জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সৌরবিদ্যুৎসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন বৃদ্ধির তাগিদ বাড়ছে। বছরের বেশির ভাগ সময় সূর্যালোক থাকায় বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুতের ভালো সম্ভাবনার কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা। অথচ এ দেশে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় তিন-চার গুণ বেশি। বিশ্বজুড়ে গত এক দশকে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ক্রমে হ্রাস পেলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন।
সৌরবিদ্যুতে ব্যয় ৩ গুণ বেশি
- ► ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় বেশি এই ব্যয়
- ► জমির উচ্চমূল্য-অধিগ্রহণে জটিলতা ও সঞ্চালন অবকাঠামো নির্মাণ ব্যয়ের কারণে উৎপাদন খরচ বেশি
সজীব আহমেদ

বিপিডিবির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি ইউনিটে খরচ হচ্ছে ১৪ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ২২ টাকা ৩৮ পয়সা পর্যন্ত। অন্যদিকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের তথ্য মতে, ভারতে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ পড়ছে বাংলাদেশি মুদ্রায় গড়ে পাঁচ টাকা ৮১ পয়সা এবং পাকিস্তানে তিন টাকা ৫১ পয়সা। বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্ববাজারে সোলার প্যানেলসহ সব ধরনের যন্ত্রাংশের দাম কমে আসায় সৌরবিদ্যুতের ক্রয় চুক্তিগুলো আগের তুলনায় অনেকটাই কম মূল্যে করা হচ্ছে।
জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ভারতের বিদ্যুৎ খাতে তীব্র প্রতিযোগিতা থাকায় সেখানকার কম্কানিগুলো কম দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে। বাংলাদেশে এখনো প্রতিযোগিতা গড়ে না ওঠায় সৌরবিদ্যুতে খরচ পড়ছে ভারতের চেয়ে তিন গুণের বেশি। ক্রয় চুক্তিতে বিদ্যুতের দাম কমিয়ে আনতে সরকারকে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতিযোগিতার পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।
বিপিডিবির গত মাসের (এপ্রিল-২০২৪) বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এপ্রিল মাসে দেশের ১০টি সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ খরচ পড়া সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সাত মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্লান্ট (প্রতি ইউনিটে খরচ ২২ টাকা ৩৮ পয়সা), জামালপুরের সরিষাবাড়ী তিন মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্লান্ট (২০ টাকা ৮৭ পয়সা), ময়মনসিংহের সুতিয়াখালী ৫০ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্লান্ট (১৮ টাকা ৭০ পয়সা), লালমনিরহাট ৩০ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্লান্ট (১৭ টাকা ৬০ পয়সা), দেশের সবচেয়ে বড় গাইবান্ধা ২০০ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্লান্ট (১৬ টাকা ৫০ পয়সা)।
সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে দেশে সর্বনিম্ন ব্যয় তেঁতুলিয়া আট মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্লান্টের। সেখানে ইউনিটপ্রতি উৎপাদন খরচ ১৪ টাকা ৩০ পয়সা, যা সর্বোচ্চ ব্যয়ের কাপ্তাই সাত মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্লান্টের তুলনায় অনেক কম।
প্রসঙ্গত, সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে সরকার ‘নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’ শর্তে বিদ্যুৎ কিনছে। এ কারণে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে কোনো ক্যাপাসিটি চার্জের বিষয় নেই।
এ ব্যাপারে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলাদেশের সৌরচালিত বিদ্যুতের প্রতি ইউনিট উৎপাদন খরচ ১০ থেকে ২২ সেন্ট (১১ থেকে ২৪ টাকা), অথচ চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ পরিচালিত সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী যেকোনো সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের আদর্শ ট্যারিফ হওয়া উচিত মাত্র পাঁচ থেকে ছয় সেন্ট। প্রায় তিন থেকে চার গুণ বেশি দামে বিদ্যুৎ ক্রয়ের একমাত্র উদ্দেশ্য অবৈধ কমিশন বাণিজ্য, যার দায় গ্রাহকের ওপর চাপানো হচ্ছে। এটা শুধু অনৈতিক নয়, সবুজ জ্বালানিতে রূপান্তরের বিপরীত অবস্থান। অতিরিক্ত দামে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে বৈশ্বিকভাবে পরিবেশবান্ধব নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের সম্ভাবনার অপব্যবহার করা হচ্ছে। দ্রুত নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রতিযোগিতামূলক ট্যারিফ নির্ধারণ না করলে তা সবুজ অর্থনীতি বিকাশে সহায়ক না হয়ে প্রতিবন্ধক হয়ে উঠতে পারে।’
জানতে চাইলে জ্বালানি খাতবিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যানশিয়াল অ্যানালিসিসের (আইইইএফএ) প্রধান বিশ্লেষক শফিকুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বেশি হওয়ার মূল কারণ জমির উচ্চমূল্য, জমি অধিগ্রহণে জটিলতা, উদ্যোক্তাদের নিজস্ব অর্থায়নে সঞ্চালন লাইন নির্মাণের বিধান এবং প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ না হওয়া। বৈদেশিক বিনিয়োগের অঙ্গীকার থাকার পরও জমি অধিগ্রহণ করতে না পারায় অনেক উদ্যোক্তাই সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারছে না। ভারতে জমি অধিগ্রহণে এত সমস্যা হয় না বলে সেখানে অত্যন্ত দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়।’
