‘আমরা ১৬ জন। উচ্চপদস্থ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা, জেলা দায়রা জজ, শিক্ষকও রয়েছেন। ২০১০ সালে জমি কিনেছিলাম। মাটি ভরাট করে ঘর তুলে বাউন্ডারি ওয়ালও দিই।
রাজধানীতে হানিফ ভ্রাতার লুটপাট, দখলবাজি
- চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের নিয়ে কম্পানি গঠন
- সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানার জমি, খাল দখল করে বিক্রি
- একসময়ের কসাইও রিয়েল এস্টেট কম্পানির পরিচালক
- রাতারাতি হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক
নিজস্ব প্রতিবেদক

ওরা কারা—এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ওদের নেতা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের ভাই রফিকুল আলম। সঙ্গে আরো আছে কুষ্টিয়া এলাকার সাবেক এক উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাই ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা, কসাই খলিল, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহীউদ্দিন, সাদিক অ্যাগ্রোর মালিকের কয়েকজন নিকটাত্মীয়সহ অনেকে। মাহবুবউল আলম হানিফ নেপথ্যে থেকে এই দখলবাজির দেখভাল করতেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাও তাঁদের সঙ্গে জড়িত বলে শুনেছি।
ভুক্তভোগী অনেক জুলুম-নির্যাতনের কথা জানিয়ে বললেন, ‘আপনারা হয়তো আমার কথাগুলো রেকর্ড করে রাখছেন। কিন্তু অনুরোধ, আমার নাম-ঠিকানা প্রকাশ করবেন না। তাহলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।’
এ ধরনের অভিযোগ রাজধানীর কালশী, মাটিকাটা, পল্লবী ও ক্যান্টনমেন্টসংলগ্ন এলাকার অনেকের। তাঁদের দাবি, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় সাধারণ মানুষের ও সরকারি জমি, খাল জবরদখল করে নেওয়া আর্টিকেল স্ট্রাকচারের বিরুদ্ধে দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি জবরদখল : অভিযোগকারীদের বক্তব্য এবং প্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনায় জানা যায়, হত্যাসহ সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড, দুর্নীতি এবং সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি জবরদখলের সঙ্গে জড়িত অনেককে সঙ্গে নিয়ে ওই সব এলাকায় একটি সংঘবদ্ধচক্র দীর্ঘদিন ধরে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। ‘আর্টিকেল স্ট্রাকচার লিমিটেড’ নামের একটি কম্পানির হর্তাকর্তা ওরা। ‘আরজেড বিল্ডার্স লিমিটেড’ নামের আরেকটি কম্পানিতেও রয়েছে তারা। এরই মধ্যে কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি জবরদখল করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ নেতা আওলাদ হোসেন সাক্কুর জমি দখল করার জন্য আর্টিকেলের লোকজন তাঁর জমির ওপর সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয় এবং চারপাশের বাউন্ডারি ভাঙচুর করে বলে খবর পাওয়া যায়। এ ধরনের জবরদখলের অভিযোগ অনেক।
‘আর্টিকেল স্ট্রাকচার লিমিটেড’ ও ‘আরজেড বিল্ডার্স লিমিটেড’ মাটি ভরাট করে প্লট বিক্রির পাশাপাশি ভবন নির্মাণের কাজও করে থাকে। প্রধান অফিস বনানীর ১৭ নম্বর রোডের রূপসা টাওয়ারে। আর সাইড অফিস ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ইসিবি-কালশী মেইন রোডের পাশে। রূপসা টাওয়ারের অফিসে গত সপ্তাহে দুই কর্মদিবসে গিয়েও কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর দেখা মেলেনি।
কম্পানিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ৬০ থেকে ৭০ ফুট চওড়া কালশী খালের একাংশ এবং সরকারি রাস্তা ও গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের প্রায় ৩০ বিঘা সরকারি জমি দখল ও ভরাট করে তা প্লট আকারে বিক্রির অপচেষ্টা চলছে। এই সম্পত্তির মূল্য প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। খালটি দখল ও ভরাট করায় ভাসানটেক, মিরপুর-১০, ১১, ১৪, পল্লবী ক্যান্টনমেন্ট, মানিকদী, মাটিকাটাসহ বিশাল এলাকার স্যুয়ারেজের এবং বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন বাধার মুখে। দখলদারদের প্রচারণা—এই খাল উত্তর সিটি করপোরেশন তাদের ৯৯ বছরের জন্য লিজ দিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বসবাসের জন্য কালশী খালের পাশে সরকারিভাবে তিনটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য ও বস্তিবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এই খালটির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। আর্টিকেল স্ট্রাকচার লিমিটেড সরকারি এই খালের দুই পাশে বাঁশের বেড়া দিয়ে ভরাটের কাজ শুরু করে। এ কাজ গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত চালু ছিল। