<p style="text-align: justify;">যেকোনো হাসপাতালের বহির্বিভাগে আগত রোগীদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ‘বুক জ্বালাপোড়া’ সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। এটি মূলত যে রোগের কারণে হয়ে থাকে সেটিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ‘গ্যাস্ট্রো-ইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ’ বলে। বাংলাদেশের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ এই রোগে ভুগছে।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>বুক জ্বালাপোড়া অসুখ কেন হয়?</strong><br /> আমাদের অন্ননানি যেখানে শেষ আর পাকস্থলীর যেখানে শুরু, ঠিক এই সংযোগস্থলের অংশটুকু একটি বন্ধ কপাটিকার মতো কাজ করে।</p> <p style="text-align: justify;">যখন আহার করা খাবার এই অংশে পৌঁছায় তখন এই বন্ধ কপাট খুলে যায় এবং খাবার পাকস্থলীতে পৌঁছায়। খাবার গ্রহণ করা ছাড়াও অন্য সময় যদি এই কপাট খোলা থাকে তাহলে পাকস্থলীর শক্তিশালী এসিড খাদ্যনালিতে প্রদাহ তথা ক্ষত তৈরি করে এবং এই রোগের বিভিন্ন উপসর্গ তৈরি করে থাকে।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>বুক জ্বালাপোড়া ছাড়াও আর কী কী উপসর্গ থাকতে পারে</strong><br /> বুক জ্বালাপোড়া এবং খাবার ওপরের দিকে উঠে আসা বা উদগিরণ অনুভব করা হচ্ছে গ্যাস্ট্রো-ইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজের ক্লাসিক উপসর্গ। এ ছাড়া এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের নিম্নলিখিত উপসর্গ থাকতে পারে—</p> <p style="text-align: justify;">⬤    বুকে ব্যথা অনুভব করা<br /> ⬤    মুখে টক টক স্বাদ অনুভূত হওয়া<br /> ⬤    ঢোক গিলতে অসুবিধা হওয়া<br /> ⬤    গলায় বাধা অনুভব করা<br /> ⬤    কোনো কোনো ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি কাশি<br /> ⬤    হঠাৎ মুখে অতিরিক্ত লালা এসে মুখ ভরে যাওয়া</p> <p style="text-align: justify;"><strong>কী কী জটিলতা হতে পারে</strong><br /> খাদ্যনালির আলসার : দীর্ঘমেয়াদি পাকস্থলীর এসিডের সংস্পর্শে খাদ্যনালিতে ঘা হয়ে রক্ত বমি হতে পারে।</p> <p style="text-align: justify;">খাদ্যনালি সংকুচিত হয়ে যাওয়া : দীর্ঘদিন ধরে ভোগা বুক জ্বালাপোড়ায় আক্রান্তদের খাদ্যনালির নিচের অংশ সংকুচিত হয়ে ঢোক গিলতে কষ্ট হতে পারে। এই অবস্থাকে ‘পেপটিক স্ট্রিকচার’ বলে।</p> <p style="text-align: justify;">খাদ্যনালির ক্যান্সার : বুক জ্বালাপোড়ায় আক্রান্তদের ১ শতাংশ মানুষ খাদ্যনালির ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে।<br /> চিকিৎসা<br /> ⬤    ওষুধ এবং জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনই ‘বুক জ্বালাপোড়া’ রোগের মূল চিকিৎসা।<br /> ⬤    ওষুধের ভেতর মূলত পিপিআই (ওমিপ্রাজল, পেন্টোপ্রাজল,  র‌্যাবিপ্রাজল, ডেক্সল্যান্সোপ্রাজল) গ্রুপের ওষুধই সর্বাধিক কার্যকরী। এগুলো মূলত পাকস্থলীর এসিড নিঃসরণ কমিয়ে রোগের উপসর্গকে নিরাময় করে থাকে। দীর্ঘ মেয়াদে এসব ওষুধের ব্যবহারের ফলে নিউমোনিয়া, হাড় ক্ষয়, কিডনি রোগ ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। তাই এসব ওষুধ অবশ্যই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে খাওয়া উচিত।<br /> বুক জ্বালাপোড়া নিয়ন্ত্রণে কিছু পরামর্শ<br /> ⬤    রাতে ঘুমানোর ২-৩ ঘণ্টা আগেই খাবার খেয়ে নিতে হবে<br /> ⬤    একটু পর পর অল্প অল্প খাবার খেতে হবে<br /> ⬤    একসঙ্গে ভরপেট খাবার পরিহার করতে হবে<br /> ⬤    শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে স্থুলতা পরিহার করতে হবে<br /> ⬤    তৈলাক্ত ও অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে<br /> ⬤    ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলতে হবে<br /> ⬤    চা, কফি, সফট ড্রিংকস পরিহার করতে হবে<br /> ⬤    অতিরিক্ত টাইট জামা পরা যাবে না<br /> ⬤    ভাজা-পোড়া এবং ফাস্টফুড পরিহার করতে হবে<br /> ⬤    বিছানার মাথার দিক ব্লক দিয়ে ৬ ইঞ্চির মতো উঁচু করতে হবে<br /> ⬤    খাওয়ার পরপরই শুয়ে পড়া যাবে না।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>কোথায় করবেন চিকিৎসা</strong><br /> বুক জ্বালাপোড়ার চিকিৎসা যেকোনো জেনারেল প্র্যাকটিশনারকে দেখিয়েই শুরু করা যেতে পারে। এমনকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরাই এই রোগের চিকিৎসা দিতে পারেন। তবে প্রাথমিক চিকিৎসায় উপসর্গ নিরাময় না হলে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিশেষজ্ঞ অথবা মেডিক্যাল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের পরামর্শমতো চিকিৎসা নিতে হবে।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>লেখক:</strong> সহকারী অধ্যাপক<br /> শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট<br /> ও হাসপাতাল, ঢাকা</p>