শফিকুল আলম বলেন, ‘সঞ্চালন অবকাঠামো নির্মাণ ব্যয় সরকারকে বহন করা, জমি অধিগ্রহণ জটিলতা কমিয়ে আনাসহ প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্র করা গেলে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ সাত থেকে আট টাকায় নামিয়ে আনা সম্ভব। অন্যথায় ভবিষ্যতে দেশের গড় বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচের ওপর বড় প্রভাব পড়বে।’
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের উপপরিচালক (সাসটেইনেবল এনার্জি অ্যান্ড এসডিজি) কিউ এ সারহান সাদেক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভারতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য উদ্যোক্তারা বিনা মূল্যে ও স্বল্পমূল্যে জমি পায়। সরকার গ্রিড লাইনও করে দিচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের উচ্চমূল্যে জমি কিনতে ও নিজ খরচে গ্রিড লাইন নির্মাণ করতে হচ্ছে। তবে বিশ্ববাজারে এখন সোলার প্যানেল, ইনভার্টারসহ সব ধরনের যন্ত্রাংশের দাম কমেছে। এ কারণে নতুন চুক্তিগুলোতে ইউনিটপ্রতি ট্যারিফ ১০ থেকে ১১ টাকার বেশি ধরা হচ্ছে না। নতুন চুক্তিতে ট্যারিফ কমানোর সুফল আগামীতে পাওয়া যাবে।’
বর্তমান চিত্র ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা-২০০৮ এবং পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান (পিএসএমপি)-২০১৬ অনুযায়ী সরকার ২০২১ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুতের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্য স্থির করেছিল। এই লক্ষ্য পূরণে বড় বাধা ছিল জমির স্বল্পতা। ২০১৬ সালে পিএসএমপি গ্রহণের পর এখন পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি খাতে মোট ৬৭টি সোলার পার্ক প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করেছে সরকার। গ্রিড সংযুক্ত সোলার পার্ক থেকে চার হাজার ১৫.৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত মাত্র ৫৩৬ মেগাওয়াট সক্ষমতার ১১টি সোলার পার্ক প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে।
প্রথম পর্বের অবস্থা যখন এই, সেখানে নতুন করে উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। ২০৩০ সালের মধ্যে মোট উৎপন্ন বিদ্যুতের ৩০ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস ও ক্লিন এনার্জি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এক মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে জমির প্রয়োজন হয় তিন একর। সেই সঙ্গে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর সময়োপযোগী বাস্তবায়নের জন্য দক্ষ ব্যবস্থাপনাও দরকার। তিনফসলি জমিতে সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো ধরনের প্রকল্পই করা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছেন সরকারপ্রধান। মূলত জমিস্বল্পতার কারণেই প্রথম দফার লক্ষ্য পূরণ হয়নি।
পাওয়ার সেলের তথ্য মতে, বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৩০ হাজার ২৭৭ মেগাওয়াট (ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ)। পাশাপাশি ভারত থেকে আমদানির সক্ষমতা তৈরি হয়েছে দুই হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট।
টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) গত ৬ মের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা মোট এক হাজার ৩০৩.২৬ মেগাওয়াট। এর মধ্যে শুধু সৌরবিদ্যুতের সক্ষমতা এক হাজার ৬৯.২৭ মেগাওয়াট।
সম্পর্কিত খবর

ঘরে ঘরে জ্বর, আতঙ্ক ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া নিয়ে
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ টানা তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। ফার্মেসির ওষুধে জ্বর না কমায় তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। ফারুক জানান, প্রথমে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন, পরে তাঁর স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানও জ্বরে ভুগতে শুরু করে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের বহির্বিভাগে কথা হয় ফারুক আহমেদের সঙ্গে।
চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও বাতাসে আর্দ্রতার ওঠানামার কারণে ভাইরাসজনিত জ্বর বাড়ছে। শিশুসহ সব বয়সী মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসকের চেম্বারে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
সোমবার ও মঙ্গলবার রাজধানীর ডিএনসিসি হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি শিশু এখন জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছে।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘একসঙ্গে বিভিন্ন ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। সাধারণ ভাইরাল জ্বরের পাশাপাশি ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও রোটা ভাইরাসও বাড়ছে।
রাজধানীর শিশু হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি বলে জানান হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এ বি এম মাহফুজ হাসান আল মামুন। তিনি বলেন, ‘এখন ভাইরাল জ্বরের মৌসুম চলছে। পাশাপাশি চলছে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মৌসুমও। বেশির ভাগ রোগী তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, শরীরে র্যাশ—এসব উপসর্গ নিয়ে আসছে। অনেকের ডেঙ্গুর উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষায় ধরা পড়ছে না।’
জ্বর কেন হয়?
