<p>ম্যাগনেসিয়াম চকচকে ধূসর বর্ণের শক্তিশালী ও হালকা ধাতু। আয়রন ও অ্যালুমিনিয়ামের পর সর্বাধিক ব্যবহৃত ধাতু এটি। আর সামগ্রিক প্রাচুর্যের নিরিখে নবম। সামুদ্রিক পানিতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম লবণ এর অন্যতম উৎস। তড়িৎবিশ্লেষণের মাধ্যমে একসময় সংগ্রহ করা হতো সমুদ্র থেকে। কিছু পরিমাণ অ্যালুমিনিয়াম যুক্ত করে অ্যালুমিনিয়াম-ম্যাগনেসিয়াম সংকর ধাতু পাওয়া যায়। এই সংকরকে ম্যাগনেলিয়াম বা ম্যাগনালিয়াম বলা হয়। যুক্ত করা অ্যালুমিনিয়াম ক্ষয় প্রতিরোধী এবং ঢালাই গুণাগুণ উন্নত। সাইকেল, গাড়ি, বিমানের আসন-সহ হালকা লাগেজ ব্যাগ, ঘাস কাটার লন ময়ার ও পাওয়ার টুলে ম্যাগনেলিয়াম ব্যবহার করা হয়। </p> <p>অত্যন্ত দাহ্য ম্যাগনেসিয়াম বাতাসে পোড়ালে উজ্জল-সাদা আলোরূপে বিকিরিত হয়। এই আলো থেকে অতিবেগুনি রশ্মি পাওয়া যায়। ম্যাগনেসিয়ামের চূর্ণ বা গুঁড়া ফ্ল্যাশ পাউডার নামেও পরিচিত। শুরুতে এই পাউডার আলোকচিত্র ধারণের আলোকসজ্জায় ব্যবহার করা হতো। তবে সবচেয়ে কুখ্যাত ব্যবহার হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আগুনে-বোমার উপাদান হিসেবে।</p> <p>ম্যাগনেসিয়ামের দুটো খনিজ পাওয়া যায়। ডোলোমাইট (MgCO3) এবং ম্যাগনেসাইট (CaMg(CO3)2)। দুটোই ম্যাগনেসিয়াম কার্বনেটের রূপ। প্রতি বছর ১০ মিলিয়ন টন আহরণ করা হয়। ডোলোমাইটের ব্যবহার আধুনিক জানালার ফ্লোট গ্লাসে। তাপে ম্যাগনেসাইটকে অক্সাইডে পরিণত করে সার ও গবাদিপশুর খাদ্য পাওয়া যায়। ক্লোরোফিলের কেন্দ্রে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম। ক্লোরোফিলই কার্বন ডাই-অক্সাইড সংরক্ষণ করে খাদ্য তৈরি করে। শর্করা বা কার্বহাইড্রেটও পাওয়া যায় এখান থেকে।</p> <p>আমাদের খাদ্যের একটি অপরিহার্য উপাদান ম্যাগনেসিয়াম। বাদাম, সয়াবিন, পার্সনিপস, ভূষি এবং চকোলেট থেকেও ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। যদিও আমাদের দেহ তিন বছরের ম্যাগনেসিয়াম সঞ্চয় করে রাখে। একটা সময় সমুদ্রজলে থাকা বিশাল ভান্ডার থেকে ম্যাগনেসিয়াম আহরণ করা হতো। </p> <p><br /> <strong>দশা</strong><br /> রাসায়নিক সংকেত: Mg<br /> পারমাণবিক সংখ্যা: ১২<br /> নামকরণ: প্রাচীন গ্রিক শহর ম্যাগনেসিয়া (Magnesia)-র নামে।</p> <p><strong>বিক্রিয়া</strong><br /> ম্যাগনেসিয়াম হালকা ধাতু। এর ঘনত্ব প্রতি ঘন সেন্টিমিটারে ১.৭ গ্রাম (g/cc)। আয়রন (৭.৯) এমনকি অ্যালুমিনিয়াম (২.৭) থেকেও হালকা। ম্যাগনেসিয়াম একবার পোড়া শুরু হলে তা নেভানো প্রায় অসম্ভব। অক্সিজেন ও নাইট্রোজেনের সাথে বিক্রিয়ায় অংশ নেয়। উৎপন্ন হয় ম্যাগনেসিয়াম নাইট্রাইড।</p> <p><strong>সম্পর্কিত মৌল</strong><br /> ক্যালসিয়াম (Ca 20)<br /> স্ট্রনসিয়াম (Sr 38)</p> <p><strong>বিজ্ঞানী</strong><br /> <strong>জোসেফ ব্ল্যাক</strong><br /> ১৭২৮-১৭৯৯<br /> ফ্রেঞ্চ-স্কটিশ রসায়নবিদ। ১৭৫৫ সালে ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড (ম্যাগনেসিয়া) ক্যালসিয়াম অক্সাইড (লাইম) থেকে ভিন্ন প্রমাণ করেন।</p> <p><strong>হামফ্রে ডেভি</strong><br /> ১৭৭৮-১৮২৯<br /> ব্রিটিশ রসায়নবিদ। তড়িৎবিশ্লেষণে ম্যাগনেসিয়াম ধাতু পান ১৮০৮-এ।</p> <p><strong>বর্ণনা</strong><br /> জন এমসলে: বিজ্ঞান-লেখক। রসায়নবিদ। </p>