<p>বর্তমান বিশ্বের অন্যতম আলোচিত ও নান্দনিক স্থাপনা মক্কা রয়াল ক্লক টাওয়ার (আবরাজ আল বায়েত)। পবিত্র কাবাঘরের দক্ষিণ প্রবেশপথ সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত এটি। শৈলী, সৌন্দর্য ও আভিজাত্যে পৃথিবীর অন্যতম আকর্ষণীয় স্থাপনা মক্কা ক্লক টাওয়ার। ৭৬ তলাবিশিষ্ট এই ভবনের উচ্চতা এক হাজার ৯৭২ ফুট, যার শীর্ষে স্থাপিত হয়েছে ১৩০ ফুট আয়তনের রাজকীয় ঘড়ি। ১৭ কিলোমিটার দূর থেকে সময় গণনা করা যায় এই ঘড়ির। চন্দ্র পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, মুসলিম ঐতিহ্য সংরক্ষণে জাদুঘর এবং হজ ও ওমরাহ পালনকারী পুণ্যার্থীদের জন্য অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত তিন হাজার কক্ষ রয়েছে এই টাওয়ারে।</p> <p>সৌদি আরবের খ্যাতনামা নির্মাণ প্রতিষ্ঠান বিন লাদেন গ্রুপ ২০০৪ সালে এই টাওয়ারের নির্মাণকাজ শুরু করে। ২০১১ সালে নির্মাণকাজ শেষ হয় এবং ২০১২ সালে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। সর্বমোট স্পেস হচ্ছে এক কোটি ৬১ লাখ ৫০ হাজার বর্গফুট, যা আরব আমিরাতের দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তিন নম্বর টার্মিনালের সমান।</p> <p>৮০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই টাওয়ারে ১০ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে সক্ষম, এমন বিশাল প্রার্থনাকক্ষ রয়েছে। টাওয়ারের সেভেন স্টার হোটেল প্রতিবছর পবিত্র হজ ও ওমরাহ পালন উপলক্ষে মক্কা নগরী পরিভ্রমণকারী ৫০ লাখ পুণ্যার্থীর আবাসন সুবিধা প্রদান করে থাকে। আবরাজ আল বায়েত টাওয়ারে প্রথম চারতলা শপিং মল এবং নিচে রয়েছে এক হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা। টাওয়ারের একেবারে ওপরতলায় দুটি হেলিকপ্টার অবতরণের জন্য রয়েছে প্রশস্ত হেলিপ্যাড।</p> <p>এক লাখ মানুষ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই টাওয়ারের শীর্ষে চারদিক দিয়ে দেখা যায় এমন একটি ঘড়ি স্থাপন করা হয়েছে, যার প্রতিটির আয়তন ১৯ হাজার ৮৮১ বর্গফুট। জার্মানির প্রিমিয়ার কম্পোজিট টেকনোলজিস নামক কম্পানি ঐতিহাসিক এই ঘড়ির ডিজাইন তৈরি করে। লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার ও ইস্তাম্বুলের কেভাহির মল টাওয়ার ঘড়ির চেয়ে মক্কা টাওয়ার ঘড়ির আয়তন ও নান্দনিকতা অনেক বেশি।</p> <p>ঘড়ির চারপাশ আলোকিত করার জন্য ২০ লাখ LED (Light Emitting Diode) বাতি, আল্লাহু আকবার লিখিত বিপুলসংখ্যক ক্যালিগ্রাফি সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ২১ হাজার সাদা ও সবুজ বাতি ঘড়ির উপরাংশে স্থাপন করা হয়েছে, যাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় ফ্ল্যাশ সংকেত দিতে পারে। আকাশের দিকের ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত আলোাকরশ্মি প্রক্ষেপণের জন্য ১৬ ধরনের ভার্টিক্যাল বাতি রয়েছে। ঘড়ির চারপাশের সম্মুখ অংশে ১০০ কোটি খণ্ড গ্লাস মোজাইক বসানো হয়েছে। ঘড়ির ওপরে রয়েছে ৯৩ মিটার দীর্ঘ অগ্রচূড়া এবং স্বর্ণালি মোজাইক ও ফাইবার গ্লাসের তৈরি ৩৫ টন ওজনের নতুন চাঁদ।</p> <p>টাওয়ারের নিচ থেকে ওপরে বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বহু লাউড স্পিকার স্থাপন করা হয়েছে, যা সাত কিলোমিটার দূর পর্যন্ত আজান ও নামাজের ধ্বনি প্রচার করতে পারে। রাতের বেলা ২১ হাজার বাতি ৩০ কিলোমিটার এলাকাকে আলোকোজ্জ্বল করে তোলে। শ্বেত ও সবুজ বাতির বিশেষ আলো প্রক্ষেপণ দেখে বধির হাজিরা নামাজের সময় নির্ণয় করতে পারেন।</p> <p>মক্কা টাওয়ারে ঘড়ি স্থাপনের একটি বিশেষ কারণ হলো, ১২৬ বছরের পুরনো গ্রিনিচ মিন টাইম (GMT) পরিবর্তন করে মক্কা মিন টাইম চালু করা। ২০০৮ সালে কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে মুসলিম পণ্ডিত ও বিজ্ঞানীরা মত প্রকাশ করেন যে পৃথিবীর মূল মধ্যরেখা পবিত্র মক্কার ওপর দিয়ে প্রলম্বিত। ফলে মক্কা পৃথিবীর টাইম জোনের কেন্দ্রবিন্দু। এ ছাড়া মক্কা আন্তর্জাতিক ধর্মীয় ও বাণিজ্য নগরী।</p> <p>লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ ওমর গণি এমইএস কলেজ, চট্টগ্রাম</p>