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তথ্য মতে, খালটির প্রস্থ ছিল ৭০ ফুট। কিন্তু ভরাটের ফলে বর্তমানে ২৫ থেকে ৩০ ফুট রয়েছে। আর্টিকেল স্ট্রাকচারকে সিটি করপোরেশন খাল ভরাট করতে নিষেধ করলেও তা অগ্রাহ্য করা হয়। এলাকাবাসী গত বছর শেখ হাসিনার সরকার পতনের আগে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের কাছে এই খাল ও সরকারি জমি দখলমুক্ত করার জন্য লিখিত আবেদন জানায়। এর অনুলিপি পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সরকার পরিবর্তনের পরও একই অবস্থা বহাল।
এসব বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান, এনডিসি গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শুধু কালশী সরকারি খাল নয়, সব খাল সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। আগামীকাল (রবিবার) উত্তরের ১২টি খাল নিয়ে মন্ত্রণালয়ে বৈঠক আছে। আমরা আপাতত বৃষ্টির পানি যাতে সহজে সরতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে চাচ্ছি। বর্ষা মৌসুমকে মাথায় রেখে আগে খালগুলো পরিষ্কার করব। পরে দখলমুক্ত করার বিষয়ে কাজ করা হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘খাল যেটুকু দখলমুক্ত আছে, তা পরিষ্কার করতে আমাদের কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হয় না। কিন্তু দখলমুক্ত করতে গেলে আইনের অনেক বিষয় থাকে। অনেক রকম জটিলতা পার করে সেটি করতে হয়। তাই আমরা পরিষ্কার করাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি।’
কম্পানির হর্তাকর্তা যাঁরা : আর্টিকেল স্ট্রাকচার লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল আলম চুন্নু আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের বড় ভাই। কম্পানিতে তাঁর শেয়ার দুই হাজার ৭০০টি। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি পলাতক বলে জানা যায়। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের ধারণা, কাগজে-কলমে না থাকলেও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফই আর্টিকেল স্ট্রাকচার লিমিটেডের মূল নিয়ন্ত্রক ও সুবিধাভোগী। তাঁর সঙ্গে সরকারের সাবেক ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তাও রয়েছেন।
কম্পানির পরিচালক (সেলস) তরিকুল ইসলাম গত ২০ ফেব্রুয়ারি কালের কণ্ঠের কাছে দাবি করেন, ‘রফিকুল আলম মাঝেমধ্যে সাইড অফিসে আসেন। তবে বনানীর রূপসা টাওয়ারের অফিসে এখন কেউ যাচ্ছেন না।’ কম্পানির লোকজন কালের কণ্ঠকে জানান, তরিকুল ইসলামই কম্পানির চেয়ারম্যান ও এমডির সঙ্গে যোগাযোগ মাধ্যম। কম্পানির এমডির সঙ্গে কম্পানিসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে কথা বলতে বা দেখা করতে চাইলে তরিকুল ইসলাম জানান, তিনি চেষ্টা করবেন। গত ২১ ফেব্রুয়ারি হোয়াটসঅ্যাপে ‘আর্টিকেল স্ট্রাকচার লিমিটেড’ ও ‘আরজেড বিল্ডার্স লিমিটেড’-এর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয় উল্লেখ করে এ সম্পর্কে কম্পানির এমডি বা তরিকুল ইসলামের বক্তব্য জানতে চাইলে তরিকুল ইসলাম মেসেজ পাঠান, ‘আমি কালকে (২২-০২-২৫) আপডেট দিচ্ছি।’ কিন্তু সে আপডেট আর পাওয়া যায়নি।
কম্পানির এমডির দায়িত্বে রয়েছেন মো. তারেক আল মামুন। কম্পানিতে তাঁর শেয়ার দুই হাজার ৫০০টি। তিনি কুষ্টিয়া দৌলতপুরের ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। বর্তমানে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে সহযোগী একটি রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার চেষ্টায় রয়েছেন বলে জানা যায়। হঠাৎ বিপুল সম্পদের মালিক বনে যাওয়া তারেকের বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান সাদিক অ্যাগ্রোর সঙ্গে ব্যবসা এবং তাঁর ব্যবসায় আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদের ছেলে বিপ্লবের বিনিয়োগ রয়েছে বলেও জানা যায়। সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতির ছবি দেখা যায়। সূত্র জানায়, একসময় তারেক আল মামুন দুজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তার সন্তানদের গৃহশিক্ষক ছিলেন। ওই পরিচয় ব্যবহার করে এবং সে সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার মদদপুষ্ট হয়ে রাতারাতি বিপুল সম্পদের মালিক বনে যান। প্রাথমিকভাবে মো. তারেক আল মামুনের বিপুল সম্পদের যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তা বিস্ময়কর।
