<p>জীবনের প্রতিটি কাজ একটি নীতি-আদর্শ অনুসারে পরিচালিত হওয়াকে আদব বা শিষ্টাচার বলা হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে সেই আদব বা শিষ্টাচার অনুযায়ী চলতে হয়। শৃঙ্খলা অনুসারে চললে সমাজে ভারসাম্য বজায় থাকে। ইসলামী শিষ্টাচারের সর্বোত্তম উদাহরণ হলেন মহানবী (সা.)। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী।’</p> <p>(সুরা : কলম, আয়াত : ৪)</p> <p>শিষ্টাচারের বিভিন্ন দিক কোরআনে বর্ণিত হয়েছে। শিষ্টাচারের শিক্ষা দিয়ে এক আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি ক্ষমার নীতি গ্রহণ করো। লোকদের সত্কাজের আদেশ দাও এবং মূর্খদের এড়িয়ে চলো।’</p> <p>(সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৯৯)</p> <p>এখানে যাপিত জীবনে ইসলামী শিষ্টাচার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো—</p> <p>দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে শিষ্টাচার : মানুষের সঙ্গে ওঠাবসা, পানাহার, বসবাস ও সহাবস্থান সমাজজীবনের মৌলিক কাজ। এসব প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ডে শিষ্টাচারের প্রমাণ পাওয়া যায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনচরিতে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, যখন নবী করিম (সা.) হাঁচি দিতেন, তিনি তাঁর মুখমণ্ডলে হাত বা কাপড় দ্বারা আবৃত করতেন এবং তা দ্বারা তাঁর স্বর বন্ধ করতেন।</p> <p>(আবু দাউদ, হাদিস : ৫০২৯)</p> <p>বিকট আওয়াজে হাসা, চিত্কার ও হৈ-হুল্লোড় করা ইত্যাদি কোনো শালীন মানুষের কাজ নয়। পক্ষান্তরে মৃদু বা মুচকি হাসি অপরের মনে বিরক্তির উদ্রেক করে না, বরং আনন্দ দেয় এবং ভালোবাসা সৃষ্টি করে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে অট্টহাসি করতে দেখিনি, যাতে তাঁর জিহ্বার তালু দেখা যায়। তিনি মৃদু হাসতেন।</p> <p>(বুখারি, হাদিস : ৪৮২৮)</p> <p>পরিপাটি থাকা : ইসলাম মানুষকে সদা পরিপাটি থাকতে শেখায়। আতা বিন ইয়াসার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) মসজিদে অবস্থানকালে একটি লোক মাথা ও দাড়ির কেশ অবিন্যস্ত অবস্থায় সেখানে প্রবেশ করল। রাসুলুল্লাহ (সা.) হাত দ্বারা তার দিকে ইশারা করলেন যেন সে তার মাথা ও দাড়ির কেশ বিন্যাস করে। সে ব্যক্তি তা করে ফিরে এলো। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, শয়তানের মতো তোমাদের কোনো ব্যক্তির এলোকেশে আসার চেয়ে এটা কি উত্তম নয়? (মুওয়াত্তা মালেক; সিলসিলাহ সহিহাহ, হাদিস : ৪৯৩)</p> <p>পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা : পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা শিষ্টাচারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’</p> <p>(সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২২২)</p> <p>অন্যত্র তিনি বলেন, ‘সেখানে এমন সব লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পরিশুদ্ধ হওয়াকে ভালোবাসে। বস্তুত, আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’</p> <p>(সুরা : তাওবা, আয়াত : ১০৮)</p> <p>লাজুকতা : লজ্জাশীলতা সভ্যতা ও মার্জিত রুচির পরিচায়ক। রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন লজ্জাশীলতার মূর্ত প্রতীক। তিনি বলেন, লজ্জাশীলতা ঈমানের অঙ্গ। (বুখারি, হাদিস : ২৪)</p> <p>জনসাধারণের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার : জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করা ও ভালো কথা বলা ভদ্র ও মার্জিত রুচির পরিচায়ক। সদাচরণ মানুষকে কাছে টানে। সদাচরণের বাস্তব উদাহরণ ছিলেন মহানবী (সা.)