<p>ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক চায় বলে যে ঘোষণা দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান, তা দিল্লির নজরে এসেছে এবং দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশা করছে যে ভবিষ্যতে এ নিয়ে আরো আলাপ-আলোচনা হতে পারে।</p> <p>ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল শুক্রবার দিল্লিতে মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই মন্তব্য করেছেন।</p> <p>এদিনের ব্রিফিংয়ে নানাভাবেই বাংলাদেশ প্রসঙ্গ নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন।</p> <p>এগুলোর মধ্যে যেমন ছিল জামায়াতে ইসলামীর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, তেমনই ছিল সাম্প্রতিক বন্যার দায় কার, তা নিয়ে বাংলাদেশের একাংশ থেকে ভারতের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলা এবং বাংলাদেশে ভারতীয় প্রকল্পগুলির ভবিষ্যৎসহ নানা বিষয়।</p> <p>আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে ফোনালাপের পরে দুই দেশ পৃথকভাবে যে বিবৃতি দিয়েছিল, সেই দুটিতে বাংলাদেশকে নিয়ে দুই ধরনের বক্তব্য আসার প্রসঙ্গও উঠেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ ব্রিফিংয়ে।</p> <p><strong>জামায়াত প্রসঙ্গে ভারত</strong><br /> জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ১ আগস্ট যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল শেখ হাসিনার সরকার, তা ২৮ অগাস্ট প্রত্যাহার করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।</p> <p>এরপর বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করতে গিয়ে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেছিলেন যে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে তাদের দল আগ্রহী।</p> <p>এই মন্তব্য নিয়েই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর দিকে অভিযোগ ওঠে যে সেখানে তারা ভারতবিরোধী মনোভাবকে প্ররোচনা দেয়। কিন্তু এখন যখন তারা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি চায়। এ নিয়ে ভারত সরকারের অবস্থান কী?'</p> <p>এই প্রশ্নের উত্তর সরাসরি না দিয়ে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাতের ব্যাপারে বিস্তারিত বলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।</p> <p>প্রধান উপদেষ্টা ও ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা, বাংলাদেশে হিন্দু এবং সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেওয়া, সাম্প্রতিক বন্যা ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করে জয়সওয়াল মূল প্রশ্নের জবাব এক লাইনে সেরে দেন।</p> <p>প্রশ্নকর্তা সাংবাদিককে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনি অন্য যে বিষয়টির প্রসঙ্গ উত্থাপন করলেন (অর্থাৎ জামায়াতে ইসলামীর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রসঙ্গ), সেটা আমাদের নজরে এসেছে এবং আমরা আশাবাদী যে বিষয়টি নিয়ে পরে আমরা আরো আলাপ-আলোচনা করব।’</p> <p>অন্য এক সাংবাদিক জামায়াতে ইসলামীর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ব্যাপারে মুখপাত্রর কাছে জানতে চেয়েছিলেন।</p> <p>জবাবে রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘আমরা এটিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে দেখছি।’</p> <p><strong>বাংলাদেশে ভারতীয় প্রকল্পগুলি স্থগিত</strong><br /> রণধীর জয়সওয়াল বলেন, বাংলাদেশে যেসব ভারতীয় প্রকল্পগুলি চলছিল, বর্তমান পরিস্থিতিতে সেসব স্থগিত হয়ে রয়েছে।</p> <p>তার কথায়, ‘সেখানে অনেকগুলো উন্নয়নমূলক প্রকল্পে যারা কাজ করতেন, তারা ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন।'</p> <p>‘অন্যান্য কিছু কারণেও এসব প্রকল্প স্থগিত হয়ে গেছে। পরিস্থিতির যখন উন্নতি হবে, আইন-শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে, তারপর সেখানকার সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে দেখা যাবে যে কিভাবে এগুলি নিয়ে এগোনো যায়।’</p> <p>শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ভারতের সঙ্গে চুক্তিগুলি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বাংলাদেশে।