ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫
২৬ আষাঢ় ১৪৩২, ১৪ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫
২৬ আষাঢ় ১৪৩২, ১৪ মহররম ১৪৪৭

রক্ত ও প্লাটিলেটের চাহিদা বেড়ে দ্বিগুণ

শিমুল মাহমুদ
শিমুল মাহমুদ
শেয়ার
রক্ত ও প্লাটিলেটের চাহিদা বেড়ে দ্বিগুণ
এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে। রাজধানীর মুগদা হাসপাতালের ওয়ার্ডে শয্যা খালি নেই। তাই মেঝেতেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। গতকাল তোলা। ছবি : শেখ হাসান

দেশে এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ায় ব্লাড ব্যাংকগুলোতে রক্ত ও প্লাটিলেটের চাহিদা বেড়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন ব্লাড ব্যাংক ও হাসপাতাল ঘুরে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে রক্ত ও প্লাটিলেটের চাহিদা দ্বিগুণ হয়েছে।

রক্ত ও প্লাটিলেটের চাহিদা বেড়ে দ্বিগুণএমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৮৮৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। একই সময়ে ডেঙ্গুতে আরো তিনজন মারা গেছে।

এর মধ্যে দুজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। তাঁরা হলেন হাজারীবাগ থানার কনস্টেবল রাসেল ও গেণ্ডারিয়া থানার নারী কনস্টেবল আয়েশা আক্তার।

গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) এ কে এম হাফিজ আক্তার এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ডিএমপির অর্ধশতাধিক সদস্য রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

দেশে ডেঙ্গু রোগী বাড়লেও পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।

গতকাল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৭৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ঢাকা মেডিক্যাল, সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন হাসপাতালে এখনো সিট খালি। অর্থাৎ রোগী বাড়লেও এখনো তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা অন্যান্য হাসপাতালের পাশাপাশি মহাখালী ডিএনসিসি কভিড-১৯ হাসপাতালেও রোগী ভর্তি করেছি।

প্রয়োজনে ওই হাসপাতালকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড করে দেওয়া হবে।

তবে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য রক্তের বিপুল চাহিদা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে দাতা ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ব্লাড সেন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ইনচার্জ) নুর আলম সবুজ কালের কণ্ঠকে বলেন, গত এক সপ্তাহে রোগীর ডোনার থেকে ব্লাড সংগ্রহ করা হয়েছে ২০০ ইউনিট। প্লাটিলেট কনসেনট্রেট ও এফারেসিস প্লাটিলেট মিলিয়ে সংগ্রহ করা হয়েছে ১২০ ইউনিট, যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি এবং তা মোট চাহিদার ২০ শতাংশ।

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কর্মকর্তা ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ডেঙ্গু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্লাটিলেটের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়েছে।

এক ইউনিট প্লাটিলেট কনসেনট্রেটের জন্য চারজন ডোনার প্রয়োজন, যা অনেক রোগীর পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব হয় না। আবার এফারেসিস প্লাটিলেটের (একজন থেকে এক ইউনিট) জন্য ভালো ডোনার পাওয়াও যায় না। এর খরচ বেশি হওয়ায় সবার এটি করার সামর্থ্য নেই।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের কাউন্সিলর ও সমন্বয়ক সুব্রত বিশ্বাস বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৮৫ থেকে ৯০ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্লাটিলেট সংগ্রহ করা হয়েছে ১৫ ইউনিট, যা গত কয়েক মাসের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর স্বজনরাই বেশি আসছে প্লাটিলেট ও রক্তের জন্য।

এ ছাড়া বাঁধন, কোয়ান্টাম, পুলিশ ব্লাড ব্যাংক, সন্ধানী ব্লাড ব্যাংকের স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, প্লাটিলেট ও রক্তের জন্য প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজারের বেশি কল আসছে। কিন্তু রক্তদাতা না থাকায় চাহিদা ২৫ শতাংশের বেশি পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেজ্ঞরা বলছেন, রক্তক্ষরণের চিহ্ন দেখা দিলে এবং প্লাটিলেট কাউন্ট ২০ হাজারের নিচে নামলে অথবা রক্তক্ষরণ নেই কিন্তু প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে, তবেই প্লাটিলেট দেওয়ার কথা ভাবা হয়।

তিনজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৮৮৯ জন : দেশে গতকাল সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরো তিনজন মারা যাওয়ায় চলতি বছর এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৭৬-এ পৌঁছল। এই সময়ে আরো ৮৮৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে মোট তিন হাজার ২৫৩ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে এক হাজার ১৭৩ জন ঢাকা বিভাগের বাইরের। নতুন রোগীদের নিয়ে এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে মোট ১৩ হাজার ৮৪৩ জন।

মৃত্যু বেশি শক সিনড্রোমে : চলতি বছর ঢাকায় ডেঙ্গু রোগীদের একটি বড় অংশ চিকিৎসা নিয়েছে রাজধানীর মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এর মধ্যে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

হাসপাতালটির পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, রোগীরা অনেক দেরিতে চিকিৎসার জন্য আসছে। এতে দ্রুত প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে, কিন্তু সবাইকে রক্ত আর প্লাটিলেট দিতে হচ্ছে না। রক্তের প্রয়োজন হচ্ছে এমন রোগী একেবারে কম।

তিনি বলেন, ডেঙ্গুর শক সিনড্রোমে মৃত্যু বেশি হচ্ছে। এ পর্যায়ে রোগীর পালস, রক্তচাপ কমে যায়, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রক্ত ও অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে না। এতে রোগীর মস্তিষ্ক, হার্ট, কিডনি, লিভারের মতো অঙ্গগুলো ধীরে ধীরে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এ অবস্থায় আসা রোগীদের বাঁচানো অনেক কঠিন। তখন রোগীদের আইসিইউ সাপোর্টের প্রয়োজন হয়।

প্লাটিলেট কমে রোগী মৃত্যুর ঘটনা নেই : অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, আমাদের অনেক ডাক্তার ও সাধারণ মানুষের ধারণা, প্লাটিলেট কমে গেলে রক্তপাত হয়ে রোগীর মৃত্যু হয়। আসলে এটা ভুল। প্লাটিলেট বা রক্তের কারণে রোগীর মৃত্যুর ঘটনা তেমন নেই। প্লাটিলেট কমলে শরীরে এক ধরনের মাইনর ক্যাপিলারি ব্লিডিং হয়। এতে রোগী মারা যায় না। রোগী মারা যায় শক সিনড্রোমে।

কখন প্লাটিলেট প্রয়োজন হয় : অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, যদি এমন হয়, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর প্লাটিলেট কমে গেছে, কিন্তু অন্য কোনো রোগে তাঁর জরুরি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন, সে ক্ষেত্রে রোগীর প্লাটিলেট প্রয়োজন হয়। যেমনসন্তানসম্ভাবনা কোনো নারীর সিজার করতে হবে, কিন্তু তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এবং প্লাটিলেট কম রয়েছে, সে ক্ষেত্রে তাঁর প্লাটিলেটের দরকার হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ডেঙ্গু রোগীকে প্লাটিলেট দেওয়ার নির্দেশনা খুব একটা নেই। যদি কারো প্রয়োজন হয়, তাহলে রক্ত দেওয়ার কথা বলা আছে গাইডলাইনে।

জরুরি ও গুরুতর রোগীদের জন্য হাসপাতাল : সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানআইইডিসিআরের উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, শয্যাসংকটের কারণে ঢাকার সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীদের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। সামনে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে। তাই এখন প্রয়োজন হলো প্রতিটি ওয়ার্ড পর্যায়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি করা, যাতে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল জরুরি ও গুরুতর রোগীদের জন্য থাকে।

ডিএনসিসির অভিযানে ২৮ লাখ টাকা জরিমানা : এডিস মশা নিধনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনডিএনসিসির মাসব্যাপী বিশেষ অভিযানের তৃতীয় দিন গতকাল সোমবার পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসহ মোট ২৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মামলা হয়েছে ১৬টি।

অভিযানের সময় সরকারি-বেসরকারি সাতটি ভবনের বেইসমেন্টে পরিদর্শন করে পাঁচটিতেই এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করে ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেই যদি বেইসমেন্টে এভাবে মশার চাষ করা হয়, তাহলে আমরা কিভাবে সফলতা পাব?

