সময় যত গড়াচ্ছে নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে ততই অনিশ্চয়তা বাড়ছে। জটিল হচ্ছে রাজনৈতিক সমীকরণ। দেশের অর্থনীতিতেও অস্বস্তি পরিলক্ষিত হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু পদক্ষেপ নিয়ে বিতর্ক চলমান।
অস্থির অনিশ্চয়তার প্রভাব রাজনীতির সমীকরণে
কাজী হাফিজ

পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশ্লেষকরা যা বলছেন : দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ গতকাল সোমবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার খুব সাংঘাতিকভাবে আমাদের হতাশ করেছে। আমরা মনে করেছিলাম, এই সরকার খুব দ্রুত ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা থেকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে যাত্রা করবে। কিন্তু সেটি করতে গিয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি করেছে। তাদের যদি প্রধান লক্ষ্য থাকত সংস্কার ও নির্বাচন, তাহলে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পথরেখা ধরে তারা এগোতে পারত। প্রথমদিকে মনে হয়েছিল তারা গুড ইনটেনশন নিয়ে সংস্কার চায় এবং সংস্কারের ধারাবাহিকতায় দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে চায়। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, অন্য কোনো উদ্দেশ্য ঢুকে গেছে। তাদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড থেকে আমরা অনুমান করছি, তারা তাদের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চায়। দ্বিতীয় কোনো এজেন্ডা যদি মাঝখানে ঢুকে থাকে, তাহলে সামনে আমাদের জন্য অনেক সমস্যা অপেক্ষা করছে। আর তা যদি না হয়, এই সরকার যদি সত্যিই মনে করে কিছু সংস্কার করেই নির্বাচন দেবে, তাহলে তাতেও অনেক কালক্ষেপণ হচ্ছে। কালক্ষেপণটা যদি এমন হয়, শেষ মুহূর্তে যদি বলে, সংস্কারের জন্য আরো সময় দরকার, তখন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চরম অনাস্থা ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টির আশঙ্কা আছে। যেভাবে সংস্কার প্রক্রিয়ার কাজগুলো চলছে, এটা এত দিন তো লাগার কথা না। এতে মনে হচ্ছে, তারা কালক্ষেপণ করতে চাচ্ছে। দেরি করে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার মধ্যেও কেউ হয়তো কিছু গেইন করতে চাচ্ছে। কোনো পক্ষ হয়তো চাচ্ছে নির্বাচনকে বিলম্বিত করার লক্ষ্যে দেশে কিছু ক্রাইসিস সৃষ্টি করতে।’
মানবিক করিডর নিয়ে সরকারের অবস্থানের সমালোচনা, পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যর্থতা, অর্থনীতিতে অস্বস্তি—এসব উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ আরো বলেন, দ্রুত নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা না গেলে দেশ স্থিতিশীলতার দিকে এগোবে না। প্রধান উপদেষ্টা আজও (সোমবার) বলেছেন, তিনি আগামী ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যেই নির্বাচন করতে চান। কিন্তু সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের সময় অভ্যুত্থানের স্বপক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর একটিই লক্ষ্য ছিল—ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন। অন্য কিছু বিষয়ে কোনো সমঝোতা ছিল না। গত বছর অক্টোবরের প্রথমদিকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের অপপ্রচার, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের আহবান জানিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর এ ধরনের উদ্যোগ আর দেখা যায়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের আরেকজন শিক্ষক অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন এ ক্ষেত্রে ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চব্বিশের ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে। এ ধরনের পরিবর্তনের পর স্থিতিশীলতা আসতে সময় লাগবে। সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে, সময় দিতে হবে। এখন যদি নির্বাচন দেওয়া হয়, আমার মনে হয় না তাতে সুফল পাওয়া যাবে। ফ্যাসিস্টদের লোকজন এখনো সব জায়গায় বসে আছে। নির্বাচনের আগে এ অবস্থার পরিবর্তন দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে তারপর নির্বাচন দিতে হবে।’
জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা হতেই পারে। সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কম-বেশির কারণে দলগুলোর মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে হয়তো। সবার প্রাপ্তি সমান হলে এটা হয়তো হতো না। আবার ছোট-বড় দল বিবেচনায় সবার প্রাপ্তি সমান হওয়াও সম্ভব না। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে ছোট দলগুলো জোটবদ্ধ হতে পারে এবং তখন সমতা আসতে পারে।
