<p>আজ নতুন একটি বছরের সূচনা হলো। অন্যভাবে বলা যায়, সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর আরেকটি প্রদক্ষিণ আজ সম্পূর্ণ হয়েছে গতকাল বিজ্ঞানীদের ধারণা, এখন থেকে প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগে সৌরজগতের তৃতীয় গ্রহ পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছিলো। তারপর থেকে সূর্যকে কেন্দ্র করে একটি উপবৃত্তাকার পথে অবিরাম গতিতে পৃথিবী ছুটেই চলেছে। সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর এই চলার গতিটি নেহাত কম নয়। সেকেন্ডে প্রায় ৩০ কিলোমিটার। এটি হলো, পৃথিবীর বার্ষিক গতি। এই গতিতে সূর্যের চারপাশে প্রায় ৯৪২ মিলিয়ন কিলোমিটারের একটি প্রদক্ষিণ শেষ করতে পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫.২৫৬ দিন, এটাই হলো একটি সৌর বছর। </p> <p>সূর্যের কক্ষপথে ছুটে চলার সময় পৃথিবী নিজের অক্ষের উপর সাড়ে তেইশ ডিগ্রি কোণে হেলে থাকে। এর ফলে বর্ষ পরিক্রমায় পৃথিবীর উভয় গোলার্ধ থেকে সূর্যের আপাত অবস্থানের তারতম্য হয়। এটাই পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্তনের কারণ।  পৃথিবীর চলার প্রবল গতিটি আমরা টের না পেলেও বাৎসরিক ঋতু পরিবর্তন আমরা ঠিকই বুঝতে পারি। ঋতুর পরিবর্তনের সাথে সাথে পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশও বদলে যায়। উদ্ভিদ এবং প্রাণীদের জীবনচক্রে ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ঋতু পরিবর্তনের উপর নির্ভর করে মানুষ মাঠে ফসল ফলায়। মোদ্দা কথা হলো, সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর এই অবিরাম ছুটে চলার সাথে মানুষ সহ যাবতীয় প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সেজন্য প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই মানুষ নিজের সুবিধার্থে সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর প্রদক্ষিণের সময়কে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে নিয়ে বর্ষপঞ্জী বা ক্যালেন্ডার তৈরি করেছে। </p> <p>বর্তমান পৃথিবীতে চল্লিশটির মত বর্ষপঞ্জী চালু রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত হলো পশ্চিমা বিশ্বে প্রবর্তিত গ্রেগরীয়ান বর্ষপঞ্জী, যাকে অনেকে বলেন, খ্রিস্টীয় বর্ষপঞ্জী। যীশু খ্রীষ্টের জন্ম সালকে এর শুরু হিসেবে গণনা করা হয়। </p> <p>১৫৮২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পোপ ত্রয়োদশ গ্রোগোরির এক আদেশানুসারে পূর্বে প্রচলিত জুলিয়ান বর্ষপঞ্জীর পরিবর্তে এই নুতন বর্ষপঞ্জীর প্রচলন ঘটে। এজন্য এর নাম হয়েছে গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি। সেই বছর কিছু মুষ্টিমেয় রোমান ক্যাথলিক দেশ গ্রেগোরিয়ান বর্ষপঞ্জী গ্রহণ করে। পরবর্তীতে অন্যান্য দেশও এটি গ্রহণ করে। ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেগোরিয়ান বর্ষপঞ্জী গৃহীত হয় ১৭৫২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। সেই সময় দিনের হিসেব মেলানোর জন্য নতুন ক্যালেন্ডার থেকে ১১ দিন বাদ দেয়া হয়েছিলো। সেজন্য ১৭৫২ সালের ক্যালেন্ডারে ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর এই ১১ টি দিন খুঁজে পাওয়া যায় না।</p> <p>লেখক : সাবেক ঊর্ধ্বতন পরীক্ষক, প্লান্ট ব্রিডার রাইটস, অস্ট্রেলিয়া</p>