কম্পানির অন্যতম পরিচালক হচ্ছেন কসাই খলিল খ্যাত মো. খলিলুর রহমান। জানা যায়, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত খলিল বাউনিয়া বাঁধ বাজারে নিজ দোকানে কসাইয়ের কাজ করতেন। ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক। জন্ম শরীয়তপুরে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাঁর পিতা ইউনূস ভাণ্ডারী তেজগাঁও রেললাইন বস্তি ও ভাসানটেক বস্তিতে বসবাস করেন। পরে বাউনিয়া বাঁধ দুই হাজার ৬০০ বাস্তুহারা পরিবার পুনর্বাসন প্রকল্পে ব্লক-বিতে পৌনে এক কাঠার বাসা বরাদ্দ পায়। দরিদ্র পিতার সন্তান খলিলুর রহমানের উত্থান ১৬ বছর আগে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই। বর্তমানে তিনি শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক। পল্লবী থানায় কর্মরত ছিলেন এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, খলিল ওই থানার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তিনি মাদক কারবারি ও কিশোর গ্যাং লিডার হিসেবেও পরিচিত এবং প্রতারণা, মারামারি, ধর্ষণসহ অনেক মামলার আসামি। তবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কিছু মামলার ফাইনাল রিপোর্ট করিয়ে নিয়েছেন। খলিলের বিরুদ্ধে মামলার মধ্যে আছে বা ছিল, বাউনিয়া বাঁধ ডি-ব্লকের হাজেরা খাতুনকে জোর করে উচ্ছেদ করা। এ নিয়ে পল্লবী থানায় মামলা হয়, কলাবাগান বস্তির মো. আবুল কাশেমের বোনের ঘর দখল করতে গিয়ে ওই বোনের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করলে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এ বিষয়ে পল্লবী থানায় মামলা হয়; খালেকুজ্জামান নামের এক ব্যক্তি তাঁর জমিতে মাটি ভরাট করতে গেলে তাঁকে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে পল্লবী থানায় খলিলের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়; বাউনিয়া বাঁধের ই-ব্লকের বাসিন্দা মো. আসলামের ছেলেকে চাঁদা না দেওয়ায় গুরুতর জখম করা হয়। এ বিষয়েও পল্লবী থানায় খলিলের বিরুদ্ধে মামলা হয়; খলিলের নেতৃত্বে কৃষক লীগের সভাপতি মাকসুদুল আলমের ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। পরে খলিলের সন্ত্রাসী দল দখল করে নেয় মাকসুদুল আলমের জমি। এ বিষয়ে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পল্লবী থানায় মামলা হয় (মামলা নম্বর-৮২/৮৮৯)। সেনপাড়া ও বাউনিয়া মৌজায় অনেক জমির মালিক খলিলের দাপটের কাছে জিম্মি। রয়েছে নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী। খলিল সর্বশেষ বাউনিয়া মৌজার বৈশাখী খামারের ভেতর বিভিন্ন মালিকের জমি জোরজবরদস্তি দখলে নিয়ে মাটি ভরাট করে বিক্রির পাঁয়তারা করছিলে বলে অভিযোগ রয়েছে। খলিলের বিরুদ্ধে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে অন্যের জমি নিজের দাবি করে বিক্রির একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সেনপাড়া মৌজায় এ ধরনের একাধিক ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়। সেনপাড়া মৌজায় ১৩ কাঠা জমির জাল কাগজ তৈরি করে দখলে রেখেছেন। প্রকৃত মালিকদের দাম দিয়েছেন ৪০ লাখ টাকা। আর পাঁচ কোটি ২০ লাখ টাকায় বিক্রির চেষ্টা করছেন। বাউনিয়া মৌজায় বৈশাখী খামারের ভেতর বিভিন্ন মালিকের জমি জোরপূর্বক দখলে নিয়ে মাটি ভরাটের পর জাল কাগজ তৈরি করে জমি বিক্রির পাঁয়তারা করছেন বলে সূত্র জানায়। কোনো মালিক তাঁর জমির কাছে গেলে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেন খলিল। মালিকরা থানায় গেলেও পুলিশ মামলা নেয় না। বর্তমানে ১০০ কোটি টাকার মালিক তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করতেও সাহস করে না অনেকে। পুলিশকে ম্যানেজ করে কিছু মামলায় চূড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, থানা থেকে এসব বিষয়ে অভিযোগ গ্রহণ করা হয় না। বলা হয়, জমির মামলা কোর্টে, আমাদের কাছে না। ৫ আগস্টের পর থেকে খলিলুর রহমানকে তাঁর নিজ এলাকায় এবং কম্পানির অফিসে দেখা যায়নি। কিন্তু তাঁর সহযোগীরা এলাকায় সক্রিয়।
কম্পানির আরেক ডিরেক্টর ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মহীউদ্দিন আহমেদ। আর্টিকেল স্ট্রাকচার লিমিটেডে তাঁর শেয়ারের সংখ্যা দুই হাজার ২০০টি। মহীউদ্দিনের বিরুদ্ধে গত বছর ২৭ মে একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের জমি দখল করে কবলাসূত্রে মালিক হিসেবে মেজর জেনারেল পদবির একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার শাশুড়ির নামে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস গাজী হাফিজুর রহমান লিকুর ছোট ভাই পরিচয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। ৫ আগস্টের পর থেকে মহীউদ্দিন আহমেদও লাপাত্তা।
