ঢাকা, শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫
২৮ আষাঢ় ১৪৩২, ১৬ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫
২৮ আষাঢ় ১৪৩২, ১৬ মহররম ১৪৪৭
বিএনপির সমাবেশ ঘিরে তাণ্ডব

হামলা-সংঘর্ষ, পিটিয়ে পুলিশ হত্যা

  • * যুবদল নেতার মৃত্যু নিয়ে বিএনপি-পুলিশ পাল্টা-পাল্টি * পুলিশের বক্সে আগুন * প্রধান বিচারপতির বাসভবনের গেটে হামলা * গাড়িতে আগুন, ভাঙচুর সড়ক অবরোধ * কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ* আজ সকাল-সন্ধ্যা বিএনপির হরতাল * জামায়াতে ইসলামীও হরতাল ডেকেছে * রাতে হরতালবিরোধী মিছিল
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
হামলা-সংঘর্ষ, পিটিয়ে পুলিশ হত্যা
নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। সেই সংঘর্ষ আশপাশেও ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের সময় এক পুলিশ সদস্যকে এভাবেই বিজয়নগরের কালভার্ট রোডে পড়ে থাকতে দেখা যায়। ছবি : কালের কণ্ঠ

রাজধানীতে গতকাল শনিবার বিএনপির মহাসমাবেশ চলাকালে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশের এক কনস্টেবল নিহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা ও ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, একদল তরুণ তাঁকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে। এদিকে সংঘর্ষের সময় যুবদলের এক নেতার মৃত্যু হয়েছে।

বিএনপির দাবি, পুলিশের হামলায় তিনি মারা গেছেন। তবে এই দাবি অস্বীকার করে পুলিশ জানিয়েছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।

দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ, সাংবাদিক, বিএনপির নেতাকর্মীসহ দেড় শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এ ছাড়া পুলিশ বক্স এবং যাত্রীবাহী বাসসহ অন্তত ২০টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।

ভাঙচুর করা হয় শতাধিক গাড়ি।

সহিংসতার এ ঘটনার জন্য পুলিশকে দায়ী করে বিএনপি আজ রবিবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে। বিএনপির এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও একই দিন হরতালের ডাক দেয়।

নিহত পুলিশ সদস্যের নাম মো. পারভেজ।

মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে তাঁর বাড়ি। গতকাল বিকেল ৪টার পর গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার ফারুক হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, পুলিশ সদস্য পারভেজ দৈনিক বাংলা মোড় এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন। একপর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলায় তিনি গুরুতর আহত হন। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়।

তাঁর মাথায় গুরুতর জখম করা হয়েছিল।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ‘মৃত অবস্থায়ই ওই পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাঁর মাথায় গুরুতর আঘাত রয়েছে। আমরা ইসিজি করার পর নিশ্চিত হয়ে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেছি।’

গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘ছাত্রদলের একজন নেতা আজ পুলিশের এক সদস্যকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের কাছে ছবি আছে, ছাত্রদলের এক নেতা নৃশংসভাবে তাঁকে পিটিয়েছেন। শুধু পেটাননি, চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মাথা ক্ষতবিক্ষত করেছেন।’

এদিকে বিএনপির দাবি, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় দলটির সহযোগী সংগঠন যুবদলের এক নেতা নিহত হয়েছেন। তাঁর নাম  শামীম মিয়া। তিনি রাজধানীর মুগদা এলাকার বাসিন্দা।

মুগদা থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি কাজী সুমন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শামীম মিয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের ১ নম্বর ইউনিটের সভাপতি ছিলেন।

তবে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের পরিচালক, উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. রেজাউল হায়দার কালের কণ্ঠকে বলেন, শামীম মিয়াকে হাসপাতালে আনা হয়। তবে এখানে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। ধারণা করা হচ্ছে, শামীম হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

নয়াপল্টনের মহাসমাবেশ ঘিরে আওয়ামী লীগ পাল্টা শান্তি সমাবেশের ডাক দেয়। বিএনপির সমাবেশের পাশে আরামবাগে জামায়াত ও আশপাশের এলাকায় সমমনা ১২টি দল সমাবেশের ঘোষণা দেয়। এ নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হলে জনমনে নানা আশঙ্কা তৈরি হয়।

