<p style="text-align:justify">কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, দেশে ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যাপ্ত সারের মজুদ রয়েছে, কোনো সংকট হবে না। কৃষকরা চাহিদা মাফিক সার ক্রয় ও ব্যবহার করতে পারবে। </p> <p style="text-align:justify">উপদেষ্টা আজ শনিবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতি পর্যালোচনা, বন্যার্তদের পুনর্বাসনে গৃহীত পদক্ষেপ ও বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই), বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি)-এর কার্যক্রম সর্ম্পকে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।</p> <p style="text-align:justify">কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ানসহ মন্ত্রণলয়ের উর্ধতন কর্মকর্তা ও দপ্তর-সংস্থা প্রধানগণ এসময় উপস্থিত ছিলেন।</p> <p style="text-align:justify">উপদেষ্টা বলেন, সার আমদানীর প্রক্রিয়া স্বাভাবিক আছে। ভবিষ্যতে সংকট হতে পারে এ শংকায় অতিরিক্ত সার ক্রয় বা মজুদ না করার জন্য উপদেষ্টা আহবান জানান। কৃষি উপদেষ্টা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসন কার্যক্রম স্বচ্ছতার সঙ্গে দ্রুত সম্পন্ন করার জন্যও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।</p> <p style="text-align:justify">উল্লেখ্য, ১৬ আগস্ট ২০২৪ তারিখ থেকে আকস্মিক বন্যায় দেশের ২৩টি জেলায় ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ জেলাসমূহে মোট ৩ লক্ষ ৭২ হাজার ৭৩৩ হেক্টর জমি প্লাবিত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমির পরিমাণ ২ লক্ষ ৮ হাজার ৫৭৩ হেক্টর। ফসল উৎপাদনে ক্ষতির পরিমাণ ৭ লক্ষ ১৪ হাজার ৫১৪ মে.টন, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৩,৩৪৬ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ১৪ লক্ষ ১৪ হাজার ৮৯ জন। বন্যায় আক্রান্ত ২৩টি জেলার মোট আবাদকৃত ফসলের শতকরা ১৪.৫৮ ভাগ নষ্ট হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">বন্যায় অধিক আক্রান্ত ৭টি জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ: ফেনী ৩৫,৬৭৩ হেক্টর (৮০%), নোয়াখালী ৩৮,৪৫৬ হেক্টর (৩৭%), কুমিল্লা ৪৯,৬০৮ হেক্টর (৩৬%), লক্ষ্মীপুর ১৫,৬২৬ হেক্টর (৩৩%), চট্টগ্রাম ২৩,৯৯২ হেক্টর (১৬%), মৌলভীবাজার ১৫,২২২ হেক্টর (১২%) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৮.৩২৬ হেক্টর (৩৫%)।</p> <p style="text-align:justify">বন্যায় জেলাগুলোর রোপা আমন ১,৪১,৬০৯ হেক্টর, আউশ ৩৮,৬৮৯ হেক্টর, বোনাআমন ৭৬৪ হেক্টর, রোপা আমন বীজতলা ১৪,৯০৮ হেক্টর ও শাকসবজি ১১,২৯০ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া আদা, হলুদ, আখ, পান, মরিচ, তরমুজ, পেঁপে, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, টমেটো ইত্যাদি ফসল এবং ফলবাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">বন্যা মোকাবিলায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বন্যাত্তোর পরিস্থিতিতে রোপণের জন্য আমন ধানের বীজ বিতরণ ও বীজতলা প্রস্তুত করা, কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ, কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা প্রদান এবং কমিটির মাধ্যমে সামগ্রিক কার্যক্রম সমন্বয় ও মনিটরিং করা হচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে পুনর্বাসন কর্মসূচি বাবদ ৯টি জেলায় (কুমিল্লা, চাঁদপুর, বি- বাড়িয়া, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর ও খাগড়াছড়ি) রোপা আমন চাষের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে ১৩ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা প্রণোদনা প্রদান করা হয়। এর মাধ্যমে আমন ধানের ৪০০ মে.টন বীজ কৃষক পর্যায়ে বিতরণ করা হয়। উপকারভোগী কৃষক পরিবারকে ১০ কেজি ডিএপি সার, ১০ কেজি এমওপি সার এবং নগদ ১০০০ টাকা (মোবাইল/অনলাইন ব্যাংকিং) প্রদান করা হচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">এতে ১০,৬৬৭ হেক্টর জমি রোপা আমন চাষের আওতায় আসবে এবং উপকারভোগী কৃষকের সংখ্যা ৮০,০০০ জন।<br /> বন্যা কবলিত জেলাকে গুরুত্ব প্রদান করে ৬৪ জেলায় ১২ টি ফসলে (গম, ভুট্টা, সরিষা, সুর্যমুখী, চিনাবাদাম, সয়াবিন, পেঁয়াজ, মুগ, মসুর, খেসারি, ফেলন ও অড়হড়) রবি মৌসুমে প্রণোদনা/পুনর্বাসনের জন্য ১৬৪.৭৯ কোটি টাকা অর্থছাড় করা হয়েছে, যাতে ১৬.৪১ লক্ষ কৃষক উপকৃত হবে। পরবর্তীতে শীতকালীন শাকসবজি উৎপাদনে জন্য ২২.৮৪ কোটি টাকা ১.৫ লক্ষ কৃষককে প্রণোদনা প্রদানের জন্য অর্থছাড় করা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এর বিভিন্ন খামারে ২২.৫ একর জমিতে চারা উৎপাদনের জন্য ৪৫০০ কেজি আমন ধানের বীজ বপন করা হয়েছে। উৎপন্ন চারা দিয়ে ৪৫০ একর (১৩৫০ বিঘা) জমিতে আমন ধান আবাদ করা সম্ভব হবে।<br /> আগামী ২০/০৯/২০২৪ হতে ২৫/০৯/২০২৪ তারিখের মধ্যে ফেনী, নোয়াখালী ও খাগড়াছড়ি জেলায় মোট ২৫০০ টি কৃষক পরিবারের নিকট রোপা আমন ধানের চারা পৌঁছাবে, যা দিয়ে ২৫০০ বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করা হবে। </p> <p style="text-align:justify">এর মধ্যে বিএডিসি কর্তৃক সরবরাহকৃত বীজে ১৩২৫ বিঘা, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক সরবরাহকৃত বীজে ৩৭৫ বিঘা, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) কর্তৃক সরবরাহকৃত বীজে ৪৫০ বিঘা এবং বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) কর্তৃক সরবরাহকৃত বীজে ৩৫০ বিঘা জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করা হবে। বিএডিসি'র মধুপুরস্থ খামারের ১.৫০ একর উঁচু জমিতে আমন ধানের বীজ রোপন করা হয়েছে, যা দ্বারা ফেনী জেলার মহিপালে অবস্থিত খামারের ক্ষতিগ্রস্ত ২৫ একর (৭৫ বিঘা) জমিতে আমন ধান আবাদ করা হবে।</p> <p style="text-align:justify">কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় কুমিল্লা সেনানিবাসে ২.৫০ একর (৭.৫ বিঘা) জমিতে চারা তৈরি করে ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলার কৃষক পরিবারের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (IRRI) ১২০০ কেজি বীজের চারা ২৪০টি কৃষক পরিবারের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করবে মর্মে আশ্বাস পাওয়া গেছে। বেসরকারী সংস্থা সিনজেন্টা কর্তৃক ১৫ মে.টন বীজ ৫ কেজি হারে ৩০০০ কৃষক পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। </p>