<p>১৯২৭ সাল। আইরিশ রসায়নবিজ্ঞানী ফ্রান্সিস উইলিয়াম অ্যাস্টোন একটা গুরত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেন। এই আবিষ্কার নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞানের গতিপথ ঠিক করে দেয়। অ্যাস্টোন রসায়নবিজ্ঞানী হলেও কাজ করেছেন নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞানে। ১৯২০ সালের দিকে তিনি আধুনিক ম্যাস স্পেকটোমিটার বা ভর বর্ণালিবীক্ষণ যন্ত্র তৈরি করেন। ভর বর্ণালিবীক্ষণের সাহায্যেই আসলে কণাদের ভর মাপা হয়। কণাদের চার্জ আর বৈদ্যুতিক ক্রিয়া, বিকিরণ ক্ষমতা প্রভৃতি ধর্মের ওপর নির্ভর করে ভর বর্ণালিবীক্ষণের সাহায্যে বের করা যায় কণাদের ভর। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে ইউজিন গোল্ডস্টাইন, জে জে টমসনদের চেষ্টায় এই যন্ত্র প্রথম তৈরি হয়। অ্যাস্টোনের যন্ত্রটি ছিল আরও উন্নত, আরও নিখুঁত। এই যন্ত্র যখন তৈরি করছেন অ্যস্টোন, তখন তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাভেনডিশ ল্যাবরেটরিত গবেষণা করছেন, টমসনের সহকারী হিসেবে।</p> <p>এই ভর বর্ণালিবীক্ষণের সাহায্যেই ১৯২৭ সালে নিউক্লিয়াসের ভেতরের খোঁজখবর করেন। তখনো নিউট্রন শনাক্ত করা যায়নি। কিন্তু নিউট্রনের তত্ত্ব তত দিনে এসে গেছে। তার ভরটা কত হবে, সেটাও হিসাব কষে বের করে ফেলেছেন বিজ্ঞানীরা। অ্যাস্টোন নিউক্লিয়াসের ভেতরে থাকা কণা, অর্থাৎ প্রোটন আর নিউট্রনের ভর বের করার চেষ্টা করেন। সফলও হন। তখন একটা ব্যাপার তাঁকে অবাক করে দেয়। তিনি নিউক্লিয়াসের ভেতরের কণাগুলোর ভর মাপেন। আবার আস্ত নিউক্লিয়াসের ভরও মাপেন। খোলা চোখে, এই দুই ভর সমান হওয়ার কথা। কিন্তু অ্যাস্টোন লক্ষ করেন, ভর সমান নয়। গোটা নিউক্লিয়াসের ভর যত, এর ভেতরের নিউট্রন আর প্রোটনগুলোর আলাদা ভরের যোগফল সমান নয়। আস্ত নিউক্লিয়াসের ভর কম পাওয়া গেল। এটাকেই ‘ভরত্রুটি’ নাম দেন অ্যাস্টোন। এই ভরটুকু গেল কোথায়?</p> <p>পরমাণুর পারমাণবিক ভর যত, ভরত্রুটির পরিমাণ তত বেশি। কিন্তু তেজস্ক্রিয় মৌলগুলোতে আবার ভরত্রুটি কমে যায়। কেন কমে যায়?<br /> আইনস্টাইনের ভরশক্তির সমীকরণের ক্যারিশমাটা এখানেই। নিউক্লিয়াসের ভেতরে থাকে ধনাত্মক চার্জের প্রোটন আর চার্জনিরপেক্ষ নিউট্রন। বিদ্যুৎ-চুম্বক বলের ধর্মানুযায়ী নিউট্রন আর প্রোটনদের মধ্যে কোনো বন্ধনই তৈরি হওয়া সম্ভব নয়। বরং নিউক্লিয়াসের ভেতর প্রোটনেরা পরস্পরকে বিকর্ষণ করার কথা। অথচ কী শক্তিশালী বলেই না এরা নিউক্লিয়াসের ভেতরে আটকে থাকে!</p> <p>এই যে বন্ধনশক্তি, এর নাম নিউক্লীয় বন্ধনশক্তি। কিন্তু এই শক্তি নিউক্লিয়াস কোথায় পায়? ভরশক্তির সমীকরণ E=mc<sup>2 </sup>অনুযায়ী শক্তিকে ভরে পরিণত করা যায়। এই ভরটা যেনতেন নয়, যেটুকু ভরত্রুটি হচ্ছে নিউক্লয়াসে, সেই ভর পরিণত হচ্ছে শক্তিতে। সেই সামান্য ভরের সঙ্গে আলোর বেগের বর্গ (c<sup>2</sup>) গুণ করলে যে শক্তি পাওয়া যাবে, সেই বিশাল শক্তিটাই নিউক্লীয় বন্ধন তৈরি করে। শক্তির পরিমাণ অনেক বেশি বলে এর বন্ধনশক্তিটাও তাই অনেক শক্তিশালী।<br />  </p>