একই দিন বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের সমাবেশের কর্মসূচি থাকায় সকাল থেকে ঢাকায় ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়।

 

যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘সরকার পতনের’ এক দফা দাবিতে গতকাল সমাবেশ ডেকেছিল বিএনপি। ২০ শর্তে তাদের সমাবেশের অনুমতি দেয় পুলিশ। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সকাল থেকে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন নয়াপল্টনে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুর সাড়ে ১২টায় বিএনপির মহাসমাবেশের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। এ সময় সমাবেশের মূল মঞ্চ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে প্রধান বিচারপতির বাসভবন মোড়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করা হয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাঁদের সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে পিকআপ ও বাস নিয়ে গুলিস্তান এলাকায় যাচ্ছিলেন। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বহনকারী গাড়ি ভাঙচুর করেন। প্রধান বিচারপতির বাসভবনের গেটও ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রধান বিচারপতির বাসভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত নুরুজ্জামান নামের একজন পুলিশ কনস্টেবল বলেন, বাইরের গার্ডরুমের দরজা ও জানালার কাচ এবং প্রধান বিচারপতির নামফলকের কাচ ভাঙচুর করা হয়।

এরপর পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের সমাবেশের জন্য নির্ধারিত স্থান কাকরাইল মোড়ের দিকে সরিয়ে দিতে চাইলে সংঘর্ষ শুরু হয়। কাকরাইল, বিজয়নগর ও শান্তিনগর এলাকা ঘুরে সেখানে ঢাকার বাইরে থেকে আসা নেতাকর্মীদের দেখা গেছে।

 

সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে যেভাবে

দুপুর ১টার পর কাকরাইল মোড় যখন রণক্ষেত্র, তখনো সমাবেশ চলছিল। তবে পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ার ঘটনায় নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। সমাবেশ মঞ্চের মাইক থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বারবার কর্মীদের শান্ত থাকার নির্দেশ দিচ্ছিলেন।

দুপুর ২টার পর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর বক্তব্যের সময় মাইকের আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় মঞ্চে নেতারা সবাই দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছিলেন। পুলিশের প্রতিরোধে বিএনপি নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হতে শুরু করলে বিকেল ৩টায় বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চ ত্যাগ করেন। সাধারণ কর্মীরা পুলিশের সঙ্গে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়াধাওয়িতে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে তাঁরা নয়াপল্টনের আশপাশের গলিতে আশ্রয় নিয়ে সেখান থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের হাতে লাঠিসোঁটাও ছিল। পুলিশ পাল্টা টিয়ার গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেটে ছুড়ে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। এভাবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। নয়াপল্টনে যখন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চলছিল, তখন বিজয়নগর মোড়, সেগুনবাগিচা, শান্তিনগর মোড়সহ আশপাশের এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পল্টন মোড়ের কাছে পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এক হয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। রাতে নয়াপল্টনের আশপাশের এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হরতালবিরোধী মিছিল করেছেন।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাসহ কয়েক শ নেতাকর্মী পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন।

সমাবেশে হামলা প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান কালের কণ্ঠকে বলেন, নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে হামলার বিষয়ে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এটি সরকারের পূর্বপরিকল্পিত কৌশল। একটি অজুহাত তুলে বিএনপির মহাসমাবেশ নস্যাৎ করতে এই হামলা চালানো হয়েছে। তিনি মনে করেন, এই ঘটনা বাংলাদেশের পুরো রাজনৈতিক দৃশ্যপট বদলে দেবে।

 

সকাল-সন্ধ্যা হরতাল

সংঘর্ষ চলাকালে মঞ্চ ত্যাগ করার আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ রবিবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। মাইকের আওয়াজ বন্ধ করে দেওয়ায় তিনি হ্যান্ডমাইকে এই ঘোষণা দেন। এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ হামলা করে তাঁদের সমাবেশ ভণ্ডুল করে দিয়েছে। তিনি নেতাকর্মী ও জনগণকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানান।

পরে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী এক বিজ্ঞপ্তিতে এই হরতালের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হামলা, গুলিবর্ষণ ও অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হওয়ার প্রতিবাদে এই হরতাল হবে।