। এ ব্যাপারে আল্লাহর ঘোষণা, ‘আর আল্লাহর রহমতেই তুমি তাদের প্রতি (অর্থাৎ স্বীয় উম্মতের প্রতি) কোমল হৃদয় হয়েছ। যদি তুমি কর্কশভাষী ও কঠোর হৃদয়ের হতে, তাহলে তারা তোমার পাশ থেকে সরে যেত।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)</p> <p>সালাম বিনিময় : শিষ্টাচার সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে সবার আগে আসে পারস্পরিক সম্ভাষণের বিষয়টি। এই সালামের ব্যাপারে প্রত্যেককে অগ্রণী হতে হবে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে সালামের জবাব দিতে হবে। ইসলামে পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।</p> <p>(বুখারি, হাদিস : ১২)</p> <p>হাসিমুখে কথা বলা ও রাগ না করা : মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলা উচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) সর্বদা মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতেন। একজন হাস্যোজ্জ্বল মানুষের সঙ্গে যে কেউ কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। সেই সঙ্গে রাগ পরিহার করবে। কেননা ক্রোধান্বিত হয়ে মানুষ বেশি ভুল করে থাকে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি নবী করিম (সা.)-এর কাছে জিজ্ঞেস করল, আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বলেন, তুমি রাগ কোরো না। লোকটি কয়েকবার কথাটা পুনরাবৃত্তি করলে নবী করিম (সা.) প্রত্যেকবারই বলেন, রাগ কোরো না। (বুখারি, হাদিস : ৬১১৬)</p> <p>প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণ করা : প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণ ও ভালো ব্যবহার করা একজন মুসলমানের অন্যতম কর্তব্য। সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা উজাড় করে দিয়ে প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করা ও সদ্ভাব বজায় রাখা অপরিহার্য। মহানবী (সা.) বলেছেন, জিবরিল (আ.) আমাকে প্রতিবেশীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার জন্য এত বেশি উপদেশ দিতে থাকেন যে আমি ভেবেছিলাম হয়তো প্রতিবেশীকে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী করে দেবেন।</p> <p>(বুখারি, হাদিস : ৬০১৪)</p> <p>অন্যকে ক্ষতি থেকে রক্ষার চেষ্টা করা : কারো মধ্যে কোনো মন্দাচার দেখলে ব্যক্তিগতভাবে হিকমতের সঙ্গে বলতে হবে, যাতে সে সংশোধন হয়ে যায়। আর অন্যকে ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য চেষ্টা করা। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, এক মুমিন অপর মুমিনের জন্য আয়নাস্বরূপ। এক মুমিন অন্য মুমিনের ভাই। তারা একে অন্যকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং তার অনুপস্থিতিতে তাকে রক্ষা করে। (আবু দাউদ : ৪৯১৮)</p> <p>কুধারণা পরিহার করা : অন্য মুসলিম ভাইয়ের প্রতি সুধারণা পোষণ করতে হবে—এটাই ইসলামের শিক্ষা। তার প্রতি অযথা কুধারণা পোষণ করা যাবে না। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা বেশি ধারণা করা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা কোনো কোনো ধারণা পাপ।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১২)</p> <p>অন্যকে সাধ্যমতো সাহায্য-সহযোগিতা</p> <p>করা : এক মুসলিম অন্য মুসলমানের ভাই। তাই ভাইকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করবে—এটা ইসলামের শিক্ষা। এর ফলে আল্লাহর সাহায্য মিলবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণে নিয়োজিত থাকে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণে ব্যস্ত থাকেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের একটি সমস্যা দূর করবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার সমস্যাগুলোর একটি সমস্যা দূর করে দেবেন। (বুখারি, হাদিস : ২৪৪২)</p> <p> </p> <p> </p>