ছোটবেলায় আলী বাবা এবং ৪০ চোরের গল্প শোনেননি—এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাস্তবে হুবহু আলী বাবা হয়তো নেই; কিন্তু গত সাড়ে ১৫ বছর এ দেশের মানুষ দেখেছে ‘দরবেশ বাবা’ এবং তার সাঙ্গপাঙ্গদের লুটপাট। আলী বাবা ও চল্লিশ চোরের বদলে শেখ হাসিনার আমলে বাস্তব রূপ পায় ‘দরবেশ বাবা এবং চল্লিশ চোরের গল্প’। যে গল্প আরব রজনীর গল্পের চেয়েও রোমাঞ্চকর।
আওয়ামী লুণ্ঠনের চিত্র
দরবেশ বাবা ও ৪০ চোরের লুটপাট
- ১৭ দেশে পাচার হয়েছে ২০ লাখ কোটি টাকা
- লুটতন্ত্রের ‘ছায়া প্রধানমন্ত্রী’ ছিলেন সালমান
বিশেষ প্রতিনিধি

এ ছাড়া সাবেক সরকারের এ রকম আরো অন্তত ৫০০ মন্ত্রী, এমপি এবং সরকারি কর্মকর্তা আছেন, যাঁরা বিশাল অঙ্কের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত। এই লুটেরা, অর্থপাচারকারী এবং ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের মধ্যে শীর্ষ ৪০ জন লাগাতারভাবে দুর্নীতি করে গেছেন আওয়ামী লীগ শাসনামলে। দেশের অর্থনীতিকে ফোকলা করে দেওয়ার মূল খলনায়ক এই ৪০ জন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত শ্বেতপত্র কমিটি শীর্ষ কিছু দুর্নীতিবাজ চিহ্নিত করে। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন বিভিন্ন দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে শীর্ষ ব্যক্তিদের পাহাড়সম দুর্নীতির আলামত পেয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে আমরা শীর্ষ ৪০ জন দুর্নীতিবাজ এবং অর্থপাচারকারীকে চিহ্নিত করেছি। যেসব অভিযোগ শ্বেতপত্র কমিটির রিপোর্টে, দুদকের তদন্তে এবং সংবাদপত্রের রিপোর্টের মাধ্যমে এসেছে। তার ভিত্তিতেই এই ‘৪০ চোরের’ তালিকা তৈরি করা হয়েছে। যার প্রধান কারিগর হলেন ‘দরবেশ বাবা’। অর্থাৎ দরবেশ হলেন এই লুটেরাদের ‘আলী বাবা’ এবং ৪০ চোর, যাঁরা যাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং অর্থ পাচারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। এঁদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা। শেখ রেহানার এখন পর্যন্ত ঢাকায় প্রায় ১০৬ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বিদেশে তিনি প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা অর্থপাচার করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দেশে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের তেমন কোনো সম্পদ নেই। বিদেশে তিনি অন্তত ৩০ হাজার কোটি টাকা গত সাড়ে ১৫ বছরে পাচার করেছেন বলে বিভিন্ন অনুসন্ধানে প্রাথমিক তথ্য হিসেবে জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে। দেশে তাঁর ১১৭ কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে। রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি শেখ রেহানার ছেলে। তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সিআরআইয়ের বিরুদ্ধে প্রায় ৯০০ কোটি টাকার অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে।
শেখ রেহানার দেবর এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকের বিরুদ্ধে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং বিদেশে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে। তিনি ছয়টি দেশের পাসপোর্ট গ্রহণ করেছেন বলেও অনুসন্ধানে তথ্য-প্রমাণ মিলেছে। শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলালের বিরুদ্ধেও বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। প্রাথমিকভাবে দেশে তাঁর ৭৮৬ কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। তাঁর ৩৬০ কোটি টাকার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া শেখ হেলালের বিরুদ্ধে বিদেশে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ফুপাতো ভাই শেখ সেলিমের দেশে সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৫৪২ কোটি টাকা বলে এখন পর্যন্ত প্রাক্কলিত হয়েছে। তবে বেনামে তাঁর আরো বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। এ ছাড়া বিদেশে তার প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার সম্পদের প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে। ফিজি, মরিশাস এবং বার্বাডোজে শেখ সেলিমের সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে।
শেখ হাসিনার আরেক নিকটাত্মীয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসও বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। এখন পর্যন্ত যে হিসাব পাওয়া যাচ্ছে তাতে ১২ হাজার কোটি টাকা তিনি বিদেশে পাচার করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বেশির ভাগ টাকাই পাচার হয়েছে লন্ডন এবং সিঙ্গাপুরে। তাঁর বড় ভাই যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে। শেখ হাসিনার আরো অনেক আত্মীয়স্বজন আছেন, যাঁরা বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন এবং বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, তাঁর পুত্র সাদিক আবদুল্লাহ, শেখ হেলালের ছোট ভাই শেখ সোহেলসহ আরো অনেকে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিসভার মধ্যে প্রায় সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত ছিলেন। এই দুর্নীতিবাজ মন্ত্রিসভার শীর্ষ কয়েকজনের মধ্যে আছেন ওবায়দুল কাদের। যিনি দীর্ঘদিন ধরে সড়ক পরিবহন ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি বিদেশে পাচার করেছেন বলে এখন পর্যন্ত অনুসন্ধানে জানা গেছে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং দুবাইয়ে তাঁর অবৈধ সম্পদের সন্ধান মিলেছে।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দেশেই প্রায় ৭০০ কোটি টাকার সম্পদ বানিয়েছেন। এই সম্পদের কিছু আদালতের নির্দেশে জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের বাইরে তাঁর ১৮ হাজার কোটি টাকার অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং তাঁর পরিবার বিদেশে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন বলে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে। বেশির ভাগ সম্পদই দুবাইয়ে পাচার করা হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য, কানাডা ও মালয়েশিয়াতেও লোটাস কামালের পাচারকৃত অর্থ রয়েছে।
