<p>২০২২ সালের ২ মার্চ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রথম কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড স্থাপন করা হয় ৪২ বছর বয়সী নারী তাসনোভা মোস্তাফিজ নোভার শরীরে। ওই সময় ফলাও করে সংবাদ প্রচার করা হলেও গণমাধ্যমের মুখোমুখি হতে দেখা যায়নি ওই নারীকে। প্রায় আড়াই বছর পর গত মঙ্গলবার বিশেষ অনুরোধে কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে কথা বলেন তাসনোভা ও তাঁর পরিবার।</p> <p>তাসনোভা জানান, এখন তিনি পুরোপুরি সুস্থ। ফিরেছেন স্বাভাবিক জীবনেও। তিনি বলেন, “আজকে আমি যে কথা বলছি, এটা স্বপ্নের মতো। তখন প্রতিটা মুহূর্ত ছিল চলে যাওয়ার মতো। এতটা তীব্র ব্যথা ছিল যে আমার সংসার, পরিবার সব কিছু এলামেলো হয়ে গেছে। এক পর্যায়ে চিকিৎসক আমার পরিবারকে বললেন, ‘এ রোগীকে বেশিদিন এখানে রাখা যাচ্ছে না। তিনি  দুই মাসের বেশি টিকবেন না।’ নামাজ পড়ার জন্য অজু করব সেই ক্ষমতাও ছিল না। সারাক্ষণ অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে চলতে হতো। কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড স্থাপনের পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছি। আজ হেঁটে হেঁটে হাসপাতালে এসেছি, রান্নাবান্না থেকে সংসার যাবতীয় কাজ করছি, দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছি। একজন সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষের মতো চলতে পারছি।”</p> <p>২০২২ সালে দেশে প্রথম কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড বা লেফট ভেন্ট্রিকুলার অ্যাসিস্ট ডিভাইস-এলভ্যাড (খঠঅউ) স্থাপন করেন ঢাকার বেসরকারি <a href="https://uhlbd.com/departments/cardiology"><span style="color:#3498db">ইউনাইটেড হাসপাতালের</span></a> একদল চিকিৎসক।</p> <p>সেই চিকিৎসকদলের প্রধান <a href="https://www.uhlbd.com/consultant/dr_jahangir"><span style="color:#3498db">ডা. জাহাঙ্গীর কবির</span></a> বলেন, ‘আজ পর্যন্ত ২৮ হাজার মানুষের হার্টের অপারেশন করেছি। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রোগীদের একজন তাসনোভা তাসনুবা। একসময় সে বলতো গণমাধ্যমের সামনে আসবো না। সেটা একটা দিন ছিল, একটা সময় ছিল। যখন তাসনোভা তাসনুবা চরম হার্ট ফেইলর রোগে ভুগছিল।</p> <p>তিনি বলেন, তাসনোভা তাসনুবা দেশের সেরা সেরা হাসপাতাল গুলোতে চিকিৎসা শেষ করে সিঙ্গাপুর- মালেশিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা নিয়েছে। শেষে আমাদের <a href="https://uhlbd.com/departments/cardiology"><span style="color:#3498db">ইউনাইটেড হাসপাতালে</span></a> তাঁর  মেকানিকাল হার্ট ইমপ্ল্যান্ট বা কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড স্থাপন করা। এখন সে সম্পূর্ণ সুস্থ।</p> <p>তাসনোভা বিদেশেও অপারেশনটা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি দেশের চিকিৎসকদের প্রতি আস্থা ও আত্মবিশ্বাস রেখেছেন। যে কারণে আমরা বাংলাদেশে হৃদরোগ চিকিৎসায় নতুন যুগের সূচনা করতে পেরেছি।’</p> <p>মায়ের অসুস্থতার কথা জানিয়ে তাসনোভার তাসনুবার ছেলে নাহিয়ান বিন মোস্তাফিজ বলেন, ‘একটা সময় ছিল মা সারারাত ঘুমাতে পারতো না। আমি ও বাবা সারারাত জেগে থাকতাম। মা ব্যথায় অনেক কান্না করতো। নিঃশ্বাস নিতে পারতো না। রাত হলে আমাদের মনে হতো, আজ মনে হয় শেষ রাত, পরের দিন আর দেখতে পারব কিনা। সেখান থেকে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফেরা আমাদের জন্য স্বপ্নের। তুরস্কে মা আমাদের বাসার সমস্ত কাজ করছে।’</p> <p><iframe frameborder="0" height="391" sandbox="allow-scripts allow-same-origin" src="https://www.youtube.com/embed/Vh979GprgoY" title="বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রথম কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড স্থাপন | Artificial heart | Tasnova | United Hospital" width="695"></iframe></p> <p><strong>তাসনোভার অসুস্থতার দিনগুলো</strong></p> <p>তাসনোভা মোস্তাফিজ নোভা বলেন, ‘২০১৩ সালের দিকে একাধিকবার আমি অজ্ঞান হয়ে পরি।  