সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে চালের উৎপাদন হয়েছে প্রায় চার কোটি সাত লাখ টন। কিন্তু মার্কিন কৃষি বিভাগ বলছে, বাংলাদেশে চালের উৎপাদন ৩৭ লাখ টন বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছে। গত মৌসুমে চালের প্রকৃত উৎপাদন ছিল তিন কোটি ৭০ লাখ টন। শুধু চাল নয়, প্রায় প্রতিটি কৃষিশস্যের ক্ষেত্রে উৎপাদনের তথ্য বাড়িয়ে দেখানোর প্রবণতা রয়েছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের হিসাব নিয়ে বিবিএস
দেশে সব ধরনের কৃষিশস্যের উৎপাদন ১০ কোটি টন!
সাইদ শাহীন

রাজধানীসহ সারা দেশে চড়া দামে আলু বিক্রি হতে দেখা গেলেও সরকারের তথ্যে বলা হচ্ছে, পণ্যটির উৎপাদন কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। নানা সংকট ও প্রতিবন্ধকতার কারণে পাটের আবাদ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু সেই পণ্যটির উৎপাদনও ১৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে বলে জানিয়েছে বিবিএস।
গত দুই বছর বাংলাদেশকে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে সব ধরনের শস্যের উৎপাদন ছাড়িয়েছে ১০ কোটি আট লাখ টন।
মোহাম্মদ শফিকুল আলম বলেন, ‘আমাদের বলা হচ্ছে আলুর উৎপাদন এত টন হয়েছে।
গত সরকার দেশকে ১৯৭৪ সালের পরিস্থিতির মধ্যে রেখে গেছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘ওই সময় বলা হয়েছিল চাল আছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে চাল সরকারের কাছে ছিল না। উল্টো ওই সময়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগের নেতারা চাল অবৈধভাবে মজুদ করেছিল। ফলে দেশের ইতিহাসে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। খাদ্য নিয়ে এত বড় বিপর্যয় আর বাংলাদেশে আসেনি। বর্তমানে চালের তথ্য যেটি বলা হচ্ছে সেটি আসলে সঠিক তথ্য নয়। ফলে বর্তমানে আমরা এমন জায়গায় আছি যে সরকার হিমশিম খাচ্ছে। তবে প্রকৃত তথ্যটা কী, সেটা জেনে সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করছে। এ জন্য চালের আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ভোক্তা ও কৃষককে বাঁচাতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আগের সরকারের কাঠামোগত সব ধরনের কার্যক্রম সংস্কার করা হবে।’
বিবিএস বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিভিন্ন শস্যের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৩ শতাংশ। পাটের উৎপাদনে বড় ধরনের বৃদ্ধি ছাড়াও ধানের উৎপাদন বেড়েছে ৪.০১ শতাংশ। ভুট্টা ৬.৮৭ শতাংশ, আলু ১.৬২ শতাংশ এবং ফলজাতীয় শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ৬.৪৯ শতাংশ। মোট উৎপাদনের এই ছয় জাতীয় কৃষিপণ্যের অবদান প্রায় সাড়ে আট লাখ টন বা মোট উৎপাদনের প্রায় ৮৪ শতাংশ। তবে একক পণ্য হিসেবে ধান-চালের উৎপাদন এখনো শীর্ষে রয়েছে। মোট উৎপাদনে ধানের অবদান প্রায় ৬০ শতাংশ। এ ছাড়া আলুর উৎপাদন এক কোটি ছয় লাখ টন এবং ভুট্টার উৎপাদন প্রায় ৪৯ লাখ টন হয়েছে। দেশে সব ধরনের ফলের উৎপাদন ৬০ লাখ টন ছাড়িয়েছে বলে জানাচ্ছে বিবিএস।
এ ছাড়া গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের সবজি, আখ ও চিনিজাতীয়, ডালজাতীয়, তেলজাতীয়, মসলাজাতীয়, তুলা, মিষ্টি আলু, ঘাস ও তুঁত, পান ও সুপারি, তামাক, চা, ফুলজাতীয় শস্যের উৎপাদনকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এই কয়েকটি পণ্যের উৎপাদন এখনো চূড়ান্ত করা যায়নি। তবে কৃষিপণ্যের উৎপাদন তথ্য বাড়িয়ে দেখানো এখনই বন্ধ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এ বিষয়ে সাবেক কৃষিসচিব আনোয়ার ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কয়েক দশক ধরে কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়িয়ে দেখানোটা একটি অপসংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। সরকারকে এসব বিকৃত তথ্য দিয়ে খুশি রাখা হয়। সরকারের সংস্থাগুলো কৃষি বিষয়ে যে তথ্য দিচ্ছে সেগুলো মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কৃষিপণ্যের অতিরঞ্জিত তথ্য বন্ধ করতে প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন। আবার দেশে উৎপাদন বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া হলেও বিপণনে নজর দেওয়া হচ্ছে না। ফলে কৃষক তার ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। তাই উৎপাদনের তথ্য যেমন সঠিক রাখতে হবে তেমনি কৃষকের পণ্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।’
সম্পর্কিত খবর