চিকিৎসকরা বলছেন, জ্বর নিজে কোনো রোগ নয়, এটি একটি উপসর্গ বা সতর্কবার্তা। সাধারণ ঠাণ্ডা বা সর্দিকাশির পাশাপাশি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে জ্বর হতে পারে। করোনাভাইরাস, ডেঙ্গু, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া—এসব রোগের প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর। টিকা নেওয়া, টিউমার, ফোড়া, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, প্রস্রাবের সংক্রমণ, পিরিয়ড বা মানসিক চাপ থেকেও জ্বর হতে পারে।
ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘বাইরের প্রচণ্ড গরম থেকে ফিরে অনেকেই এসির নিচে চলে যায় বা ঠাণ্ডা পানি পান করে। এই গরম-ঠাণ্ডার তারতম্য থেকেই জ্বর-সর্দি হতে পারে। প্রতিটি পরিবারেই এখন মৌসুমি জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় টাইফয়েড ও পানিবাহিত রোগও বেড়েছে।’
ডা. লেলিন আরো বলেন, ‘এসব জ্বর সাধারণত প্যারাসিটামল খেলেই সেরে যায়। অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার পড়ে না। তবে জ্বর যদি সপ্তাহখানেকের বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।’
সাধারণ জ্বর কিভাবে বুঝব?
বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগে কভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে কাশি, গন্ধ না পাওয়া, শ্বাসকষ্ট দেখা যেত। এখন অনেক কভিড রোগীও গায়ে ব্যথা ও মাথাব্যথার উপসর্গ নিয়ে আসছে। তাই পরীক্ষা ছাড়া রোগ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’
ডা. ফজলে রাব্বি আরো বলেন, ‘ডেঙ্গুতে সাধারণত মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, পেট ব্যথা ও পাতলা পায়খানা হয়। অন্যদিকে চিকুনগুনিয়ায় গায়ে বেশি ব্যথা, বিশেষ করে জয়েন্টে ব্যথা ও দ্রুত র্যাশ দেখা দেয়। সাধারণ ভাইরাল জ্বরে হালকা গায়ে ব্যথা ও সর্দিকাশি হয় এবং তা চার দিনের মধ্যে সেরে যায়। চার দিনের বেশি জ্বর থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’

জুলাই ফাউন্ডেশনের অফিসে ভাঙচুর
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর শাহবাগে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের কয়েকজন গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর বারডেম হাসপাতালের পাশের ওই কার্যালয়ের কক্ষে ভাঙচুর চালান।
সূত্র জানায়, হামলার শুরুতে তাঁরা প্রথমে ওই কার্যালয়ে তালা লাগান। পরে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে সেখানে ভাঙচুর করা হয়।
তবে রাতে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর জানান, টাকা না পেয়ে আহতরা ক্ষুব্ধ হয়ে অফিসে তালা লাগিয়ে দেন।
ফাউন্ডেশনের একজন কর্মচারী খারাপ আচরণ করলে সেখানে ভাঙচুর করা হয় বলে আহতদের কয়েকজন জানিয়েছেন।
ভাঙচুরের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অনেক চেয়ার এলোমেলো পড়ে আছে। পানির ফিল্টার ও তিনটি দরজার গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়েছে। মেঝেতে কাচের টুকরা ছড়িয়েছিটিয়ে আছে।
গত বছর আন্দোলনে গিয়ে আহত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন জানিয়ে মামুন হোসেন নামের একজন বলেন, ‘আমার মাথার ভেতরে গুলি, ১১ মাস যাবৎ চিকিৎসাধীন। আমাদের জীবনের নিশ্চয়তা কী? তো কিসের জুলাই ফাউন্ডেশন?’
