<p>ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম তিন পর্বের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। কিছু জায়গায় গতবারের তুলনায় ভোটের হার কমেছে। গত ১৯ এপ্রিল প্রথম পর্বে ১০২টি আসনে ভোট হয়েছে। ভোট পড়েছে ৬৬.১৪ শতাংশ। পাঁচ বছর আগে প্রথম পর্বে ভোটের হার ছিল ৭০ শতাংশ। দ্বিতীয় পর্বে ৮৮টি আসনে ভোটগ্রহণ হয় গত ২৬ এপ্রিল। ১৩টি রাজ্যে ভোটদানের গড় ছিল ৬৬.৭১ শতাংশ। এর মধ্যে ত্রিপুরায় ৮০, মণিপুরে প্রায় ৮৫ ও পশ্চিমবঙ্গে ৭৬.৫৮ শতাংশ ভোট হয়েছে। যে রাজ্যগুলোকে বিজেপি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, সেই উত্তর প্রদেশে ৫৫.১৯, মধ্য প্রদেশে ৫৮.৫৯, বিহারে ৫৯.৫৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় পর্বেও গতবারের তুলনায় তিন শতাংশ কম ভোট পড়েছে।</p> <p>এবার গত ৭ মে তৃতীয় পর্বের ভোটের দিকে তাকানো যাক। ১১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৯৩টি আসনে গড় ভোট পড়েছে ৬৪.৬৮ শতাংশ। ২০১৯ সালের তুলনায় এক.৬৫ শতাংশ কম ভোট পড়েছে তৃতীয় পর্বে। কিন্তু এবারও বিহারে ৬০ শতাংশের কম ভোট পড়েছে। উত্তর প্রদেশে ৫৭.৫৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। মহারাষ্ট্রে পড়েছে ৬৩.৫৫ শতাংশ। ভোট কিছুটা বেড়েছে মধ্য প্রদেশে, ৬৬.৭৪ শতাংশ।</p> <p><strong>ভোটে সহিংসতা</strong><br /> উত্তর-পূর্ব ভারত ও ছত্তিশগড় বাদ দিলে অন্যত্র এই তিন পর্বে এখনো পর্যন্ত সহিংসতার ঘটনা কম। এমনকি পশ্চিমবঙ্গেও শুধু বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ঘটেছে। বোমা বিস্ফোরণে এক শিশুর মৃত্যু এবং অন্য দুই শিশু আহত হওয়া ছাড়া খুব বড় কোনো সহিংসতার ঘটনা এখনো ঘটেনি। ভুয়া এজেন্ট এবং দুই-একজন ভুয়া ভোটার ধরা পড়লেও ভোট লুটের খবর এখনো আসেনি।</p> <p>হুগলির পাণ্ডুয়ায় পুকুরের ধারে খেলতে গিয়ে একটি শিশু বোমা ভর্তি বালতিতে হাত ঢুকিয়ে দেয়। বালতির ওপরে আবর্জনা রাখা ছিল। বিস্ফোরণে এক শিশু মারা যায়। তার দুই বন্ধু গুরুতর আহত হয়েছে।</p> <p>অবশ্য দক্ষিণবঙ্গে এখনো ভোট শুরু হয়নি। ভোটে সহিংসতার জন্য দক্ষিণবঙ্গ ‘কুখ্যাত’। দক্ষিণবঙ্গে ভোট এলে আরো পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে, পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতা কমেছে না বেড়েছে।</p> <p>ছত্তিশগড়ের বাস্তারে বিস্ফোরণে নিরাপত্তা বাহিনীর এক জোয়ানের মৃত্যু হয়েছে। মণিপুরে ভোটের দিন বেশ কয়েকটি গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। একটি বুথে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। একটি কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের এজেন্টকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল কয়েকজন। কিন্তু ভোটদাতা ও স্বেচ্ছাসেবকদের বাধায় তারা তা করতে পারেনি।</p> <p>মণিপুরের ইম্ফলে কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে ইভিএমের ক্ষতি করার ঘটনা ঘটেছে। সারা দিন ধরে সশস্ত্র মানুষকে ভোটকেন্দ্রের পাশে দেখা গেছে বলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।