সম্পর্কিত খবর

মোদি ও শেহবাজ শরিফের শোক
- বাংলাদেশে জাতিসংঘের কার্যালয়ের শোক
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকায় বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। একই ঘটনায় পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারও শোক প্রকাশ করেছেন।
নরেন্দ্র মোদি এক্স বার্তায় লিখেছেন, ‘ঢাকায় একটি মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় গভীরভাবে মর্মাহত ও দুঃখিত বোধ করছি। নিহতদের মধ্যে অনেকেই তরুণ শিক্ষার্থী।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এক বার্তায় লিখেছেন, ‘ঢাকার মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক প্রাণহানির ঘটনায় গভীরভাবে শোকাহত।
এদিকে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এক্স বার্তায় লিখেছেন, ‘ঢাকায় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর বিমানবাহিনীর একটি বিমান দুর্ঘটনায় মূল্যবান প্রাণহানির ঘটনায় গভীরভাবে শোকাহত। নিহতদের পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাই এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।
এদিকে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক জানিয়েছে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) প্রতিনিধিদল। গতকাল এক শোকবার্তায় ইইউ প্রতিনিধিদল বলেছে, ‘এই মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত। এ দুর্ঘটনায় নিহত, তাদের পরিবারবর্গ এবং ক্ষতিগ্রস্ত সবার প্রতি আমাদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।’
বার্তায় আরো উল্লেখ করা হয়, ‘আমাদের হৃদয় শোকাহত—আমরা নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আছি।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের কার্যালয় গতকাল এক ফেসবুক বার্তায় বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় শোক ও সমবেদনা জানিয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা
সরকারি চাকরিতে জুলাই যোদ্ধাদের কোটা থাকছে না
বিশেষ প্রতিনিধি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারের সদস্য ও আহতদের জন্য সরকারি চাকরিতে কোনো কোটা রাখা হবে না বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গৃহীত কার্যক্রম নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা এ কথা জানান।
জুলাই যোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারকে সরকারিভাবে ফ্ল্যাট দেওয়া এবং সরকারি চাকরিতে তাদের জন্য কোটা রাখা হচ্ছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাঁদের পুনর্বাসনের কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। সে অনুসারে মন্ত্রণালয় যাবতীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে।
তিনি আরো বলেন, ‘পুনর্বাসন নানাভাবে হতে পারে। তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যোগ্যতা অনুযায়ী তিনি যেভাবে পুনর্বাসিত হতে চান সেভাবে করা হবে।
জুলাই যোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সমকক্ষ করা হচ্ছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওইভাবে (সমকক্ষ) কেউ দেখছে না। আমরাও দেখছি না। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা পেতে ৩০ থেকে ৩৫ বছর লেগেছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা চূড়ান্তকরণ, আহতদের চিকিৎসা ব্যয় এবং তাঁদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তাসহ পুনর্বাসন করার উদ্দেশ্যে যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য ২৮ এপ্রিল ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ গঠন করা হয়।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের জুলাই শহীদ এবং আহতদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে সরকার ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর মাধ্যমে স্বীকৃতি দিয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তালিকা অনুযায়ী মোট ৮৪৪ জন শহীদের তালিকা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় গেজেট আকারে প্রকাশ করে।