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বিরুদ্ধে ১৩ হাজার কোটি টাকা অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে। দেশে তাঁর সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৪৫২ কোটি টাকা। জাহিদ মালেক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বেশির ভাগ সম্পদ পাচার করেছেন।
সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু দুর্নীতিবাজদের অন্যতম এবং মন্ত্রীদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে বেশি অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। দেশে তাঁর প্রায় ৯৬০ কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। যে সম্পদের বেশির ভাগই আদালতের মাধ্যমে জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশে তিনি প্রায় ৫৭ কোটি টাকা পাচার করছেন। দুবাই, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ অন্তত ১২টি দেশে তাঁর বিপুল সম্পদ থাকার প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে।
জুনাইদ আহেমদ পলক পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী। তাঁর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে। দেশে তাঁর প্রায় ৩২২ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী আরেকজন শীর্ষ দুর্নীতিবাজ। এখন পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা অর্থপাচারের তথ্য মিলেছে। এসব অর্থের বেশির ভাগ তিনি পাচার করেছেন যুক্তরাজ্যে। এ ছাড়া দুবাই, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং বিভিন্ন দ্বীপরাষ্ট্রে তিনি অর্থ পাচার করেছেন বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যে যাঁরা ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি পাচার করেছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে ধরা পড়েছে, তাঁদের মধ্যে আছেন সাবেক জ্বালানি ও খনিজ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক আইন ও বিচার মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।
শেখ হাসিনার শাসনামলে শুধু যে রাজনীতিবিদরাই দুর্নীতি করেছেন, অর্থপাচার করেছেন এমনটি নয়, বহু আমলা বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। এঁদের তালিকা অনেক দীর্ঘ। আমলাদের লুটপাটের সুযোগ দিয়ে শেখ হাসিনা তাঁদের নিজের অনুগত বানিয়ে রেখেছিলেন। যার ফলে আমলারা সীমাহীন দুর্নীতিতে লিপ্ত ছিলেন পুরো আওয়ামী লীগ শাসনামলে। যেসব শীর্ষ দুর্নীতিবাজ আমলা বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এবং এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ, সাবেক মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা কবির বিন আনোয়ার, সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক সচিব আবদুল মালেক, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, সাবেক গভর্নর ফজলে কবির, সাবেক বেসরকারি বিমান চলাচল সচিব মহিবুল হক, সাবেক পুলিশের আইজি বেনজীর আহমেদ, ডিবি পুলিশের সাবেক প্রধান হারুন উর রশিদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল নাসের চৌধুরী এবং ওয়াসার সাবেক এমডি তাকসিম আহমেদ খান।
এসব অর্থপাচারের ক্ষেত্রে ‘পঞ্চপাণ্ডব ব্যবসায়ী’ হিসেবে পরিচিতরা ছিলেন মূল কারিগর, যাঁরা রাজনীতিবিদ এবং আমলাদের অর্থপাচারে সহযোগিতা করেছেন এবং তাঁদের মাধ্যমেই এই ধরনের অর্থগুলো পাচার হয়েছে। যেকোনো দুর্নীতির ক্ষেত্রে তাঁরা মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন। এই পঞ্চপাণ্ডব ব্যবসায়ীর মধ্যে রয়েছেন আজিজ খান, নজরুল ইসলাম মজুমদার, নাফিজ সরাফত এবং সবার ওপরে সালমান এফ রহমান। মূলত সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বেই এই চোরতন্ত্রের একটি মন্ত্রিপরিষদে ৪০ চোরের অবস্থান ছিল। এসব চোরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে লুট করা হয়েছে এবং কায়েম করা হয়েছিল লুটেরাতন্ত্র।
সম্পর্কিত খবর

ফিরে দেখা ১৭ জুলাই
শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি
নিজস্ব প্রতিবেদক

গত বছর কোটা সংস্কার আন্দোলনের ১৭তম দিন ১৭ জুলাই ছিল পবিত্র আশুরা উপলক্ষে সরকারি ছুটি। তবে ছুটির দিনও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আন্দোলন ও বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এদিন ঢাকাসহ দেশের অন্তত ১০টি জেলায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া অন্তত ১০ স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক এবং দুই স্থানে রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা।
