<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মুয়াজা বিনতে আবদুল্লাহ আল আদাবিয়া (রহ.) ছিলেন ইসলামের সোনালি যুগের একজন বিখ্যাত নারী মুহাদ্দিস। ১২ হিজরির শেষের দিকে তিনি বসরায় জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই ইলমের প্রতি ছিল তাঁর অত্যধিক ভালোবাসা। বিশেষভাবে হাদিসের জ্ঞানার্জনের প্রতি ছিল অন্য রকম আগ্রহ। বিখ্যাত এই নারী মুহাদ্দিস আলী, আয়েশা ও হিশাম বিন আমের আল আনসারি (রা.)-এর মতো জগদ্বিখ্যাত হাদিসবিশারদদের থেকে হাদিসের জ্ঞান অর্জন করেছেন। সে সময় হাদিসের জ্ঞানার্জনকারিণী নারীদের মধ্যে তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠত্বের আসনে। হাদিস বিষয়ে তাঁর এই খ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। দেশ-বিদেশের অনেক ছাত্র তাঁর কাছে হাদিস শেখার জন্য ভিড় জমাতেন। তাঁদের মধ্যে আবু কিলাবা জারমি, ইয়াজিদ রিশক, আসেম আহওয়াল, আইয়ুব, উমর বিন জার, ইসহাক বিন সুয়াইদ (রহ.) প্রমুখ যুগশ্রেষ্ঠ মহাদ্দিস ছিলেন উল্লেখযোগ্য। তাঁরা সবাই এই নারী মুহাদ্দিস থেকে হাদিস বর্ণনা করেন। এমনকি হাদিসের নির্ভরযোগ্য ও প্রসিদ্ধ গ্রন্থ সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম ও অন্যান্য সুনান ও মুসনাদ গ্রন্থেও তাঁর সূত্রে বর্ণিত হাদিসের উল্লেখ রয়েছে। হাদিসবিষয়ক শ্রেষ্ঠ ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মায়িন ও ইবনে হিব্বান (রহ.) তাঁকে ছিকাহ বা হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য নারী হিসেবে গণ্য করেছেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা ৫/৩০৩; তাহজিবুল কামাল ৮/৫৭৮)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হাদিস ও ইলমের ময়দানে প্রাজ্ঞতা লাভের পাশাপাশি তিনি হয়ে ওঠেন বসরার প্রসিদ্ধ আবেদা তথা আল্লাহর একনিষ্ঠ ইবাদতকারিণী। তিনি বলতেন, ওই চোখের জন্য আমি বিস্ময়বোধ করি, যে চোখ ঘুমায়। অথচ সে জানে কবরের অন্ধকারে  দীর্ঘ সময় ঘুমিয়েই থাকতে হবে। তাঁর একান্ত সেবিকা বর্ণনা করেন, মুয়াজা (রহ.) সারা রাত জেগে নামাজ পড়তেন। যখন তাঁর চোখের পাতা ঘুমে ভারী হয়ে আসত, তখন উঠে ঘরের চারপাশে ঘুরে বেড়াতেন তিনি। সম্বোধন করে বলতেন, হে আমার আত্মা! সামনে ঘুমের সময় আসবে। অবশ্যই তুমি একদিন মৃত্যুবরণ করবে। কবরে তোমার দীর্ঘ নিদ্রা হয়তো সুখের হবে, নয়তো দুঃখের। এভাবেই তিনি সকাল করতেন। এরপর সকাল হলে তিনি বলতেন, হয়তো এটাই ওই দিন আমি মৃত্যুবরণ করব। তিনি আর ঘুমাতেন না। এভাবে সন্ধ্যা হয়ে যেত। রাত হলে আবার বলতেন, এটাই আমার শেষ রাত। যে রাতে আমি মৃত্যুবরণ করব। এভাবে আবারও তিনি সকাল পর্যন্ত ঘুমাতেন না। আর শীতকালে হালকা পোশাক পরিধান করতেন। যেন ঠাণ্ডায় তাঁর ঘুম না আসে। (আত তাহাজ্জুদ ওয়া কিয়ামুল্লাইল,</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বর্ণনা : ৭৮ ও ৭৯)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি নিজেই বলেন, ৭০ বছর যাবৎ দুনিয়ায় আমি অবস্থান করছি, কিন্তু কখনো এতে চক্ষু শীতলকারী কিছু দেখিনি। (কিতাবুছ ছিকাত : ৩/৮৩) </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিখ্যাত এই নারী মোহাদ্দিস সে সময়ের তাবেঈদের নেতা ছিলাহ বিন উশাইম (রহ.)-এর স্ত্রী ছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁদের একটি নেককার পুত্রসন্তানও দান করেছিলেন। স্বামী-স্ত্রী আর সন্তান মিলে ছিল চক্ষু শীতলকারী এক আদর্শ পরিবার। পিতা-পুত্র একই সঙ্গে জিহাদের ময়দানে শাহাদাতের সৌভাগ্য লাভ করেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ প্রসঙ্গে ইমাম আহমদ তাঁর </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আজ জুহদ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নামক কিতাবে বর্ণনা করেন, ছিলাহ বিন উশাইম (রহ.) এক যুদ্ধে ছিলেন। সঙ্গে ছিল তাঁর ছেলে সাহবা। তিনি বলেন, হে আমার ছেলে! সামনে বাড়ো এবং লড়াই করো, যেন আমি তোমার ব্যাপারে সওয়াবের আশা রাখতে পারি। ছেলে জিহাদের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং শহীদ হওয়া পর্যন্ত লড়াই করল। অতঃপর তিনিও প্রাণপণ যুদ্ধ করলেন এবং শহীদ হয়ে গেলেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মুয়াজা (রহ.)-এর কাছে তাঁদের শাহাদাতের খবর পৌঁছল। তিনি একই সঙ্গে নিজের স্বামী ও সন্তানকে হারিয়েছেন। তাই নারীরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এলো। তিনি তাদের বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তোমাদের অভিনন্দন! যদি তোমরা আমাকে সুসংবাদ দিতে আসো তাহলে তোমাদের ধন্যবাদ। আর যদি অন্য কোনো কারণে আসো তবে ফিরে যাও।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">(আজ জুহদ, বর্ণনা : ১১৫৫)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইমাম ইবনুল জাওজি (রহ.) বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে তিনি কখনো বিছানায় পিঠ লাগাননি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">(আত তাহাজ্জুদ ওয়া কিয়ামুল্লাইল,</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বর্ণনা : ৭৮,৭৯)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি বলতেন, আমি শুধু আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য বেঁচে থাকতে চাই, যেন আমাকে জান্নাতে আবু সাহবা ও তাঁর সন্তানের সঙ্গে মিলিয়ে দেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">(সিয়ারু আলামিন নুবালা : ৫/৩০৩)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যুগশ্রেষ্ঠ এই মহীয়সী নারী ৮৩ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা : ৫/৩০৩)</span></span></span></span></p>