আহত হওয়ার ধরন অনুসারে জুলাই যোদ্ধাদের তিনটি শ্রেণিভুক্ত করে ৪৯৩ জনকে ‘ক’ শ্রেণিতে, ৯০৮ জনকে ‘খ’ শ্রেণিতে এবং এক হাজার ৬৪২ জনকে ‘গ’ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। সম্প্র্রতি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে ‘ক’ শ্রেণির ১১৪ জন, ‘খ’ শ্রেণির ২১৩ জন এবং ‘গ’ শ্রেণির এক হাজার ৪৪২ জন, মোট এক হাজার ৭৬৯ জনের তালিকা পাওয়া গেছে, যা যাচাই-বাছাই শেষে শিগগিরই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।

ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ
একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান না থাকার প্রস্তাবে বিএনপির আপত্তি
- বিমান দুর্ঘটনার খবরে সংলাপ মুলতবি, আজ আবার বসবে
নিজস্ব প্রতিবেদক

একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা থাকার প্রশ্নে একমত হলেও প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান একই ব্যক্তি থাকার প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। তবে গুরুত্বপূর্ণ ওই তিনটি পদে একই ব্যক্তির থাকার বিষয়ে বিধি-নিষেধ আরোপে সম্মত নয় বিএনপি।
এই ইস্যুতে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আর সংবিধানের মূলনীতি নিয়ে আলোচনাকালে কমিশনের প্রস্তাবে বিএনপি সমর্থন জানালেও ঘোরতর আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ (সিপিবি) বাম প্রগতিশীল দলগুলো।
গতকাল সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার সংলাপের ১৬তম দিনে এসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়। দুপুরের খাবার বিরতির পর বিমান দুর্ঘটনার খবর পৌঁছলে শোক প্রস্তাব গ্রহণের পর সংলাপ মুলতবি করা হয়।
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া।
সংলাপের সূচনা বক্তব্যে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত। আমি, আপনি ও আমরা সবাই যে জায়গায় উপনীত হয়েছি, তার সাফল্য ও ব্যর্থতা সবকিছুর ঊর্ধ্বে হচ্ছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। একটা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলাম আমরা।
আলী রীয়াজ বলেন, ‘৫৩ বছর ধরে আমরা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছি।
সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত সংবিধানের চার মূলনীতি বাতিল করে সংস্কার কমিশন নতুন প্রস্তাব করেছিল, আমরা আপত্তি জানিয়েছিলাম। আবার নতুন করে প্রস্তাব এনেছেন, যার মধ্যে চার মূলনীতি নাকচ করা হয়েছে। তাই আমরা আপত্তি জানিয়েছি। এ ক্ষেত্রে সমাধান হিসেবে বলেছি, প্রস্তাবটি হতে পারে, ‘সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির সঙ্গে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি’ উল্লেখিত হবে। অন্যথায় এটা গ্রহণ করা যাবে না।” সিপিবি ক্ষমতায় গেলে একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান থাকবেন না বলে জানান তিনি।
এর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তাঁর দল মনে করে, দলীয় প্রধানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিষয়টি উন্মুক্ত থাকা দরকার। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া কোনো দলের সংসদীয় কমিটি যদি মনে করে যে তারা দলীয় প্রধানকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করবে, তাহলে গণতান্ত্রিক এ প্রক্রিয়ার সুযোগ বন্ধ করা ঠিক হবে না। প্রধানমন্ত্রী এবং তার সঙ্গে সংসদ নেতার ভূমিকাটা প্রায় অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, এই দুই ক্ষেত্রে একত্রে প্রধানমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সংসদ নেতা থাকতে কোনো অসুবিধা নেই।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘গণতন্ত্রে কোনো ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হলে তাঁকে অপশন হিসেবে রাজনৈতিক দলের প্রধানের পদটা ছাড়তে হবে, এ রকম কোনো চর্চা সাধারণত দেখা যায় না। এটা (দলীয় পদ) তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকার।’
সংলাপ শেষে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘এক ব্যক্তি যাতে দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী হতে না পারেন সে বিষয়ে সংবিধানে নীতি প্রণয়ন করার প্রস্তাবকে আমরা সমর্থন জানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান একই ব্যক্তি হলে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দলীয়করণ কিভাবে রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তা আমরা অতীতে বহুবার দেখেছি।’
তিনি বলেন, বিএনপি উপস্থাপিত ৩১ দফার চতুর্থ পয়েন্টে আইনসভা, মন্ত্রিসভা, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গীকার করা হয়েছে, তার সঙ্গে এই প্রস্তাব সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ।’