সর্বশেষ ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে বিএনপি হরতাল পালন করেছিল।

ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে কাকরাইল, বিজয়নগর এলাকায় সংঘর্ষ এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের এলাকায় বারবার বিকট শব্দের মধ্যে হরতালের ঘোষণা এলো। তবে হরতালে সড়কে পরিবহন চালানোর ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।

 

কয়েকটি গাড়িতে আগুন

বিকেলে কাকরাইলে একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বিকেল সোয়া ৫টার দিকে কাকরাইলে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বাসটিতে আগুন দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলের কাছেই পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়।

পুড়ে যাওয়া বাসের চালক মনির হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, পুলিশ সদস্যদের আনা-নেওয়ার দায়িত্বে ছিল বাসটি। একদল পুলিশ সদস্য নিয়ে বিকেল ৫টার সময় তিনি এখানে আসেন। পুলিশ সদস্যরা নেমে যাওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে বাসে আগুন দেওয়া হয়। হঠাৎ দুই যুবক এসে বাসে পেট্রল ছিটিয়ে দিয়াশলাইয়ের কাঠি দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। আগুন দেওয়ার পর ওই দুই যুবক মোটরসাইকেলে করে কাকরাইল মোড় দিয়ে চলে যান।

এর আগে দুপুর সোয়া ১টার দিকে কাকরাইল মোড়ে একটি ট্রাফিক পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়েছে। সেখানে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) ভবনে রাখা গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।

কাকরাইল মসজিদের সামনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের দেখা গেছে। চারটি গাড়িতে তাঁরা এসেছেন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভারে বলাকা পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। একই সময় কমলাপুরে বিআরটিসির একটি বাসে আগুন দেওয়া হয় বলে ফায়ার সার্ভিস জানায়।

রাজধানীর রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ভাঙচুর ও অ্যাম্বুল্যান্সে আগুন দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিএনপি নেতাকর্মীরা হাসপাতালে ভাঙচুর করেছেন। হাসপাতালের দুটি অ্যাম্বুল্যান্স পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) কে এন রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, সংঘর্ষের মধ্যে আহত প্রায় অর্ধশত পুলিশ সদস্যকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ হাসপাতালের দুটি অ্যাম্বুল্যান্স পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের গেটসহ একাধিক স্থাপনায় হামলা করা হয়েছে।

 

মির্জা ফখরুলের বিবৃতি

রাতে এক বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, মহাসমাবেশে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। বিবৃতিতে তিনি বলেন, বিএনপির পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সশস্ত্র হামলা নজিরবিহীন ও ন্যক্কারজনক।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

স্থায়ী কমিটির বৈঠক

ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক নয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চায় বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক নয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চায় বিএনপি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে নয় বিএনপি। এটিকে রাজনৈতিক দলিল হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির বিষয়ে মত দিয়েছে দলটি। গত বুধবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। এরই আলোকে ঘোষণাপত্রের ওপর বিএনপির মতামতে এই দলিলকে আর্কাইভে (সংরক্ষণ) রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকে বিএনপির কাছে পাঠানো জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া নিয়ে দলীয় মতামত চূড়ান্ত করতে বুধবার রাতে স্থায়ী কমিটির এ বৈঠক হয়। ওই রাতেই খসড়ায় প্রয়োজনীয় সংযোজন-বিয়োজন এনে তাতে চূড়ান্ত মতামত দিয়েছে বিএনপি। বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

জানা গেছে, বৈঠকে বিএনপি নেতারা বলেছেন, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান সংবিধানে স্থান দেওয়া হলে তাতে ভবিষ্যতে জটিলতা বাড়তে পারে।

কেউ কেউ নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানকেও সংবিধানে রাখার দাবি তুলতে পারে। এ জন্য তাঁরা রাজনৈতিক দলিল হিসেবে রাষ্ট্রীয় আর্কাইভে ২০২৪ সালের ঘোষণাপত্র সংরক্ষণের পক্ষে মত দিয়েছেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এই ঘোষণাপত্র সংবিধানে যুক্ত করার দাবি তোলে।

