অবস্থান না থাকার কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পেছনে থেকে গুপ্ত হামলা করার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, পুলিশের তদন্তে এসেছে ব্যাবসায়িক দ্বন্দ্ব থেকে সোহাগ হত্যাকাণ্ড। এর পরও আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে শোক জানিয়েছি, এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। একই সঙ্গে দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার জোর দাবিও জানিয়েছি।

মন্তব্য
বড় ধরনের সহিংস অপরাধের সংখ্যা বাড়েনি : প্রেস উইং

১০ মাসে ৩৫৫৪ খুন, ৪১০৫ ধর্ষণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
১০ মাসে ৩৫৫৪ খুন, ৪১০৫ ধর্ষণ

গত ১০ মাসে (২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত) দেশে তিন হাজার ৫৫৪ জন খুনের ঘটনা ঘটেছে। একই সময়ে ডাকাতি হয়েছে ৬১০টি, দস্যুতা এক হাজার ৫২৬টি, দাঙ্গা ৯৭টি, ধর্ষণ চার হাজার ১০৫টি, এসিড নিক্ষেপ পাঁচটি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১২ হাজার ৭২৬টি, অপহরণ ৮১৯টি, সিঁধেল চুরি দুই হাজার ৩০৪টি, চুরি সাত হাজার ৩১০টি এবং এই সময়ে রুজুকৃত মামলার সংখ্যা এক লাখ ৪৪ হাজার ৯৫৫টি।

গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ১০ মাসের অপরাধ পরিসংখ্যানে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এসব পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশে বড় ধরনের সহিংস অপরাধের সংখ্যা বাড়েনি। 

অপরাধ পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে দেশে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৩৬৭টি, খুন হয়েছে এক হাজার ৯৩৩টি এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে দুই হাজার ৭৪৪টি। এ সময় নারী নির্যাতন ছয় হাজার ১৪৪টি এবং শিশু নির্যাতনের দুই হাজার ১৫৯টি ঘটনা ঘটেছে।

এর আগের বছর ২০২৪ সালে ডাকাতি হয়েছিল ৪৯০টি, খুন চার হাজার ১১৪টি, ধর্ষণ চার হাজার ৩৯৪টি, নারী নির্যাতন ১০ হাজার ১৯৮টি এবং শিশু নির্যাতন দুই হাজার ৯৬৪টি।

২০২৩ সালে ডাকাতি হয়েছিল ৩১৯টি, খুন তিন হাজার ২৩টি, ধর্ষণ পাঁচ হাজার ১৯১টি, নারী নির্যাতন ১১ হাজার ২৭টি এবং শিশু নির্যাতন দুই হাজার ৭১৩টি। ২০২২ সালে ডাকাতি হয়েছিল ৪০৬টি, খুন তিন হাজার ১২৬টি, ধর্ষণ ছয় হাজার ৩২টি, নারী নির্যাতন ১২ হাজার ৫১৮টি এবং শিশু নির্যাতন তিন হাজার ২০৫টি। ২০২১ সালে ডাকাতি হয়েছিল ৩০৮টি, খুন তিন হাজার ২১৪টি, ধর্ষণ ছয় হাজার ৩৪১টি, নারী নির্যাতন ১২ হাজার ৮৫৫টি এবং শিশু নির্যাতন দুই হাজার ৯২৮টি। ২০২০ সালে ডাকাতি হয়েছিল ৩০২টি, খুন তিন হাজার ৫৩৯টি, ধর্ষণ ছয় হাজার ৫৫৫টি, নারী নির্যাতন ১৩ হাজার ৪৩১টি এবং শিশু নির্যাতন দুই হাজার ৫১৫টি।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, চলতি বছর দেশে অপরাধের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন খবরে জনমনে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সরকারি অপরাধ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছর বড় ধরনের অপরাধের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছেএমন দাবি সঠিক নয়। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ মাসে বড় ধরনের অপরাধের প্রবণতা স্থিতিশীল রয়েছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, পরিসংখ্যানে বড় ধরনের অপরাধের দ্রুত বাড়ার কোনো লক্ষণ নেই। বাস্তবে বেশির ভাগ গুরুতর অপরাধের হার কমছে বা একই পর্যায়ে রয়েছে।