বিমান দুর্ঘটনায় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ মুলতবি : রাজধানীর উত্তরায় বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দিনের পরবর্তী অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করা হয়।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ শোকবার্তা পাঠ করেন। এরপর নিহত সদস্যের আত্মার মাগফিরাত কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। কমিশনের পক্ষ থেকে আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করা হয় এবং তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়। কমিশনের সভায় উপস্থিত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সদস্যরা বিশেষ প্রার্থনায় অংশ নেন।
আজ সকাল সাড়ে ১০টায় আবারও এই সংলাপ বসবে বলে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

আদালতের নির্দেশে গোপালগঞ্জে তিনজনের মরদেহ উত্তোলন
- নিরীহরা যাতে হয়রানির শিকার না হয় : বিএনপি
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

আদালতের নির্দেশে গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে গোপালগঞ্জ পৌর কবরস্থান থেকে ইমন তালুকদার ও রমজান কাজীর লাশ এবং টুঙ্গিপাড়ার পাটগাতী থেকে সোহেল কাজীর লাশ উত্তোলন করা হয়।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মীর মো. সাজেদুর রহমান বলেন, নিহতের ঘটনায় মামলার বাদীরা গত রবিবার আদালতে নিহতের সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্তের জন্য লাশ উত্তোলনের আবেদন করলে আদালত লাশ উত্তোলনের আদেশ দেন। পরবর্তী সময়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল মুন্সী ও রন্টি পোদ্দারের উপস্থিতিতে নিহত রমজান কাজী, ইমন তালুকদারের লাশ গোপালগঞ্জের গেটপাড়া পৌর কবরস্থান থেকে উত্তোলন করা হয়।
এদিকে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মারুফ দস্তগির সোহেল রানা মোল্লার বাড়ির পারিবারিক কবরস্থান থেকে লাশ উত্তোলন করে। পরে তিনটি লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্তের জন্য গোপালগঞ্জ আড়াই শ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। এ ছাড়া অন্য দুজনের মধ্যে দীপ্ত সাহার মরদেহ সৎকার ও রমজান মুন্সীর মরদেহের ময়নাতদন্ত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করা হয়।
গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবান : গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাকর্মী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় কোনো নিরীহ শান্তিপ্রিয় নাগরিক যাতে হয়রানি না হয়, সেদিকে প্রশাসনের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছে জেলা বিএনপি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা বিএনপির আহবায়ক শরীফ রফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, গত বুধবার গোপালগঞ্জ পৌর পার্কে এনসিপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলা বা থানায় হামলার ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপি তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে। আগামীতে যেকোনো নিবন্ধিত বৈধ রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ ও মিটিং-মিছিলে যাতে কোনো অপশক্তি কোনো প্রকার আক্রমণ বা বাধার সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য জেলা প্রশাসকসহ সব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে সজাগ দৃষ্টি রাখার অনুরোধ রইল।
তিনি বলেন, ঘটনার দিন সমাবেশ শুরুর আগে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধঘোষিত অঙ্গসহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এনসিপির সমাবেশ পণ্ড করতে সকাল থেকে গোপালগঞ্জ শহরে আসার সব সড়কের পাশে থাকা গাছ কেটে সড়ক অবরোধ করে। সেই সঙ্গে কর্তব্যরত সরকারি কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদের মারপিট, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে জনমনে ভীতির সৃষ্টি করে। এ ছাড়া সরকারি স্থাপনায় হামলা, ও ভাঙচুর করে এবং গোপালগঞ্জ জেলা সদরে থাকা বিএনপি নেতাদের বেশ কয়েকটি তোরণ ভাঙচুর করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট কাজী আবুল খায়ের, বিএনপি নেতা ডা. কে এম বাবর, অ্যাডভোকেট তৌফিকুল ইসলামসহ বিএনপি ও সহযোয়ী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।