</p> <p>প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে সম্পাদিত গোপন ও অসম চুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।</p> <p>গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির কম্পানি আদানি গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ-ক্রয় চুক্তি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়েছিল। এ বিষয়টিও এখন প্রশ্নের মুখে পড়েছে।</p> <p><strong>বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ভারত, যুক্তরাষ্ট্রের ভিন্ন বয়ান</strong></p> <p>প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও আমেরিকার রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের মধ্যে সম্প্রতি যে ফোনালাপ হয়েছে, তার পরে দুটি দেশই পৃথক বিবৃতি দিয়েছিল।</p> <p>যেসব বিষয় নিয়ে দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হয়, তাতে যে বাংলাদেশ প্রসঙ্গও ছিল, সেটা ভারতের জারি করা বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের তরফে দেওয়া বিবৃতিতে এটা ছিল না।</p> <p>ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হয় সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে।</p> <p>রণধীর জয়সওয়াল এদিন আবারও বলেন যে প্রতিবেশী দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তন নিয়ে দুই নেতার মধ্যে ‘বিস্তারিত আলোচনা’ হয়েছে।</p> <p>দুই দেশের বিবৃতিতে ফারাক থাকার ব্যাপারে তার ব্যাখ্যা যে, দুই নেতার মধ্যে ফোনালাপের পরে জারি করা বিবৃতিতে প্রতিটা শব্দ মাপজোখ করে, দুই দেশের মতামত নিয়ে জারি করা হয় না।</p> <p>জয়সওয়াল বলেন, ‘কোনো এক পক্ষের বিবৃতিতে কোনো বিষয়ের উল্লেখ নেই মানে এই নয় যে সেই বিষয়টায় কথা হয়নি।,</p> <p>তবে কোনো এক দেশ তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সেটাকে তুলে ধরতেই পারে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।</p> <p><strong>বন্যায় ভারতের দায় নিয়ে প্রশ্ন</strong><br /> বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বন্যা এবং তার জন্য বাংলাদেশের একাংশ যে ভারতকে দায়ী করছে, তা নিয়েও সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন।</p> <p>বন্যা নিয়ে এর আগে দুটি বিবৃতি জারি করে ভারত যা বলেছিল, এদিনের ব্রিফিংয়েও সেসব কথারই পুনরাবৃত্তি করেন রণধীর জয়সওয়াল।</p> <p>সেসব সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছিল, ‘ভারত ও বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকায় চলমান বন্যা পরিস্থিতির জন্য ত্রিপুরার গোমতী নদীর ডম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়া নিয়ে যে আলোচনা চলছে, তা সঠিক নয়। ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত গোমতী নদীর অববাহিকায় অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের কারণে ওই বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।'</p> <p>বাংলাদেশের বন্যা নিয়ে সিএনএনের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদন নিয়েও ব্রিফিংয়ের সময়ে সাংবাদিকরা জয়সওয়ালকে প্রশ্ন করেন।</p> <p>পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র বলেন,‘বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সিএনএনের প্রতিবেদনটি দেখেছি। সেটির আখ্যান বিভ্রান্তিকর। প্রতিবেদনে এটা বলার চেষ্টা করা হয়েছে যে এই বন্যার জন্য ভারত দায়ী। এই তথ্য ভুল। এ নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে ভারত সরকারের দেওয়া বিবৃতিতে যেসব তথ্য দেওয়া হয়েছিল, সেসবের দিকেও নজর দেওয়া হয়নি (ওই প্রতিবেদনে)।’</p> <p>ভারতের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাতের সময়ে এটা তুলে ধরেন যে অত্যধিক বৃষ্টিপাতের কারণেই বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যা হয়েছে, এটাও জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র।</p> <p>সূত্র :<a href="https://www.bbc.com/bengali/articles/cq6rjg6vr78o" target="_blank"> বিবিসি</a> বাংলা।</p>