সকাল ১১টায় মশক নিধন বিরোধী অভিযানে কারওয়ান বাজারে একুশে টিভি ভবনে (জাহাঙ্গীর টাওয়ার) মশার লার্ভা পাওয়া যায়। ভবন কর্তৃপক্ষকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া লার্ভা পাওয়ায় টিসিবি, বিটিএমসি ও যমুনার নির্মীয়মাণ ভবনকে একই অঙ্কের টাকা জরিমানা করা হয়।

ডিএসসিসির অভিযানে ২৩ স্থাপনাকে জরিমানা : এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনডিএসসিসি পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে বাংলাদেশ আই হসপিটালের ধানমণ্ডি শাখা ও কনকর্ডের নির্মীয়মাণ ভবনসহ মোট ২৩টি স্থাপনার মালিককে জরিমানা করা হয়েছে।

দক্ষিণ সিটির আটটি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ২৩টি মামলায় দুই লাখ ১৩ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

মন্তব্য

এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ আজ

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে আজ বৃহস্পতিবার। দুপুর ২টা থেকে যেকোনো মোবাইলে এসএমএস, শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট এবং নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফল জানতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এই ফল প্রকাশের মাধ্যমে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৯ লাখ শিক্ষার্থীর অপেক্ষার অবসান হবে।

এ বছর আগের মতো ফলাফল প্রকাশের কোনো আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না।

তবে আন্ত শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে দুপুর ২টায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সম্মেলনকক্ষে সাংবাদিকদের কাছে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।

শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার গতকাল বলেছেন, এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তরে আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না। দুই মাসের কম সময়ের মধ্যেই সব বোর্ডের ফলাফল প্রকাশিত হচ্ছে। সব বোর্ড নিজেদের মতো করে ফল প্রকাশ করবে।

 

যেভাবে জানা যাবে ফল : যেকোনো মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল জানতে মোবাইলের এসএমএস অপশনে গিয়ে ঝঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে পরীক্ষার বছর লিখে তা ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে ফল জানিয়ে দেওয়া হবে।

দাখিলের ফল পেতে উধশযরষ লিখে স্পেস দিয়ে গধফ লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২৫ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। কারিগরি বোর্ডের ক্ষেত্রে ঝঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে ঞবপ লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২৫ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে।

শিক্ষা বোর্ডগুলোর সমন্বিত ওয়েবসাইট  http://www.educationboardresults.gov.bd -এর মাধ্যমে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল জানা যাবে। আন্ত শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি জানিয়েছে, ওয়েবসাইটে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, পরীক্ষার নাম, বছর ইনপুট দিয়ে ও শিক্ষা বোর্ড সিলেক্ট করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করে ফল জানা যাবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় নিয়মিত-অনিয়মিত মিলিয়ে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন শিক্ষার্থী। দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয় দুই লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন।

ফল প্রকাশের পর তা পুনর্নিরীক্ষণের সময়ও জানিয়েছে আন্ত শিক্ষা বোর্ড। ১১ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। আবেদন পদ্ধতি শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট এবং টেলিটক বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে আজ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।

 

মন্তব্য
ভারতীয় জেনারেলের দাবি

চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশের জোট ভারতের নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলতে পারে

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশের জোট ভারতের নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলতে পারে