সরকারের কিছু কর্মকাণ্ডের সমালোচনা এবং ম্যান্ডেট প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন বলেন, ‘এই সরকার এক ধরনের বৈপ্লবিক সরকার। বৈপ্লবিক সরকার যেকোনো কাজ করতে পারে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো মানবিক করিডর দেওয়ার বিপক্ষে। এ বিষয়ে আরো স্টাডি এবং সবার সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন আছে। এ বিষয়ে হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত বা কথা বলা ঠিক না।’
তবে লেখক, গবেষক ও বামপন্থী রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমরের মতে এই সরকারের ক্ষমতা সীমিত। সম্প্রতি একটি সংবাদপত্রে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘মৌলিক সংস্কার করতে গেলে সরকারের কিছু ক্ষমতা প্রয়োজন হয়। কিন্তু সে ধরনের ক্ষমতা এই সরকারের নেই। যেমন—সংবিধান সংস্কার একটি অনির্বাচিত সরকার করতে পারে না। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দিয়ে তা করতে হবে। আর তা নির্বাচন ছাড়া সম্ভব না। এই সরকারের অন্যতম কাজ হলো—নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার করে নির্বাচন দেওয়া।’
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঐক্য কেন হতে হবে? বরং এখন দরকার একটি নির্বাচন দিয়ে দেওয়া। নিয়ন্ত্রণের অভাবে দেশে অনেক রকম সমস্যা হচ্ছে। এটা বন্ধ করার একমাত্র উপায় হচ্ছে নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। যত দিন যাচ্ছে ততই শাসনব্যবস্থার ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ আলগা হয়ে যাচ্ছে। ফলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না দিলে সামনের দিনে নৈরাজ্য বেড়ে পরিস্থিত আরো খারাপ হবে। কিন্তু এই সরকারের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, তারা যত দূর সম্ভব টেনে শাসনকাল বাড়াতে চাচ্ছে, এটি ক্ষতিকর।’
রাজনীতিকদের মূল্যায়ন : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের অনেকের মধ্যে নির্বাচন না দিয়ে ক্ষমতা ভোগের পালা দীর্ঘ করার দুরভিসন্ধি আছে। তারাই পরিস্থিতি ঘোলাটে করছে। মানবিক করিডর দেওয়াসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের দূরত্ব দেখে ফ্যাসিস্ট হাসিনার অনুসারীরা রাস্তায় মিছিল বের করার সাহস দেখাচ্ছে। কিন্তু তা সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে পারছে না সরকার।’
ইকবাল হাসান টুকু আরো বলেন, সরকার কিংস পার্টি করেছে। কিংস পার্টির অপকর্মে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সার্বিক বিবেচনায় দেশে একটি ক্রান্তিকাল চলছে। জাতি ভীষণ অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। তবে এখনো বলতে হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে এখনো সময় আছে। তাদের যে কাজ, অতি প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচনের রোডম্যাপ পেলে মানুষ গণতন্ত্র উত্তরণের পথ দেখতে পারবে।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে বলা হয়েছে, ‘অন্তর্বর্তী সরকার কোনো রাজনৈতিক সরকার নয়। তাই তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। এই সরকার নির্বাচনের আয়োজন করার মাধ্যমে তাদের দায়িত্বের পরিসমাপ্তি ঘটাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোনো কোনো উপদেষ্টার বক্তব্য, রাজনৈতিক ভূমিকা, অন্যকে আক্রমণ করে উসকানিমূলক বক্তব্য নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। উপদেষ্টাদের এসব ভূমিকা জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার উপাদান হিসেবে কাজ করবে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা।’ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ গত ১৮ মে সংবাদপত্রে প্রকাশিত তাঁর এক নিবন্ধে এই পরিস্থিতির কথা লিখেছেন।
তিনি আরো লিখেছেন, ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অবাধ সুযোগ লাভ করে। আক্রমণাত্মক, উসকানিমূলক ও পরস্পরকে দোষারোপ করে প্রদত্ত বক্তব্য বিবৃতি ক্রমাগতভাবে রাজনীতিতে বিভেদ ও বিতর্ক সৃষ্টি করছে। সবার প্রত্যাশা ছিল—ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশকে ফ্যাসিবাদের করালগ্রাস থেকে উদ্ধার করে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার দিকে এগিয়ে যাওয়া। সাম্প্রতিককালের ঘটনাপ্রবাহ ভবিষ্যৎ রাজনীতি সম্পর্কে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করেছে। নন-ইস্যুকে ইস্যু বানিয়ে তৎপরতা চালানোর কারণে জনগণও সন্দেহ-সংশয়ের মধ্যে নিপতিত হয়েছে। ছাত্র-জনতার যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়েছিল, সেই ঐক্য যেন ক্রমেই অনৈক্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে, যা কোনো অবস্থাতেই দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।’