</p> <p><strong>কেন কম ভোট?</strong><br /> প্রথম তিন পর্বেই লোকসভার অর্ধেকের বেশি আসনে ভোট হয়ে গেছে। তিন পর্বেই ২০১৯ সালের তুলনায় কম ভোট পড়েছে। এর অর্থ কী, এর ফলে কার লাভ হবে, তা নিয়ে ভারতজুড়ে ভোট বিশ্লেষকরা নিজেদের মত জানিয়েছেন। অনেক যুক্তি উঠে আসছে। বিশ্লেষকরা অনেকেই বলছেন, সাধারণ মানুষ ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহ হারিয়েছেন। তার কারণ, বেশ কিছু রাজনীতিকের নীতিহীন দলবদল হতে পারে, সুবিধাবাদী রাজনীতি হতে পারে, আশাপূরণ না হওয়ার কারণেও হতে পারে।</p> <p>প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা বলেছেন, ‘তিন পর্বের ভোটের হার থেকে একটা কথা স্পষ্ট, উত্তর ভারতে কোনো আবেগের বিষয় নেই। ২০১৪, ২০১৯ সালে ছিল। এবারও বিজেপি আশা করেছিল, রামমন্দির তাদের সেই আবেগের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে তা হয়নি। সে জন্য প্রচুর উৎসাহ নিয়ে ভোট দিতে আসা মানুষের সংখ্যা কমেছে।’</p> <p>শরদের সঙ্গে এই ক্ষেত্রে একমত আরেক প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘কোনো ইস্যু মানুষের মনে দাগ কাটছে না। একেবারে স্থানীয় বিষয় বা জাতপাত আবার ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষের জীবন ও জীবিকার সমস্যাগুলো প্রাধান্য পাচ্ছে।’</p> <p>সাবেক ভোট বিশেষজ্ঞ ও বর্তমানে স্বরাজ পার্টির নেতা যোগেন্দ্র যাদব মনে করেন, ‘এর ফলে বিজেপির চিন্তা বাড়বে।’ তিনি বলেছেন, ‘গুজরাটে বিজেপি গত কয়েকটি নির্বাচনে ২৬টির মধ্যে সবগুলোতে জিতেছে। এবার কংগ্রেস ও আপ জোট বেঁধে লড়ছে। তিন থেকে চারটি আসনে তারা প্রভাব ফেলতে পারে।’</p> <p>তবে যোগেন্দ্রর মতে, কর্ণাটকে তৃতীয় পর্বে যে ১৪টি আসনে ভোট হয়েছে, তাতে গতবার বিজেপি ১২টিতে জিতেছিল, এবার কংগ্রেস বিধানসভার ফল অনুসারে সাতটি আসনে জিততে পারে। মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার সামাজিক প্রকল্পগুলো রূপায়ণ হয়েছে। তার ফল তারা পেতে পারে।</p> <p>যোগেন্দ্র বলেন, ‘পশ্চিম মহারাষ্ট্রে শরদ পাওয়ারের প্রভাব এখনো সাধারণ মানুষের মধ্যে আছে। সেখান থেকেও বিরোধী মহাজোটের ফল ভালো হতে পারে। মধ্য প্রদেশে কংগ্রেস চার-পাঁচটা আসন জেতার আশা করছে। তার মধ্যে তিনটি কেন্দ্রের ভোট তৃতীয় পর্বে হয়েছে।’</p> <p>বিজেপি মুখপাত্র গোপাল কৃষ্ণ আগরওয়াল বলেছেন, ‘ভোটের হার বিজেপির প্রত্যাশার থেকে কম। তবে তাতে দলের কোনো ক্ষতি হবে না। মানুষ মনে করছে, বিজেপি এমনিতেই জিতছে, তাই তারা আর ভোট দিতে যাননি।’</p> <p>উত্তর প্রদেশের বিজেপি নেতা অনিরুদ্ধ সিং রয়টার্সকে বলেছেন, ‘ভোটটা যদি ফেব্রুয়ারি-মার্চে হতো, তাহলে আমরা রামমন্দিরের সুফল পেতাম। তখন মন্দির উদ্বোধন নিয়ে উন্মাদনা তুঙ্গে ছিল।’</p> <p>তিন পর্বের ভোটের পর বিজেপি নেতাদেরও মনে হচ্ছে, উন্মাদনা নেই, অন্তত ভোটে রামমন্দিরের প্রভাব তারাও দেখতে পাচ্ছেন না।</p>