আগের দিন সংঘর্ষে আবু সাঈদসহ ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কফিল মিছিল ও গায়েবানা জানাজা আদায় করা হয়। এসব কর্মসূচিতে বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরদিন (১৮ জুলাই) সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
১৭ জুলাই দিনভর রাজধানীর শনির আখড়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাসগুলোতে বিক্ষোভ-সংঘর্ষের চিত্র
১৭ জুলাই সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।
এদিন আন্দোলনকারীদের ক্যাম্পাস ছাড়া করতে অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। দুপুরের পর তাদের টানা দুই ঘণ্টার অভিযানে ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। সেখানেও দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
দুপুর ২টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল’ কর্মসূচি থাকলেও পুলিশের বাধায় সেখানে গায়েবানা জানাজা হয়নি। পরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর কফিন মিছিল শুরু হলে একের পর এক সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এরপর আবার সূর্য সেন হলের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চলে ঘণ্টাখানেক। পরে শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নিলে পুলিশ আবারও তাঁদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। জবাবে শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। রাত ১০টার দিকে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের আরেক দফা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, গায়েবানা জানাজা শেষে তাঁরা শান্তিপূর্ণ মিছিল শুরু করলে পুলিশ নির্বিচার হামলা চালায়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হল বন্ধের ঘোষণা ও পুলিশের তৎপরতার মুখে সন্ধ্যার দিকে আন্দোলনকারী অনেক শিক্ষার্থী হল ছেড়ে যান। তবে অনেক শিক্ষার্থী হল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে রাতেও হল ও ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা রাতে হলে অবস্থান করছিলেন। হামলাকারীদের বিচার না হলে হল ছেড়ে যাবেন না বলে জানান তাঁরা।
এদিন দুপুর ১টার দিকে শিক্ষকদের একটি দল মৌন মিছিল নিয়ে শাহবাগ থানায় পুলিশের হাতে আটক হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ছাড়িয়ে আনেন। পরে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশ’ করেন শিক্ষকরা।
এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভ ও গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি
শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হামলা, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত ও কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে পরদিন ১৮ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কর্মসূচি চলাকালে হাসপাতাল, গণমাধ্যমসহ অন্যান্য জরুরি সেবা ছাড়া সব কিছু বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়।
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা ঢাবি ও চবি
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সব আবাসিক শিক্ষার্থীকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় বিদ্যমান কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সমাধানের জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানানো হয়। এদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ছাত্রীদের এবং রাত ১০টার মধ্যে ছাত্রদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
রংপুরে আবু সাঈদের দাফন
কোটা সংস্কার আন্দোলনে আগের দিন নিহত রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের দাফন সম্পন্ন হয় রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামের নালিপাড়ায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত জানাজা ও দাফনের তাগিদ দেওয়া হলে উপস্থিত লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। দুই দফা জানাজা শেষে সকাল সোয়া ১০টার দিকে আবু সাঈদের লাশ দাফন করা হয়।
জাতির উদ্দেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশব্যাপী সৃষ্ট সংঘাতময় পরিস্থিতিকে সামনে রেখে এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি আন্দোলনকারীদের সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, আমাদের ছাত্রসমাজ সর্বোচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাবে। তাদের হতাশ হতে হবে না।’

বৈষম্যবিরোধী ও এনসিপির ব্লকেড
সাঁড়াশি অভিযানের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম
নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তারে গোপালগঞ্জসহ সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার দাবি জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল বুধবার রাজধানীর শাহবাগে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন সংগঠনটির সভাপতি রশিদুল ইসলাম রিফাত। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাঁড়াশি অভিযানে যৌথ বাহিনী ব্যর্থ হলে জুলাইয়ের ছাত্র-জনতা মাঠে নেমে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে। এ সময় ২৪ ঘণ্টার জন্য বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণাও দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে রিফাত বলেন, ‘স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা এবং দিল্লির চক্রান্তে গোপালগঞ্জের ভেতরে একটি প্রক্সি স্টেট তৈরি করা হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই প্রক্সি স্টেট খেলা আমরা হতে দেব না। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা সম্মিলিতভাবে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ থেকে হটিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ইসি একটি নাটকবাজি করেছে। ইসি বলেছে, নৌকা প্রতীক নাকি এখনো থাকবে। আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে বলতে চাই, এত বড় একটি গণহত্যার পরেও বাংলাদেশে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা, তাদের আওয়ামী লীগ এবং তাদের মার্কা থাকতে পারবে না।