সাভার সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আহত নাজমুল হোসেন বলেন, ‘দ্বিতীয় ধাপের টাকার জন্য সাত মাস ধরে ঘুরছি। টাকা দেওয়া হচ্ছে না। জুলাই ফাউন্ডেশনের সিইও বারবার ডেট দিয়ে আমাদের টাকা দিচ্ছেন না।’
জানতে চাইলে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর বলেন, ‘জুলাই আহতদের অনেকে এখনো মানসিক ট্রমার মধ্যে আছেন।
এই ফাউন্ডেশনে সাত কোটি টাকা আছে জানিয়ে কামাল আকবর বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে আহত ও শহীদ পরিবারগুলোকে অনুদান দেওয়ার চেষ্টা করছি।’ তা ছাড়া আহতদের তালিকা থেকে ৩৯ জন ভুয়া আহতকে বাদ দিতে এবং শহীদদের তালিকা থেকে চারজনের নাম বাদ দিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার
নির্বাচনের তারিখ আমি নিজেই জানি না
নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে তা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন এখনো জানেন না। গতকাল মঙ্গলবার সকালে কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন তিনি। পরে বিকেলে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ডেমোক্রেসি (আরএফডি) আয়োজিত ফল উৎসব ও সাংবাদিক অ্যাকসেস কার্ড প্রদান অনুষ্ঠানেও তিনি একই কথা বলেন।
এ ছাড়া সিইসি সাংবাদিকদের জানান, আগামী নির্বাচনে ভোটের প্রচারে এআইয়ের অপব্যবহার রোধ করতে চায় নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন ভবনে কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টার সাক্ষাৎ শেষে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিসইউজ অব এআই আমাদের জন্যও হুমকি। এ বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে কানাডা।
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমাদের বিভিন্ন সেক্টরে যে প্রস্তুতি নিয়েছি, আগামী নির্বাচনে আমরা ঠিকমতো ডেলিভার করতে পারব কি না সে বিষয়গুলো জানতে চেয়েছেন তাঁরা। আমাদের প্রস্তুতির বিষয়টা বিস্তারিত জানিয়েছি। বিশেষ করে দেশজুড়ে ভোটার সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করতে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছি। ভোটার সচেতনতা ক্যাম্পেইনের পাশাপাশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ, এজেন্টদের প্রশিক্ষণসহ সার্বিক কাজে কানাডা পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে।
সিইসি বলেন, ‘কানাডা আমাদের সহায়তার জন্য প্রস্তুত এবং আমাদের আলোচনা অব্যাহত থাকবে। তারা চায় যে ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল ইলেকশন যেন হয়। আমাদের ভোটার নিবন্ধনে নারীদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে, পার্বত্য এলাকায় ভোটার সচেতনতামূলক কাজের বিষয়ে জানতে চেয়েছে। আমাদের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছি।’
নির্বাচন কবে বা ভোটের সম্ভাব্য সময়সীমা বিষয়ে কানাডার হাইকমিশনার জানতে চেয়েছেন কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, “উনি জানতে চেয়েছেন ভোটের স্পেসিফিক ডেট হয়েছে কি না। আমি বলেছি ‘নো’। সময়সীমা নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি। সময়সীমা সম্পর্কে আপনারা যা জানেন, আমিও তাই জানি। যেদিন ভোট হবে, তার দুই মাস আগে আমি জানিয়ে দেব।”
নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আসার বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবজারভার হিসেবে কাজ করার জন্য জিজ্ঞেস করেছি। নীতিমালাও প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। ইইউকে বলা হয়েছে, আগেই যেন জানিয়ে রাখা হয়। তাদের ২৮টি দেশের অবজারভারকে সমন্বয় করে পাঠাতে হবে, এ জন্য আগেভাগে স্বাগত জানিয়েছি।’
পক্ষপাতদুষ্ট বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুমোদন দেওয়া হবে না বলেও জানান সিইসি। তিনি বলেন, ‘গত তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন তাঁদের (অনুমোদন) দেব কেন? যেসব পর্যবেক্ষক গত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন খুব সুন্দর হয়েছে বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে বলেছেন, তাঁদের কি আমাদের নেওয়া উচিত? আমরা দেখে-শুনেই নেব। যাঁরা অভিজ্ঞ, ডিপেন্ডেবল, রিলায়েবল এবং বিভিন্ন দেশে নির্বাচন অবজার্ভ করেছেন, তাঁদের নেব। তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন, তাঁদের কোনোমতেই নেওয়া হবে না।’
