<p style="text-align:justify">দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির দুরবস্থার জন্য দায়ী বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। গত দেড় দশকে দেশের অর্থনীতি বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জে পড়েছে। বিগত সরকারের চরম অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অর্থপাচার ও অপরিণামদর্শী প্রকল্পে দেশি-বিদেশি ঋণ নেওয়ার কারণে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়েছে।</p> <p style="text-align:justify">এসব কারণ সামনে রেখে বিস্তারিত তথ্যসহ অর্থনীতির ‘দুরবস্থা’ এবং বিভিন্ন খাতের দুর্নীতির ‘প্রকৃত চিত্র’ নিয়ে শ্বেতপত্র প্রস্তুতের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিগত সরকারের কর্মকাণ্ডের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে এমনটি করা হবে বলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।</p> <p style="text-align:justify">জানা যায়, সদ্যোবিদায়ি ওই সরকারের শেষ সময়ে দেশের অর্থনীতি অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়ে। আর এই নাজুক পরিস্থিতিতে অর্থনীতি সুসংহত করতে দায়িত্ব নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নতুন এ সরকারের সামনে বেশ চ্যালেঞ্জ রয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">এই অবস্থায় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময়ে দেশের অর্থনৈতিক সামগ্রিক চিত্র সরকারের হাতে থাকা প্রয়োজন। এ কারণে দেশের অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রস্তুত করা হবে। এটি প্রস্তুতের জন্য বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে একটি কমিটি করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই কমিটি আগামী ৯০ দিনের মধ্যে দেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির শ্বেতপত্র প্রণয়ন করে প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করবে।</p> <p style="text-align:justify">প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় দেড় দশক ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতি বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জে নিপতিত রয়েছে। বিগত সরকারের চরম অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অর্থপাচার ও অপরিণামদর্শী প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি ঋণ নেওয়া হয়েছে। এসব কার্যক্রমের কারণে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় এসেছে।</p> <p style="text-align:justify">অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পতনকালে শেখ হাসিনার সরকার দেশের জনগণের কাঁধে ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ রেখে গেছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারের এই মোট ঋণের স্থিতি দেশের তিনটি বাজেটের মোট অর্থ বরাদ্দের সমান।</p> <p style="text-align:justify">অন্যদিকে বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে কর আদায়ের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির চেষ্টা করেনি। উল্টো দেশি ও বিদেশি দুই ধরনের ঋণের প্রতি আওয়ামী লীগ সরকার ঝুঁকেছিল।</p> <p style="text-align:justify">যদিও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জিডিপির তুলনায় ১৪ শতাংশ কর সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু গত ছয়-সাত বছরে এ অনুপাত ১১ শতাংশ থেকে উল্টো ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার এটি একটি দিক মাত্র। সামগ্রিকভাবে দুর্নীতি, অর্থ-পাচারের অবাধ সুযোগ, বাজার সিন্ডিকেটের ফলে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে পড়েছে।</p> <p style="text-align:justify">বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, গত জুলাই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল প্রায় ১২ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি আরো বেশি, তা ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বিগত সরকারের শেষ সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকটাই মুখথুবড়ে পড়েছে। কিন্তু তখন বাস্তব চিত্র চাপা পড়েছিল। </p> <p style="text-align:justify">প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানায়, আগের সরকারের সার্বিক অব্যবস্থাপনার ফলে সৃষ্ট দেশের অর্থনীতির নজিরবিহীন নাজুক পরিস্থিতিতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে। দেশের অর্থনীতিকে সুসংহত করতে বর্তমান সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">প্রধান ছয়টি চ্যালেঞ্জের মধ্যে—অর্থনীতি পুনরায় সচল করার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলো নিরসনে কাঠামোগত সংস্কার সাধন করতে হবে। নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। রন্ধ্রে রন্ধ্রে থাকা দুর্নীতি দূরীকরণ। ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে। রাজস্ব আয় বাড়াতে করতে হবে কর ও শুল্কনীতির সংস্কার। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটাতে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ। বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণকালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার এমন একটি সামগ্রিক তথ্যচিত্র থাকা প্রয়োজন, যাতে আগামী দিনের এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা সহজে করতে পারে।</p> <p style="text-align:justify">প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির শ্বেতপত্র প্রস্তুত করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য একটি ধারণাপত্র দেওয়া হয়েছে। এই ধারণাপত্রে দেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার তথ্যচিত্রসমৃদ্ধ একটি শ্বেতপত্র প্রস্তুতের দিকনির্দেশনা রয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">ধারণাপত্রে বলা হয়েছে, শ্বেতপত্রে দেশের বিদ্যমান অর্থনীতির সামগ্রিক চিত্র থাকার পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিষয়ে সরকারের কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ, এসডিজি বাস্তবায়ন এবং এলডিসি হতে উত্তরণে করণীয় বিষয়ে প্রতিফলন থাকবে। শ্বেতপত্রটি প্রণয়নকালে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও মতবিনিময় করা হবে। </p> <p style="text-align:justify">ছয়টি বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে তৈরি করা হবে শ্বেতপত্র। প্রথমত, সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে অভ্যন্তরীণ সম্পদ ব্যবস্থাপনা। বিনিয়োগ, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি), ভর্তুকি ও ঋণসহ সরকারের ব্যয়, বাজেট ঘাটতি এসব বিষয় আসবে শ্বেতপত্রে। দ্বিতীয়ত, মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনার মধ্যে উৎপাদন, সরকারে কেনাকাটা ও খাদ্য বিতরণ বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। তৃতীয়ত, বৈদেশিক লেনদেনের ভারসম্যের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি, প্রবাসী আয়, বৈদেশিক বিনিয়োগ, রিজার্ভ, বৈদেশিক অনুদান ও ঋণ বেশ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। চতুর্থত, অগ্রাধিকার পাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি। তবে এর মধ্যে থাকবে চাহিদা ও সরবরাহ, দাম, উৎপাদন ব্যয় ও কেনার চুক্তির বিষয়গুলো। পঞ্চমত, বেসরকারি বিনিয়োগের মধ্যে বিশেষ নজর থাকবে ঋণের সহজলভ্যতা, বিদ্যুৎসহ নানা সংযোগ ও লজিস্টিক বিয়গুলো। অগ্রাধিকার পাবে কর্মসংস্থান। এ ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হবে দেশি ও বিদেশি কর্মসংস্থান, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক মজুরি, যুব কর্মসংস্থানে। </p> <p style="text-align:justify">জানা যায়, এই শ্বেতপত্র প্রস্তুত করতে অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। তিনি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয়সংখক সদস্য নিয়ে কমিটি করতে পারবেন। এই কমিটির পরিকল্পনা কমিশনে এর দপ্তর থাকবে। এই কমিটিকে সাচিবিক সহযোগিতা করবে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ। সরকারের সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থা চাহিদা অনুযায়ী সব তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করবে। </p>