তবে কিছু নির্দিষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে সামান্য বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা গেলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

প্রেস উইং নাগরিকদের প্রতি সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে বলেছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ওপর আস্থা রাখতে হবে। কারণ অপরাধের হার মোটামুটি স্থিতিশীল, যাতে বোঝা যায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

মা-সন্তানসহ ৫ জেলায় সাতজনকে হত্যা

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
মা-সন্তানসহ ৫ জেলায় সাতজনকে হত্যা

ময়মনসিংহের ভালুকায় দুই সন্তানসহ মাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জে শিশুকে হত্যা করে ঘরে লুকিয়ে রেখেছে সত্মা। এ নিয়ে দেশের পাঁচ জেলায় সাতজনকে খুন করা হয়েছে। আর তিন জেলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে চারজনের লাশ।

কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত :

ভালুকা (ময়মনসিংহ) : পৌর এলাকার পনাশাইল রোডে এক ভাড়া বাসায় মা ও দুই সন্তানকে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলো নেত্রকোনার কেন্দুয়ার রফিকুল ইসলামের স্ত্রী ময়না বেগম (২৫), মেয়ে রাইসা (৭) ও ছেলে নীরব (২)।

স্থানীয় ও থানা সূত্রে জানা যায়, রফিকুল ইসলাম এখানে ভাড়া থেকে ভালুকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। রবিবার রাত ৮টার সময় তিনি কর্মস্থলে যান এবং গতকাল সকালে ফিরে বাসার বারান্দার দরজা তালাবদ্ধ দেখেন।

দীর্ঘ সময় ডাকাডাকি করেও সাড়াশব্দ না পেয়ে অন্য একজনকে নিয়ে তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে বিছানার ওপর স্ত্রী ও দুই সন্তানের গলাকাটা লাশ পড়ে থাকতে দেখেন।

রফিকুলের ভাই নজরুল ইসলাম একই বাসায় পাশাপাশি কক্ষে থাকেন। নিজ এলাকার একটি হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামি নজরুল ভালুকায় অটো চালাতেন। ঘটনার পর থেকে তিনি নিরুদ্দেশ, তাঁর মোবাইল ফোনটিও বন্ধ।

সিরাজগঞ্জ : কামারখন্দ উপজেলায় সাত বছর বয়সী এক কন্যাশিশুকে হত্যার পর বস্তাবন্দি করে ঘরে লুকিয়ে রেখে এক সত্মা পালিয়ে যান। রবিবার রাত ১০টার দিকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে ওই রাতেই সত্মাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নিহত শিশু হাজেরা খাতুন উপজেলার কুটিরচর এলাকার হারুনার রশিদের মেয়ে। শিশুটির দাদি মনোয়ারা খাতুন জানান, রবিবার দুপুরে শিশু হাজেরা স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।

এদিকে ছেলের বউ রুবি ওষুধ আনার কথা বলে তার নিজের দুই সন্তান রেখে বাড়ির বাইরে গেলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত সে বাড়ি ফিরেনি। তার যমজ শিশু দুটি নিজেদের ঘরের ভেতর যেতে ভয় পাচ্ছিল। সন্দেহ হলে ঘরের মধ্যে খোঁজাখুঁজি করে খাটের নিচ থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় হাজেরার মরদেহ পাওয়া যায়। 

এদিকে সিরাজগঞ্জ সদর ও তাড়াশ উপজেলা থেকে গতকাল সকালে দুই যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সদরে উদ্ধার হওয়া আনুমানিক ৩৫ বছর বয়সী যুবকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। সদর থানার এসআই শফিউল আলম জানান, তাঁর মাথা ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন আছে। 

অন্যদিকে তাড়াশে নিহত সেলুনকর্মী শান্ত (২০) ঈশ্বরপুর গ্রামের শরিফুল ইসলামের ছেলে। তাড়াশ থানার ওসি জিয়াউর রহমান জানান, সকালে নিজ ঘর থেকে শান্তর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। 