এ বিষয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত দলগুলোর মধ্যে বিভাজন বা মতানৈক্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ফ্যাসিবাদ উত্খাতে আমাদের লক্ষ্য অভিন্ন ছিল। তাই এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সবার মধ্যে ঐক্য থাকা আবশ্যক।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আমরা শুরুতেই অন্তর্বর্তী সরকারকে বলেছিলাম, আপনাদের অন্যতম প্রধান কাজ হবে সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার করা প্রয়োজন, ততটুকু সংস্কার করে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করুন। শুরুতে সরকার এই কাজটি করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করলে আজ এ ধরনের সংকটের উদ্ভব হতো বলে আমি মনে করি না।’
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক রাজনৈতিক দল ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের। সবাই চাইবে এই সংস্কারের মাধ্যমে যার যার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে। সেটি তো সম্ভব না। নানা মতে আমি কোনো সংকট দেখি না। বরং আমি বলতে চাই, এরই মধ্যে সংস্কার নিয়ে সব দল যেসব কথা বলেছে, তার মধ্যে যতটুকু ঐকমত্য পাওয়া গেছে, সরকার ওই বিষয়টি নিয়েই কাজ করুক। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে, প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজে যদি হাত দেয় তাহলে অনেক সংকট দূর হয়ে যাবে। কিন্তু সেই পথে অগ্রসর না হয়ে মানবিক করিডর ও বন্দর ব্যবস্থাপনায় বিদেশিদের যুক্ত করার সিদ্ধান্তের কারণে রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলনে নামতে বাধ্য হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, আমরা যদি জনগণের ওপর নির্ভর না করে অন্য কোনো শক্তির ওপর নির্ভর করতে চাই, তার ফলাফল শুভ হবে না।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম সংগঠক সাইফুল হক বলেন, সরকার সংস্কার নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও নির্বাচন নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য নেই। নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমার কথা বলা হলেও কোনো রোডম্যাপ দেওয়া হয়নি। বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল নির্বাচনী রোডম্যাপ চেয়েছে এবং বলেছে, সংসদ নির্বাচন কোনোভাবেই ডিসেম্বরের পর নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে কেউ কেউ নির্বাচন ও সংস্কারকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপচেষ্টা করছেন, যা নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে।
সম্পর্কিত খবর

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল
সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে
বিশেষ প্রতিনিধি

প্রায় দুই দশক পর জাতীয় সমাবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আগামীকাল শনিবার ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সমাবেশ হবে। বৃহৎ পরিসরে আয়োজিত এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত দলটির নেতাকর্মীরা।
সমাবেশ উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জামায়াত।
তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মৌলিক সংস্কার জরুরি। কোনো ষড়যন্ত্র যেন এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। অংশ নেবেন ইসলামী দলগুলোর নেতারা, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা, জুলাই আন্দোলনে শহীদদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিরা।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে আমাদের দল নানা নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসের রাজনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা ও সাংবিধানিক অধিকার কিছুটা ফিরে এসেছে।
তিনি জানান, নির্বাচন সামনে রেখে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে ফ্যাসিবাদী হামলায় নিহত ব্যক্তিদের বিচারে দৃশ্যমান অগ্রগতি চান তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে একটি ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াত। দলটির পক্ষ থেকে এ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।