স্থায়ী কমিটি বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন নেতা বলেন, খসড়া ঘোষণাপত্র ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর বলা হলেও বিএনপি তাতে দ্বিমত জানিয়েছে।

গণ-অভ্যুথানের ১১ মাস পর এসে এই ধরনের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। বৈঠক সূত্র জানায়, খসড়ার শুরুতে উল্লিখিত বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের এ ভুখণ্ডের মানুষ স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যুগের পর যুগ সংগ্রাম করেছিল এবং এর ধারাবাহিকতায় পাকিস্তান আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ১৯৪৭ সাল থেকে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল’—এই অংশ অপ্রয়োজনীয় বিবেচনা করে তা বিএনপি বাদ দিয়েছে।

দলটির নেতারা বলেছেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধে গৌরবময় বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেই স্বাধীনতাযুদ্ধকেই প্রধান অর্জন হিসেবে উল্লেখ করে ঘোষণাপত্র শুরু হওয়া উচিত।

খসড়া ঘোষণাপত্রে আছে, যেহেতু পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন শাসনামলের রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিনির্মাণের ব্যর্থতা ও অপর্যাপ্ত ছিল এবং এ কারণে বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও শাসকগোষ্ঠীর জবাদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা যায়নি’—বিএনপি এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন শাসনামলের জায়গায় আওয়ামী শাসনামলের কথা উল্লেখ করেছে।

  খসড়ায় এক-এগারোসংশ্লিষ্ট প্রসঙ্গে ক্ষমতার সুষ্ঠু রদবদলের রাজনৈতিক ব্যর্থতার সুযোগে কথাগুলো পরিবর্তন করে দেশি-বিদেশি চক্রান্তের সুযোগে লেখার মতামত দিয়েছে  বিএনপি।

এ ছাড়া দলটি ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনর্লিখন বা প্রয়োজনে বাতিল করার অভিপ্রায় বাদ দিয়ে সংবিধানের বিদ্যমান সংস্কার উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় সংশোধন করার পক্ষে মত দিয়েছে। জানা গেছে, ঘোষণাপত্রের খসড়া থেকে সেকেন্ড রিপাবলিক প্রসঙ্গটি বাদ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত জানুয়ারি মাসে প্রস্তুত করা ঘোষণাপত্রের খসড়ার শেষ অংশে সেকেন্ড রিপাবলিক কথাটি উল্লেখ ছিল। জানা গেছে, এর বাইরেও খসড়ায় আরো কিছু শব্দগত সংযোজন-বিয়োজন করেছে বিএনপি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে চেয়েছিল। এ ঘোষণাপত্র নিয়ে তখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা তৈরি হয়। হঠাৎ ঘোষণাপত্রের বিষয়টি কেন সামনে আনা হলো, এর প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন ওঠে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং তখন এ উদ্যোগের সঙ্গে সরকার সম্পৃক্ত নয় বলে উল্লেখ করেছিল। অবশ্য পরে ৩০ ডিসেম্বর রাতে জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানিয়েছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওই রাতে বৈঠক করে ৩১ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে মার্চ ফর ইউনিটি (ঐক্যের জন্য যাত্রা) কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। ওই কর্মসূচি থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

এর মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়। বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো তখন ওই খসড়ার ওপর তাদের মতামত দেয়। পরবর্তী সময়ে ছাত্রদের দেওয়া সময়সীমা শেষ হওয়ার পরদিন গত ১৬ জানুয়ারি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই ইস্যুতে সরকারের কার্যক্রম ধীরগতিতে চলতে থাকে। এনসিপি সম্প্রতি সরকারকে আগামী ৩ আগস্টের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। অন্যথায় তাদের পক্ষ থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয়।

সরকার ও রাজনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যেই জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। আর এটি চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে।

এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সরকার যে প্রস্তাব দিয়েছিল, আমরা তার ওপর মতামত গতকাল (বুধবার) দিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধকালে প্রবাসী সরকার একটা ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে সব কার্যক্রম চালিয়েছে। কিন্তু ৭২-এর সংবিধানে তা অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ২৪-এর মহত্ত্ব ও গুরুত্বের প্রতি বিএনপি যথাযথ মর্যাদা দেয়। সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ও বর্তমান সরকারকে বৈধতা দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু ঘোষণাপত্র সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ নেই।

