<p style="text-align:justify">ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোকাদ্দেস হোসেন জাহিদ, সচিব দুলাল হোসেন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তাঁরা আর অফিস করছেন না। আত্মগোপনে চলে গেছেন। অন্যদিকে লালবাগের শহীদনগরের ৪ নম্বর গলিতে ওয়ার্ডটির কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, সেটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা ওই কার্যালয় থেকে আর প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছে না।</p> <p style="text-align:justify"><img alt="নাগরিকরা ১৪ ধরনের সেবাবঞ্চিত" height="180" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/08/30/1724960443-c2cd5955308b6923f08014943a0d7ba7.jpg" style="float:left" width="300" />সেখানকার আমলীগোলা এলাকার বাসিন্দা হাসান আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের ভাই-বোনদের মধ্যে পৈতৃক সম্পদ বণ্টন করতে একটি ওয়ারিশান সনদ প্রয়োজন। আমার এক ভাই অন্য দেশে চলে যাবে। সে তার ভাগের জায়গা বিক্রি করে যেতে চাচ্ছে। কিন্তু সনদ নিতে স্থানীয় কাউন্সিলরকে খুঁজে পাচ্ছি না। কাউন্সিলর অফিসে বর্তমানে কেউ নেই। কাউন্সিলরের সঙ্গে যাঁরা থাকতেন তাঁদেরও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাসায় গিয়েও কাউন্সিলরকে পাইনি। ফলে সনদের জন্য আমাদের পুরো কাজটি আটকে আছে।’</p> <p style="text-align:justify">তবে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলে আত্মগোপনে থাকা কাউন্সিলর মোকাদ্দেস হোসেন জাহিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নিজের বাসায় তো থাকতে পারছি না। আমার কার্যালয়সহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যেখানে নিজের জীবনই বিপন্ন, সেখানে সাধারণ মানুষকে সেবা দেব কিভাবে!’</p> <p style="text-align:justify">অন্যদিকে ওয়ার্ড সচিব দুলাল হোসেন জানান, ৫ আগস্ট বিকেলে কাউন্সিলর অফিস পুড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় বিএনপিকর্মীরা। ওই সময় কম্পিউটারসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাগজপত্র পুড়ে গেছে। এখনো এলাকায় আওয়ামী লীগের কাউকে দেখলেই মারধর করে পুলিশে দেওয়া হচ্ছে। এমন অবস্থায় আত্মগোপনে থাকা ছাড়া উপায় নেই। ফলে নাগরিক সেবা দেওয়া সম্ভব না।</p> <p style="text-align:justify">ডিএসসিসির গোর-ই-শহীদ মাজারের পাশে ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অফিস। ওই অফিসেও ৫ আগস্ট ভাঙচুর করা হয়। বর্তমানে অফিসটিতে দাপ্তরিক কাজ চালানোর মতো কোনো আসবাব নেই। আইডিয়াল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ হত্যার অভিযোগের মামলায় গ্রেপ্তারের পর দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে আছেন ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক। <br /> ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আটকে গেছে। আজিমপুরের মন্দিরগলির বাসিন্দা সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘আমি যে এই এলাকার বাসিন্দা এটা নিশ্চিতের জন্য একটি প্রত্যয়নপত্র প্রয়োজন। যাচাইকারী হিসেবে জনপ্রতিনিধির স্বাক্ষর ছাড়া প্রত্যয়নপত্র কিভাবে পাব?’</p> <p style="text-align:justify">ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস থেকে জন্ম ও মৃত্যুর নিবন্ধন, নাগরিক, চারিত্রিক, ওয়ারিশ, আয়, অবিবাহিত, দ্বিতীয় বিয়েতে আবদ্ধ না হওয়া, পারিবারিক সদস্য, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতার সত্যায়িত সনদ দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রত্যয়নপত্র, প্রয়োজন ক্ষেত্রে অনাপত্তিপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকা যাচাইসহ ১৪ ধরনের নাগরিক সেবার জন্য কাউন্সিলরকে স্বাক্ষর দিতে হয়। কিন্তু বর্তমানে কাউন্সিলরদের অনুপস্থিতিতে এসব সেবা বন্ধ রয়েছে। মশক নিধন, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাজের তদারকিসহ টিসিবির পণ্য বিতরণ কাজেও ব্যাঘাত ঘটছে।</p> <p style="text-align:justify">ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের কাজ করা হয়। এ কারণে দক্ষিণ সিটির আওতাধীন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা এ সেবা পাচ্ছেন। কিন্তু বিভিন্ন সনদ নেওয়ার মতো বাকি যেসব সেবা কাউন্সিলর কার্যালয়কেন্দ্রিক, সেসব সেবা পাচ্ছেন না।</p> <p style="text-align:justify">উত্তর সিটি করপোরেশন</p> <p style="text-align:justify">একইভাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দক্ষিণখান-আশকোনার ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিসুর রহমান নাঈম গত ৪ আগস্ট থেকে এলাকাছাড়া। এই কাউন্সিলর উত্তরের সাবেক মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন ধরনের টেন্ডার বাণিজ্য থেকে শুরু করে আওয়ামী রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতেন নাঈম।</p> <p style="text-align:justify">চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ঢাকা উত্তর সিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী এই সিটির ৫৪ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ৪৮ জন কাউন্সিলর কার্যালয়ে গিয়ে অফিস করছেন না। মাত্র ছয়জন কাউন্সিলর নিজেদের কার্যালয়ে গিয়ে অফিস করছেন।</p> <p style="text-align:justify">খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দক্ষিণ সিটির ৭৫ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ৬৬ জনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আত্মগোপনে আছেন তাঁরা। ওয়ার্ড সচিবদেরও একই আবস্থা। এসব ওয়ার্ডের বেশির ভাগ কার্যালয় ভাঙচুরসহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেয়রদের অপসারণ করে কাউন্সিলরদের রেখে নগর প্রশাসন ও সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব না। কারণ কাউন্সিলর পদে যাঁরা আছেন তাঁরাও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কাউন্সিলর হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, নির্যাতন, নিপীড়ন এবং মানুষের সম্পদ দখল করার অভিযোগ রয়েছে। ফলে এই কাউন্সিলররা বর্তমানে জনরোষের শিকার হতে পারেন।</p> <p style="text-align:justify">বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নির্বাচন যখন দলীয় সরকারের হাতে থাকে তখন দলীয় প্রার্থীরাই ক্ষমতায় বসেন। তাঁরা দলের স্বার্থের বাইরে কিছু করেন না। সিটি করপোরেশনের মেয়র-কাউন্সিলররাও সেটি ভালোভাবে অনুসরণ করেছেন। মেয়রদের সরিয়ে যেভাবে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, কাউন্সিলরদেরও সরিয়ে সব নাগরিক সেবা আঞ্চলিক কার্যালয়ে নিলে গুরুত্বপূর্ণ সেবাগুলো থেকে নাগরিকরা বঞ্চিত হতো না।’</p> <p style="text-align:justify">ডিএসসিসির প্রশাসক ড. মহ. শের আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কাউন্সিলরদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত পুরোপুরি সরকারের সিদ্ধান্ত। আমাদের সব সেবা অব্যাহত আছে। নাগরিকদের যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয় সে বিষয়ে অবশ্যই আমরা নজর রাখব। সেবা পাননি এমন কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি।’</p> <p style="text-align:justify">নাগরিক অথবা ওয়ারিশ সনদের মতো প্রয়োজনীয় সনদ আঞ্চলিক কার্যালয় দিতে পারে কি না এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা আইনগত একটা বিষয়, চেক করে দেখতে হবে।’</p>