<p>করোনাকালে গোটা দুনিয়ার মানুষ ঘরবন্দি। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পারিবারিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। অথচ মুসলিম দেশগুলোতে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এর কারণ হলো, মুসলমানরা আগে থেকেই ঘর ও পরিবারবান্ধব। কাজেই ঘরমুখী জীবন তাদের হুমকির মুখে ঠেলে দেয়নি।</p> <p>পরিবার মুসলিম সমাজের প্রাণকেন্দ্র। সামাজিক সম্পর্ক সৃষ্টি ও বৃদ্ধি হয় পরিবারকে কেন্দ্র  করে। মানবজাতির প্রথম ঐক্যের ভিত্তি হলো পরিবার। পৃথিবীর প্রথম মানব আদম (আ.) ও তাঁর স্ত্রী হাওয়া (আ.)-কে কেন্দ্র করে প্রথম পরিবার গড়ে উঠেছিল জান্নাতে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম! তুমি তোমার স্ত্রীকে নিয়ে জান্নাতে বসবাস করো। যা ইচ্ছা তা খাও, কিন্তু এ গাছের কাছেও যেয়ো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৩৫)</p> <p>পরিবারের ভিত্তি স্থাপিত হয় একজন পুরুষ ও একজন নারীর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে—যখন তারা একসঙ্গে জীবনযাপন শুরু করে। পরিবার অফুরন্ত সুখের উৎস। ইসলামে ছোট-বড়, একান্নবর্তী-একক সব ধরনের পরিবার গঠনের সুযোগ রয়েছে। এখানে অধিকারের চেয়ে মানবিকতা ও নৈতিকতার গুরুত্ব বেশি।</p> <p>পারিবারিক জীবনকে অধিকারের কষাকষিতে না ফেলে ইসলাম স্বামী-স্ত্রীকে ভালোবাসা ও সৌহার্দপূর্ণ জীবনযাপনের নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা নারীদের সঙ্গে উত্তম উপায়ে জীবন যাপন করো...।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৯)</p> <p>অন্য আয়াতে এসেছে, ‘আল্লাহর একটি নিদর্শন এই যে তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাকতে পারো এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা রুম, আয়াত : ২১)</p> <p>পরিবারকেন্দ্রিক গড়ে ওঠা উন্নত সংস্কৃতির কারণে পশ্চিমা দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ মানসিক দিক থেকে অনেক সুখী।</p> <p>সুখের উৎস হওয়ার পাশাপাশি পরিবারের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে শিশুর লালন-পালনে। শিশুর সামাজিকীকরণ ও প্রতিপালনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান পরিবার। পারিবারিক শিক্ষা ও আদর্শ শিশুর ভবিষ্যতের জীবন নির্ধারণ করে। আধুনিক জীবনব্যবস্থা পারিবারিক বন্ধন হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। কথিত ব্যক্তিস্বাধীনতা, প্রযুক্তিনির্ভর ‘মিডনাইট কালচার’ পরিবারের সদস্যকে পরস্পর থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে।</p> <p>মুসলমানদের এটা ভুলে গেলে চলবে না যে ইসলামী সমাজব্যবস্থায় জীবনের ধারণা সামষ্টিক। রাসুলুল্লাহ (সা.) মুসলিম উম্মাহকে একটি শরীরের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়া ও সহানুভূতির দিক থেকে মুমিনরা একটি দেহের মতো; যখন তার একটি অঙ্গ আক্রান্ত হয় তখন তার গোটা দেহ উত্তাপ ও অনিদ্রায় ভোগে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৮০)</p> <p>সামষ্টিক এই ধারণা থেকেই ইসলাম পরিবার ও সমাজে ভালো কাজের চর্চা ও মন্দ কাজের প্রতি ঘৃণা তৈরির নির্দেশ দিয়েছে। সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষায় সামাজিক অনুশাসনের কথা বলেছে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি—যাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে মানুষের কল্যাণে। তোমরা সৎ কাজে আদেশ করবে, অসৎ কাজে নিষেধ করবে এবং আল্লাহর ওপর ঈমান আনবে।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)</p> <p>কাজেই করোনাকালে আমরা ঘর ও পরিবারবান্ধব হওয়ার শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি।</p>