 

মন্তব্য
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক

ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস স্থাপনের খসড়া অনুমোদন

বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস স্থাপনের খসড়া অনুমোদন

ঢাকায় তিন বছরের জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের একটি মিশন স্থাপনের বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের ৩৩তম বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। জানা গেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের ভিত্তিতে বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়-এর মিশন স্থাপনসংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত ২৯ জুন ওই খসড়া উপদেষ্টা পরিষদে তোলা হলে তাতে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।

ওই দিন এক সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছিলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক যে অফিস ওএইচসিএইচআর, সে অফিসের একটা মিশন শাখা বাংলাদেশে ওনারা খুলতে চাইছিলেন। এ লক্ষ্যে ওনারা আলোচনা করছিলেন। এ আলোচনার একটা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এর সমঝোতা স্মারক, সেটা উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিষয়টি নিয়ে হেফাজতে ইসলামসহ একাধিক সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এদিকে অতিবৃষ্টির কারণে সম্প্রতি ফেনী ও নোয়াখালী জেলায় সৃষ্ট বন্যা ও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আলোচনা হয়েছে। সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারা বন্যা ও তদ-পরবর্তী গৃহীত ব্যবস্থা নিয়ে তাঁদের মতামত ও করণীয় তুলে ধরেন।

বৈঠকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে মুসাপুর রেগুলেটর ও বামনি ক্লোজারের নকশা চূড়ান্তকরণ, ফেনীতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প চূড়ান্তকরণ এবং নোয়াখালীর খাল ও ড্রেনেজ অবমুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে আলোচনা হয়।

এর পাশাপাশি, দুর্যোগ মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এই দুই জেলার ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত, তীর প্রতিরক্ষা ও পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে বলেও উপদেষ্টামণ্ডলীকে জানানো হয়। সভায় দুই জেলায় চলমান বন্যা ও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতিতে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা তুলে ধরা হয়।

বৈঠকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও মহেশখালী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নতুন অধ্যাদেশ অনুমোদনের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি প্রস্তাব পাস হয়।

বৈঠকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করা হয়, যা লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিংয়ের পর কার্যকর হবে।

আন্তর্জাতিক পরিসরে গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশ জাতিসংঘের অপশনাল প্রোটোকল টু দ্য কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট টর্চারে (ওপি-ক্যাট) পক্ষভুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

প্রটোকলটি ২০০২ সালে গৃহীত হয়, যার লক্ষ্য হলো নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক অথবা মর্যাদা হানিকর আচরণ বা শাস্তির বিরুদ্ধে সুরক্ষা জোরদার করা। বাংলাদেশ ১৯৯৮ সালেই মূল কনভেনশনের পক্ষভুক্ত হয়েছিল। এবার প্রোটোকলে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে সেই প্রতিশ্রুতি আরো শক্তিশালী করা হলো।

মালয়েশিয়ার জোহর বাহরুতে বাংলাদেশের একটি নতুন কনস্যুলেট জেনারেল স্থাপনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়।

বৈঠকে মহেশখালীকে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়নের আওতায় আনতে মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা ও বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

 

মন্তব্য
মির্জা ফখরুল

দেশের মানুষ নির্বাচন চায়, তাহলে কেন হবে না?

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
দেশের মানুষ নির্বাচন চায়, তাহলে কেন হবে না?

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশে কেন নির্বাচন হবে না? দেশের মানুষ নির্বাচন চায়। নির্বাচিত প্রতিনিধি চায়। এ জন্য তারা জীবন দিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতার পরিবর্তন হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনাসভায় তিনি এসব কথা বলেন। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনাসভাটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।

অনুষ্ঠানে গত ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধীসহ জুলাই আন্দোলনে শহীদ ৬৪ জন সাংবাদিকের ওপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন ডিইউজের সহসভাপতি রাশেদুল হক। বিএফইউজের প্রয়াত সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর পরিবার এবং জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ছয় সাংবাদিকের পরিবারের হাতে সম্মাননা তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব।

আলোচনাসভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বেশির ভাগ মানুষ মনে করেন নির্বাচন হবে না।