ভারতের প্রতিরক্ষা সর্বাধিনায়ক (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান বলেছেন, চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ নিজেদের স্বার্থে একে অন্যের প্রতি ঝুঁকছে। এই ঘনিষ্ঠতা ভারতের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। গত মঙ্গলবার ভারতের চিন্তক প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অনিল চৌহান এ কথাগুলো বলেন।

জেনারেল চৌহান বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনৈতিক সংকট বহিরাগত শক্তিদের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ করে দিচ্ছে।

ঋণ-কূটনীতির সাহায্যে প্রভাব বিস্তারের মধ্য দিয়ে তারা ভারতের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। পাশাপাশি ঘন ঘন সরকার পরিবর্তন এবং সেই সঙ্গে তাদের আদর্শচ্যুতি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।

জেনারেল চৌহান বলেন, এই প্রবণতা ভারতের জন্য বড় এক সমস্যা। সম্প্রতি চীনের কর্মকর্তারা সে দেশে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সম্মেলনে মিলিত হয়েছিলেন।

তিনটি দেশই নিজেদের স্বার্থে একে অন্যের কাছাকাছি আসছে। এই নৈকট্য ভারতের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে তাঁর ধারণা।

চীন ও পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা বহু পুরনো। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদল, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগ এবং তাঁর ভারতে আশ্রয়লাভ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

এই পরিস্থিতিতে চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশের কাছাকাছি আসা জেনারেল চৌহানকে সন্দিহান করে তুলেছে। তিনি মনে করছেন, এই তিন দেশের ঘনিষ্ঠতা ভারতের চিন্তা বাড়াতে পারে। স্থিতিশীলতার পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে।

অনুষ্ঠানে সিডিএস জেনারেল চৌহানকে পাকিস্তান-ভারত সাম্প্রতিক সংঘাতের সময় চীনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে তিনি বলেন, ওই সংঘাতে পাকিস্তানকে চীন কতটা ও কিভাবে সমর্থন দিয়েছে, সহায়তা করেছে, তা বলা খুবই কঠিন।

ওই সংঘাতের সময় উত্তর সীমান্তে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা যায়নি।

জেনারেল চৌহান বলেন, তবে ঘটনা হলো পাকিস্তান তাদের প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের বেশির ভাগটাই চীন থেকে নেয়। সে কারণে পাকিস্তানে চীনের উপস্থিতি থাকার কথা। বিশেষ করে সংঘাত ও সংঘর্ষের সময়। সেটা কতটা ছিল এবং সমর্থন বা সহায়তার চরিত্র কেমন ছিল, তা বলা সহজ নয়।

অপারেশন সিন্দূর নাম দিয়ে পাকিস্তানে হামলার প্রসঙ্গে ভারতের উপসেনাপ্রধান লে. জেনারেল রাহুল আর সিং অবশ্য গত শুক্রবার বলেছিলেন, সংঘাতের সময় পাকিস্তানকে চীন শুধু সাহায্যই করেনি, সংক্ষিপ্ত ওই যুদ্ধকে তারা তাদের অস্ত্রের পরীক্ষাগার করে তুলেছিল।

ওই কর্মকর্তার দাবি, ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ওই যুদ্ধে যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে, সেগুলোর ৮১ শতাংশই চীনের তৈরি। সেসব অস্ত্র প্রকৃত যুদ্ধের সময় কতটা কার্যকর, সে পরীক্ষাও চীন করে ফেলেছে। ওই সংঘাতকে চীন তার অস্ত্রসম্ভারের পরীক্ষাগার হিসেবে ব্যবহার করেছে। সূত্র : ডেকান হেরাল্ড

 

 

মন্তব্য
গণ-অভ্যুত্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘন

বিচার আইসিসিতে পাঠানোর অনুরোধ অ্যামনেস্টিরf

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
বিচার আইসিসিতে পাঠানোর অনুরোধ অ্যামনেস্টিরf

২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনা আইসিসিতে পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এ আহ্বান জানিয়েছে ব্রিটেনভিত্তিক এই মানবাধিকার সংগঠন।