রিফাত বলেন, ‘অবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে। স্বৈরাচারী হাসিনার গোপালি পুলিশ এখনো ছাত্র-জনতার দিকে বন্দুক তাক করে।’
এর আগে দুপুরের দিকে গোপালগঞ্জে এনসিপির নেতাকর্মীর ওপর আওয়ামী নেতাকর্মীদের ন্যক্কারজনক হামলা ও অবরুদ্ধ করার ঘটনার প্রতিবাদে সারা দেশে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে রশিদুল ইসলাম রিফাত এ ঘোষণা করেন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘গোপালগঞ্জে জুলাইয়ের নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সারা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
শুধু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নয়, একই সঙ্গে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুব উইং জাতীয় যুবশক্তি।
সারা দেশে বাংলা ব্লকেড : রাজধানীর উত্তরায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র ও সাধারণ মানুষ। গতকাল বিকেলে উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরের আজমপুর ও হাউস বিল্ডিং মোড় ঘিরে বিক্ষোভে নেমে পড়ে শতাধিক প্রতিবাদকারী। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিক্ষোভকারীরা বলে, গোপালগঞ্জে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে। তাদের পদযাত্রা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ঠেকাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পুলিশি সহায়তায় হামলা করেছে। এর প্রতিবাদে উত্তরা অঞ্চলে তারা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করছে।
বিকেল ৩টা থেকে সোয়া ৫টা পর্যন্ত মিরপুর ১০ নম্বরে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মিরপুর জোন।
রাজধানীর শাহবাগে সন্ধ্যায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে জুলাই মঞ্চ। কর্মসূচি চলাকালে মঞ্চের বক্তারা বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত গোপালগঞ্জের ঘটনার সঠিক বিচার না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।’
গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রায় হামলার ঘটনায় পুলিশ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয় ইনকিলাব মঞ্চ। এ সময় লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেয় তারা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয় তারা। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করেন ইনকিলাব মঞ্চের নেতারা।
আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের আইনের আওতায় না আনলে লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।
নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। বিকেলে মহাসড়কের সাইনবোর্ড মোড় অবরোধ করেন এনসিপি নেতাকর্মীরা।
এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য আহমেদুর রহমান তনু জানান, সাইনবোর্ডে ছাত্র-জনতা জড়ো হতে শুরু করেছে। হামলায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।
তবে জনভোগান্তির কথা চিন্তা করে ব্লকেড কর্মসূচি থেকে সরে আসতে বলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বিক্ষোভকারীদের রাস্তার এক পাশে অবস্থান নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
গণমাধ্যমকর্মীদের দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, ‘সারা দেশে রাজপথের ব্লকেড সরিয়ে নিন। রাস্তার এক পাশে অবস্থান করুন। লড়াই চলবে।’
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রায় আওয়ামী লীগের হামলার প্রতিবাদে দেশের অন্যান্য স্থানেও বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কুমিল্লা, ফরিদপুর, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, খুলনা, মাদারীপুর, নোয়াখালী, রাজবাড়ী, ধামরাই (ঢাকা), শেরপুর (বগুড়া), গাজীপুরের টঙ্গীতে এসব কর্মসূচি পালিত হয়।
[তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিরা]

জামায়াত আমির
সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে
- প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার পৃথক বিবৃতিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।
ডা. শফিকুর রহমান গতকাল বুধবার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রশ্ন তোলেন, ‘গোপালগঞ্জে কী হচ্ছে?’ তিনি লেখেন, ‘গোপালগঞ্জ তো বাংলাদেশেরই অংশ। যত দূর জানতে পেরেছি, এনসিপির নেতারা প্রশাসনের সঙ্গে পূর্ব আলোচনা করেই শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করেছেন, যা তাঁদের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার।
জামায়াতের আমির সরকারের উদ্দেশে লেখেন, সরকারকে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, অন্যথায় ইতিহাসের দায় তাদের ওপরই বর্তাবে।
