<p>ভারতবর্ষ আবিষ্কারের জন্য তিনি অভিযান চালিয়েছিলেন। ভুল করে তাঁর জাহাজ চলে যায় উল্টো দিকে। ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সাগর পেরিয়ে যেখানকার মাটিতে নোঙর করেছিল তাঁর জাহাজ, সেটাকেই তিনি মনে করেছিলেন ভারতবর্ষ। পরে ভুল ভাঙে তাঁর। বিশাল ভারতবর্ষ তো দূর অস্ত, তিনি যেখানে পৌঁছান, সে অঞ্চলের আয়তন ভারতবর্ষের ছোটখাটো একটা দ্বীপের সমান। তবে ভুল করে যে দ্বীপ আবিষ্কার করেছিলেন স্প্যানিশ অভিযাত্রী ক্রিস্টোফার কলম্বাস, সেটার নাম তিনি বদলাতে চাননি। তাই পুরো দ্বীপপুঞ্জটার নাম রাখেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ! সাধের ভারত আবিষ্কারের আশা ব্যর্থ হলেও আমেরিকা আবিষ্কারের কৃতিত্ব জুটেছিল তাঁর কপালে। </p> <p>বড় কোনো অভিযানই নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয় না। কিছু বাধা থাকেই। আমেরিকা আবিষ্কারের পথে কলম্বাসের নাবিকদের মধ্যে জাঁকিয়ে বসেছিল ভৌতিক আলোর জুজু। সেটা একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ। আটলান্টিক মহাসাগরের ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর আমেরিকা উপকূলের এই এলাকার এক কোনায় বারমুডা দ্বীপ, অন্য দুই কোনা বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রের দুটি সাগরসৈকত মিয়ামি ও পুয়ের্তো রিকো। তিন কোনায় এই তিন স্থানকে রেখে যে বিশাল একটা ত্রিভুজের মতো জলাঞ্চল, এটাই এখন বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নামে পরিচিত বিশ্বজুড়ে।১২ অক্টোবর ১৪৯২। ক্রিস্টোফার কলম্বাস তাঁর লগবুকে লিখেছেন, এই ত্রিভুজাঞ্চলজুড়েই নাকি তাঁর নাবিকেরা ভুতুড়ে সব কাণ্ডকারখানা দেখেছেন। এ সময় তাঁদের কম্পাস ঠিকমতো কাজ করছিল না, তাঁরা দেখেছেন ভুতুড়ে আলোর নাচন। এই লগবুকই বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের কুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ার জন্য যথেষ্ট ছিল।পরবর্তীকালে কলম্বাস বিখ্যাত হয়েছিলেন তাঁর দুঃসাহসিক অভিযানের জন্য। তাই তাঁর লগবুকের একটা গুরুত্বও ছিল।</p> <p><strong>যত রহস্য শয়তানের ত্রিভুজে</strong><br /> ৫ ডিসেম্বর ১৯৪৮। মার্কিন নেভির ফ্লাইট নাইন্টিনের পাঁচটি বিমান বেরিয়েছে প্রশিক্ষণে। ছুটছে মহাসাগরের ওপর দিয়ে। কন্ট্রোল বেসের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছেন মিশনপ্রধান চার্লস টেইলর। রেডিওতে। হঠাৎ কথা বলতে বলতে থেমে যায় টেইলরের কণ্ঠ। নীরবতা ভর করে রেডিওতে। সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। কন্ট্রোল রুম থেকে অনেক চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সংযোগ স্থাপন আর সম্ভব হয়নি। টেইলর বা তাঁর দলের কেউ আর যোগাযোগ করেননি।</p> <p>শুরু হয় সার্চ মিশন। সেগুলো উদ্ধারের জন্য পাঠানো হয় আরও দুটি বিমান আর একদল দক্ষ ক্রুকে। অনেক খোঁজাখুঁজি করে ব্যর্থ হয়ে ফেরে একটি বিমান। কিন্তু ফেরেনি আরেকটি বিমান। দিনদুপুরে গায়েব! রেডিওর সর্বশেষ সিগন্যাল ট্র্যাক করে জানা যায়, মিয়ামি উপকূলের ওই কুখ্যাত ত্রিভুজ এলাকাতেই হারিয়েছে সব কটি বিমানই। এই প্লেন দুর্ঘটনাই ব্যাপক কুখ্যাতি এনে দেয় বারমুডা ট্রায়াঙ্গলকে। তবে একটু দেরিতে।</p> <p>যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নৌ দুর্ঘটনাটা ঘটে বারমুডার ট্রায়াঙ্গলে। ১৯১৮ সালের ৪ মার্চ। বার্বাডোজ থেকে ৩০৬ জন যাত্রী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিচ্ছিল মার্কিন জাহাজ ইউএসএস সাইক্লোপস। কিন্তু মাঝপথে ওই ত্রিভুজ এরিয়ায় হারিয়ে যায়। অনেক সন্ধান করেও মেলেনি তার সন্ধান। কী হলো তাহলে? তখন এ নিয়ে উচ্চবাচ্য হয়নি। আর দশটা স্বাভাবিক দুর্ঘটনা বলেই মনে করা হয়েছিল এটাকে।</p> <p>আরেকটু পেছনে ফেরা যাক এবার। ৫ ডিসেম্বর ১৮৭২। মারি সেলেস্ত নামের এক মালবাহী জাহাজ নিউইয়র্ক বন্দর থেকে ছেড়ে যায়। তবে গন্তব্যে পৌঁছায়নি। এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার। বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে জল্পনাকল্পনা, প্রচার কিছুই তখন হয়নি। তাই বারমুডাই যে জাহাজটাকে গিলেছে, সে কথা কেউ ভাবেনি গুরুত্ব দিয়ে। পরে জাহাজটা পাওয়া যায় বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এলাকাতেই। অক্ষত আছে জাহাজের সব জিনিস। কিন্তু নেই জাহাজের মানুষগুলো। জলদস্যুরা মেরেছে, এ কথা বলা যায় না, তাহলে মালসামান অক্ষত থাকার কথা নয়? তাহলে? উত্তর জানা ছিল না সে সময়। ৯ বছর পর আরেকটি ঘটনা রহস্যের আগুনে ঘি ঢালে।</p> <p>চলবে...</p> <p>সূত্র: অল অল অ্যাবাউট স্পে<br />  </p>