গতকাল বুধবার সংগঠনটির সাউথ এশিয়া বিষয়ক ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এসংক্রান্ত একটি পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনার বিচার রোম সনদের ১৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

গতকাল বুধবার ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে আন্দোলনকারীদের ওপর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি গুলির নির্দেশের একটি ফোনকল নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত সব অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

এর আগে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের একটি তথ্য-উপাত্তভিত্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে আন্দোলন চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে প্রায় এক হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই সহিংসতায় নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কর্তৃক ব্যবহৃত ধাতব পেলেটযুক্ত অস্ত্রের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন।

এ ছাড়া হাজার হাজার মানুষ গুরুতর ও স্থায়ীভাবে আহত হয়েছেন।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের ব্যবস্থা করা এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে একটি ন্যায্য বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে সব অপরাধীকে জবাবদিহির আওতায় আনা।

 

 

মন্তব্য

সরকারের উদ্যোগেই জুলাই ঘোষণাপত্র, ইতিবাচক বিএনপি

    দায়িত্বে আছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা দু-এক দিনের মধ্যে মতামত জানাবে বিএনপি
হাসান শিপলু
হাসান শিপলু
শেয়ার
সরকারের উদ্যোগেই জুলাই ঘোষণাপত্র, ইতিবাচক বিএনপি

ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে আবার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই অংশ হিসেবে প্রধান কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) চাপের মুখে সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে।

এর আগে কয়েক দফা ঘোষণাপত্র দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি।

তবে এবারের উদ্যোগকে বিএনপি বেশ ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও মনে করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত একটি ঐকমত্য হওয়া প্রয়োজন।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া সম্প্রতি তাদের দলের একজন শীর্ষ নেতার কাছে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গত দুই দিন দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করা হয়।

ঘোষণাপত্রটি কার্যকরের সময়কালসহ কয়েকটি বিষয়ে বিএনপির দ্বিমত আছে।

ঘোষণাপত্রে ১৯৭২ সালের সংবিধান উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় সংশোধন, পুনর্লিখন বা প্রয়োজনে বাতিল করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করার কথা বলা আছে। এ বিষয়ে বিএনপির আপত্তি রয়েছে। দলটি পরবর্তী সংসদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংবিধান সংশোধনের পক্ষে থাকলেও সংবিধান বাতিল করে তা পুনর্লিখনের বিপক্ষে।

সরকারসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে ঘোষণাপত্রের খসড়া প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিএনপির একজন শীর্ষ নেতার কথা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, এ নিয়ে অগ্রগতি হচ্ছে। খসড়া ঘোষণাপত্র তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এ যৌথ প্রচেষ্টার জন্য আরো মতামত দরকার, যাতে এটি ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য হয় এবং জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারে।

সরকারের পক্ষ থেকে একটি খসড়া ঘোষণাপত্র পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, সরকারের খসড়া ঘোষণাপত্রের ওপর ভিত্তি করে গত ফেব্রুয়ারিতে আমরা মতামত দিয়েছিলাম। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আর যোগাযোগ করা হয়নি। এখন আবার একটি খসড়া দেওয়া হয়েছে। আমরা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে মতামত জানাব।

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর গণ-অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারী সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হঠাৎ করে এই ঘোষণাপত্রের বিষয়টি সামনে আনে। তখন এর প্রভাব কী হতে পারে, তা বুঝতে চাইছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ঘোষণাপত্রের পক্ষে-বিপক্ষে তর্কবিতর্কের পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিতে এক ধরনের উত্তাপ তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে সরকার থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সরকার সর্বদলীয় বৈঠক করে, কিন্তু তাতে ঐকমত্য হয়নি। ওই সময় বিএনপি এত দিন পর ঘোষণাপত্রের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এরপর গত ১৬ জানুয়ারি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই ইস্যুতে সরকারের কার্যক্রম ধীরগতিতে চলতে থাকে।