জুলাই মাসে নিহত ও আহতদের পুনর্বাসন এখনো সম্পূর্ণ হয়নি বলেও দাবি করেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল।
তিনি জানান, সমাবেশ সফল করতে একটি বাস্তবায়ন কমিটিসহ আটটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ছাড়াও ভ্রাম্যমাণ মাইক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে সমাবেশের প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
সমাবেশে থাকবে ২০টি পয়েন্টে প্রায় ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক। ঢাকার আশপাশ থেকে আগতদের জন্য ১৫টি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
সমাবেশস্থলের ভেতরে ও বাইরে ১৫টি মেডিক্যাল বুথ থাকবে, প্রতিটিতে থাকবেন দুজন করে চিকিৎসক, জরুরি ওষুধ এবং অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা থাকবে।
ড্রোন ও ক্যামেরার মাধ্যমে ভিডিও ধারণ ও সরাসরি সম্প্র্রচারেরও আয়োজন থাকবে—এলইডি স্ক্রিন ছাড়াও ফেসবুক ও ইউটিউবেও সম্প্রচার করা হবে।
সমাবেশের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলেও জানান গোলাম পরওয়ার।
সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি বলেন, ‘সারা দেশ থেকে মানুষ রেল, সড়ক ও নৌপথে সমাবেশে অংশ নিতে আসবে। এতে নগরবাসীর কিছুটা দুর্ভোগ হতে পারে। আমরা তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।’ তিনি জানান, সমাবেশ শুরু হবে দুপুর ২টায়। তবে সকাল ১০টা থেকেই সাংস্কৃতিক পরিবেশনা চলবে।
এ সময় গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনারও নিন্দা জানান গোলাম পরওয়ার। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ব্যর্থতার অভিযোগও করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের সাত দফা দাবিও তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো—অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ; সব গণহত্যার বিচার; মৌলিক রাষ্ট্রীয় সংস্কার; ‘জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র’ বাস্তবায়ন; ‘জুলাই শহীদ’ ও আহতদের পুনর্বাসন; পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন এবং এক কোটির বেশি প্রবাসী ভোটারের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মা’ছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, মতিউর রহমান আকন্দ, নূরুল ইসলাম বুলবুল, মো. সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।

তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোটার তালিকা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এর মাধ্যমে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ পাবেন যোগ্য নাগরিকরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদে খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয়। তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক।
সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ আহম্মদ বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, অর্থাৎ যাঁদের বয়স ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ১৮ বছর হয়, তাঁরা পরবর্তী জানুয়ারি মাসের হালনাগাদ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। নির্বাচন কমিশন প্রতিবছরের ২ জানুয়ারি ওই খসড়া ভোটার তালিকা এবং ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, পরবর্তী নির্বাচনের আগে যেসব নাগরিকের বয়স ১৮ বছর হয়, অর্থাৎ ভোটার হওয়ার জন্য যোগ্য হন, তাঁরা ওই নির্বাচনে ভোটাধিকারের সুযোগ পান না।
ফয়েজ আহম্মদ আরো বলেন, এই বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশন ভোটের তফসিল ঘোষণার আগে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, তাঁদের ভোটার তালিকায় নিয়ে আসাকে যৌক্তিক মনে করে। এ বিষয়ে উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ধরুন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। তার সর্বোচ্চ দুই মাস আগে তফসিল ঘোষিত হয়।
ফয়েজ আহম্মদ বলেন, ‘আজ যে অধ্যাদেশের খসড়াটি অনুমোদন করা হলো, এর ফলে যখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে, তার অন্তত এক মাস আগ পর্যন্ত যেসব ব্যক্তির বয়স ১৮ বছর হবে, তাঁরা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন।’
মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ : গতকাল সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন করেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, অনেকের কিডনি ড্যামেজ হয়, অনেকে চোখে দেখতে পায় না, কর্নিয়া সংযোজন হলে অন্ধত্ব দূর করা যায়, এসব বিষয়ে বাংলাদেশের যে আইন ছিল সেটা অনেক দিন থেকে আপডেট হয়নি।
তিনি বলেন, নতুন এই অধ্যাদেশের ফলে অঙ্গ প্রতিস্থাপনটা খুব সহজ হবে। আগে যেমন ছিল অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য খুবই কাছের যেমন—ভাই, বোন, মা-বাবা থেকে নিতে পারতেন, এখন এটাকে একটু সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
অঙ্গ দান করার ক্ষেত্রে নতুন করে কাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, আগে যেমন ভাতিজা, ভাগিনা তারা অঙ্গ দান করতে পারত না। এখন তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, মানে পরিধি বাড়ানো হয়েছে।
প্রেস সচিব আরো বলেন, ‘এর ফলে আমরা মনে করি, বাংলাদেশের অনেককেই এখন কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য আর বিদেশে যাওয়া লাগবে না। বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোও এই সার্ভিস দিতে পারবে। আমরা মনে করি, এটা বাংলাদেশের জন্য যুগান্তকারী আইন।’
একই সভায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
গোয়েন্দা তথ্য ছিল, তবে এত পরিমাণ যে হবে সে তথ্য হয়তো ছিল না
নিজস্ব প্রতিবেদক

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রাকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি এখন অনেকটা শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গোপালগঞ্জে গত বুধবার যে ঘটনা ঘটেছে, সে সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য ছিল কি না, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গোয়েন্দা তথ্য ছিল। তবে এত পরিমাণ যে হবে, ওই তথ্য হয়তো ছিল না।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা এসব তথ্য জানান।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গতকাল (বুধবার) এনসিপির সমাবেশে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার পর গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তিনি বলেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৫ জনকে আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এ ঘটনায় আমাদের ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে এনসিপি নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে এ বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ভবিষ্যতে আর যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, যত দিন পর্যন্ত সব অপরাধী ধরা না পড়বে, তত দিন পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। উপদেষ্টা এ সময় গোপালগঞ্জের ঘটনা লাইভ করায় সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেলগুলোকে ধন্যবাদ জানান। এর আগে উপদেষ্টা রাজধানীর রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে গোপালগঞ্জের ঘটনায় আহত পুলিশ সদস্যদের শারীরিক অবস্থা দেখতে যান।

আ. লীগ আমলের ৯৬ পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল
নিজস্ব প্রতিবেদক

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিবন্ধিত ৯৬টি পর্যবেক্ষক সংস্থার সব নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম।
তিনি বলেন, নতুন নীতিমালা জারি করা হয়েছে এবং আগের নীতিমালা বাতিল হয়েছে। তাই আগের নীতিমালার অধীন নিবন্ধিত সব পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেছে।
২০২৩ সালে দুই দফায় ৯৬ সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ নিবন্ধন দেওয়া হয়। এসব সংস্থার বেশির ভাগই ছিল নতুন। আগে কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা ছিল না।
একাধিক সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ছিল। সে সময় বেশ কিছু অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন পেতে উৎসাহ বোধ করেনি বা আবেদন করলেও নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সে সময় ব্যাপক সমালোচনা হয়।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে স্বচ্ছতা আনতে আগের সব পর্যবেক্ষক সংস্থাকেই বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে নতুন করে নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়। গতকাল সেই নতুন নীতিমালা-২০২৫ জারি ও ২০২৩ সালের নীতিমালা বাতিল করা হয়েছে। ফলে আগের নীতিমালা অনুসারে নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নিবন্ধনও বাতিল করা হয়েছে।