<p>সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দাবি করা হয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজার জনগণের জন্য খাবারের কৌটা ফেলছে, যাতে বোমা ভরা রয়েছে। ফ্রান্স২৪-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ধরনের বোমাগুলো এমন সময় ফেলা হচ্ছে, যখন গাজাবাসী তীব্র ক্ষুধায় ভুগছে এবং জাতিসংঘ এই পরিস্থিতিকে ‘বিপর্যয়কর ক্ষুধা’ বলে অভিহিত করেছে।</p> <p>তবে এখন প্রশ্ন উঠেছে, খাবারের ক্যানগুলো কি আসলেই বিস্ফোরক? ফ্রান্স২৪ ঘটনাটি বোঝার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকা বেশ কিছু ভিডিও বিশ্লেষণ করেছে। ফিলিস্তিনের কুদস নিউজ নেটওয়ার্ক একটি ভিডিও পোস্টে দাবি করেছে, ইসরায়েল গাজায় খাবারের ক্যানে বোমা ভরে বিমান থেকে নিচে ফেলছে। ভিডিওটি দুই মিলিয়নের বেশি ভিউ হয়েছে। </p> <p>আরেকটি সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস অব গাজা’-এর একটি ভিডিওতে স্থানীয়দের বরাতে বলা হয়েছে, গাজায় বোমাভর্তি খাবারের ক্যানগুলো বিস্ফোরিত হয়ে ইতিমধ্যেই দুই শিশু, একজন নারী এবং একজন পুরুষ নিহত হয়েছেন। ভিডিওতে আরো দেখানো হয়, খাবারের ক্যানের মধ্যে ছোট ধাতব বস্তু রাখা হয়েছে। টিনের ক্যানগুলো দেখতে সিলিন্ডার আকৃতির এবং কালো রঙের। ভিডিওতে বলা হয়েছে, গাজার ক্ষুধার্ত জনগণ সহজেই একে খাবারের ক্যান ভেবে ভুল করতে পারেন। কিন্তু দখলদার সৈন্যরা আসলে ক্যানের মধ্যে মাইন রেখে গেছে, কেউ ক্যানের ওপরে রাখা ধাতব চাবি দিয়ে তা খোলার চেষ্টা করলেই বিস্ফোরিত হবে।</p> <p>মিডল ইস্ট মনিটরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজার বেসামরিক নাগরিকদের জন্য বিস্ফোরক খাবারের ক্যান ফেলে গেছে বলে জানা গেছে। যা এলাকার বেসামরিক মানুষদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। এই বিপজ্জনক অবশিষ্টাংশগুলো অবরুদ্ধ গাজায় ইতিমধ্যেই ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করে তুলছে। শেয়ার করা ভিডিও অনুসারে, খান ইউনিসের একটি বিস্ফোরক প্রকৌশল দল এ ধরনের প্রচুর মাইন খুঁজে পেয়েছে। এর আঘাতে ব্যক্তির মৃত্যু বা গুরুতর অঙ্গচ্ছেদ হতে পারে এবং তাই তারা গাজার বাসিন্দাদের জন্য সতর্কতা জারি করেছে।</p> <p>তবে ফ্রান্স ২৪-এর প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, যখন ক্যানগুলোর ছবিগুলোকে জুম করলে দেখা যাবে, তাতে ‘ল্যান্ড ফিউজ মাইন’ লেখা রয়েছে। তবে ইসরায়েলি বাহিনী এই বোমা ফেলছে, তা স্পষ্ট নয়। এ ছাড়া ফ্রান্স ২৪ জানিয়েছে, তাদের বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ল্যান্ড ফিউজ মাইনের ক্যানটি খুব বড় ধরণের বিস্ফোরণ ঘটায় না। যে অংশটি বিস্ফোরণ ঘটায় তা, ক্যানের ভেতর খুব সুরক্ষিত অবস্থায় থাকে। তবে এটা নিয়ে কেউ নাড়াচরা করলে বিপদ ঘটতে পারে, কারণ অতিরিক্ত চাপে ক্যানটি বিস্ফোরিত হতে পারে। </p> <p>এদিকে রায়ান ম্যাকবেথ নামের একজন গোয়েন্দা বিশ্লেষক বলেছেন, ভিডিওতে কিছু সমস্যা আছে। যদিও আমি আরবি খুব ভালো বুঝি না, তবুও ভিডিও দেখে আমি যা বুঝতে পেরেছি, ‘এগুলো মাংসের ক্যান, খুবই বিপজ্জনক এবং বিস্ফোরিত হয়।’ রায়ান ম্যাকবেথ সফ্টওয়্যার আর্কিটেক্ট, সাইবার সিকিউরিটি মিলিটারি এবং ইন্টেলিজেন্স সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে ভিডিও নির্মাণ করে থাকেন। </p> <p>তিনি বলেন, আমার মতে এগুলো মাংসের ক্যান নয়। এগুলো ‘এম৬০৩’ ল্যান্ড মাইন ফিউজের পাত্র। ক্যানটি একটি চাবির সাহায্যে নিচ থেকে চাবি দিয়ে খোলা হয়। আমার মনে হচ্ছে, যিনি ভিডিওটি বানিয়েছেন তিনি ক্যানটি উল্টো করে ধরেছেন এবং প্যাকেজিং বিবরণ দেওয়ার সময় তা ক্যামেরা থেকে দূরে রেখেছিলেন। রায়ান ম্যাকবেথ ওই ক্যানের সঙ্গে তুলনা করে ‘এম৬০৩’ ল্যান্ড মাইন ফিউজের কিছু ছবিও দিয়েছেন। সেখানে ক্যানগুলো দেখতে ‘এম৬০৩’ ল্যান্ড মাইন ফিউজের পাত্রের মতোই মনে হচ্ছে।</p> <p><img alt="হ" height="600" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/online/2024/01/27/my1153/Untitled-6.gif" width="1000" /></p> <p>মিসর এবং ইসরায়েল এম১৫ ল্যান্ড মাইন ব্যবহার করে না, তবে লেবানন এবং জর্দান ব্যবহার করে। সুতরাং এই ফিউজগুলো চুরি করা হয়েছে বা কোনোভাবে সেই দেশগুলো থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এটা মিথ্যাও হতে পারে এবং কেউ ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে ভুল ভিডিও বানানোর চেষ্টা করছেন। ভিডিওটি হয়তো গাজায় ধারণ করা হয়নি।</p> <p><strong>সূত্র : ফ্রান্স২৪, মিডল ইস্ট মনিটর, রায়ান ম্যাকবেথ</strong><br />  </p>