তাঁর এই বক্তব্যের জবাবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমি খুব আশাবাদী মানুষ। অনেকে বলেছেন যে, হবে না। কেন হবে না? নির্বাচন তো এ দেশের মানুষ চায়, নির্বাচনের জন্য তো এ দেশের মানুষ প্রাণ দিয়েছে।

কারণ মানুষ একটি নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব চায় পার্লামেন্টের মধ্য দিয়ে। এ জিনিসগুলো নিয়ে আমি মনে করি কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হলো, যত দ্রুত সম্ভব আমরা সংস্কারের কাজগুলো শেষ করে নির্বাচিত সরকারের দিকে যাওয়া, গণতন্ত্র উত্তরণের পথে যাওয়া। আমরা সোজা কথায় বিশ্বাস করি লিবারেল ডেমোক্রেসিতে। আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতার পরিবর্তন হবে।
সেই নির্বাচিত সরকারই দেশ চালাবে ও সমস্যাগুলোর সমাধান করবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সব কাজ গুছিয়ে ফেলতে তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) নির্দেশ দিয়েছেন। এটা অত্যন্ত ইতিবাচক ব্যাপার। আমরা আশা করব, নির্বাচন কমিশন এই কাজ খুব দ্রুততার সঙ্গে শেষ করে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবেন। আমরা দাবি করছি, যেন এই নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আপনাদের কি মনে হয় দেশে নির্বাচন হবে? অনেক মানুষ জিজ্ঞেস করে, নির্বাচন কি হবে? গতকাল প্রেস সেক্রেটারি যে বক্তব্য রাখলেন, তাতে কি মনে হয় নির্বাচন হবে? বেশির ভাগ মানুষ মনে করে নির্বাচন হবে না। তাহলে কী হবে? আমাদের ভাবনার দরকার আছে।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আওয়ামী লীগ তো নেই, দুঃশাসন কি বিদায় নিয়েছে? না। আমাদের আত্মতৃপ্তির কিছু নেই। আমাদের সামনে এখনো ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো বিরাজমান। রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বত্র ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্মারা, দিল্লির আধিপত্যের কালো থাবা চতুর্দিকে ছেয়ে বসছে। ব্যবসা-বাণিজ্য-রাজনীতি-আন্তর্জাতিক নীতি-কূটনীতি ইভেন সামনের নির্বাচনে জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে কিভাবে ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া যায় তার চক্রান্ত এখনো বিদ্যমান।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, স্বৈরাচার পালিয়েছে। কিন্তু স্বৈরাচারী মানসিকতা বিরাজমান। আজকেও যদি দেখেন, এটা যদি না হতে পারে, ওটা হতে পারবে না। এ রকম বক্তব্য দিচ্ছেন আমাদের তরুণ নেতৃত্বের কতিপয় নেতা। আপনি আপনার চাহিদা বলতেই পারেন, এটা আপনার স্বাধীনতা। কিন্তু আপনি এটা বলতে পারেন না যে, এটা না হলে, ওইটাও হবে না। এই অধিকার আপনার নেই। এই মানসিকতা আর স্বৈরাচারের মানসিকতা একই।

তিনি বলেন, ৬৪ জন সাংবাদিক শহীদ হয়েছেন। মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমানের মতো বয়োজ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা নিগৃহীত হয়েছেন। সংগ্রামের সম্পাদক আসাদ ভাই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শুধু লেখনীর কারণে। এখনো তো আপনাদের কণ্ঠে একই ধরনের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এটি কি ঠিক?

বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, গত ১৭ বছরে সাংবাদিকদের ভূমিকা বর্তমান সরকার স্বীকার করতে চায় না। এই সরকারের যারা সুবিধাভোগী, তারা এক-দেড় মাস লড়াই করেছেন। আমরা সাংবাদিকরা ১৭টি বছর ঢাকার রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি, অনেকে খুন হয়েছেন। তারপর স্বৈরাচারী সরকারের চূড়ান্ত পতনের জুলাই বিপ্লব এসেছে। সেখানে শুধু পেশাজীবী নয়, সাংবাদিকদেরও অবদান রয়েছে। আজকে মাঝে মাঝে কিছু শিশুকে দেখি সাংবাদিকদের হুমকি দিতে। তোমরা দেড় মাসের নেতা। আমরা ১৭ বছর লড়াই করে ফ্যাসিবাদের তক্ততাউস কাঁপিয়ে তুলেছিলাম। দেড় মাস নেতৃত্ব দিয়ে, ১৭ বছরের সংগ্রামকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তোমরা সাংবাদিকদের হুমকি দাও, এটা মেনে নেব না।

অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠ সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ বলেন, একটা ফ্যাসিবাদের ভাষা আমরা দেখতে পাচ্ছি। এটার নিন্দা করছি। মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ, হুমকি দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ করছি, সেটা খুবই অমঙ্গলসূচক। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। কোনোভাবে মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে, হুমকি দিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করা যায় না।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ইলিয়াস খান, এ কে এম মহসিন, ইরফানুল হক জাহিদ, সাঈদ খান, দিদারুল আলম, খন্দকার আলমগীর হোসেন ও প্রবাসী সাংবাদিক ইমরান আনসারী প্রমুখ।

মন্তব্য

‘ক্ষমা’ পেতে পারেন সাবেক আইজিপি

মেহেদী হাসান পিয়াস
মেহেদী হাসান পিয়াস
শেয়ার
‘ক্ষমা’ পেতে পারেন সাবেক আইজিপি

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিচার শুরু হয়েছে। এ মামলায় অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হতে আবেদন করেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।

গতকাল বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আবেদনটি মঞ্জুর করে তাঁকে সাক্ষী হিসেবে গণ্য করে সাক্ষ্য উপস্থাপনের অনুমতি দেন। এর পরই প্রশ্ন উঠেছে, মামুন কি রাজসাক্ষী হয়েছেন? হয়ে থাকলে তিনি ট্রাইব্যুনালের কাছ থেকে কী প্রতিকার পাবেন বা পেতে পারেন?

 

মামুনের দোষ স্বীকার

রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রধানমন্ত্রী পদে থেকে অপরাধ করায় শেখ হাসিনাকে এই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে।

প্রসিকিউশনের দাবি, শেখ হাসিনা ছিলেন জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মাস্টারমাইন্ড। ফলে অপরাধের সর্বোচ্চ দায় শেখ হাসিনারই। এ মামলায় সহ-আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। অপরাধ সংঘটনের সময় তিনি রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশের সর্বোচ্চ পদে ছিলেন।
তিন আসামির মধ্যে মামুনই একমাত্র গ্রেপ্তারকৃত আসামি। গতকাল মামলার অভিযোগ গঠনের আদেশের আগে তাঁকে ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় তোলা হয়। এরপর বিচারিক কাজ শুরু হলে ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী আমলে নেওয়া পাঁচ অভিযোগ পড়ে শোনান। অভিযোগ পড়া শেষ হলে বিচারক মোহিতুল আসামি মামুনকে সরাসরি জিজ্ঞেস করেন, উত্থাপিত অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি নিজেকে দোষী না নির্দোষ মনে করেন।
তখন সাবেক আইজিপি মামুন দাঁড়িয়ে বলেন, আমি দোষ স্বীকার করছি। এই মামলাসংশ্লিষ্ট প্রকৃত সত্য ও সমস্ত পরিস্থিতি স্বেচ্ছায় সম্পূর্ণ প্রকাশ করতে চাই। এরপর এই আসামিকে মামলার সাক্ষী এবং তাঁর বক্তব্য সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ। একই সঙ্গে আরজি জানান, আবেদনটি মঞ্জুর করা হলে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ট্রাইব্যুনাল যেন তাঁকে কারাগারে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। ট্রাইব্যুনাল তখন আবেদনটি মঞ্জুর করে সাবেক আইজিপি মামুনকে সাক্ষী হিসেবে তাঁর বক্তব্য উপস্থাপনের অনুমতি দেন।

 

রাজসাক্ষী নিয়ে যা বলা আছে ট্রাইব্যুনাল আইনে? 