বিকেলে আরএফইডির অনুষ্ঠানে সিইসি বলেন, ‘আমরা বারবার প্রমাণ করেছি; ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সালে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পেরেছিলাম। এবারও পারব ইনশাআল্লাহ। আমাদের প্রশাসন, পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে বলব, মানুষের শ্রদ্ধা পুনরুদ্ধারের এটিই সময়। ভাবমূর্তি রক্ষা ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ এখন এসেছে।’
সিইসি বলেন, ‘ভোটের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে কমপক্ষে দুই মাস আগেই সব কিছু জানিয়ে দেওয়া হবে, কোন দিন ভোট, কোন দিন মনোনয়ন—এসবসহ।
গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করে সিইসি বলেন, ‘আমরা আজকে যা কিছু করছি, তা আপনাদের মাধ্যমেই দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে আজকে আলাপের সময় দেখি উনি (কানাডার হাইকমিশনার) সব জানেন—ভোটার রেজিস্ট্রেশন, ইউএনডিপির সহযোগিতা, ক্যামেরা, ল্যাপটপ সব কিছু। তার মানে আমাদের সংবাদগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে। এ জন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সংবাদ পরিবেশনের সময় একটু সচেতন থাকবেন। দেখেছি অনেক সময় ভেতরে পজিটিভ রিপোর্ট থাকলেও হেডলাইন বা স্ক্রলে নেগেটিভ বার্তা থাকে। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়, মন খারাপ হয়। দয়া করে শিরোনাম, ক্যাপশন এমন দিন, যাতে মানুষ পজিটিভ বার্তা বুঝতে পারে।’
তিনি বলেন, “সাংবাদিকদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশন সাংবাদিকদের সরাসরি অংশগ্রহণে বিভিন্ন ‘ওয়্যারনেস রেইজিং ক্যাম্পেইন’ চালু করবে। আমরা সাংবাদিকদের পার্টনার করে কাজ করতে চাই। সচেতনতামূলক প্রচারে আপনাদের যুক্ত করব। ২০১৮ সালের মতো অভিযোগ আর যেন না ওঠে। প্রশাসন, পুলিশ, প্রিজাইডিং অফিসার, সব কর্মকর্তাকে বলব, এটা ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের সময়।” আরএফইডির সভাপতি কাজী এমাদ উদ্দীনের (জেবেল) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

মিডিয়াকে হুমকি
ক্র্যাব, অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের উদ্বেগ
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই আন্দোলনের এক নেতা কর্তৃক মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) ও অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্স।
অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের সভাপতি হাসান শরীফ ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহেল গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোর এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। গণমাধ্যমের কোনো প্রতিবেদনে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকার পাওয়ার জন্য দেশে প্রেস কাউন্সিল ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। হুমকি বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিসর সংকুচিত করা যাবে না।
অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত মত প্রকাশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হুমকি কিংবা ভয় দেখানোর চেষ্টা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সংবিধান প্রদত্ত অধিকার লঙ্ঘনের শামিল, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
এর আগে গত সোমবার ক্র্যাব কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল এবং সাধারণ সম্পাদক এম এম বাদশাহ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনা জুলাইয়ের চেতনার সঙ্গে মানানসই নয়। যেসব কারণে জুলাইয়ের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, তার অন্যতম ছিল মত প্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ।
বিবৃতিতে ক্র্যাব নেতারা বলেন, ‘মিডিয়ার ভূমিকায় কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকারের জন্য প্রেস কাউন্সিল রয়েছে। প্রচলিত আইনের বিধি অনুযায়ী আদালতেও যাওয়া যায়। কিন্তু এই হুমকি দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশের প্রতিবন্ধক বলে আমরা মনে করি।