সম্প্রতি এনসিপি জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে আবার সরব হয়ে ওঠে। গত ৪ জুলাই দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঠাকুরগাঁওয়ে এক পথসভায় এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জুলাই-আগস্টের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি এও বলেন, এই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক ভিত্তি থাকবে। অন্যথায় তাঁদের পক্ষ থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেওয়া হবে বলে সরকারকে সতর্ক করেন নাহিদ। 

সরকারসংশ্লিষ্ট একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলেন, ঘোষণাপত্রের মূল অংশীজন হলো বিএনপি ও এনসিপি। তাদের মধ্যে ঐকমত্য হলে দ্রুত ঘোষণাপত্র দেওয়া যাবে।

ঘোষণাপত্রে উল্লেখযোগ্য যা আছে : খসড়া ঘোষণাপত্রে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থান, ওয়ান-ইলেভেনের প্রেক্ষাপট এবং ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিষয় তুলে ধরা হয়। কোন পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়, সে বিষয়টিও উঠে আসে। 

এতে ১৯৭২ সালের সংবিধানের কাঠামোগত দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগের কথাও বলা হয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থতা এবং গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকারিতা ক্ষুণ্ন করার কথাও তুলে ধরা হয়। 

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকার সাংবিধানিকভাবে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে মত প্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করার ফলে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার বিপ্লব সংগঠিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র, মত প্রকাশ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাা পুনঃপ্রবর্তনের পথ সুগম হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক কালের কণ্ঠকে বলেন, স্বাধীনতা-উত্তর সিপাহি-জনতার বিপ্লব বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আবার ওয়ান-ইলেভেনের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। মূলত তখন থেকে শেখ হাসিনার একচ্ছত্র ক্ষমতা, আধিপত্য ও কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদের পথ সুগম হয়। এই বিষয়গুলো যুক্ত করার ফলে ঘোষণাপত্র বেশ সমৃদ্ধ হয়েছে।

খসড়ায় স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে জনতার অবিরাম সংগ্রাম এবং এর মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থান এবং পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ সৃষ্টির বিষয়টিও উঠে আসে।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ধারাবাহিক তিনটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।

তবে বিএনপি নেতাদের কয়েকজন ২০০৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনকেও এর সঙ্গে যুক্ত করার পরামর্শ দেন দলীয় ফোরামে।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে বলা হয়, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বলে প্রদত্ত সুপ্রিম কোর্টের মতামত অনুসারে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকার অনুমোদিত হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা : গত মঙ্গলবার এবং গতকাল বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খসড়া ঘোষণাপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ করে কিছুটা সংযোজন-বিয়োজন করে বিএনপি তাদের মতামত দিয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বিএনপি এ বিষয়ে তাদের মতামত সরকারকে জানাবে।

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

 

আরো যেসব বিষয়ে আলোচনা : মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক আরোপ, নারী আসন, নির্বাচনে পিআর পদ্ধতিসহ সংস্কারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ মার্কিন শুল্ক আরোপের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি। একই সঙ্গে এই শুল্কনীতি পুনর্বিবেচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে দলটি।

জানা গেছে, বৈঠকে সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের প্রতিবেদন তুলে ধরেন সালাহউদ্দিন আহমদ। এরপর সংস্কারের বিভিন্ন ইস্যুতে মতামত দেন বিএনপি নেতারা। ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এর মধ্যে সংসদে নারীদের আসন ৫০ থেকে ১০০-তে উন্নীত করার ব্যাপারে রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়েছে। তবে তাঁরা কিভাবে নির্বাচিত হবেন, সে ব্যাপারে এখনো ঐকমত্য হয়নি। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, তাঁরা প্রচলিত পদ্ধতিতে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নির্বাচিত করার পক্ষে অবস্থান নেবেন। পাশাপাশি কোনোভাবেই পিআর পদ্ধতি মানবেন না তাঁরা।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