সুস্থ মানুষ ছেলেকে নিয়ে স্কুলে গিয়েছি, দেখা গেল সেখানে অজ্ঞান হয়ে পড়লাম। অভিভাবকরা আমাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করছে। এরপর কার্ডিয়ালজিস্ট দেখানো হলো দেশের একটা স্বনামধন্য হাসপাতালে। তখন পরামর্শ দেওয়া হলো, যদি আর্থিক সমস্যা না থাকে দেশের বাইরে চিকিৎসা নেওয়া জন্য। এরপর সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে টানা সাত বছর চিকিৎসা নিয়েছি। ২০১৭ সালের দিকে আমার হার্টে এসআইসিটি নামক একটা ডিভাইস বসানো হয় আমার হার্টে। এটা বসানো হয়েছিল ৫ বছরের জন্য। এক বছরের মাথায় ২০১৮ সালে সমস্যা আবার বাড়তে শুরু করে। এরপর হার্টে ব্লক থাকায় মালয়েশিয়া গিয়ে করোনারি স্টেন্ট লাগানো হয়। ওখানকার চিকিৎসক প্রথম বললেন, হার্ট প্রতিস্থাপন প্রয়োজন হতে পারে। ওই বছরেই এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হলাম। উনারা কোন কারণে এনজিওগ্রাম করতে আগ্রহ প্রকাশ করেনি। তখন আমি যাই তুর্কিয়ে। সেখানে বলা হলো হার্ট প্রতিস্থাপন প্রয়োজন হতে পারে। এরপর ঢাকায় ফিরে কিছুদিন পর আবারও অসুস্থ হয়ে পড়লাম। তখন কয়েকদিন পরপর এভারকেয়ার চিকিৎসা নিতে হতো।</p> <p>তাসনোভারা তাসনুবার স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তখন একরকম আশা ছেড়ে দিয়েছি বলা চলে। হয়তো আর হবে না বাচঁবে না। কারণ আমি দীর্ঘদিন ধরে দেখছিলাম। যেখানে সিঙ্গাপুরে আর চিকিৎসা নাই, তুর্কিয়ে, মালয়েশিয়াও পেলাম না। শেষে <a href="https://uhlbd.com/departments/cardiology"><span style="color:#3498db">ইউনাইটেড হাসপাতালের</span></a> হসপিটালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শে আস্বস্ত হলাম ও এখানে অপারেশনের মধ্যে এখন সুস্থ।</p> <p><strong>কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড কিভাবে কাজ করে?</strong></p> <p><a href="https://www.uhlbd.com/consultant/dr_jahangir"><span style="color:#3498db">ডা. জাহাঙ্গীর কবির</span></a> বলেন, হৃদযন্ত্রের কাজ হচ্ছে বিরতিহীনভাবে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে রক্ত সঞ্চালন করা। এলভ্যাড (লেফট ভেন্ট্রিকুলার অ্যাসিস্ট ডিভাইস) যন্ত্রটি মূলত সে কাজটি করে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পাম্প করার অংশটি বাসানো হয় হার্টের নিচে বাঁদিকের অংশে। হৃৎপিণ্ডের সাথে যন্ত্রটিকে টিউব দিয়ে সংযোগ করে দেয়া হয়। এক ধরনের চুম্বক শক্তি দিয়ে যন্ত্রটি পাম্প করে।</p> <p>পেটে ফুটো করে তার মাধ্যমে শরীরের বাইরের দিকে তার দিয়ে ব্যাটারি ও মনিটরের সাথে সংযোগ করে দেয়া থাকে। এই অংশ ষ্ট্র্যাপ দিয়ে একটি ব্যাগে ভরে দেয়া থাকে যা সারাক্ষণ বহন করতে হয়।</p> <p><strong>হার্ট প্রতিস্থাপনে জোর দিতে হবে</strong></p> <p><a href="https://www.uhlbd.com/consultant/dr_jahangir"><span style="color:#3498db">ডা. জাহাঙ্গীর কবির</span></a> বলেন, তাসনোভা একটি যন্ত্রের সাহায্যে আড়াই বছর খুব ভালো আছে। হয়তো আরো আড়াই বছর ভালো থাকবে। তারপর কি হবে? একটা সময় আসবে যখন মেশিনও ফেইল করে।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘আজকে তাসনোভার স্বামী মুস্তাফিজ সাহেব তাঁর স্ত্রীর জন্য এতো কিছু করেছে। কিন্তু সবাই মুস্তাফিজ সাহেব না। সবার কাছে এতো টাকাও নাই।’</p> <p>আমরা কিন্তু এর চেয়ে অনেক কম খরচে হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করতে পারি। যার ব্রেইন ইতিমধ্যে নিষ্ক্রিয়। যিনি কোনদিন ভালো হবেন না। কিন্তু তাঁর হৃৎপিণ্ড সক্রিয় আছে। তিনি হৃদপিণ্ড দিতে পারেন।  এমন অনেক রোগী পাওয়া যায়।  বিশেষ করে যারা সড়ক দূর্ঘটনায় ব্রেইন ডেথ হয়ে কয়েক মাস ধরে বিছানায় পরে আছে। তাঁর হার্ট, কিডনি, ফুসফুস, লিভার, চোখ সচল রয়েছে। তিনি কিন্তু পাঁচ ছয় জন রোগীকে বাঁচাতে পারে। ‘আমি দুইটা রোগীর প্রতিস্থাপন করতে গিয়ে একেবারে শেষ ধাপ পর্যন্ত পৌছেছি। পৌছেছি তারপর যিনি হার্ট দিবেন..তিনি দেন নাই বা তাঁর আত্মীয় স্বজনরা দেন নাই। এটি খুবেই দুঃখজনক।</p> <p>দেশের মানুষ এখনো উপলদ্ধি করে নাই, উদ্ধুদ্ধ হয়নি। <a href="https://www.uhlbd.com/consultant/dr_jahangir"><span style="color:#3498db">ডা. জাহাঙ্গীর কবির</span></a> মনে করেন, হার্ট প্রতিস্থাপন বা হার্ট ফেইলিউরের চিকিৎসায় অপারেশন এর জন্য উদ্ধুদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। এটা সারা দুনিয়ায় চলে আসছে, বাংলাদেশেও হতে হবে। হার্ট প্রতিস্থাপন এর প্রচার করে মানুষ কে উদ্ভুদ্ধ করে এটাকে বাস্তবায়িত করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের যে এটা প্রয়োজন তা আমরা এখনো বুঝাতে পারি নাই। এর সচেতনতার জন্য আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।</p>