রাস্তা থেকে মাটি সরানোর কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা


কুড়িগ্রামে জমি নিয়ে সংঘর্ষে ৩ জন নিহত
- চার জেলায় ৪ লাশ উদ্ধার
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। এ ছাড়া বাগেরহাটে যুবদল নেতাকে হত্যার অভিযোগসহ পাঁচ জেলায় পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার এসব ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ভূন্দুর চর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত তিনজন হলেন আনোয়ার হোসেনের ছেলে নুরুল আমিন (৪০), গোলাম শহিদের ছেলে বলু মিয়া (৫৫) ও ফুলবাবু (৫০)। তাঁরা সবাই জমি নিয়ে বিরোধে থাকা শাহাজাহান মিয়ার পক্ষের লোক বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বহুদিন ধরে ওই এলাকার শাহাজাহান মিয়া ও রাজু মিয়ার মধ্যে ৫০ শতক জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল।
রৌমারী থানার ওসি লুৎফর রহমান বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের অন্য কয়েকটি জেলায়ও পৃথক ঘটনায় আরো পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
বাগেরহাটে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মারধরে সোহাগ সরদার (২৭) নামের যুবদলের এক নেতার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার রাতে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ময়মনসিংহের ভালুকায় বিয়ের মাত্র ছয় দিনের মাথায় এক নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত রূপা (১৮) তাঁর স্বামীর সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন। স্বামী দাবি করেছেন, রূপা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা নিয়েছে।
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় যমুনা নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মানকিদাহ এলাকায় নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার হয়েছে টাঙ্গন নদী থেকে। মৃত ব্যক্তি হলেন দিনাজপুর জেলার বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম।

বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি ২৮৭ যাত্রী নিয়ে নিরাপদে চট্টগ্রামে
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

দুবাই থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় উড্ডয়নের পরপরই চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইট বিজি ১৪৮ চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৮৭ জন যাত্রী নিয়ে অবতরণ করেছিল। এটি ৮টা ৩৭ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত কারণে ফ্লাইটটি পুনরায় ফিরে এসে ৮টা ৫৮ মিনিটে শাহ আমানত বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল জানান, বিমানটি বিমানবন্দরের বে নম্বর-৮-এ অবস্থান করছে। ফ্লাইটের সব যাত্রীর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অন্য একটি ফ্লাইট বিজি ১২২-এ অনবোর্ড সম্পন্ন হয়। সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
বিমান কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুবাই থেকে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইটটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল বলেন, বিমানের ত্রুটি সারানোর কাজ চলছে। যাত্রীরা নিরাপদে আছেন।

রাশিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত, ৫০ আরোহীর সবাই নিহত
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

রাশিয়ায় ৫০ আরোহী নিয়ে একটি অ্যান-২৪ যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রাথমিক খবরে জানানো হয়েছে, কেউই বেঁচে নেই। সিভিল ডিফেন্স, জরুরি ও দুর্যোগবিষয়ক মন্ত্রণালয় গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছে, অ্যান-২৪ বিমানটি পরিচালনা করছিল সাইবেরিয়াভিত্তিক বিমান সংস্থা আঙ্গারা। প্রথমে বিমানটি রাডার থেকে হারিয়ে যায়।
ইন্টারফ্যাক্স নিউজ এজেন্সি বলেছে, চীনের কাছাকাছি আমুর অঞ্চলে বিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।
বার্তা সংস্থা তাসের খবর অনুযায়ী, আশপাশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের মতো দৃষ্টিসীমা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসে। এ কারণে বিমানটি অবতরণের চেষ্টা করে থাকতে পারেন ক্রু।
স্থানীয় জরুরিবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিমানটি গন্তব্যের কাছাকাছি থাকাকালে হঠাৎ করে রাডারের বাইরে চলে যায়। গভর্নর অরলোভ টেলিগ্রামে লিখেছেন, প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে বিমানে ৪৩ জন যাত্রী ছিলেন।
উড়োজাহাজটিতে পাঁচ শিশুসহ ৪৩ যাত্রী ও ছয় ক্রু ছিলেন বলে আমুর অঞ্চলের গভর্নর ভাসিলি অরলভ আগেই জানিয়েছিলেন। যেখানে উড়োজাহাজটি ‘রাডার থেকে হারিয়ে যায়’, সেটি রাশিয়ার তাইগা বনভূমি অঞ্চলে পড়েছে।
১৯৫০-এর দশকে নির্মিত আন্তোনভ আন-২৪ উড়োজাহাজ সাধারণত যাত্রী ও মালপত্র পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। এখন পর্যন্ত এই মডেলের হাজারের বেশি উড়োজাহাজ তৈরি হয়েছে। রাশিয়ায় এখন সীমিত পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে এ ধরনের উড়োজাহাজ ব্যবহৃত হয় বলে জানিয়েছে আরটি।
সরকারি বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অবতরণের সময় পাইলটের ভুল এবং খারাপ দৃশ্যমানতা এই দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। সূত্র : রয়টার্স