বারহাট্টা থানার ওসি কামরুল হাসান জানান, আহাদুলের সঙ্গে প্রতিবেশী মনহর আলী ও তাঁর চার ছেলে আলমগীর, অনিক, নির্ঝর ও বাবুর জমিসংক্রান্ত বিরোধ ছিল। তার জেরেই ওরা ঢাকা থেকে এসে হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

চট্টগ্রাম : পতেঙ্গা থানার কাটগড় এলাকায় পারিবারিক কলহের জেরে ছুরিকাঘাতে ফেরদৌসী আক্তার নামের এক নারী খুন হয়েছেন। রবিবার রাত ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত ফেরদৌসী এলাকার লোকমান হোসেনের স্ত্রী। নিহতের স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিক কলহের জেরে ফেরদৌসীর দেবর তাঁর ঘাড়, পিঠ ও পেটে ছুরিকাঘাত করে।

নিহতের ভাই মামুন খান বলেন, বিয়ের পর থেকে আমার বোনকে তাঁর স্বামী, শাশুড়ি পরিবারের লোকেরা নির্যাতন করে আসছিল। আমরা একটি সিসিটিভির ফুটেজে দেখেছি, লোকমানের বড় ভাই সোলেমান ও ছোট ভাই রনির হাতে ছুরি। আমরা খুনিদের বিচার চাই।

ঘটনার পর ফেরদৌসীর স্বামী লোকমানকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। শ্বশুরবাড়ির বাকি লোকজন পলাতক।

বারহাট্টা (নেত্রকোনা) : জমিসংক্রান্ত বিরোধে আহাদুল মিয়া (২৬) নামের এক যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল দুপুরে তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে রবিবার রাতে উপজেলার বাউশী ইউনিয়নের শাসনউড়া গ্রামে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। আহাদুল মিয়া ওই গ্রামের সিদ্দিক মিয়ার ছেলে।

নরসিংদী : এক মাদক কারবারির বাড়ি থেকে সাজিদ হোসেন (২২) নামে এক তরুণের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের বাগহাটা টেকপাড়া গ্রামে দুলালের বাড়ি থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ বলছে, নিহত যুবকের বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। আবার  যার বাড়ি থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে তারাও চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তবে নিহতর পরিবারের অভিযোগ, মাদক ব্যবসায়ী দুলালের বাড়িতে নির্যাতন করে সাজিদকে হত্যা করা হয়েছে।

পাবনা : পুকুরে ভাসমান অবস্থায় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে শহরের লাইব্রেরি বাজার এলাকার কলাবাগান কলোনির মিঠুর পুকুর থেকে এ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত যুবকের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তবে আনুমানিক বয়স হবে ৪০ বছর।

গাজীপুর : নিখোঁজের ছয় দিন পর এক শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বিকেলে মহানগরীর ধীরাশ্রম এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত নাবিলা কানিজ সাবা ধীরাশ্রমের দাখিনখান এলাকার নাসির মিয়ার মেয়ে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার শিশুটি বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে সন্ধান না পেয়ে রাতে শিশুটির মা খাদিজা বেগম সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। গতকাল বাড়ির পাশে ঝোপের ভেতর থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকলে স্থানীয়রা বস্তাটির সন্ধান পায়। বস্তা খুলে সাবার গলিত লাশ পাওয়া যায়।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
ফাঁকিবাজদের আতঙ্ক আয়কর গোয়েন্দা

হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন ১৮৩ ভিআইপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন ১৮৩ ভিআইপি

যাত্রা শুরুর মাত্র সাত মাসের মধ্যেই কর ফাঁকিবাজদের আতঙ্ক হয়ে উঠেছে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। এ সময় ১৮৩ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এক হাজার ৮৭৪ কোটি টাকার কর ফাঁকি উদঘাটন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে আদায় হয়েছে ১১৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বাকি টাকা আদায়ের প্রচেষ্টাও চলছে বলে জানা গেছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, এক হাজার ৭৮৮টি বিভিন্ন শ্রেণির ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি ও অর্থপাচার মামলা তদন্ত করছে আয়কর গোয়েন্দা। এঁদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, খেলোয়াড়, অভিনেতা-অভিনেত্রী, ডাক্তার, আইনজীবী, প্রকৌশলী, শিক্ষক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সব পর্যায়ের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি রয়েছেন। এনবিআরের অধীন ৪১টি কর অঞ্চল ও দেশের ৬৪ জেলার করদাতারাও এ কার্যক্রমের আওতায় রয়েছেন।