এই মামলায় তিন আসামির বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি বা ঊর্ধ্বতনের নির্দেশনার দায়সহ হত্যা, হত্যা চেষ্টা, ব্যাপক মাত্রায় পদ্ধতিগত হত্যা, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণ, সংঘটিত অপরাধ প্রতিরোধ না করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এসব অপরাধের বিচার হচ্ছে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে। আইনটির ১৫ ধারায় একজন রাজসাক্ষীর ক্ষমা বিষয়ে বলা আছে। ধারার ১ উপধারায় বলা হয়েছে, বিচারের যেকোনো পর্যায়ে, ধারা ৩-এ উল্লিখিত যেকোনো অপরাধের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত বা গোপনে জড়িত বলে মনে করা হয় এমন যেকোনো ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণের উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল, অপরাধের সাথে সম্পর্কিত তার জ্ঞানের মধ্যে থাকা সম্পূর্ণ পরিস্থিতি এবং সংশ্লিষ্ট অন্য সকল ব্যক্তির কাছে, প্রধান বা সহায়তাকারী হিসেবে সম্পূর্ণ এবং সত্য প্রকাশ করার শর্তে, এই ক্ষমা প্রদান করতে পারে।

২ উপধারায় বলা আছে, এই ধারার অধীনে অভিযোগ গ্রহণকারী প্রত্যেক ব্যক্তিকে বিচারে সাক্ষী হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর ৩ উপধারায় বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই ব্যক্তিকে হেফাজতে আটক রাখা হবে বলা আছে।

 

রাজসাক্ষী হলে আইনের শর্ত পূরণ করতে হবে : রাজসাক্ষী হতে চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মামুনের আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, এই মামলায় আদালত তাঁকে সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। সাক্ষ্য-জেরার পর আদালত যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে তিনি সব সত্যি বলেছেন, কোনো কিছু গোপন করেননি বা তাঁর সাক্ষ্যের পর প্রকৃত সত্য উদঘাটন হয়েছে, তখন আদালত তাঁকে রাজসাক্ষী হিসেবে স্বীকৃতি দেবেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ১৫ ধারায় যেসব শর্তের কথা বলা আছে, সেই সব শর্ত তাঁকে পূরণ করতে হবে। শর্ত পূরণ করতে পারলে ট্রাইব্যুনাল তাঁকে রাজসাক্ষী হিসেবে ঘোষণা করবেন। রাজসাক্ষী হতে পারলে ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার আছে তাঁর অপরাধ ক্ষমা করার।

প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম বলেন, আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন দোষ স্বীকার করেছেন ট্রাইব্যুনালের কাছে। তিনি বলেছেন, এই মামলার সম্পূর্ণ সত্যি এবং সব পরিস্থিতি তুলে ধরতে চান। এই মর্মে একটি আবেদনও দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদনটি মঞ্জুর করেছেন এবং মামলার সাক্ষী হিসেবে তাঁর বক্তব্য উপস্থাপনের অনুমতি দিয়েছেন।

 

ট্রাইব্যুনালে রাজসাক্ষী হওয়ার এটিই প্রথম নজির : প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম বলেন, ফৌজদারি অপরাধের মামলায় রাজসাক্ষী হওয়ার অসংখ্য উদাহরণ থাকলেও আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের ইতিহাসে আর কোনো আসামি রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেননি। মামুনকে কারাগারে আলাদা সেলে রাখা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু তিনি অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করে রাজসাক্ষী হতে চেয়েছেন এবং যেসব আসামির বিরুদ্ধে তিনি বলতে পারেন বা তাঁর বক্তব্যে যেসব আসামির সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে, সেসব আসামি তাঁকে বায়াস (পক্ষে আনার) করার চেষ্টা করতে পারেন, তাঁর নিরাপত্তার ঘাটতি হতে পারে, এই জন্য কারাগারে তিনি যেন আইসোলেটেড (বিচ্ছিন্ন) থাকেন অর্থাৎ আলাদা সেলে রাখা হয়, সেই আবেদন করেছেন। আবেদনটি মঞ্জুর করা হয়েছে। কারাগারে আলাদা সেলে থাকলেও সাবেক আইজিপি হিসেবে মামুন যে ডিভিশন সুবিধা পেয়ে আসছিলেন, তার বাইরে বাড়তি কোনো সুবিধা তিনি পাবেন না বলেও জানান প্রসিকিউটর তামিম।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