ডা. শফিকুর রহমান সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে সংঘাত ও উচ্ছৃঙ্খলতা এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়ে লেখেন, ‘আমরা সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে সব ধরনের উচ্ছৃঙ্খলতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই এবং শান্তিপ্রিয়, ফ্যাসিবাদবিরোধী জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আন্তরিক আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘মহান আল্লাহ সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে তাঁর সাহায্য প্রেরণ করুন।
অন্যদিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে বলেন, ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে ‘আওয়ামী শাসনব্যবস্থার সহযোগী সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে’ হামলা চালিয়েছে। তাঁর ভাষ্য, কর্মসূচির আগে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা হলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কার্যকর উপস্থিতি দেখা যায়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
তিনি বলেন, ‘গোপালগঞ্জ কোনো বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড নয়, এটি বাংলাদেশের অংশ।
পরওয়ার দাবি করেন, ‘৫ আগস্ট ছাত্র ও জনগণের গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন ঘটেছে, তবে দেশ এখনো পুরোপুরি ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়নি। ক্ষমতাচ্যুত শাসকগোষ্ঠী দেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।’
সেক্রেটারি জেনারেল জানান, এনসিপির কর্মসূচিতে ককটেল বিস্ফোরণ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশের গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। তিনি তাঁদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন এবং হামলার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এদিকে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের হামলা, অগ্নিসংযোগ ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
বিবৃতিতে গোলাম পরওয়ার বলেন, গতকাল বুধবার এনসিপির পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বেড়ে ওঠা ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে। তাঁর অভিযোগ, কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নেতাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়, এমনকি পুলিশের এসপি অফিসেও হামলা করা হয়। তিনি দাবি করেন, এতে এনসিপির অনেক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আহত হয়েছে। অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনাও ঘটে।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আরো বলেন, ‘এই হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দেশের সব জেলা ও মহানগরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে।’ তিনি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
বিবৃতিতে অধ্যাপক পরওয়ার ফ্যাসিবাদবিরোধী গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে দলীয় নেতাকর্মীসহ সচেতন নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সর্বাত্মকভাবে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।
গোপালগঞ্জে এই হামলার প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে খুলনা নগরীর ডাকবাংলা মোড়ে মহানগরী জামায়াতের উদ্যোগে বিক্ষোভ করা হয়েছে। মিছিলপূর্ব সমাবেশে জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন।

বিএনপি মহাসচিব
নৈরাজ্যের মাধ্যমে ফায়দা হাসিলের অপতৎপরতা
নিজস্ব প্রতিবেদক

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি অভিযোগ করেন, পতিত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের সন্ত্রাসীরা এই ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়েছে। হামলাকারী দুষ্কৃতকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আহ্বানও জানান বিএনপি মহাসচিব। গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর পতনের পর দুষ্কৃতকারীরা আবারও দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিসহ নৈরাজ্যের মাধ্যমে ফায়দা হাসিলের অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। গোপালগঞ্জে এনসিপির পূর্বঘোষিত কর্মসূচির ওপর বর্বরোচিত হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ, ইউএনওসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও পুলিশ সদস্যদের আহত করার বর্বর ঘটনা সেই অপতৎপরতারই বহিঃপ্রকাশ।
আহত পুলিশ সদস্যদের সুস্থতা কামনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির কারণে আওয়ামী লীগের দোসররা মরণকামড় দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলে ফায়দা লুটতে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য এখন মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। এসব দুষ্কৃতকারীকে কঠোরহস্তে দমন ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই।
গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ দেশে যাতে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান হতে না পারে সে জন্য দেশের মানুষের জানমাল রক্ষায় দল-মত-নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এর ব্যত্যয় হলে দেশ আবারও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় হুমকির মুখে পড়বে।