এয়ার টিকিট সিন্ডিকেট, পরিবহন ব্যবসায়ী, শেয়ারবাজার, আমদানি ও মজুদকারী, চালান জালিয়াতকারী, জুয়াড়ি, ক্ষমতার অপব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির পাশাপাশি কমেছে জনদুর্ভোগ।

কর ফাঁকির তথ্য পাওয়ায় শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ করে রেখেছে আয়কর গোয়েন্দা। এই গোয়েন্দা ইউনিটে চালুর অপেক্ষায় ডিজিটাল অফিস ম্যানেজমেন্ট ও ডেটা এনালিসিস ব্যবস্থা।

আয়কর গোয়েন্দার প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের ১৮ জানুয়ারি। তবে কর্মচারী নিয়োগ ও ভাড়া অফিসে স্থানান্তরের পর মূল কার্যক্রম চালু হয়েছিল ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর।

প্রতিষ্ঠানটির কমিশনার হিসেবে শুরু থেকেই যুক্ত আছেন আয়কর ক্যাডারের ১৮ ব্যাচের কর্মকর্তা মো. আবদুর রকিব। তাঁর নেত্বত্বে বিভিন্ন পর্যায়ের মেধাবী আয়কর কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে আয়কর গোয়েন্দারা তাঁদের লক্ষ্য অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছেন।

কর প্রশাসনে দক্ষ গোয়েন্দা গঠন, কর ফাঁকি, অর্থপাচার, বিভিন্ন আর্থিক অপরাধ শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া, রাজস্ব পুনরুদ্ধার করা, স্বচ্ছতা-জবাবদিহি, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, কর ফাঁকির তদন্তে অর্থের উৎস যাচাই করা ও দায়িত্বশীল অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে যৌথ কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্যে এই বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

জানা গেছে, বিশেষায়িত এই গোয়েন্দা ইউনিট অল্প সময়ের ব্যবধানে সফলতা দেখালেও তার নেই প্রয়োজনীয় জনবল ও স্থায়ী অফিস ভবন। শুরুতে এনবিআর ভবনে অস্থায়ী কার্যালয় থাকলেও পরে ভাড়া করা অফিসে যাবতীয় কাজ করছে রাজস্ব ফাঁকি ঠেকিয়ে দেওয়া প্রতিষ্ঠানটি।

এ ছাড়া লজিস্টিক সীমাবদ্ধতা, যানবাহন, গোয়েন্দা কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থারও ঘাটতি আছে এই ইউনিটে।

জানতে চাইলে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের কমিশনার মো. আবদুর রকিব কালের কণ্ঠকে বলেন, আয়কর গোয়েন্দা অল্প সময় ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই ইউনিটের সদস্যসংখ্যা কম হলেও তাঁরা মেধাবী ও পরিশ্রমী। তাঁদের কাজের প্রতি একাগ্রতা থাকায় আমরা সামগ্রিকভাবে ভালো করতে পারছি। তবে জনবল সংকট, প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট পেলে এই ইউনিট দেশের জন্য আরো অনেক কিছু করতে পারবে। আমরা চাই দেশে একটি নতুন কর সংস্কৃতি। যেখানে কেউ কর ফাঁকি দিতে পারবেন না।

জানা গেছে, ভবিষ্যতে এই ইউনিটের জন্য ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপনের চিন্তা করা হচ্ছে। কর ফাঁকি-অর্থপাচার রোধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক, প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে। এ ছাড়া কর ফাঁকিবাজদের ডেটাবেইস তৈরি, নিয়মিত তল্লাশি-জব্দকরণ অভিযান পরিচালনা, কর নেটের বাইরে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কাজও করবে এই ইউনিট।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